নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আলোর আয়না এই ব্লগের সকল মৌলিক লেখার স্বত্ত্ব লেখকের।এখান থেকে কোনো লেখা লেখকের অনুমতি ছাড়া অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা, অনুলিপি করা গ্রহনযোগ্য নয়।লেখা অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা করতে চাইলে লেখকের সম্মতি নিতে হবে। লেখকের ইমেল - [email protected]

ফকির ইলিয়াস

এই ব্লগের সকল মৌলিক লেখার স্বত্ত্ব লেখকের।এখান থেকে কোনো লেখা লেখকের অনুমতি ছাড়া অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা, অনুলিপি করা গ্রহনযোগ্যনয়। তা সৃজনশীল কাজের পরিপন্থী। লেখা অন্য কোথাওপ্রকাশ, ছাপা করতে চাইলে লেখকের সম্মতি নিতে হবে। লেখকের ইমেল - [email protected]

ফকির ইলিয়াস › বিস্তারিত পোস্টঃ

ষড়যন্ত্রের নাগপাশ ও জনগণ

৩১ শে অক্টোবর, ২০১৫ সকাল ৭:৪৩





ষড়যন্ত্রের নাগপাশ ও জনগণ
ফকির ইলিয়াস
=============================
ওরা তৎপর। তারা একের পর এক ষড়যন্ত্র করেই যাচ্ছে। দেশে থেকে তো বটেই। বিদেশে গিয়েও। তাদের লক্ষ্য দেশকে অস্থিতিশীল করে তোলা। এর জন্য যা যা দরকার তারা করছে। আশুরার রাতে পুরান ঢাকায় তাজিয়া মিছিলে হামলা করা হয়েছে। আশুরা উপলক্ষে শিয়াদের তাজিয়া মিছিলের প্রস্তুতি চলার সময় বোমা হামলায় অন্তত এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। এই ঘটনায় ৬০ জনেরও বেশি মানুষ আহত হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। ঢাকার হোসনি দালান চত্বরে আশুরার দিবাগত রাত দুটার দিকে এ হামলা ঘটে। বাংলাদেশে এই প্রথম তাজিয়া মিছিলে বোমা হামলার ঘটনা ঘটল।

এই তাজিয়া মিছিলের সংগঠকদের অন্যতম একজন এম এম ফিরোজ হোসাইন বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, ‘আমরা শিয়া মুসলিমরা ৪০০ বছর ধরে ঢাকায় এই তাজিয়া মিছিলের আয়োজন করে আসছি। কখনো আমরা কোনো ধরনের হুমকি পাইনি এবং কখনো আমাদের ওপর কোনো হামলাও হয়নি। বাংলাদেশে সবার সঙ্গে ভালো সম্পর্ক এবং স¤প্রীতির পরিবেশ আমরা পেয়েছি।’ কিন্তু সেই স¤প্রীতিতে কুঠারাঘাত করার চেষ্টা করা হয়েছে। কারা এটা করেছে? কেন করেছে?

হামলার ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইইউ- উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। শঙ্কা প্রকাশ করেছে গোটা বিশ্ব। বোমা হামলার ঘটনার পর যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত মার্শা স্টিফেনস ব্লুম বার্নিকাট এক ফেসবুক বার্তায় বলেন, এ ধরনের বোমা হামলা ‘অর্থহীন’ এবং নিন্দনীয়। তিনি হামলার ঘটনায় হতাহতদের প্রতি সমবেদনা জানান এবং এ ঘটনার কঠোর নিন্দা জানান। তিনি বর্তমান পরিস্থিতিকে ‘জটিল’ উল্লেখ করে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের জনগণের পাশে থাকবে বলে উল্লেখ করে।

যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনার রবার্ট গিবসন এক টুইট বার্তায় বলেন, তাজিয়া মিছিলে কাপুরুষোচিত হামলা হয়েছে। এ ধরনের হামলা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। তিনি নিহত ও আহতদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। ইউরোপীয় ইউনিয়নের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, তাজিয়া মিছিলে বর্বর বোমা হামলার ঘটনায় ঢাকায় নিযুক্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত পিয়েরে মায়াদুন ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন এবং উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট আইনশৃঙ্খলা রক্ষা কর্তৃপক্ষকে যথাযথ তদন্তের মাধ্যমে এ ঘটনায় জড়িতদের বিচারের মুখোমুখি করার আহ্বান জানান।

