নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আলোর আয়না এই ব্লগের সকল মৌলিক লেখার স্বত্ত্ব লেখকের।এখান থেকে কোনো লেখা লেখকের অনুমতি ছাড়া অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা, অনুলিপি করা গ্রহনযোগ্য নয়।লেখা অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা করতে চাইলে লেখকের সম্মতি নিতে হবে। লেখকের ইমেল - [email protected]

ফকির ইলিয়াস

এই ব্লগের সকল মৌলিক লেখার স্বত্ত্ব লেখকের।এখান থেকে কোনো লেখা লেখকের অনুমতি ছাড়া অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা, অনুলিপি করা গ্রহনযোগ্যনয়। তা সৃজনশীল কাজের পরিপন্থী। লেখা অন্য কোথাওপ্রকাশ, ছাপা করতে চাইলে লেখকের সম্মতি নিতে হবে। লেখকের ইমেল - [email protected]

ফকির ইলিয়াস › বিস্তারিত পোস্টঃ

ধর্মীয় বিশ্বাসের বিরুদ্ধে নেপথ্যের কোন কালো হাত?

০৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ সকাল ১১:১৬





ধর্মীয় বিশ্বাসের বিরুদ্ধে নেপথ্যের কোন কালো হাত?
ফকির ইলিয়াস
===============================================
আবারো ধর্মীয় স্থাপনায় আক্রমণ করে বাংলাদেশকে কাঁপিয়ে তোলার চেষ্টা করা হচ্ছে। বগুড়ায় শিয়া মসজিদে হামলা করা হয়েছে। বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার হরিপুর নামক একটি গ্রামে একটি শিয়া মসজিদে ঢুকে অজ্ঞাতনামা কিছু লোক গুলি চালালে মারা গেছেন মোয়াজ্জেম হোসেন। যিনি ওই মসজিদের মুয়াজ্জিন। সন্ধ্যার নামাজ শেষ করার মুহূর্তে মসজিদের দরজায় দাঁড়িয়ে দু-তিনজন যুবক গুলি চালালে তিনজন গুলিবিদ্ধ হয়। বেশ কিছু শিয়া পরিবার হরিপুরে কয়েক প্রজন্ম ধরে বসবাস করছে। তবে গ্রামে শিয়া মসজিদটি ১৯৯২ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয়। এলাকাবাসী বলছেন, তাদের সঙ্গে স্থানীয় সুন্নি স¤প্রদায়ের কখনো কোনো সমস্যা হয়নি। শুধু স্থানীয় কওমি মাদ্রাসার লোকজন মাঝেমধ্যে তাদের নামাজ পড়ার ধরন নিয়ে কথা ওঠাতো। এদিকে খবর বেরিয়েছে, শিয়া মসজিদে হামলাকারী যারা গ্রেপ্তার হয়েছে- তারা মুখ খুলছে না। এর নেপথ্যে কারা? প্রশ্নটি আজ গোটা দেশবাসীর। শিয়া স¤প্রদায়ের মসজিদে হামলার ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। ঢাকার রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাট এক টুইট বার্তায় শিয়া মসজিদে হামলায় শোক ও নিন্দা জানান। তিনি বলেন, শিয়া মসজিদে নামাজরত মুসল্লিদের ওপর হামলার ঘটনায় আমি গভীরভাবে মর্মাহত। হামলায় আক্রান্তদের পরিবারের প্রতি গভীর শোক ও সমবেদনা জানান তিনি।

