![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
এই ব্লগের সকল মৌলিক লেখার স্বত্ত্ব লেখকের।এখান থেকে কোনো লেখা লেখকের অনুমতি ছাড়া অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা, অনুলিপি করা গ্রহনযোগ্যনয়। তা সৃজনশীল কাজের পরিপন্থী। লেখা অন্য কোথাওপ্রকাশ, ছাপা করতে চাইলে লেখকের সম্মতি নিতে হবে। লেখকের ইমেল - [email protected]
অগ্রসরমান প্রজন্মের বিপক্ষে যে সাম্প্রদায়িক শক্তি
ফকির ইলিয়াস
----------------------------------------------------------------------------
আবার জিতেছে বাংলাদেশ। আবার জিতেছে একাত্তর। একজন অন্যতম যুদ্ধাপরাধী
সা কা চৌধুরীর ফাঁসির রায় বহাল রেখেছে, আপিল বিভাগ। তা নিয়ে বেশ সংশয় ছিল। অনেক কথাই ভেসে বেড়াচ্ছিল বাতাসে। শেষ পর্যন্ত গণমানুষের জয় হয়েছে।
আবার এদেশের মানুষ দেখেছে একাত্তরের বিজয়।
যারা একাত্তরে পরাজিত হয়েছিল তারা এখন প্রতিশোধ নিতে চাইছে অন্যভাবে। তারা এখন মাঠে নেমেছে বুদ্ধির বলিহারি নিয়ে। তারা বলছে, আমরাও স্বাধীনতা মানি। বিজয় মানি। কিন্তু একাত্তরে অমুকের ভূমিকা কি ছিল। তমুক কোথায় ছিলেন। অমুকের বাবা কি ছিলেন। ইত্যাদি অনেক কথা।
বাংলাদেশে জাতীয় সঙ্গীত নিয়ে বিতর্ক হয়েছে। এই কবির গান কেন জাতীয় সঙ্গীত হবে- তা নিয়ে অনেকে অনেক কথা বলেছে বলছে।রবীন্দ্রনাথ হিন্দু ছিলেন। বাংলাদেশ
মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ট দেশ। কথা দুটোই সত্য। কিন্তু সংস্কৃতির সাথে, সাহিত্যের সাথে,
শিল্পের সাথে ধর্মের যোগসজাস কি ? এর উত্তর খুব ঘুরিয়ে দেয় ঐ বুদ্ধিবৃত্তিক
দুর্বৃত্তরা।
এরা বসে নেই। তারা এখন নেমেছে নতুন মিশন নিয়ে। মুক্তিযুদ্ধের অনেক সংগঠক,
পৃষ্ঠপোষককে তারা না না ভাবে হেনস্থা করতে চাইছে। অন্যদিকে দেশের ভেতরেই তারা গড়ে তুলছে সশস্ত্র নেটওয়ার্ক।
সম্প্রতি বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবি আবদুল গাফফার চৌধুরী নিউইয়র্কে এসেছিলেন। তিনি
কয়েকটি ভাষণে বেশ কিছু দরকারি কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন- ''আপনাদের অনেকে জানেন, ১৯২৬ সালে 'বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলন' নামে একটি আন্দোলন গড়ে উঠেছিল ঢাকায়।মূলত এ আন্দোলন ছিল মুসলিম সমাজকে প্রগতিমুখী করার জন্য একটি সাহিত্যিক সাংস্কৃতিক আন্দোলন। আধুনিক জ্ঞান বিজ্ঞান দর্শন রাজনীতি অর্থনীতি ইত্যাদি নানা বিদ্যার দিগন্তে বিচরণ উৎসাহী এবং মুক্তিবাদ ও মানবতাবাদ উদ্দীপ্ত সদ্য প্রতিষ্ঠিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আবুল হুসেন (অর্থনীতি ও বাণিজ্য), অধ্যাপক কাজী মোতাহার হোসেন (পদার্থ বিদ্যা), বিএ ক্লাসের ছাত্র আবুল ফজল, ঢাকা ইন্টারমিডিয়েট কলেজের অধ্যাপক কাজী আবদুল ওদুদ (বাংলা) প্রমুখ ‘মুসলিম সাহিত্য সমাজ’ প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। কাজী আবদুল ওদুদকে বলা হতো এ প্রতিষ্ঠানের মস্তক, আবুল হুসেনকে হস্ত এবং কাজী মোতাহার হোসেনকে হৃদয়।
