নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আলোর আয়না এই ব্লগের সকল মৌলিক লেখার স্বত্ত্ব লেখকের।এখান থেকে কোনো লেখা লেখকের অনুমতি ছাড়া অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা, অনুলিপি করা গ্রহনযোগ্য নয়।লেখা অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা করতে চাইলে লেখকের সম্মতি নিতে হবে। লেখকের ইমেল - [email protected]

ফকির ইলিয়াস

এই ব্লগের সকল মৌলিক লেখার স্বত্ত্ব লেখকের।এখান থেকে কোনো লেখা লেখকের অনুমতি ছাড়া অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা, অনুলিপি করা গ্রহনযোগ্যনয়। তা সৃজনশীল কাজের পরিপন্থী। লেখা অন্য কোথাওপ্রকাশ, ছাপা করতে চাইলে লেখকের সম্মতি নিতে হবে। লেখকের ইমেল - [email protected]

ফকির ইলিয়াস › বিস্তারিত পোস্টঃ

রাষ্ট্রীয় আত্মোপলব্ধি যখন দরকারি হয়ে পড়ে

০২ রা জুলাই, ২০১৬ সকাল ১০:৪৯




রাষ্ট্রীয় আত্মোপলব্ধি যখন দরকারি হয়ে পড়ে
ফকির ইলিয়াস
-----------------------------------
বাংলাদেশে নয় দিনের ছুটি শুরু হয়ে গেল। এই নয় দিনে অনেক কিছুই ঘটে যেতে পারে। যা-ই ঘটুক, তা কল্যাণকর হোক, এটাই কামনা থাক। এই ছুটিতে মানুষ আত্মবিশ্লেষণে ব্যস্ত থাকবেন- তা বলতে পারি নির্দ্বিধায়। কারণ দেশে এই সময়ে অনেক কিছু ঘটে গেছে।

মিতু আর বাবুল আক্তার এখন বাংলাদেশের আলোচিত বিষয়। এই ঘটনা নিয়ে অনেক সমীকরণ। সরকার কি কিছু লুকাতে চাইছে? কেউ কি মিথ্যা কাউকে ফাঁসাতে চাইছে? দেশে কি এখন ছায়া সন্ত্রাসী নিয়ন্ত্রক? ঐশীর ভবিষ্যৎ কি?

এমন অনেক প্রশ্ন স্থান পাবে ঈদ-উত্তর আড্ডায়। আবারো বাংলাদেশে ক্রসফায়ারের ঘটনা ঘটছে। আবারো খুন হয়েছেন আরেকজন আক্রমণকারী। তার নাম গোলাম ফাইজুল্লাহ ফাহিম। ১৯ বছরের এই তরুণকে মাদারীপুরে সরকারি নাজিম উদ্দিন কলেজের গণিতের প্রভাষক রিপন চক্রবর্তীর ওপর হামলার সময় ঘটনাস্থল থেকে ধরে পুলিশে দেয় জনতা। জণগণ যা করেছিলেন সেটাই ছিল ন্যায়সম্মত কাজ। কারণ আইন মানুষ তো হাতে তুলে নিতে পারে না। তাকে গ্রেপ্তারের পর তার কাছ থেকে বাকি তথ্য পাওয়ার কথা ছিল পুলিশের। তাকে রিমান্ডেও নেয়া হয়েছিল। সেই রিমান্ড থেকে ‘অন্যান্য অপরাধী’ খুঁজতে তাকে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তার সাথীরা ছিনিয়ে নিতে চায়। ফাহিম গুলিবিদ্ধ হয়। তারপর তার মৃত্যু হয়। ঘটনা আপাতত এখানেই শেষ করে দিয়েছে পুলিশ।

