নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আলোর আয়না এই ব্লগের সকল মৌলিক লেখার স্বত্ত্ব লেখকের।এখান থেকে কোনো লেখা লেখকের অনুমতি ছাড়া অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা, অনুলিপি করা গ্রহনযোগ্য নয়।লেখা অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা করতে চাইলে লেখকের সম্মতি নিতে হবে। লেখকের ইমেল - [email protected]

ফকির ইলিয়াস

এই ব্লগের সকল মৌলিক লেখার স্বত্ত্ব লেখকের।এখান থেকে কোনো লেখা লেখকের অনুমতি ছাড়া অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা, অনুলিপি করা গ্রহনযোগ্যনয়। তা সৃজনশীল কাজের পরিপন্থী। লেখা অন্য কোথাওপ্রকাশ, ছাপা করতে চাইলে লেখকের সম্মতি নিতে হবে। লেখকের ইমেল - [email protected]

ফকির ইলিয়াস › বিস্তারিত পোস্টঃ

শঙ্কার বিপরীতে আমাদের অর্জন ও চেতনা

১৩ ই আগস্ট, ২০১৫ রাত ৮:৩৪



শঙ্কার বিপরীতে আমাদের অর্জন ও চেতনা
ফকির ইলিয়াস
-----------------------------------------------
একটি রাষ্ট্রে পাশাপাশি কোনো অপশক্তি চলতে পারে না- আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সমান্তরালে। অথচ বাংলাদেশে তেমনই একটি অপশক্তি তাদের দাঁত দেখাচ্ছে।
খুনের পর খুন চলছে। বিচারের বাণী কাঁদছে নিভৃতে। ভিন্নমতাবলম্বীরা চরমভাবে
শংকিত। তাদের উপর হামলে পড়ছে খুনিরা।
প্রগতিবাদী বুদ্ধিজীবী প্রয়াত ড. আহমদ শরীফের একটি ভাষণ আমার প্রায়ই মনে পড়ে। তিনি বলতেন, আমি শঙ্কিত নই। যা বিশ্বাস করি তাই বলি। আমার কথা এবং কর্মে কোন অমিল নেই। শঙ্কা মানুষের হৃদয়ের প্রকৃত শক্তিকে হরণ করে। আর যার হৃদয়ে সৎ শক্তি থাকে না সে তো মানুষ নয়। ড. আহমদ শরীফ আড়াই দশক আগে যে কথাটি বলে গেছেন, সেই শঙ্কা নিয়েই ঘুরপাক খাচ্ছে আজকের বাংলাদেশ, বাঙালি জাতি। কারণ এই রাষ্ট্রটিকে এমন এক অবস্থায় পতিত করা হয়েছে, সবকিছু নিয়েই আজ সন্দেহ। সবকিছু নিয়েই আজ শঙ্কার রাজনীতি। সবাই, অর্থাৎ যারা রাষ্ট্রের শাসক-কর্ণধার, তারা নিজেরাই বুঝে উঠতে পারছেন না জনগণ তাদের কতটা বিশ্বাস করে কিংবা চায়। আর চাওয়া না চাওয়ায় তাদের কিই-বা আসে যায়। তারা ক্ষমতায় আছেন অথচ মানুষের মনের ভাষা পড়তে পারছেন না।
চলমান, মননশীল এবং আধুনিক প্রগতির ধারাকে কারা বারবার বাংলাদেশ স্তব্ধ করে দিতে চেয়েছে তা কারও অজানা থাকার কথা নয়। কিন্তু আশ্চর্যের কথা হচ্ছে, এসব মৌলবাদীরা খুব কৌশলে রাষ্ট্র ক্ষমতা স্পর্শ করতে পেরেছে এই বাংলাদেশেই। যারা গ্রামে-গঞ্জে ফতোয়া দিয়ে গ্রামীণ জনপদের উন্নয়নকে ব্যাহত করে দিতে চেয়েছে তারাই নিজেদের প্রয়োজনে বুলি পাল্টিয়েছে বারবার। এরা তো সেই হীন মৌলবাদী যারা এক সময় গ্রামের মাঠে ট্রাক্টর দিয়ে চাষাবাদকে ‘নাজায়েজ’ বলে আখ্যায়িত করেছিল। তারা বলেছিল ট্রাক্টর নাকি রাষ্ট্রীয় সুদের