এই যে হামলাগুলো চলছে এর প্রধান উদ্দেশ্য হলো বিশ্বের কাছে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ করা। বাংলাদেশকে একটি ‘জঙ্গলি রাষ্ট্র’ হিসেবে পরিচিত করা। অন্যদিকে এসব ঘটনার মাধ্যমে বেরিয়ে আসছে ষড়যন্ত্রকারীদের প্রকৃত চেহারা। ইতোমধ্যে যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে- তারা বলছে তাদের ‘বড়ভাই’দের নাম।

গত ২২ অক্টোবর গাবতলীতে রাত ন’টায় দারুস সালাম থানার এএসআই ইব্রাহিম মোল্লাকে ব্যাগ তল্লাশির সময় ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়। মূল হত্যাকারী পালিয়ে যায়। তবে ধরা পড়ে মাসুদ রানা (২৪) নামে একজন। খবর বেরিয়েছে, স্বাধীনতা বিরোধী একটি মৌলবাদী দলের প্রত্যক্ষ মদদে হোসনি দালানে বোমা হামলা ও গাবতলীতে পুলিশ কর্মকর্তা হত্যার ঘটনা ঘটেছে। ওই সংগঠনের ছাত্র সংগঠনটির বেশ কয়েকটি গ্রুপ মারাত্মক বিস্ফোরক ও আগ্নেয়াস্ত্রে সজ্জিত হয়ে বিভিন্ন জায়গায় নাশকতা চালানোর পরিকল্পনা করছে। ভবিষ্যতে এ ধরনের আরো ঘটনা ঘটানো হতে পারে। পুলিশ কর্মকর্তা হত্যা ও হোসনি দালানে বোমা হামলা একসূত্রে গাঁথা। এ জন্য একত্রে চলছে দুটি মামলার তদন্ত। বোমা হামলায় জড়িতরা জঙ্গিবাদী প্রশিক্ষিত সদস্য।

আরো ভয়াবহ কথা বেরিয়ে এসেছে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের মুখ থেকে। তিনি বলেছেন, ইতালীয় নাগরিক সিজার তাভেলা হত্যাকাণ্ডের সন্দেহ তালিকায় আছে বিএনপির সাবেক কমিশনার এম এ কাইয়ুম। একটি বেসরকারি টেলিভিশনকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সিজার হত্যাকাণ্ডে কাইয়ুমের নাম উঠে এসেছে।

তদন্তকারী সংস্থার সূত্রের বরাত দিয়ে মিডিয়াগুলো জানাচ্ছে, বিদেশি হত্যার সঙ্গে জড়িত কথিত বড়ভাই কাইয়ুম কমিশনারের নির্দেশদাতা হিসেবে আরেক বড়ভাই জড়িয়ে আছেন। নির্দেশদাতা ওই বড়ভাইকেও খোঁজা হচ্ছে। কমিশনার কাইয়ুম ও নির্দেশদাতা আরেক ভাই প্রবাসে রয়েছেন। বলা হচ্ছে, সিজার তাভেলা হত্যাকাণ্ডের শিকড় অনেক গভীরে।