তাঁদের লক্ষ্য ছিল মুসলমান বাঙালীকে কীভাবে এগিয়ে নেয়া যায়। প্রসঙ্গত বলা দরকার, রাজা রামমোহন রায় কে 'মহামানব' বলার অপরাধে এদের বিচারের কাটগড়ায় তোলা হয়। কাজী আব্দুল ওদুদ,কাজী মোতাহার হোসেন প্রাণভয়ে কলকাতা চলে যান। আপনারা জানেন, কবি কাজী নজরুল ইসলামকে কাফের ফতোয়া দিয়েছিল
তৎকালীন মোল্লা'রা। বলা হয়েছিল ইংরেজী শিক্ষা হারাম।স্যার সৈয়দ আহমদকেও এরা
পছন্দ করেনি ইংরেজী শিক্ষা প্রসারে কাজ করেছিলেন বলে। অথচ এরাই পরে কাজী
নজরুল ইসলাম কে মুসলিম রেঁনেসার কবি তকমা দেবার কোশেস করেছে। এখন
মৌলবাদীরা নজরুলের গান গান- নিজেদের প্রয়োজনে।
তিনি বলেন, আমাদের একজন কামাল আতাতুর্ক দরকার। যিনি অনেক কিছুই নিষিদ্ধ
করেছিলেন। তুরস্কে যেভাবে সভ্যতার বিবর্তন হয়েছিল, আজ তা জানতে হবে-বুঝতে
হবে এই প্রজন্মকে।''
তিনি বলেন, ''বিশ্বে আজ নতুন নতুন মৌলবাদ তৈরি হচ্ছে। এটা কারা করছে? কাদের স্বার্থে করছে ? বিশ্বব্যাপী আজ মুসলমান, মুসলমানকে হত্যা করছে সবচেয়ে
বেশি। গোত্রগত সংঘাত মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে শুধুমাত্র মূর্খতা, বর্বরতার কারণে।
মানুষের অজ্ঞতাই আজ এই নতুন নতুন মৌলাবাদের অন্যতম কারণ।''
২
বাংলাদেশে এখন চলছে বুদ্ধিবৃত্তিক চৌর্য্যকর্ম।মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের লেখক-বুদ্ধিজীবীদের চরিত্র হনন। তা তারা করছে না না ভাবেই।
আমরা চিন্তকের সৃজনশীল স্বাধীনতা ও এর পূর্বাপর বিশ্লেষণ করলে দেখবো, যখনই
কোনো চিন্তক তার ভাবনাগুলোকে ছড়িয়ে দেবার প্রয়াসী হয়েছেন- তখনই একটি চক্র
মুখোমুখি দাঁড়িয়েছে সশস্ত্র। এরা যুক্তি না দিতে পেরে কুড়াল চালিয়েছে।
আমরা সক্রেটিস থেকে আমাদের আরজ আলী মাতুব্বর পর্যন্ত একই ধারাবাহিকতা লক্ষ্য করি। আরজ আলী মাতুব্বর একজন স্বশিক্ষিত দার্শনিক ছিলেন। তিনি
তাঁর সত্যের সন্ধান নিবন্ধে লিখছেন-'' প্রাণ চেনা যায় কি? এর উত্তরে বলছেন-
কোন মানুষকে “মানুষ” বলিয়া অথবা কোন বিশেষ ব্যক্তিকে আমরা তাহার রূপ বা চেহারা দেখিয়াই চিনিতে পাই, প্রাণ দেখিয়া নয়। পিতা-মাতা, ভাই-বোন, আত্মীয়-স্বজন সকলকে রূপ দেখিয়াই চিনি, সম্বোধন করি, তাহাদের সাথে প্রয়োজনীয় কাজ-কর্ম নিষ্পন্ন করি। প্রাণ দেখিয়া কাহাকেও চিনিবার উপায় নাই। তদ্রূপ পশু-পাখী, কীট-পতঙ্গ, গাছপালা ইত্যাদিকে আমরা উহাদের রূপ দেখিয়াই চিনিয়া থাকি। এই রূপ বা চেহারা দেহীর দেহেই প্রকাশ পাইয়া থাকে। যখন দেহের সঙ্গে প্রাণের সম্পর্কে থাকিবে না অর্থাৎ মৃত্যুর পরে দেহহীন প্রাণকে চিনিবার উপায় কি? বিভিন্ন ব্যক্তি বা জীবের মন, জ্ঞান ও দৈহিক গঠনে যতই বৈচিত্র্য থাকুক না কেন, উহাদের প্রাণেও কি তেমন বৈচিত্র্য আছে? অর্থাৎ বিভিন্ন জীবের প্রাণ কি বিভিন্ন রূপ?''