টাকায় কেনা হয়। তাই ট্রাক্টরে চাষ করা ধানগুলো হারাম। স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশে ওইসব পাষণ্ডদের এসব ফতোয়ার কথা আমাদের এখনো মনে আছে। সেই ফতোয়াবাজরাই, সেই আলবদর ঘাতকরাই জাতীয় পতাকা গাড়িতে লাগিয়ে ‘উজির’ হয়েছে বাংলাদেশের মাটিতে। অথচ তাদের হাত থেকে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের পবিত্র রক্তের দাগ শুকায়নি। এই মন:পীড়া নিয়েই যাপিত হচ্ছে বাঙালির জীবন। শোকে মুহ্যমান হচ্ছেন বীর মুক্তিযোদ্ধারা।
বাংলাদেশের আজ এমন অবস্থা কেন? কেন একটি জাতির ভবিষ্যৎ এতো বেশি শঙ্কাপুর্ণ?
আমরা অতীতের দিকে তাকালে আমাদের অনেক আলোকবর্তিকার গুরুত্বপূর্ণ কথাগুলো
মনে করতে পারি।
১৯৯৩ সালে যুদ্ধাপরাধীদের শিরোমনি গোলাম আযম নাগরিকত্ব ফিরে পাবার দম্ভে ঘোষণা করেছিল, ‘আমি ভাষাসৈনিক।’ আমাদের বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী শওকত ওসমান সেই সময় এর জবাব দিয়েছিলেন এই বলে, ‘বেশ্যাও একদা সতী থাকে।’ দেশ ভাগের চার দশক পর কলকাতায় গিয়ে- মুক্তিযুদ্ধ উৎসবে, অনুষ্ঠানের সভাপতি শওকত ওসমান বলেছিলেন-,
‘হিন্দু মুসলমান হওয়ার আগে মানুষ হওয়া লাগে।’
ঐ উৎসব উপলক্ষে প্রকাশিত স্যুভেনিরে ‘ভারত-বাংলাদেশের সীমান্তে দাঁড়িয়ে’ শীর্ষক প্রবন্ধে শওকত ওসমান লিখেন-
''আমার পাপের প্রায়শ্চিত্ত শুরু হয়েছিল রক্তস্নান মারফত। আমি চিনতে পারলাম আমার প্রতিবেশীর স্বরূপ। কারণ, পাশাপাশি দাঁড়ালাম একই রণপ্রান্তরে, প্রতিবেশীর মুখ দেখলাম অবিকল আমার মতো। অথচ, একদিন মধ্যযুগীয়তার কালো পাক আমার কাছে মনে হয়েছিল চন্দন সুবাস। আমি আমার ভাই বোনদের চিনতে পারিনি।
এই সময় আরো এক প্রতিবেশীকে দেখলাম। সত্তর কোটি জনঅধ্যুষিত সমাজতন্ত্রী দেশ মহাচীন। তার নেতারা তত্ত্বের গর্তে ঢুকলেন। মানুষ তাদের চোখে ঠেকল না। গণ-হত্যার মতো পাশবিকতা যেন মানুষের জন্য স্বাভাবিক ব্যাপার। বন্দী শিবিরে পাছে আত্মহত্যা করে বসে, তাই কাপড় কেড়ে নেয়া উলঙ্গ ধর্ষিতা রমণীর ফরিয়াদ আহাজারি চীনের নেতাদের কানে সেধল না। এইভাবে আদর্শের অধঃপতন সূচিত হয়। মানুষ তখন আদর্শের কাছে ছোট হয়ে যায়। সামনে জড়ো হয় শাস্ত্র ও কেতাবের খসখসে বুলি এবং তা মার্কসবাদের বুলিও হতে পারে। শুধু তাই নয়, সাড়ে সাত কোটি মানুষের স্বাধীনতা স্পৃহার প্রতি তারা প্রমাণ করল, মার্কসবাদের আঁকা-বাঁকা-বাধারী হলেও তারা বর্ণবিদ্বেষ বা রেশিয়াল হেটরেড মুক্ত নয়। বাংলাদেশের মানুষ যেন গরু ভেড়া ছাগলের শামিল। তাছাড়া আর অমন সিদ্ধান্ত কী করে মাথায় গজায়। .....
ভারতবর্ষের সকল নাগরিককে তবু নমস্কার, বারম্বার নমস্কার। পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে জান-কবুল লড়াইয়ে আমার কুচকাওয়াজের রণবাদ্য এক মহান ভারতবাসীই যুগিয়েছেন। নচেৎ অনুপ্রেরণার সঞ্জীবনী সুধা আমি কোথায় পেতাম? আমার জাতীয় সঙ্গীতও আমার প্রতিবেশীর দান। আত্মার রাখীবন্ধনের সঙ্গে এই পরম উপহার কে আমাকে দিতে পারত?''
