![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
এই ব্লগের সকল মৌলিক লেখার স্বত্ত্ব লেখকের।এখান থেকে কোনো লেখা লেখকের অনুমতি ছাড়া অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা, অনুলিপি করা গ্রহনযোগ্যনয়। তা সৃজনশীল কাজের পরিপন্থী। লেখা অন্য কোথাওপ্রকাশ, ছাপা করতে চাইলে লেখকের সম্মতি নিতে হবে। লেখকের ইমেল - [email protected]
যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ
ফকির ইলিয়াস
====================================
বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। এগোচ্ছে মানুষ। বৈদেশিক মুদ্রা, কৃষি ও গার্মেন্টস শিল্প বাংলাদেশের অন্যতম শক্তি। শক্তি এ দেশের প্রতিটি মানুষ। যারা মহান একাত্তরের চেতনায় এই দেশ স্বাধীন করেছিলেন। সে বিষয়গুলো আবারো প্রমাণিত হচ্ছে। স্বীকৃতি পাচ্ছে এই দেশ। এই দেশের প্রজন্ম। সংকট যে নেই তা আমি বলছি না। অভাব যে নেই তা আমি বলছি না। সমস্যা যে নেই তাও আমি বলছি না। সংকট-সমস্যা-অনটন কোথায় নেই? আছে খোদ আমেরিকায়ও। রেড এলার্ট-ইয়েলো এলার্ট যে কোনো মুহ‚র্তে কেড়ে নেয় ইউরোপ, আমেরিকার মানুষের দিন-দুপুর।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘ অধিবেশন শেষ করে গেলেন। এ বছর জাতিসংঘে বাংলাদেশ নতুন পরিচয়ে উপস্থাপিত হয়েছে। বাংলাদেশ এবার আইসিটি এওয়ার্ড পেয়েছে। ইন্টারন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন ইউনিয়নের (আইটিইউ) পক্ষ থেকে দেয়া আইসিটি সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট এওয়ার্ড গ্রহণ করেছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। আর পুরস্কার হাতে নিয়ে তা উৎসর্গ করছেন দেশের তরুণ প্রজন্মকে। আইটিইউয়ের মহাসচিব হুলিন ঝাও এই পুরস্কার তুলে দেন শেখ হাসিনার হাতে। জাতিসংঘ সদর দপ্তরে পুরস্কার জয়ীদের সম্মানে আয়োজন করা হয় বিশেষ নৈশভোজেরও। আইটিইউয়ের ১৫০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে এ বছরই প্রথম আইসিটি এওয়ার্ড দেয়া হয়েছে। বিশ্বের আরো কয়েকজন রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানের সঙ্গে এই এওয়ার্ড পান প্রধানমন্ত্রী। টেকসই উন্নয়নে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহারে দক্ষতা ও পারঙ্গমতার জন্যই এই পুরস্কার দেয়া হয়। আইসিটি খাতে সফলতার গল্প, আর সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আইসিটি খাতে উন্নয়নের যারা স্বাক্ষর রাখতে পেরেছেন তাদের জন্যই এই পুরস্কার। টেকসই উন্নয়ন এজেন্ডার যে ১৭টি লক্ষ্যমাত্রা নেয়া হচ্ছে তার বাস্তবায়নে আইসিটির গুরুত্ব মাথায় রেখেই এই পুরস্কার প্রণয়ণ করেছে আইটিইউ।
এবার চ্যাম্পিয়ন্স অব দ্য আর্থ সম্মানে ভূষিত হয়েছে বাংলাদেশ। এই পদকটিও গ্রহণ করেছেন শেখ হাসিনা। মাতৃধরণীর জন্য কাজ করে, ধরণীকে সুন্দর রাখতে নিজেকে নিয়োজিত করে এই অভিধা জয় করেছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিশ্ব জানে নানা প্রতিক‚লতা পেরিয়ে এগোচ্ছে বাংলাদেশ। সাধ আছে সাধ্য নেই। তারপরও থেমে নেই মানুষ। বিশ্বের কাছে সেটা বিস্ময়ের, সেটাই প্রশংসার হয়েছে আজ। পুরস্কার হাতে পেয়ে দেশবাসীর কথা বলতে ভোলেননি শেখ হাসিনা। তিনি সাধারণ মানুষের উদ্ভাবনী দক্ষতার প্রশংসা করে বিশ্ব ফোরামে বলেছেন, দেশের জনগণ তাদের নিজ নিজ বাড়িতেই যেসব সমাধান আনছেন তা জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় গুরুত্বপূর্ণ ফল বয়ে আনছে। বাংলাদেশে এরই মধ্যে ৪০ লাখ সোলার প্যানেল বসানো হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরাই হতে চলেছি বিশ্বের প্রথম ‘সোলার নেশন’। শেখ হাসিনা বিশ্বফোরামকে আরো জানিয়েছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের পরেও দেশে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি জনসংখ্যার বৃদ্ধির হারকে ছাড়িয়ে গেছে। ফলে নিশ্চিত হয়েছে ১৬ কোটি মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা। এ উন্নয়নে আরেক বিস্ময়! চ্যাম্পিয়ন্স অব দ্য আর্থ পুরস্কারকে বাংলাদেশের মানুষ জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে যে অব্যাহত লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে, তারই স্বীকৃতি। তাই দেশের মানুষের পক্ষ থেকেই আমি এই পুরস্কার গ্রহণ করছি, বলেন শেখ হাসিনা।