আরজ আলী মাতুব্বর নিজেকে প্রশ্ন করেছেন- আমি কি স্বাধীন? এর উত্তরে নিজে লিখছেন- “আমি” মনুষ্যদেহধারী মন-প্রাণবিশিষ্ট একটি সত্তা। প্রাণশক্তি বলে আমি বাঁচিয়া আছি, মনে নানাপ্রকার কার্য করিবার স্পৃহা জাগিতেছে এবং দেহের সাহায্যে উক্ত কার্যাবলী নিষ্পন্ন করিতেছি। আমি যে শারীরিক ও মানসিক শক্তির অধিকারী, তাহা আমার কার্যাবলীর মধ্যেই প্রকাশ পাইতেছে। কিন্তু এখানে প্রশ্ন এই যে, আমি স্বাধীন কি না। যদি আমি স্বাধীন হই অর্থাৎ আমার কার্যাবলী নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা ঈশ্বরের না থাকে, তাহা হইলে তাঁহার “সর্বশক্তিমান” নামের সার্থকতা থাকে কি? আর যদি আমি স্বাধীন না-ই হই, তবে আমার কার্যাবলীর ফলাফল স্বরূপ পাপ বা পুণ্যের জন্য আমি দায়ী হইব কিরূপে?''
এই আরজ আলী মাতুব্বর নিয়ে বিতর্ক হয়েছে। বাঙালী সমাজে বিতর্কিত হয়েছেন বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন ।
আমার সবিনয় প্রশ্ন হচ্ছে- বাংলাদেশের নারীসমাজ তো বটেই, সাধারণ মানুষ কি
ওই দুর্বৃত্তদের হাত থেকে রেহাই পেয়েছে ? রাষ্ট্র এ বিষয়ে কি করছে ?
সমাজ ও রাষ্ট্র নিশ্চিত করে একজন মৌলিক চিন্তকের স্বাধীনতা। আজ বাংলাদেশে এই ভাবনাকে স্তব্ধ করে দেবার পাঁয়তারা চলছে। এরা কারা ? যারা ১৯৭১ সালে পরাজিত হয়েছিল, তারা এখন মাঠে নেমেছে অন্য লেবাসে।
আমরা দেখেছি, নাগিব মাহফুজ,এডওয়ার্ড সাইদ কে কি কম সমালোচিত হতে হয়েছে ? তারা বিশ্বাসী ছিলেন কি না- সে আলোচনায় না গিয়ে এটাই বলা যায়, বিশ্বাস ও অবিশ্বাসের সমীকরণকে তিনি মানবসমাজের ভাবনার আলোয় নিয়ে এসেছেন কল্যাণের তাগিদে। কোনো রক্তারক্তিকে কি সমর্থন করেছেন বিশ্বের কোনো সৃজনশীল লেখক-বুদ্ধিজীবী ? যারা হীন স্বার্থের তাগিদে গোটা মানবতার বিপক্ষে দাঁড়িয়েছে- আমি তাদের কথা বলতেই চাই না।
এই আলোচনা অনেক দীর্ঘ করা যাবে। আন্তর্জালের কল্যাণে এখন মুক্তচিন্তার নামে
সহিংস আক্রমণ যেমন হচ্ছে- তেমনি প্রতিক্রিয়াশীল চক্রও না না ধরনের মিথ্যা
কথা ছড়াচ্ছে। বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবী,রাজনীতিক,শিক্ষক,চিকিৎসকদের হত্যার হুমকি এরই ধারাবাহিকতা। এসব সাম্প্রদায়িক শক্তি জ্ঞানীদের জ্যোতিকে ভয় পাচ্ছে। যার ফলে এই বাংলাদেশে এখনও বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের স্বপ্ন পূরণ
হয়নি। আজ রাষ্ট্রকে বিষয়টি নিয়ে জরুরিভাবে ভাবতে হবে। শান্তি ও শৃংখলার
বিষয়টি বিবেচনায় রেখে প্রয়োজনমতো নতুন আইন প্রণয়ন করতে হবে।এবং এর প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। তা না হলে চলমান বিশ্বের অগ্রগতির সাথে বাংলাদেশ এগিয়ে যেতে পারবে না। #
©somewhere in net ltd.