শওকত ওসমান সহধর্মিতা, সহমর্মিতায় বিশ্বাস করতেন। তাই তিনি এমন কথা
বলতে পেরেছিলেন। বাংলাদেশে আজ এমন বুদ্ধিজীবী বড় বিরল। তা না হলে, একের
পর এক খুন হবার পরও আমাদের খ্যাতিমান বুদ্ধিজীবীরা একটি বিবৃতি পর্যন্ত দিচ্ছেন না কেন ?
যারা আজ বাংলাদেশের জনগণের আশা-আকাপক্ষাকে পদদলিত করে একটি বর্বরতম জঙ্গিবাদের ধারা-উপধারাকে বাঙালির ওপর চাপিয়ে দিতে চেয়েছে তারা আইউব ইয়াহিয়ার চেয়েও জঘন্য নয় কি? বাঙালি জাতিকে এই বিষয়টি খুব গভীরভাবে অনুধাবন করার সময় বয়ে যাচ্ছে।
একটি বিষয় এখানে উল্লেখ করতে চাই। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সিলেবাসে ‘এন্টি টেরোরিজম’ কোর্সটি যুক্ত হওয়ার পরপরই উল্লেখযোগ্য হারে বাড়তে থাকে এর ছাত্রছাত্রী সংখ্যা। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকেও এ কোর্সে ভর্তি হওয়ার জন্য ট্রান্সফার নিয়ে প্রচুর ছাত্রছাত্রী আসছে যুক্তরাষ্ট্রে পড়াশোনা করার জন্য। বিভিন্ন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশিক্ষক-অধ্যাপক হিসেবে যারা দায়িত্ব নিয়েছেন এরা সবাই সামরিক, গোয়েন্দা, স্পেশাল সার্ভিস কিংবা আন্তর্জাতিক সন্ত্রাস আইনে দক্ষ ব্যক্তিত্ব। কেউ কেউ বিভিন্ন সংস্থার সাবেক কর্মকর্তা।
২০০১ সালের আগেও এ কোর্সটির খুব একটা কদর ছিল না যুক্তরাষ্ট্রে। সেপ্টেম্বর ইলেভেনের পর এর কদর বেড়ে গেছে বহু গুণ। অপরাধের ধরন বাড়ছে। পরিসর বাড়ছে। এর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সন্ত্রাস দমনের উপায় নিয়েও বিশ্বের রাজনীতিক, সমাজবিজ্ঞানী, সংস্থা ও সংগঠনগুলো উদ্বিগ্ন। এন্টি টেরোরিজম কোর্সের তিন-চার বছর মেয়াদি প্রশিক্ষণ যুক্তরাষ্ট্রের প্রজন্মের ক্যারিয়ারেও যুক্ত করেছে নতুন মাত্রা। একটা চ্যালেঞ্জিং পেশা হিসেবেই অনেকে নিতে চাচ্ছে এটাকে।
একটি বিষয় খুবই স্পষ্ট, বিশ্ব এগুচ্ছে সমসাময়িক ঘটনাবলি এবং সমস্যা সম্ভাবনার সঙ্গে তাল মিলিয়ে। এ প্রজন্মকেও তাই গড়ে তোলার প্রয়োজন হয়ে পড়েছে সমসাময়িক অবস্থার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে। এ প্রসঙ্গে কথা হচ্ছিল সিটি ইউনিভার্সিটি অব নিউইয়র্কের অধ্যাপক রাশেল রোলিনের সঙ্গে। তিনি এখানে ‘এন্টি টেরোরিজম’ পড়ান। অধ্যাপক রোলিন বলেন, একটি কথা আমাদের মনে রাখতে হবে আজ থেকে বিশ বছর আগে কিন্তু তথ্যপ্রযুক্তির এমন মুক্ত এবং অবাধ প্রবাহ ছিল না। ইন্টারনেট এখন গোটা বিশ্বকে নিয়ে এসেছে হাতের মুঠোয়। এর সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে সাইবার ক্রাইমও। তাই বাধ্য হয়ে নতুন আঙ্গিকের সেই ক্রাইমকেও রোধ করতে ব্যবস্থা নিতে হচ্ছে সরকারকে। প্রণীত হচ্ছে বিশ্বব্যাপী নতুন নতুন আইন।