এখানে অনেক বিষয় আমরা এই কয়েক দিনে, নিউজ মিডিয়ায় দেখেছি-পড়েছি। সেগুলো হলো- মাঠ পর্যায়ে অ্যাকশনে যাওয়া তরুণ জঙ্গিরা তাদের আদেশদাতা শীর্ষ লোকটিকে চিনে না, জানে না। তারা কেবল হুকুম তামিল করতে আসে। কারা এই হুকুমদাতা- কেন এত রিস্ক নিয়ে এমন হুকুম তামিল করতে হবে- এসব প্রশ্নের উত্তর কি আদৌ তাদের জানা নেই? জানার দরকার মনে করে না তারা? যা মিতুর ‘খুনি’দের ব্যাপারেও দেখা যাচ্ছে। হুকুমদাতার নাম আসছে না। ফাহিমের কাছ থেকে অনেক তথ্য পুলিশ পাওয়ার কথা। হয়তো তারা পেয়েছেনও। এসব তথ্যগুলো কি? কারা বাংলাদেশে এমন অব্যাহত জঙ্গিবাদ কায়েম করতে চাইছে? এসব কি পুলিশের মাননীয় বড়কর্তারা বিচার বিভাগ, মাননীয় আদালতকে জানিয়েছেন? জানাবার প্রয়োজন মনে করছেন? পুলিশ যে কোথাও ভুল করছে তা বলছেন বাংলাদেশের পুলিশ বিভাগের সাবেক বড়কর্তারাই। পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক নূরুল হুদা তার প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, ‘স্পর্শকাতর ফৌজদারি মামলার তদন্তে আরো অনেক সতর্ক থাকা উচিত ছিল। ফাহিমকে আরো জিজ্ঞাসাবাদ করলে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য আদায় করা সম্ভব হতো। একই সঙ্গে এতে করে সরকারের বিশেষ অভিযানে আরো অনেক সাফল্য আসতো বলেই আমার বিশ্বাস।’

এরকম অনেক কথাই বলছেন বাংলাদেশের নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা। কিন্তু তাতে কোনো কাজ হচ্ছে কি? না হচ্ছে না। যদি হতো, তবে বন্দুকযুদ্ধ না করে পুলিশ দেশব্যাপী জঙ্গি আস্তানা উচ্ছেদে আরো কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারতো। বিশ্বব্যাপী জঙ্গিদের কর্মকাণ্ড আমাদের মনে করিয়ে দিচ্ছে, তাদের নেপথ্য স্তর অনেক শক্ত এবং দূর পর্যন্ত বিস্তৃত। কিন্তু কথা হলো- তা যত শক্তিশালীই হোক না কেন, রাষ্ট্রশক্তি পরিচালিত বাহিনীর চেয়ে শক্তিশালী হওয়ার কথা নয়। সরকার সেই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারছে না কেন? মাহমুদা খানম মিতু হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যের এখনো কোনো অগ্রগতি জানাতে পারছে না সরকার ও তাদের সংস্থাগুলো। কেন পারছে না?

জঙ্গিদের ভেতরের বলয় যে কত শক্ত তা আবারো জানিয়েছে একজন গ্রেপ্তারকৃত আসামি। তার নাম সুমন হোসেন পাটোয়ারী। সুমন জানিয়েছে, প্রকাশনা সংস্থা শুদ্ধস্বরের স্বত্বাধিকারী আহমেদুর রশিদ টুটুলকে হত্যা করতে ব্যর্থ হওয়ায় সংগঠনে অবস্থান খারাপ হয়ে যায় তার। এর জন্য বড় ভাইদের শাসানি শুনতে হয়, শাস্তি ভোগ করতে হয়। পুলিশের পুরস্কার ঘোষিত নিষিদ্ধ আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের (এবিটি) সিøপার সেলের সদস্য সুমন হোসেন পাটোয়ারীর কাছ থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে বলে দাবি করেছেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। সাইফুল, সাকিব, সিহানসহ একাধিক ছদ্মনামে এবিটির মাঠ পর্যায়ে কাজ করে সে। টুটুলকে নিজে কুপিয়েছিল বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছে সুমন।

পুলিশের এমন কর্মকাণ্ড মানুষের মনে আশা জাগাচ্ছে। কিন্তু অন্যদিকে এটাও প্রশ্ন উঠছে- সুমনকেও ‘ক্রসফায়ার’-এর বলি হতে হবে না তো? পুরো দেশজুড়েই একটি অরাজকতা সৃষ্টির পাঁয়তারা করা হচ্ছে। বিষয়টি এখন আর লুকানোর কিছু নয়। কারা করছে তা সরকারের জানার কথা ভালোই। তাহলে তা প্রতিরোধে সরকার এগিয়ে আসছে না কেন? রাজধানীর উত্তরার বৌদ্ধ মন্দিরের পাশের দিয়াবাড়ি খাল থেকে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র-গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়েছে। উদ্ধারকৃত অস্ত্রের মধ্যে ১০৮টি চাইনিজ পিস্তল, ২৫৫টি ম্যাগজিন, এক হাজার রাউন্ড গুলি এবং ১১টি বেয়োনেট রয়েছে।