মিডিয়ায় যেসব সংবাদ আসছে- তা খুবই ভয়াবহ। তাভেল্লা হত্যায় অংশ নেয়া খুনিদের মধ্যে শুটার রুবেল এবং মোটা রাসেল দুজন ইয়াবা ব্যবসায় জড়িত। এদের মধ্যে ৪০ হাজার টাকার লেনদেন নিয়ে ঝামেলা ছিল। খুনের আগে রুবেল ইয়াবা ব্যবসায় ৪০ হাজার টাকা লোকসান দেখায়। কিন্তু রাসেল তা মানতে নারাজ। রাসেলের দাবি ছিল- রুবেল এ টাকা মেরে দিয়েছে। পরে রুবেল তাকে এ টাকা পরিশোধ করবে বলে কথা দেয়। এক পর্যায় রাসেল তাকে জানায়, তার কাছে একটা কাজ আছে। তখন রুবেল জানায়, তার কোনো কাজ করতে সমস্যা নেই। রাসেল বলে, গুলশানে একটা বিদেশি নাগরিককে খুন করতে হবে। এতে রুবেল রাজি হয়। রুবেল তখন রাসেলকে জানায়, গুলশানের মার্ডারের পর যে টাকা পাবে সেখান থেকে সে তাকে ওই ৪০ হাজার টাকা পরিশোধ করবে। কিন্তু বিদেশি খুনের পর রুবেলের কাছে টাকা চাইতে গেলে উভয়ের মধ্যে বাক্বিতণ্ডাও হয়। পরে তাদের মোবাইলে কয়েক দফায় কথা কাটাকাটিও হয়। বিদেশি নাগরিক হত্যা থেকে তাদের অর্থ আয়ের বিষয়টি প্রযুক্তিগত অনুসন্ধানেও বেরিয়ে আসে।

প্রশ্ন হচ্ছে এদের মদদদাতা কে? নেপথ্য কলকাঠি কারা নাড়ছে? এসব বিষয় বের করা সরকারের দায়িত্ব। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম সাংবাদিকদের বলেছেন, ওয়াশিংটনে বিএনপি লবিস্ট ফার্ম নিয়োগ করে সরকারের বিরুদ্ধে অপতৎপরতা চালাচ্ছে। তাদের এই অর্থের উৎস অনুসন্ধান করবে সরকার। অর্থের উৎস সম্পর্কে বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমেও জানতে চাওয়া হবে। বিএনপি যেহেতু নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল, সেহেতু নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমেও এ বিষয়ে তদন্তের জন্য সরকার অনুরোধ জানাবে বলে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী উল্লেখ করেন। এই চুক্তির কপি এখন ইন্টারনেটে ভেসে বেড়াচ্ছে। কত ডলার দিতে হবে, কিভাবে দিতে হবে, সবই লেখা আছে চুক্তিতে। তাই তা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই।

বর্তমান সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে নতুন করে বিদেশি লবিস্ট ফার্ম নিয়োগ করেছে বিএনপি। দুবাইভিত্তিক এ ফার্ম নিয়োগ দিয়ে ওয়াশিংটনে দলটি সরকারের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে। এই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে তারা যুদ্ধাপরাধের বিচার বন্ধে লবিং করছে। বাংলাদেশের সঙ্গে বিশ্বের চলমান বাণিজ্য কঠিন করে দেয়ার জন্য তাদের কাজ করতে বলা হয়েছে। এরা নির্বাচন ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন মহলের সঙ্গে বিএনপি সম্পর্ক জোরদারের জন্যও তৎপরতা চালাচ্ছে। বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাসহ অন্যান্য বিষয় নিয়েও সংস্থাটি কাজ করবে। এজন্য লবিস্ট ফার্ম একিন গাম্পের পেছনে কোটি কোটি টাকা ব্যয় করছে বিএনপি।

রাষ্ট্রকে একটি অজগরের নাগপাশে আবদ্ধ করতে চাইছে এই মহল। তারা ক্ষমতা পাওয়ার জন্য সব হীন মতলব আঁটছে। স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি তাদের প্রধান দোসর। সুযোগ পেলে এরা বাঙালি জাতিকে মধ্যযুগে ঠেলে দেবে- তা তাদের কাজকর্মই প্রমাণ করছে। এসব বিষয় বাংলাদেশের মানুষকে বুঝে ওঠা দরকার।

বিএনপি বাংলাদেশে এমন একটি রাজনৈতিক দল, যারা যখনই মুখোশ খসে পড়ে তখন আর দায় নিতে চায় না। একই ধ্বনি আবারো তুলেছেন বিএনপির এক মুখপাত্র। বিএনপির অন্যতম নীতিনির্ধারক নজরুল ইসলাম খান বলেছেন, তার দল হত্যার রাজনীতিতে ‘বিশ্বাস করে না’ বলে দলের কেউ খুনে জড়িত হলে তার দায় নেয়া হবে না। অথচ এই দলটি যুগে যুগে ক্যাডার পুষেছে- তা কে না জানে। এখন হঠাৎ করেই ‘দায় না নেয়া’র কসরত করলেই কি সব পাপ মুছে যাবে?