আন্তর্জাতিক সন্ত্রাস দমনের বেলায়ও প্রফেসর রোলিনের একই কথা। তিনি বললেন, খুব শিগগিরই হয়তো এমন সময় আসবে যে এই এন্টি টেরোরিজম সিলেবাসটি গোটা বিশ্বে একটা অন্যতম প্রধান বিষয় হিসেবে সমাদৃত হবে। যারা উচ্চপদস্থ হবেন­ তারা সবাই এসব বিষয়ে প্রচুর পড়াশোনা করে দীক্ষিত করে তুলবেন নিজেদের। তার কথার সঙ্গে একমত হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে। যদি বাংলাদেশের অতীত শিক্ষা সিলেবাসের প্রতি নজর দেই তবে দেখা যাবে, একসময় ছিল যখন একজন পিতা তার সন্তানকে বিএ, এমএ অথবা এমনি সমপর্যায়ের এডুকেটেড করে গড়ে তুলতেই আগ্রহী ছিলেন। সময়ের আবর্তে এখন তা অধিক ক্ষেত্রেই বদলেছে। নতুন নতুন সিলেবাসের প্রতি, বিষয় ও পেশার প্রতি শিক্ষার্থীদের আগ্রহ বেড়েছে। বিশ্ব পরিমণ্ডলের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে ফার্মেসি, ফাইন আর্টস, বিজনেস ম্যানেজমেন্ট, মাইক্রোবায়োলজি, এস্ট্রনমি (মহাকাশ বিজ্ঞান) প্রভৃতি চমকপ্রদ বিষয় শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে বেছে নিচ্ছে অনেক শিক্ষার্থী। পরিবর্তন কিংবা দিনবদলের এই যে অগ্রযাত্রা তা আমাদের আশার আলো দেখায় অবশ্যই।
আমি বলছি না বাংলাদেশকে রাতারাতি বদলে দেয়া যাবে। তবে শুরুটা তো করতে হবে। স্যাটালাইট টিভির পর্দায় মুঠোফোনের বিপনন প্রচারণা দখল করছে আমাদের প্রজন্মের মগজ।এর সাথে পাল্লা দিয়ে দেশ এগুচ্ছে না আশানুরূপ ভাবে।মাটির মননে চৈতন্যের এই বীজ টি বপনে আর কতো নেতৃত্বের অপেক্ষা করতে হবে কে জানে !
বাংলাদেশের পুলিশ বিভাগ বলছে, যারা ধর্মের বিরুদ্ধে বিষোদগার করবে তাদের
আইনের আওতায় আনা হবে। ভালো কথা। আইন নিজস্ব গতিতে চলুক। কারও বিরুদ্ধে এমন কিছু প্রমাণিত হলে তাকে শাস্তি দেয়া হোক। তবে যারা এখনও বাংলাদেশের অস্তিত্ব স্বীকার করতে চায় না, যারা যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের রায়কে বানচাল করতে চায়- তাদের ব্যাপারে সরকার কতটা কঠোর ?
অর্জন রক্ষায় আমাদের শত্রু-মিত্র চিনতে হবে। কাজটা সহজ নয়।তারপরও এগোতে হবে সেই আলোকে। মনে রাখতে হবে- যারা এখনও মুক্তিযুদ্ধের আদর্শে বিশ্বাস করে না, এরা মূলত একাত্তরের পরাজিত শক্তির সাথেই মিলে মিশে আছে না না ভাবে। #
-------------------------------------------------
দৈনিক উত্তরা প্রতিদিন ॥ রাজশাহী ॥ ১৩ আগস্ট ২০১৫ বৃহস্পতিবার প্রকাশিত

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ১৩ ই আগস্ট, ২০১৫ রাত ৯:৪৮

হোৎকা বলেছেন: দালালের ফাউল বকবকানি।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.