জাতিসংঘের পরিবেশ বিষয়ক কর্মসূচি, শেখ হাসিনাকে দেয়া এই পুরস্কারের ঘোষণায় তাকে জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যুতে সামনের সারির অনন্য সাধারণ নেতৃত্ব বলে উল্লেখ করেছে। পরিবেশ সচেতন নীতিগ্রহণের মাধ্যমে ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে মধ্য আয়ের দেশ আর ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে পরিণত করতে শেখ হাসিনার যে উদ্যোগ তার প্রশংসা করা হয়েছে এই ঘোষণায়।
এই যে অর্জন, তা তো বাংলাদেশ এগিয়ে যাওয়ারই সনদ। দুর্মুখেরা যাই বলুক না কেন- তা সম্ভব হচ্ছে বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে। আমরা জানি, বাংলাদেশ বিশ্বের সবচেয়ে বেশি ঘন-জনবসতির দেশগুলোর একটি। প্রতি বর্গকিলোমিটারে ১,২১৮ জন। আর মাথাপিছু চাষযোগ্য জমি সবচেয়ে কম অর্থাৎ ০.০৫ হেক্টর। জলোচ্ছ¡াস, অস্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের মতো আবহাওয়ার চরম বৈরী আচরণ জলবায়ু পরিবর্তনেরই প্রভাব। যাতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বাংলাদেশের কৃষি উৎপাদন, শিল্পোন্নয়ন আর সামাজিক অবকাঠামো। তারপরও বাঁচার সংগ্রাম অব্যাহত রেখেছেন বাংলাদেশের কৃষক স¤প্রদায়। আমাদের মনে আছে, শেখ হাসিনা এর আগেও জয় করেছেন জাতিসংঘের অপর সংস্থা ইউনেস্কোর উফুয়ে বোইনি শান্তি পুরস্কার ১৯৯৮। পার্ল বাক এওয়ার্ড ১৯৯৯। ফাও’র কেরেস মেডাল। ইন্দিরা গান্ধী শান্তি পুরস্কার ২০০৯ ও গ্লোবাল সাউথ-সাউথ ডেভেলপমেন্ট এক্সপো এওয়ার্ড-২০১৪।
এবারের জাতিসংঘের ঘোষণায় শেখ হাসিনাকে বিশ্ব নেতৃত্বের সামনে একজন উপমা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা শেখ হাসিনা তার বাবা, মা ও তিন ভাই নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার হওয়ার পর শত প্রতিক‚লতার মধ্যেও যেভাবে নিজেকে দৃঢ় রেখে সামনে এগিয়ে গেছেন সে কথা উল্লেখ করা হয়েছে এই ঘোষণায়। তার নেতৃত্বের প্রশংসা করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা।
বাংলাদেশ বিশ্বে একটি বিশেষ পরিচিতি পেয়েছে শান্তিরক্ষা মিশনে বড় আকারে অংশ নেয়ার সুযোগে। এবার জাতিসংঘ সদর দপ্তরে শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের ওপর অনুষ্ঠিত এক সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জাতীয় শান্তিরক্ষা কৌশলপত্র প্রণয়ন এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। তিনি বলেন, সেনা ও পুলিশ সদস্য পাঠিয়ে শীর্ষ অবদানকারী দেশ হিসেবে শান্তি মিশনে বাংলাদেশ আরো এগিয়ে যেতে প্রস্তুত। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের পাশাপাশি অনুষ্ঠিত এ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সঙ্গে কো-চেয়ারপার্সনের দায়িত্ব পালন করেছেন।
শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট পিস সাপোর্ট অপারেশন্স এন্ড ট্রেনিং (বিআইপিএসওটি) প্রতিষ্ঠা করেছে। তিনি বলেন, শান্তিরক্ষীদের বিশেষ করে নারী শান্তিরক্ষীদের প্রশিক্ষণের জন্য একটি উৎকর্ষের কেন্দ্র হিসেবে এই ইনস্টিটিউট গড়ে তোলা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ শান্তিরক্ষায় অবদানকারী অন্যান্য দেশের সেনা ও পুলিশকে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও কারিগরি সহায়তা দিতে প্রতিশ্রæতিবদ্ধ। সেই সঙ্গে বাংলাদেশ বেসামরিক লোকদের রক্ষা করা এবং নারীদের ও মানবাধিকার রক্ষায়ও অঙ্গীকারবদ্ধ। তিনি শান্তিরক্ষীদের দ্বারা যৌন হয়রানির ঘটনায় ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি অনুসরণের আহ্বান জানিয়ে বলেন, শান্তিরক্ষীদের সুরক্ষা ও নিরাপত্তায় সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘ মহাসচিবের সুপারিশমালার প্রতি পূর্ণ সমর্থন ব্যক্ত করে সারাবিশ্বে শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে একসঙ্গে কাজ করার জন্য শান্তিরক্ষার কাজে নিয়োজিত সব সদস্যের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
