![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
এই ব্লগের সকল মৌলিক লেখার স্বত্ত্ব লেখকের।এখান থেকে কোনো লেখা লেখকের অনুমতি ছাড়া অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা, অনুলিপি করা গ্রহনযোগ্যনয়। তা সৃজনশীল কাজের পরিপন্থী। লেখা অন্য কোথাওপ্রকাশ, ছাপা করতে চাইলে লেখকের সম্মতি নিতে হবে। লেখকের ইমেল - [email protected]
স্থিতিশীলতার রাজনীতি ও শান্তির প্রত্যাশা
ফকির ইলিয়াস
===============================================
ঢাকায় একজন ইতালীয়কে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। গেল সোমবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে তাভেলা সিজার (৫১) নামের ওই ইতালীয় নাগরিককে গুলি করে হত্যার কয়েক ঘণ্টা পরই এর দায় স্বীকার করেছে একটি জঙ্গি সংগঠন। এ ঘটনার মাধ্যমে বাংলাদেশকে সঙ্কটময় করে তোলার চেষ্টা করা হয়েছে।
পবিত্র ঈদুল আজহা চলে গেল। আমরা সবাই বিশ্বের মানুষের জন্য ত্যাগের শান্তি কামনা করলাম। চাইলাম সামাজিক সম্প্রীতি।
রাজনৈতিক সম্প্রীতি একটি রাষ্ট্রকে অগ্রসর করে নানাভাবে। আসে স্থিতিশীলতা। পারস্পরিক ভাব বিনিময়, মানুষে মানুষে কথার জানালা খুলে দেয়। তা ধর্মের আলোকে যেমনটি হতে পারে, তেমনি হতে পারে সামাজিক বলয়েও। বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে এ বিষয়টি আছে। তবে তা আছে শুধুমাত্র কেতাবে-কলমে। বাস্তবে এর ফলাফল শূন্য।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পবিত্র ঈদুল আজহার শুভেচ্ছা জানিয়েছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে বিএনপির দফতর বিভাগের একটি প্রতিনিধি দল চেয়ারপারসনের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছাস্বরূপ বিশেষ ঈদ কার্ড পৌঁছে দেন। দলীয় প্রধানের শুভেচ্ছা কার্ড বহনকারী বিএনপির প্রতিনিধি দলে ছিলেন দলটির সহ-দফতর সম্পাদক আব্দুল লফিফ জনি, সহ-দফতর সম্পাদক আসাদুল করিম শাহীন, শামীমুর রহমান শামীম প্রমুখ। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির সহ-সম্পাদক সেকান্দার আলীর কাছে ঈদ কার্ড তুলে দেন আব্দুল লতিফ জনি। এ সময় উপস্থিত ছিলেন স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির সহ-সম্পাদক অহিদুজ্জামান ও সুশান্ত বাইন। এর আগে দুদিন আগে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় নয়াপল্টনে আওয়ামী লীগের পক্ষে সহ-সম্পাদক মো. সিকান্দার আলী, সুশান্ত কুমার বাইন এবং কেএম ওয়াহিদুর রহমান দলের সভানেত্রীর পক্ষ থেকে বিএনপি চেয়ারপারসনকে শুভেচ্ছা কার্ড পৌঁছে দেন। শুভেচ্ছা কার্ড গ্রহণ করেছিলেন বিএনপির মুখপাত্র আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ড. আসাদুজ্জামান রিপন। খবরটি গোটা দেশবাসীর জন্য আনন্দের ছিল। কিন্তু এই যে আনন্দ সংবাদ, তা কি জনগণের আইওয়াশ নাকি অন্য কিছু? এই প্রশ্নটি আসতেই পারে খুব সঙ্গত কারণে।
