![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
এই ব্লগের সকল মৌলিক লেখার স্বত্ত্ব লেখকের।এখান থেকে কোনো লেখা লেখকের অনুমতি ছাড়া অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা, অনুলিপি করা গ্রহনযোগ্যনয়। তা সৃজনশীল কাজের পরিপন্থী। লেখা অন্য কোথাওপ্রকাশ, ছাপা করতে চাইলে লেখকের সম্মতি নিতে হবে। লেখকের ইমেল - [email protected]
গণতন্ত্রের গৌরব ও মুক্তিযুদ্ধের আত্মসম্মান
ফকির ইলিয়াস
=======================================
গত বছর নিউইয়র্কে একটি সেমিনার আয়োজন করা হয়েছিল। এর নাম ছিল ‘গণতন্ত্র না মুক্তিযুদ্ধ’। বিষয়টি ছিল এরকম- বহুদলীয় গণতন্ত্র চাই। সে জন্য যদি মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ভূলুণ্ঠিত হয়, তাতে ক্ষতি নেই। প্রধান আয়োজক যিনি ছিলেন, তাকে আমি চিনি। তিনি কখনো মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে লিখেন না। যা লিখেন, তা ইনিয়ে-বিনিয়ে। নিজে একজন কলামিস্ট হয়েও সব কথাই তার প্যাঁচ লাগানো। সেই তিনি স¤প্রতি দেশ থেকে ঘুরে এসেছেন। কথায় কথায় একই ভাষ্য তার। আওয়ামী লীগ দেশটাকে খেয়ে ফেলছে। বললেন, পথ একটাই এই সরকারকে হঠাতে হবে। এছাড়া উপায় নেই। বললাম- তাহলে কে ক্ষমতা পাবে তা কি আপনি জানেন? বললেন- গণতান্ত্রিকভাবে যে কেউ ক্ষমতায় এলে তার কোনো আপত্তি নেই। বললাম- যদি মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষ শক্তি আবার হামলে পড়ে? বললেন- পড়লে পড়ুক। আগে চাই টেকসই গণতন্ত্র।
এই হলো একটি পক্ষের মত। এরা সচল দেশে ও বিদেশে। তাদের একটি প্লাটফর্মও আছে। এরা চায় না, আওয়ামী লীগ দেশ চালাক। সেটা তারা ’৭৫-পরবর্তী সময়েও চেয়েছে। আর চেয়েছে বলেই, এরা কখনো আওয়ামী লীগকে ভাঙতে মদদ দিয়েছে। কখনো আওয়ামী লীগের ভেতরে অনুপ্রবেশকারীদের উসকে দিয়েছে। অবস্থাটি এখন আরো প্রকট। স¤প্রতি শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে কিছু বর্বরদের হাতে কয়েকজন শিক্ষক নিগৃহীত হওয়ার পর এদের লেজ আবারো সমাজে বেরিয়ে পড়েছে।
বৃহত্তর সিলেটের একজন সাংবাদিক তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল ও ড. ইয়াসমীন হকের হাত থেকে শাবিপ্রবিকে বাঁচানোর জন্য আল্লাহর দরবারে ফরিয়াদ করেছেন। সেই সঙ্গে তিনি এই দম্পতিকে ‘সিলেট বিদ্বেষী’ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন! কী সাংঘাতিক কথা! কত হীন, কত দীন হলে একজন সাংবাদিক এমন মানসিকতা পোষণ করতে পারেন! তা ভেবে আমি অবাক হয়েছি। সেই সঙ্গে বারবার তাকিয়েছি, ওই সাংবাদিককের অতীতের দিকে। তিনি শুরুই করেছিলেন এমন কারো কারো ছায়াতলে, মূলত যারা দালাল শ্রেণির সাংবাদিক। যাদের কেউ কেউ সাবেক স্পিকার হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী মারা যাওয়ার পর কেঁদে কেঁদে লিখেছিলেন- ‘স্যার কিছুই তো বলে গেলেন না।’ আবার এই একই সাংবাদিক ছিলেন ‘হাওয়া ভবন’ খ্যাত তারেক রহমানের অলিখিত মুখপাত্র। তিনিই ‘এক্সক্লুসিভ ইন্টারভিউ’ পেতেন তারেক রহমান গংদের। এটা খুবই দুঃখজনক, সূ²ভাবে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করার জন্য বারবার যারা চাকরি হারায়- সেসব সাংবাদিকরাই যখন ড. মুহম্মদ জাফর ইকবালের মতো মানুষের বিরুদ্ধে মিথ্যা কথা ছড়াবার চেষ্টা করে!