স¤প্রতি লন্ডনে ‘বাংলাদেশ : ইলেকশন, ডেমোক্রেসি এন্ড দ্য রোল অব ল’ শীর্ষক একটি সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেই সেমিনারে বিএনপি যোগ দেয়নি। ব্রিটিশ পার্লামেন্টে আয়োজিত বাংলাদেশ বিষয়ক সেমিনারে বিএনপি অংশ না নেয়ায় হতাশা ব্যক্ত করেছেন অল পার্টি পার্লামেন্টারি হিউম্যান রাইটস গ্রুপের ভাইস চেয়ার ও ব্রিটেনের প্রবীণ রাজনীতিক লর্ড এইভব্রি। তিনি বলেছেন, মামলার কারণে নেতাদের বিদেশে যেতে না পারার যে কারণ বিএনপি দেখিয়েছে তা ‘ভুয়া’। বিএনপির একাধিক নেতা এখনো লন্ডনে রয়েছেন, রয়েছেন অন্যান্য দেশেও। ইচ্ছে করলে তারা আসতে পারতেন। নিজেদের বিরুদ্ধে উত্থাপিত সহিংস আন্দোলনের নামে মানুষ হত্যা, জ্বালাও-পোড়াও, সন্ত্রাস সম্পৃক্ততা ইত্যাদি অভিযোগ খণ্ডনের জন্যই তাদের আসা উচিত ছিল।

বাংলাদেশে মৌলবাদী চক্র মরণ কামড় দিতে চাইছে। খবর বেরিয়েছে- জঙ্গি গ্রুপগুলোর এ ধরনের একটি পরিকল্পনা ছিল যে, কয়েকদিনের মধ্যে তারা সুযোগ বুঝে দেশি-বিদেশি যাত্রীবাহী যে কোনো বিমান ছিনতাই করবে। তাদের এ পরিকল্পনার তথ্য গোয়েন্দাদের হাতে চলে আসার পর তা সরকারের উচ্চ পর্যায়ে অবহিত করার সঙ্গে সঙ্গে এ নিরাপত্তা ব্যবস্থা বলবৎ করা হয়েছে। এছাড়া বিদেশিদের চলাচল, বিদেশিদের স্থাপনা, বিদেশিদের আবাসস্থলসমূহেও কঠোর নজরদারিতে আনা হয়েছে। এর পাশাপাশি লঞ্চঘাট, ট্রেন স্টেশন, বাস টার্মিনাল, বাস স্টপেজসমূহেও বাড়তি টহল আরোপ করা হয়েছে। এর অর্থ কি? তারা গোটা দেশের নিরপরাধ মানুষকে জিম্মি করতে চাইছে।

আমাদের মানে আছে, একাত্তর সালে পাকিস্তানি জল্লাদ জেনারেলরা বলেছিল, আমরা ‘পূর্ব পাকিস্তানের’ মাটি চাই। মানুষ চাই না। আর সে জন্যই তারা তিরিশ লাখ মানুষ খুন করেছিল মাত্র নয় মাসে। বাংলাদেশে কি তবে আবার সেই একাত্তরের প্রেতাত্মা উঁকি দিতে চাইছে? আবার কি এমন কোনো শক্তি মাথাচাড়া দিচ্ছে- যারা ক্ষমতা চায়, মানুষ চায় না। এই অপশক্তিকে মোকাবেলা করতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। রুখতে হবে এদের ষড়যন্ত্র।
---------------------------------------------------------------------------------------------
দৈনিক ভোরের কাগজ ॥ ঢাকা ॥ শনিবার, ৩১ অক্টোবর ২০১৫

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.