বাংলাদেশের প্রধান রাজনৈতিক দুটো দলের মাঝে কেন সহনশীলতা গড়ে উঠছে না, এ প্রশ্নটি অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষক করেন। কিন্তু এর মূল কারণগুলো তারা নিজেরাই চেপে যান খুব কৌশলে। চলতি বছরের শুরুর তিনটি মাসের দিকে আমরা তাকাতে পারি। কী এক ভয়াবহ আগুন সন্ত্রাস চালানো হয়েছিল ওই সময়ে। গাড়ি ভাঙচুর ও আগুন লাগানোর জন্য ভাড়া করা হয়েছিল লোকদের। ওই সময়ে প্রকাশিত সংবাদে আমরা দেখেছি, রাজধানী ঢাকাতো বটেই, দেশের বিভিন্ন শহরে, এমনকি দেশের বাইরেও লোক ভাড়া করে জমিয়ে তোলা হয়েছিল হরতাল, বিক্ষোভ, মিছিল আর মানববন্ধনের মতো কর্মসূচি। রাজধানীতে ভাড়ায় নাশকতামূলক তৎপরতা চালায় এমন এক গ্রুপের প্রধান বলেছিল, গাড়ি পোড়াতে ১৫ হাজার টাকা লাগে। ভাঙচুর হয় ৫ হাজারে। আর ঝটিকা মিছিলের জন্য দেয়া জনপ্রতি ১শ’ টাকা করে। এসবের বাইরে কোনো অস্ত্র নিয়ে কোনো কর্মসূচিতে অংশ নিলে প্রতিটির জন্যই ছিল নির্ধারিত ভাড়া। বন্দরনগরী চট্টগ্রামে প্রতিটি আগ্নেয়াস্ত্রের জন্য পাঁচ হাজার টাকা ভাড়া দেয়া হয় বলে অভিযোগ উঠেছিল মিডিয়ায়। ওই শহরের মিছিলগুলোতে প্রায়শই যে তলোয়ার দেখা গিয়েছিল, সেগুলোর জন্য ভাড়া দেয়া হয় দুই হাজার টাকা করে। এই ছিল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের রাজনীতি! কি চেয়েছিলেন তারা?
আমাদের মনে আছে ২০১৫ এর ২১শে ফেব্রুয়ারিতে শহীদ মিনারে যাননি বেগম খালেদা জিয়া। রাজনীতিতে আসার পর প্রথমবারের মতো ভাষা শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে যাননি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। তার উপদেষ্টা ইনাম আহমেদ চৌধুরীর নেতৃত্বে নেতাকর্মীরা সকালে শহীদ বেদিতে ফুল দিয়েছিলেন। ‘সার্বিক পরিস্থিতি ও নিরাপত্তাজনিত’ কারণে খালেদা জিয়া এবার ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে যাননি বলে বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল। এ বিষয়ে ইনাম আহমেদ চৌধুরী বলেছিলেন, ‘দেশে এক অস্বস্তিকর পরিস্থিতি বিরাজ করছে। পারিপার্শ্বিক অবস্থা ও নিরাপত্তাজনিত কারণে দেশনেত্রী বেগম জিয়া এবার শ্রদ্ধা জানাতে আসতে পারেননি। তার পক্ষে আমরা পুষ্পস্তবক অর্পণ করেছি, দলের পক্ষেও আরেকটি পুষ্পস্তবক অর্পণ করেছি।’
ওই সময়ে দেড় মাসেরও বেশি, খালেদা জিয়ার গুলশানের কার্যালয়ে অবস্থানের কথা তুলে ধরে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘এমন একটা অবস্থা সেখানে কেউ যেতে পারেন না। কেউ গেলে আটক করা হয়। কার্যালয়ের ভেতর থেকে বেরুলে আবার ঢোকা যায় না। একটা অস্বস্তিকর পরিস্থিতি চলছে, কোনো স্বাভাবিক অবস্থা নেই। এসব কারণে বেগম জিয়া শহীদ মিনারে এবার আসতে পারেননি।’ অথচ আমাদের মানে আছে, আরাফাত রহমান কোকো মারা যার পর শোক জানাতে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী, বেগম খালেদা জিয়ার গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে গিয়েছিলেন। তাকে সেখানে ঢুকতে দেয়া হয়নি। প্রধানমন্ত্রী আসার দশ মিনিট আগে খালেদা জিয়ার অসুস্থ থাকার বিষয়টি সাংবাদিকদের জানান বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী অ্যাডভোকেট শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস। তিনি বলেছিলেন, ছেলের মৃত্যুশোকে মুহ্যমান খালেদা জিয়াকে ইঞ্জেকশন দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে রাখা হয়েছে। গাড়ি থেকে নেমে প্রধানমন্ত্রী সেখানে ২ মিনিট অবস্থান করেন। এরপর তিনি গাড়ির ভেতরে ৬ মিনিট বসেছিলেন। কিন্তু কার্যালয়ের মূল ফটক ভেতর থেকে তালা দেয়া থাকায় তিনি প্রবেশ করতে পারেননি। ঘটনাটি খুবই সাম্প্রতিক। তা কারো ভুলে যাবার কথা নয়। প্রধানমন্ত্রীর আসার আগেই বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ের ভেতর ও বাইরে বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী হাজির হয়েছিলেন। রাত ৮টা ২৫ মিনিটের দিকে কার্যালয়ের গেটের ভেতরের দিক থেকে তালা দেয়া হয়। রাত ৮টা ২০ মিনিটে গণভবন থেকে শেখ হাসিনা গুলশানের উদ্দেশে রওনা হওয়ার খবর নিশ্চিত হন সাংবাদিকরা। ৮টা ৩৩ মিনিটে শেখ হাসিনার গাড়িবহর গুলশান কার্যালয়ের সামনে পৌঁছায়। সেখানে প্রায় ৮ মিনিট অবস্থানের পর প্রধানমন্ত্রীর গাড়িবহর গুলশান কার্যালয় ত্যাগ করে। অবস্থা যদি এমনই হয় তাহলে রাজনৈতিক সম্প্রীতি গড়ে উঠবে কিভাবে?
বাংলাদেশে প্রধান যে দ্বন্দ্বটি চলছে তা হলো মৌলবাদ তোষণ। এই কাজটি করছে বিএনপি। তারা রাজনৈতিক যাত্রাই করেছিল ডানপন্থি একটি গোষ্ঠীর ছত্রছায়ায়। বিএনপি ধর্মীয় তমদ্দুনকে কাজে লাগিয়ে এদেশে ভোটের ভাগ চেয়েছিল। এবং তারা তা করেছেও তাদের শাসনামলে। চিহ্নিত রাজাকার-আলবদরদের গাড়িতে মন্ত্রীর পতাকা তুলে দিয়েছে এই বিএনপিই। ফলে তারা এখনও জঙ্গিবাদী-মৌলবাদীদের সঙ্গে তাদের গাটছাড় ছিন্ন করতে পারছে না। এবং তারা তা কোনোদিন পারবে বলেও মনে হয় না। কথাটা সেখানেই। রাষ্ট্রীয় মূলনীতিতে বিশ্বাসের ঐক্য না থাকলে রাজনৈতিক সম্প্রীতি গড়ে উঠতে পারে না। বাংলাদেশে তাই সেই ইচ্ছে বারবারই চুপসে গেছে।
বিশ্বের রাজনৈতিক ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, কোনো রাষ্ট্রে রাজনৈতিক দীনতা ও অশৃঙ্খলা জিইয়ে রাখলে সে দেশে অন্যান্য সামাজিক বিষফোঁড়াও মাথাচাড়া দিয়ে উঠে। আমরা বাংলাদেশের বিভিন্ন অঙ্গনে এই বিষয়টি খুব বেশি দেখছি আজকাল। হাতে হাতে যারা আইফোন নিয়ে ঘুরে, এদের কেউ কেউ অন্যের ছবি তুলে ব্ল্যাকমেইলিং করার সাহস দেখাচ্ছে। আবার পারও পেয়ে যাচ্ছে রাজনৈতিক মদতে। খবর বেরিয়েছে, একজন প্রাক্তন সচিব জোর করে কিডনি নিয়ে নিয়েছেন তার গৃহকর্মীর। তিনি বলেছেন, ‘যদি কিডনি দিস তাহলে অনেক টাকা পাবি। ওই টাকা দিয়ে অসুস্থ স্বামী আর সন্তানদের নিয়ে বাকি জীবন সুখে থাকতে পারবি।’ কথাটি সরকারের সাবেক এক অতিরিক্ত সচিবের। যিনি মিথ্যা মামলায় জেলের ভয় দেখিয়ে গৃহকর্মীর কাছ থেকে নিজের সন্তানের জন্য এভাবেই জোরপূর্বক কিডনি আদায় করেন। সাবেক এ অতিরিক্ত সচিবের নাম সৈয়দ আমিনুর রহমান। যার এহেন গুরুতর অন্যায় কাজে সহায়তা করেছিলেন গুলশান থানার সংশ্লিষ্ট কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তা। আর শেষ পর্যন্ত জেল-জুলুমের ভয়ে নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধে কিডনি দিতে বাধ্য হন জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার বহুতি গ্রামের আয়রন নেছা। শুধু এখানেই শেষ নয়, কিডনি দেয়ার বিনিময়ে ১০ লাখ টাকা দিতে চাইলেও দেয়া হয় মাত্র আড়াই লাখ টাকা। অতিরিক্ত সচিবের ছেলে সুস্থ জীবনে ফিরে এলেও কিডনি দিয়ে একরকম মৃত্যুশয্যায় দিনাতিপাত করছেন অজপাড়াগাঁয়ের আয়রন নেছা। তার খবর এখন কেউ রাখে না। [সূত্র : দৈনিক যুগান্তর, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৫]
এই হলো আজকের বাংলাদেশের সামাজিক দুর্বৃত্তপনার একটি চিত্র। এমন চিত্র বাংলাদেশে প্রতিদিনই খুঁজলে পাওয়া যাবে। এর প্রতিকার কি? সমাজ এগোবে কিভাবে? এসব বিষয়ে রাজনীতিকদেরই ভাবতে হবে। কারণ, আইন প্রণয়ন তারাই করেন। রাষ্ট্রে ক্ষমতার প্রতিপত্তির বিস্তার তারাই ঘটান বিভিন্নভাবে। বিদেশে এসে আবারো রাজনৈতিক আলোচনার পাদপ্রদীপে এসেছেন আমাদের নোবেল লরিয়েট ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি নিউইয়র্কে বিএনপি-যুক্তরাষ্ট্র শাখার একটি কালো পতাকা মিছিলে ফটোসেশন করেছেন। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী যখন নিউইয়র্কে ছিলেন তখন ড. ইউনূস বিএনপির ওই প্রতিবাদ মিছিলে যোগ দেন। তার সহাস্য ছবি মিডিয়ায় এসেছে। তিনি কি তবে তার রাজনৈতিক এজেন্ডার দিকে এগোচ্ছেন?
বাংলাদেশ আজ ভোগবাদী রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। এখানে সাম্য ও মানবতাবোধ যেন সোনার হরিণ। এর কারণ কি? কেন নারী ধর্ষিতা হওয়ার পরও মুখ খুলতে পারে না? কেন রাজনীতিকরাই ছাড়িয়ে আনেন ধর্ষকদের? এই বিষয়গুলো মানুষকে অনুধাবন করতে হবে। লোক দেখানো সম্প্রীতির দলিল-দস্তাবেজ গণমানুষের কোনো কাজে আসে না। মানুষ সামাজিক শান্তি চায়। এর পক্ষেই দাঁড়াতে হবে রাজনীতিকে, রাজনীতিকদের।
-------------------------------------------------
দৈনিক আজকের পত্রিকা ॥ ঢাকা ॥ ৩ অক্টোবর ২০১৫ শনিবার প্রকাশিত
©somewhere in net ltd.
১|
০৩ রা অক্টোবর, ২০১৫ সকাল ৯:৩০
থিওরি বলেছেন: "সাম্য ও মানবতাবোধ যেন সোনার হরিণ। "
সহমত