এদের আসল উদ্দেশ্য কী? উদ্দেশ্য একটাই। আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা থেকে সরানো। দেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের প্রজন্মের মাঝে বিভক্তি সৃষ্টি। বিষয়টি যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বুঝতে পারছেন না, তা কিন্তু নয়। তিনি স¤প্রতি ছাত্রলীগ বিষয়ে চমৎকার কথা বলেছেন। বলেছেন, ছাত্রলীগ থেকে আগাছা সরিয়ে ফেলতে হবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আগাছা তুলে ফেলে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিয়ে তিনি জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর কর্মী হিসেবে নিজেদের গড়ে তোলার পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, যে জমিতে আগাছা আছে সে জমিতে ফসল হয় না। আগাছা তুলে ফেলতে হয়। একাত্তরের পরাজিত শক্তির দালাল, চাটুকার, তোষামোদকারী ও খোষামোদকারীরা এখনো এ দেশে রয়ে গেছে। রাজনীতির এসব আগাছা উপড়ে ফেলে এগিয়ে যেতে হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, একটি আদর্শ নিয়ে রাজনীতি না করলে কখনো দেশ ও মানুষকে কিছু দেয়া যায় না। আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের প্রত্যেককে বঙ্গবন্ধুর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ বইটি পাঠ করতে বলব। এটি এমন একটি বই যা বারবার পড়তে হয়। এটি পড়লে জানা যাবে বঙ্গবন্ধু এ দেশের মানুষের জন্য কত সংগ্রাম ও আত্মত্যাগ করেছেন। ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদেরও নিজেদের বঙ্গবন্ধুর ত্যাগের আদর্শে গড়ে উঠতে হবে। তিনি বলেন, রাজনীতি দুই ধরনের। এক ধরনের রাজনীতি হচ্ছে মানুষের জন্য কিছু করা। আরেক ধরনের হচ্ছে অর্থবিত্ত অর্জন করে বিলাসী জীবনযাপন করা। যাদের মৌলিকত্ব থাকে না ও খোলস পরা, তারাই মর্যাদা পাওয়ার জন্য এটি করে। কিন্তু এই মর্যাদা এতটাই মেকি যে, তা ক্ষণস্থায়ী। একজন রাজনীতিবিদের সবচেয়ে বড় পাওয়া মানুষের ভালোবাসা। ভালোবাসা পেতে হলে ভালোবাসা দিতে হয়। পার্থিব জীবনে কী পেলাম সেটি নয়, মানুষকে কী দিতে পারলাম- সেটিই বড় কথা। আমরা সেই রাজনীতিই শিখেছি। একজন রাজনীতিবিদ জীবনে ঝুঁকি নিতে ও আত্মত্যাগ করতে না পারলে দেশের জন্য কিছু দিতে পারেন না। ছাত্রলীগের প্রতিটি নেতাকর্মীকেই এটি মনে রাখতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী যা বলছেন, তা তিনি মনেপ্রাণে বলছেন। কিন্তু সমস্যাটি হলো এই দেশে একটি মহল এখনো চাইছে ’৭১-এর সব অর্জনকে ¤øান করে দেশকে পিছিয়ে রাখতে। দুঃখের কথা একন কেউ কেউ সরকারেও ঢুকে পড়েছে। এরাও ক্ষমতার শক্তিতে এখন অন্ধপ্রায়। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে, বাংলাদেশের গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে এখনো ষড়যন্ত্র অব্যাহত আছে। এখনো লুকিয়ে রাখা হচ্ছে জাতির জনকের খুনিদের।
এ বিষয়ে স¤প্রতি জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রী বেশ গুরুত্বপূর্ণ কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন, ‘চ্যানেল আইয়ের তৃতীয় মাত্রা যে চালায়, সেই জিল্লুর কর্নেল রশিদের ইন্টারভিউ করে নিয়ে এসেছিলেন। তার মানে সে জানে খুনি রশিদ কোথায়। এতে বুঝা যায় রশিদ লিবিয়াতে ছিল এখন পাকিস্তানে আছে। ডালিমও পাকিস্তানে আছে। তাদের খোঁজ করার ক্ষেত্রে পাকিস্তানি সরকারের কাছ থেকে কোনো সহযোগিতা পাচ্ছি না।’ শেখ হাসিনা আরো বলেন, ‘ওই খুনিদের মধ্যে দুজন আমেরিকায়, একজন কানাডায়, একজন লিবিয়া থেকে এখন পাকিস্তানে; আর দুজনের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না।’ ‘সভ্য দেশ হয়েও আমেরিকা ও কানাডা কেন খুনিদের আশ্রয় দেয়- জানা নেই,’-মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী। এ দেশে গণতন্ত্র হত্যা ও স্বৈরশাসনের বিস্তার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন- ’৯৬ পর্যন্ত যারাই ক্ষমতায় ছিল তারাই বাংলাদেশের ইতিহাস থেকে বঙ্গবন্ধুকে ‘নিশ্চিহ্ন’ করতে চেয়েছিল। তিনি বলেন- ‘তখন একটাই টেলিভিশন ছিল, বিটিভি। সেখানে যখনই (তার) কোনো ছবি দেখানো হতো সেটা অস্বচ্ছ করে দেয়া হতো। ২-১টি পত্রিকা সাহস করে লিখত, তাদের সরকারের রোষানলে পড়তে হয়েছে।’ শেখ হাসিনা আরো বলেন- ‘এবারো অনেক আলোচনা হয়েছে। সমালোচনা যারা করার তারা আছে, সমালোচনা করছে। আমরা চাই সকলে সত্য কথা বলুক। অতিরঞ্জিত কিছু চাই না। সত্য কথা বলুক। নতুন প্রজন্ম সঠিক ইতিহাস জানুক।’
আর কথা হচ্ছে, সমালোচনার নামে যারা মুক্তিযুদ্ধের আত্মসম্মানের বিরুদ্ধে কথা বলছে, এরা আসলে কী চায়? তা এ প্রজন্মকে অনুধাবন করতে হবে। আমরা দেখছি ক্ষুদ্র স্বার্থ হাসিলের জন্য অনেকেই দেশের স্বার্থ বিকিয়ে দিতে মোটেই পিছপা হননি। এদের অনেকে এই দেশের ‘বরেণ্য মানুষ’ এর দাবিদার! স¤প্রতি হিলারির ফাঁস হয়ে যাওয়া ই-মেইলগুলোর বেশ কয়েকটি প্রকাশ করেছে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর। প্রকাশিত কয়েকটি মেইলে দেখা যায়, গ্রামীণ ব্যাংক প্রশ্নে বাংলাদেশ সরকারকে প্রভাবিত করতে হিলারির কাছে বারংবার তদবির করেছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ বেসামরিক পদকজয়ী মুহম্মদ ইউনূস। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর হিলারির প্রায় সাত হাজার ই-মেইল প্রকাশ করেছে, যার মধ্যে তিন শতাধিক ই-মেইলে বাংলাদেশ প্রসঙ্গ এসেছে। এর মধ্যে বেশ কয়েকটিতে গ্রামীণ ব্যাংক প্রসঙ্গ রয়েছে। বেশকিছু মেইলে হিলারির জবাব গোপন রেখেছে তারা। ই-মেইলে ইউনূস লিখেছেন- ‘ঢাকায় মার্কিন রাষ্ট্রদূতের পরামর্শে আমি আমাদের সমস্যা সম্পর্কে জানাতে প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎ চেয়েছি। কিন্তু ছয় সপ্তাহ ধরে কোনো সাড়া নেই। আমি প্রেসিডেন্টের স্বাধীনতা পদক (প্রেসিডেন্সিয়াল মেডেল অব ফ্রিডম) পাওয়ায় বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ প্রায় সবাই আমাকে শুভেচ্ছা জানালেও প্রধানমন্ত্রী এবং তার দলের পক্ষ থেকে টুঁ শব্দও করা হয়নি। সুতরাং দেখতেই পাচ্ছেন সমস্যা কতটা জটিল রূপ নিয়েছে। আমার মনে হয় আমি এ ব্যাপারে আপনাকে ধারণা দিতে এবং কী করতে হবে তা সম্পর্কে ধারণা দিতে পারব।’
ড. মুহম্মদ ইউনূস মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম বেনিফিশিয়ারি। এই দেশ স্বাধীন না হলে তিনি ‘গ্রামীণ ব্যাংক’ করতে পারতেন না। সেই ইউনূস কোনোদিন শহীদ বেদিতে যাননি বলে লোকালয়ে সুর আছে। কেন যান না? কথা একটাই, গণতন্ত্রের নামে দেশে একটি চক্র মুক্তিযুদ্ধের সম্মানকে ধুলোয় লুটাতে চাইছে। এরা মূলত মুক্তিসংগ্রাম চায়নি। এখন যদিও বাংলাদেশে বাস করে, তাই বাংলাদেশের নাম মুখে নিলেও মহান শহীদদের প্রতি তাদের কোনো সম্মানবোধ নেই।
যারা আওয়ামী লীগের ক্ষমতাচ্যুতি চান- তাদের একটা কথাই বলি, আমরাও চাই এই দেশে আওয়ামী লীগের বিকল্প একটা দল দাঁড়াক। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা মনেপ্রাণে লালন করে অন্য কোনো দল রাজনীতি করুক। সেই ধারায় দেশে গণতন্ত্রের বিজয় অব্যাহত থাকুক। যতদিন পর্যন্ত সেই দলের আগমন না ঘটে, সে পর্যন্ত আওয়ামী লীগের নেতৃত্বেই এগিয়ে যাক বাংলাদেশ। বাংলাদেশের অগ্রসরমান প্রজন্ম।
----------------------------------------------------------------------------------------------
দৈনিক ভোরের কাগজ ॥ ঢাকা ॥ শনিবার, ৫ সেপ্টেম্বর ২০১৫ প্রকাশিত
©somewhere in net ltd.