বার্নিকাট বলেন, বাংলাদেশের সা¤প্রদায়িক স¤প্রীতি ও সহিষ্ণুতার দীর্ঘ ঐহিত্যকে যুক্তরাষ্ট্র শ্রদ্ধা করে। এ ধরনের যে কোনো সন্ত্রাসী হামলার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র সব সময় বাংলাদেশের পাশে থাকবে। এর আগে হোসেনী দালানে তাজিয়া মিছিলে হামলা করা হয়। ভয়াবহ এই ঘটনা গোটা বিশ্বে শিরোনাম হয়। খবরে বলা হয়- ইমামবাড়ায় তখন মানুষ আর মানুষ। মানুষের ভিড় বকশীবাজার পর্যন্ত গিয়ে পৌঁছেছে। ইমামবাড়ায় তিলধারণের জায়গা নেই। নহবতখানার সামনে তাজিয়া মিছিলে যাওয়ার জন্য দুটি ঘোঙা প্রস্তুত করা হচ্ছিল। মানতকারী অনেকে তাদের শিশুসন্তান নিয়ে এসেছিলেন। এ সময় হঠাৎ পরপর কয়েকটি বিস্ফোরণ। অনেক মানুষ লুটিয়ে পড়ে। আতঙ্কিত মানুষ দিশেহারা হয়ে ছুটতে থাকে। স্বেচ্ছাসেবীরা আহত ব্যক্তিদের বিভিন্ন হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। কী ভয়ানক চিত্র! বাংলাদেশে কি হচ্ছে এসব? কেন করা হচ্ছে? খ্রিস্টান ধর্মযাজকদের হুমকি অব্যাহত রয়েছে বাংলাদেশে। রংপুরে ব্যাপ্টিস্ট মিশনের ফাদারসহ ১০ খ্রিস্টান ধর্মযাজককে উড়োচিঠিতে হত্যার হুমকি দেয়া হয়েছে।

এদিকে দিনাজপুরেও একটি ক্যাথলিক চার্চের ফাদারকে, আইএসের বরাত দিয়ে মুঠোফোনে হত্যার হুমকি দেয়া হয়েছে। আর দুটো ঘটনাই ঘটেছে প্রায় একই সময়ে। বাংলাদেশে এখন যা করা হচ্ছে, তা পূর্বপরিকল্পিত। এটা অনেক দূর প্রসারিত কালোহাত। এই কালোহাত মূলত একটি সমাজ, লোকাচার, বিশ্বাসকে ধ্বংস করে দিতে চাইছে। এদের শিকড় আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও। আমরা ভুলে যাইনি, মৌলবাদ সব সময়ই সামন্তবাদের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে এসেছে। বিশেষ করে সমাজতান্ত্রিক বিশ্বকে ভেঙে খান খান করে দিতে পুঁজিবাদীরা এটাকে ব্যবহার করেছে। এমন কি গোত্রগত সংঘাত চাঙ্গা করে রাখতেও ব্যবহৃত হয়েছে মৌলবাদী দানতন্ত্র। তবে কি পরোক্ষভাবে গণতন্ত্রই মৌলবাদের সহচর? আসতে পারে সে প্রশ্নটিও। দেখা গেছে, গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠার নামে কোনো কোনো দেশে মৌলবাদকে উসকে দেয়া হয়েছে। বলা হয়েছে- এটাও মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম। পুঁজিবাদীরা একে ব্যবহার করেছে তাদের প্রয়োজনে। পরে দেখা গেছে এভাবেই ছড়িয়ে পড়েছে বিষবাষ্প। দূষিত হয়ে গিয়েছে ক্রমশ! গোটা বিশ্বের মুক্তিকামী গণতান্ত্রিক মানুষের নিঃশ্বাসের আবাসস্থল।

উদাহরণ হিসেবে ইরাকের কথাই ধরা যাক। ইরাকের শাসক সাদ্দাম হোসেন স্বৈরাচারী ছিলেন। ইরাক শিয়া অধ্যুষিত দেশ। তারা সংখ্যাগরিষ্ঠ। ভোট হলে শিয়ারা ক্ষমতায় থাকবে সারাজীবন। সুন্নিপন্থী সাদ্দাম হোসেন টুঁটি চেপে ধরেছিলেন। ক্ষমতায় ছিলেন বলপূর্বক। এই সাদ্দাম একসময় ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের। সে সম্পর্কে ফাটল ধরার পরই তিনি যুক্তরাষ্ট্রের শাসকদের কাছে চোখের বালিতে পরিণত হন। আজ সিরিয়ায়ও একই কায়দা করা হচ্ছে। রাশিয়া-আমেরিকা প্রায় মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছে এই সিরিয়ায় প্রতিপত্তি বিস্তার নিয়ে।