বাংলাদেশে কি তবে কোনো অলিখিত যুদ্ধের প্রস্তুতি চলছে? এই যুদ্ধে কার প্রতিপক্ষ কে? এই বিষয়েও সরকার কিছুই খোলাসা করেনি। একটি রাষ্ট্রে অরাজকতা শুরু হলে যে কোনো সুবিধাবাদী শক্তি মাথাচাড়া দিয়ে ফায়দা লুটতে তৎপর হতে পারে। মানুষ তার প্রতিপক্ষকে জব্দ করার জন্য যে কোনো কালোশক্তির ছায়ায় আশ্রয় নিয়ে অনেক মন্দ কাজে এগিয়ে যেতে পারে। বিষয়গুলো দেশের নীতিনির্ধারকদের মনে রাখা দরকার। একটি চমৎকার উদ্যোগ নিয়েছেন বাংলাদেশের হক্কানি আলেম সমাজ। এক লাখ মুফতি, আলেম-ওলামার দস্তখত সংবলিত সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদবিরোধী ‘মানবকল্যাণে শান্তির ফতোয়া’ প্রকাশ করেছেন তারা।

‘মানবকল্যাণে শান্তির ফতোয়া’ শিরোনামে ৩২ পৃষ্ঠার এই ফতোয়া প্রকাশ উপলক্ষে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে মাওলানা ফরীদ উদ্দীন মাসউদ ফতোয়ার প্রেক্ষাপট ও উদ্যোগ প্রসঙ্গে ভূমিকা বক্তব্য রেখেছেন। তিনি বলেছেন, কিছু দুষ্কৃতকারী নিজেদের হীনস্বার্থ চরিতার্থের উদ্দেশ্যে মহান গ্রন্থ আল কোরআন ও হাদিসের অপব্যাখ্যা দিয়ে ইসলামের নামে বিভিন্ন স্থানে সন্ত্রাস ও আতঙ্ক ছড়াচ্ছে। তিনি জানান, ইসলামে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ হারাম। ইসলামের নামে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদীরা বেহেশতের গন্ধও পাবে না। আত্মঘাতী বা আত্মহত্যাকারীদের জানাজা পড়তেও ইসলামে নিষেধ করা হয়েছে। এসব বিষয়গুলো জনস্বার্থ-সংশ্লিষ্ট। এই ঐক্যে মানুষকে সমবেত হওয়ার ডাক দিতে হবে। প্রকৃত শান্তির অন্বেষণে মানুষকে পথ দেখাতে সামাজিক আন্দোলন ত্বরান্বিত করতে হবে।

বাংলাদেশে আজ যারা ধর্মের দোহাই দিয়ে নানা ধরনের খুন-খারাবি করছে, তাদের মোকাবেলা করতে হলে, প্রকৃত ধর্মীয় চেতনার বাণী প্রচার করতে হবে। আর এজন্য সরকারকে সহনশীল হয়ে মানুষের কাছাকাছি থাকতে হবে। বাংলাদেশে এখন রাষ্ট্রীয় আত্মোপলব্ধি দরকার। যুক্তরাষ্ট্রের অরলান্ডোতে ক্লাবে হামলা, কিংবা ইস্তাম্বুলের এয়ারপোর্টে হামলা প্রমাণ করছে বিশ্ব এখন কতটা অরক্ষিত। বাংলাদেশের মতো ঘনবসতিপূর্ণ রাষ্ট্রে জননিরাপত্তা একটি জরুরি বিষয়। এজন্য মানুষকে যেমন জেগে থাকতে হবে তেমনি সরকারকে হতে হবে আরো কঠোর। কারণ একটি কালো শক্তি যে তৎপর রয়েছে, তা তো কারোই অজানা নয়। সবাইকে পবিত্র ঈদুল ফিতরের শুভেচ্ছা।
--------------------------------------------------------------------------
দৈনিক ভোরের কাগজ ॥ ঢাকা ॥ শনিবার, ২ জুলাই ২০১৬

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.