নিউইয়র্কের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ওয়ার্ল্ড লিডার্স ফোরামে ‘গার্লস লিড দি ওয়ে’ শীর্ষক বক্তৃতা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন- ‘আমাদের নারীরা প্রমাণ করেছেন যে, সুযোগ দেয়া হলে তারা সব প্রতিক‚লতা অতিক্রম করতে এবং চাইলে উৎকর্ষ অর্জন করতে পারে। সরকারে আমাদের কাজ হচ্ছে সমতা ও মর্যাদার সঙ্গে সমৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যে তাদের জন্য সঠিক সুযোগ সৃষ্টি করা।’ তিনি আরো বলেছেন- ‘বাংলাদেশ নারীদের বিরুদ্ধে সব ধরনের বৈষম্য ও সহিংসতার অবসান ঘটানোর লক্ষ্যে কাজ চালিয়ে যেতে দৃঢ় অঙ্গীকারবদ্ধ। আমরা আমাদের নারী ও মেয়েদের জন্য একটি নিরাপদ পরিবেশ সৃষ্টি করব।’ মানুষ আশা চায়। মানুষ স্বপ্ন দেখতে চায়। বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী সেই কাজটি করে যাচ্ছেন খুব দক্ষতার সঙ্গে। শেখ হাসিনা এবার জাতিসংঘ সফরের সময় মার্কিন ব্যবসায়ীদের যে তথ্যটি জানিয়েছেন তা অবশ্যই আশা জাগানিয়া। তিনি বলেছেন- ‘বিগত ছয় বছরে বাংলাদেশের অর্থনীতির আকার প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। মাথাপিছু জিডিপি ১,৩১৪ ডলারে দাঁড়িয়েছে। গত অর্থবছরে বৈদেশিক বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ৭০ বিলিয়ন ডলারের ওপরে। বৈশ্বিক রপ্তানি ৩১.২ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে।’
একটি রাষ্ট্রের অন্যতম সহায়ক শক্তি হচ্ছে স্থিতিশীলতা। রাজনৈতিক দূরদর্শিতা, প্রজ্ঞা ও বিচক্ষণতা তা প্রতিষ্ঠা করতে পারে। এ বছর বিশ্ব নেতৃবৃন্দ তাদের আলোচনায় যেভাবে বারবার বাংলাদেশের নাম উল্লেখ করেছেন- তা যে কোনো সময়কে হার মানিয়েছে। এই অর্জন ছোট করে দেখার নয়।
ইন্টারনেটে আউটসোর্সিং করে ভাগ্য বদলাচ্ছে বাংলাদেশের তারুণ্য। বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের আকর্ষণীয় এই সুযোগটি বহির্বিশ্বের পাশাপাশি বাংলাদেশেও এখন বেশ জনপ্রিয়। বিশ্বের জনপ্রিয় মার্কেটপ্লেস ওডেস্ক থেকে বাংলাদেশের তরুণরা কাজ করেছে। অপর মার্কেটপ্লেস ফ্রিল্যান্সার ডটকমে বাংলাদেশি পেশাজীবীরা ভালো আয় করেছেন। বাংলাদেশি তরুণরা দিনে কোটি টাকার বেশি আয় করছে ইন্টারনেটে আউটসোর্সিং করে। প্রতিনিয়ত এই বাজার বাড়ছে। বাংলাদেশের ফ্রিল্যান্সাররা এই টাকার ক্ষুদ্রতম অংশের কাজ করে। অথচ সস্তা শ্রমমূল্যের কারণে এই বিপুল টাকার বড় অংশই বাংলাদেশে আনার সুযোগ রয়েছে। আইটি স্পেশালিস্টরা বলেছেন, দক্ষ জনশক্তি সৃষ্টি ও ঘরে ঘরে সাশ্রয়ী ইন্টারনেট দিতে পারলে অল্প সময়ে এ খাতের আয় আমাদের রপ্তানি আয়ের অন্যতম প্রধান উৎসে পরিণত হবে বাংলাদেশ।
আমরা দেখেছি, এ বছর জাতিসংঘ অধিবেশনে যোগ দিতে এসে ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদি আমেরিকার আইটি সিটি বলে সুখ্যাত সিলিকন ভ্যালি সফর করেছেন। তথ্য-উপাত্ত নিয়েছেন আইটি ফিল্ডের। এই বিবেচনা মাথায় রেখে বাংলাদেশকেও এগোতে হবে। বাংলাদেশের তারুণ্য একটি অন্যতম শক্তি। এই শক্তিকে অনুপ্রেরণা দিয়ে এগিয়ে নিতে হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, এই কাজটি পারবেন- সেই চেতনা ও প্রত্যয়ের প্রতি মানুষ ক্রমশই দৃঢ়তার সঙ্গে আস্থাবান হচ্ছেন।
------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
দৈনিক ভোরের কাগজ || ঢাকা || ৩ অক্টোবর ২০১৫ শনিবার
©somewhere in net ltd.