ধরা যাক আলজিরিয়ার কথা। সেখানেও গোত্রীয় সংঘাত বাঁচিয়ে রাখা হচ্ছে এই মৌলবাদী ঝাণ্ডাকে বাঁচানোর জন্য। উপমহাদেশে হিন্দু মৌলবাদ, মুসলিম মৌলবাদ- এই দুয়ের চরিত্রই আমরা জানি। মৌলবাদ এভাবেই ব্যবহৃত হচ্ছে জঙ্গি গ্রুপের হাতে, পুঁজিপতি শাসকদের হাতে, মুনাফাখোর বণিকদের হাতে। সিঁড়ি হিসেবে ব্যবহার করে মৌলবাদের মাধ্যমে প্রকারান্তরে চলমান সমকালকে ধ্বংস করে দিতে চাইছে এরা। লক্ষ্য করলে দেখা যাবে গোঁড়া মৌলবাদীরা সভ্যতার নান্দনিক বিবর্তনকে স্বীকৃতি দিতে মোটেই রাজি হয় না। আর বুনিয়াদি স্বার্থপর মৌলবাদের পৃষ্ঠপোষকরা সভ্যতা-সংস্কৃতিকে লোক দেখানো স্বীকৃতি দিলেও এটাকে তারা বাণিজ্যকীকরণের সর্বাত্মক চেষ্টা চালায়। আর বাণিজ্য করতে গেলে তখন প্রগতিবাদ ও মৌলবাদ মিশে একাকার হয়ে যায়। ড. আহমদ শরীফ এই মিশ্রণকে চমৎকার অভিধায় ভূষিত করেছিলেন। তিনি বলতেন, সুবিধাবাদী প্রগতিবাদ ও কট্টর মৌলবাদ মিলে জন্ম নেয় ‘প্রলয়বাদ’। আর এই প্রলয় ধ্বংস করে দেয় মানুষের অগ্রসর হওয়ার সব স্বপ্নমালা। বন্ধ করে দেয় সমাজের উন্নয়নের সব মুক্তপথ।

সমকাল সব সময়ই পরিবর্তনকে সূচি করে অগ্রসর হতে চায় আর দানবিক পেশিশক্তি এক ধরনের ত্রাস সৃষ্টি করে বিনষ্ট করতে চায় সামাজিক স¤প্রীতি। বাংলাদেশে যখন ভোটের রাজনীতি শুরু হয় তখন এসব মৌলবাদী গোষ্ঠী একদিকে অপতৎপরতা চালায়, অন্যদিকে ভোটও চায় সাধারণ মানুষের কাছে। ভাবতে অবাক লাগে, এরা অতীতে পাসও করেছে। গিয়ে বসেছে সংসদেও। অথচ ত্রিশ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত এই জাতীয় সংসদ, এই জাতীয় সংবিধান-মুক্তিকামী সাধারণ মানুষের নিয়ন্ত্রণেই থাকার কথা ছিল। উন্নত গণতান্ত্রিক দেশগুলোর রাষ্ট্রপ্রধানরা শোষণের মানসিকতা ও ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে বিশ্বে মৌলবাদীকে নানাভাবে পৃষ্ঠপোষকতা করেছে। এখনো করছে। বাংলাদেশ এখন ভাসছে ভোট জোয়ারে। সামনেই পৌরসভা নির্বাচন। এই নির্বাচনে বড় বড় দলগুলো অংশ নেবে। তাই ‘সামাজিক বাংলাদেশ’ও আরো সরগরম হয়ে উঠবে। বাড়তে পারে সহিংসতাও।

ডিসেম্বর মাস শুরু হয়েছে। ডিসেম্বর বাঙালির বিজয়ের মাস। আমরা জানি, একাত্তরে সাধারণ মানুষের প্রত্যাশায় কোনো কৃত্রিমতা ছিল না। তারা রক্ত দিয়েই একটি মানচিত্র পাওয়ার জন্য উদগ্রীব ছিল। তাই প্রাণের বলিদান, আত্মাহুতি কোনো মুখ্য বিষয় ছিল না। সে সময় রাজনীতিকরাও স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন একটি স্বাধীন ভূমির। একটি বলিয়ান জাতিসত্তার। মানুষ রাজনীতিকদের কথায় আস্থা রেখেই ঝাঁপিয়ে পড়েছিল যুদ্ধে। সে যুদ্ধে তারা বিজয় ছিনিয়ে এনেছিল। এরপরের দায়িত্বটুকু ছিল জনগণ-রাজনীতিকের সমন্বয় সাধনের। হ্যাঁ, অনেক কিছুই রাজনীতিকরা পারেননি। কিন্তু যা পারা গেছে- সেই অর্জন কি কম? মনে রাখতে হবে, বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটি এমন বিপর্যয়ের মুখোমুখি হয়েছে- যেখানে ভাস্কর্য পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছে। একশ্রেণি ধর্মীয় উন্মাদনা সৃষ্টি করা হয়েছে। এসব প্রতিক‚লতা মেনেই এগিয়েছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রাঙ্গণ আরো মসৃণ হতে পারত। বাংলাদেশেও যদি প্রত্যেক নেতার ব্যক্তিগত জীবনাচার, তাদের কর্মকাণ্ড গভীরভাবে বিচার করার উদ্যোগ গৃহীত হতো, তবে শতকরা পঞ্চাশ ভাগ দুর্নীতি প্রথমেই লোপ পেত। রাজনীতিতে দুর্বৃত্তায়নই রাষ্ট্রে দেউলিয়াপনা টেনে আনে। যিনি কর দেবেন না, যিনি স্বজনপ্রীতি-দুর্নীতি করবেন তিনি গণপ্রতিনিধি হবেন কেন? রাষ্ট্রে কি সৎলোকের অভাব আছে?

এই যে দখল করে রাখার মানসিকতা সেটি একটি উন্নয়নশীল দেশের অগ্রগতিকে থামিয়ে দেয়। ব্যাহত করে মানুষের পথচলা। সৎ নীতির প্রতি আনুগত্য না থাকলে রাষ্ট্রের প্রতি দায়বদ্ধতা প্রতিষ্ঠিত হয় না। আর এই সুযোগেই মধ্যস্বত্বভোগী সুবিধাবাদীরা বুলি পাল্টে ক্ষমতাসীনদের দোসর হয়ে যায়। এরা অন্য দল থেকে এসে যে ক্ষমতাসীনদের পিঠে ছুরি মারছে না- এর নিশ্চয়তাই বা কি? বাংলাদেশে গেল সাঁইত্রিশ বছরে শুধুই রাজনৈতিক তস্কর তৈরি হয়নি। রাজনৈতিক কচ্ছপও তৈরি হয়েছে। যারা সময়ে সময়ে বুলি পাল্টায়, সব সময় সরকারি দলই তাদের দল। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পরশ পেয়ে এখন দেশে অনেকেই নব্য আওয়ামী লীগার। এরা শুধু দলের শত্রুই নয়, সমাজেরও শত্রু। এদের উচ্চাভিলাষের কাছেই পরাজিত হয় গণস্বপ্ন। এদের সঠিকভাবে চিহ্নিত করতে পারলেই বাংলাদেশ একটি শুদ্ধ সমাজের মুখ দেখবে, সন্দেহ নেই।

মানুষ তার ধর্মীয় বিশ্বাস নিয়ে থাকবে। প্রতিষ্ঠিত কোনো ধর্মীয় অনুশাসন বদলানোর দায়িত্ব তো কেউই নিতে পারে না নেয়া উচিতও নয়। আমরা দেখছি- যে পাকিস্তান বাংলাদেশে ৩০ লাখ গণহত্যা করেছিল, আজ তারা তা অস্বীকার করছে! কি অদ্ভুত মিথ্যাচার! তাই নেপথ্য যে কালোহাতের ছায়া- তা বুঝতে হবে বাংলাদেশকে। আজ বাংলাদেশে যারা নেপথ্যে কলকাঠি নেড়ে অস্থিতিশীল করছে- এদের চিহ্নিত করতে হবে। এরা যেই হোক- তাদের ছাড় দিলে চলবে না। তা না হলে অনেক লোকসান দিতে হতে পারে, ক্ষমতাসীনদের।
-------------------------------------------------------------------------------
দৈনিক ভোরের কাগজ ॥ ঢাকা ॥ শনিবার, ৫ ডিসেম্বর ২০১৫

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.