নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আলোর আয়না এই ব্লগের সকল মৌলিক লেখার স্বত্ত্ব লেখকের।এখান থেকে কোনো লেখা লেখকের অনুমতি ছাড়া অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা, অনুলিপি করা গ্রহনযোগ্য নয়।লেখা অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা করতে চাইলে লেখকের সম্মতি নিতে হবে। লেখকের ইমেল - [email protected]

ফকির ইলিয়াস

এই ব্লগের সকল মৌলিক লেখার স্বত্ত্ব লেখকের।এখান থেকে কোনো লেখা লেখকের অনুমতি ছাড়া অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা, অনুলিপি করা গ্রহনযোগ্যনয়। তা সৃজনশীল কাজের পরিপন্থী। লেখা অন্য কোথাওপ্রকাশ, ছাপা করতে চাইলে লেখকের সম্মতি নিতে হবে। লেখকের ইমেল - [email protected]

ফকির ইলিয়াস › বিস্তারিত পোস্টঃ

ন্যায্য বিবেক ও আমাদের এগিয়ে যাওয়ার সিঁড়ি

১০ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ সকাল ১১:০১




ন্যায্য বিবেক ও আমাদের এগিয়ে যাওয়ার সিঁড়ি
ফকির ইলিয়াস
-----------------------------------
আমরা ক্রমশই বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রজ্ঞার পরিচয় পাচ্ছি। অনেকেই মনে করেছিলেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের এবারের কাউন্সিলে সজীব ওয়াজেদ জয়কে দলে নিয়ে আসা হবে। তাকে গুরুত্বপূর্ণ পদ দেওয়া হবে। না- তা হয়নি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন- সজীব ওয়াজেদ এ সরকারের পদেই আছেন। তিনি প্রধানমন্ত্রীর প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা। শেখ হাসিনার এ কথাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ তিনি কাজে বিশ্বাসী। তিনি সজীব ওয়াজেদকে গড়ে তুলতে চান। আরো সময় দিতে চান। রাজনীতিতে এ ধীশক্তি থাকা দরকার। তা না থাকলে সামনে এগিয়ে যাওয়া যায় না। আরেকটি বিষয়ে তার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে চমক লাগিয়ে দিয়েছেন শেখ হাসিনা। অনেকেই মনে করেছিলেন, সাম্প্রতিক বিমানে ‘নাট ডিলে’ হয়ে যাওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী নিজের জন্য এবং রাষ্ট্রপতির জন্য পৃথক বিমান ক্রয়ে সায় দেবেন। না- তিনি সেই সায় দেননি। নিউ ইয়র্কে বসে তার সংবাদ সম্মেলন যখন টিভিতে দেখছিলাম, তখন খুব আপ্লুত হয়ে পড়েছিলাম আমি। হ্যাঁ- তিনিই তো বঙ্গবন্ধুকন্যা। রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানের নিরাপদ ভ্রমণের জন্য আলাদা নতুন উড়োজাহাজ কেনার পরিকল্পনা ‘বিলাসিতা’ বলে নাকচ করে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, ‘আলাদা বিমান কেনার মতো বিলাসিতা করার সময় আসেনি’।
প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘নতুন এয়ারক্রাফট কেনার আমার কোনো প্রয়োজন নাই। আমরা দেশের জন্য নতুন উড়োজাহাজ কিনেছি। এখন ব্যক্তি, অর্থাৎ রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রীর জন্য আলাদা এয়ারক্রাফট কেনা, এমন বিলাসিতা করবার মতো সময় আমাদের আসেনি, আমি যেটা মনে করি’। তিনি আরো বলেছেন- ‘গরিবের ঘোড়ারোগ না হওয়াই ভালো। ঘোড়াকে খাওয়াতে, লালন-পালন করতে যথেষ্ট খরচ লাগে। এটার প্রয়োজন নাই, আমি চাইও না। যে প্লেনে আমার দেশে সাধারণ মানুষ চলাচল করবে, সেখানে যদি আমার নিরাপদবোধ না থাকে, তাহলে আমার আলাদা প্লেন নিয়ে কী লাভ? আমি মানুষের সঙ্গে চলি।’
এ প্রসঙ্গে জাতির জনকের ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ থেকে কিছু উদ্ধৃতি দিতে চাই। তিনি লিখেছেন- ‘একদিনের কথা মনে আছে, আব্বা ও আমি রাত দুইটা পর্যন্ত রাজনীতির আলোচনা করি। আব্বা আমার আলোচনা শুনে খুশি হলেন। শুধু বললেন, শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক সাহেবের বিরুদ্ধে কোনো ব্যক্তিগত আক্রমণ না করতে। একদিন আমার মা-ও আমাকে বলেছিলেন, “বাবা যাহাই কর, হক সাহেবের বিরুদ্ধে কিছুই বলিও না।” শেরেবাংলা মিছেমিছিই ‘শেরেবাংলা’ হন নাই। বাংলার মাটিও তাকে ভালোবেসে ফেলেছিল। যখনই হক সাহেবের বিরুদ্ধে কিছু বলতে গেছি, তখনই বাধা পেয়েছি। একদিন আমার মনে আছে একটা সভা করছিলাম আমার নিজের ইউনিয়নে, হক সাহেব কেন লীগ ত্যাগ করলেন, কেন পাকিস্তান চান না এখন? কেন তিনি শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জীর সাথে মিলে মন্ত্রীসভা গঠন করেছেন? এই সমস্ত আলোচনা করছিলাম, হঠাৎ একজন বৃদ্ধ লোক যিনি আমার দাদার খুব ভক্ত, আমাদের বাড়িতে সকল সময়েই আসতেন, আমাদের বংশের সকলকে খুব শ্রদ্ধা করতেন- দাঁড়িয়ে বললেন, “যাহা কিছু বলার বলেন, হক সাহেবের বিরুদ্ধে কিছুই বলবেন না। তিনি যদি পাকিস্তান না চান, আমরাও চাই না। জিন্নাহ কে? তার নামও তো শুনি নাই। আমাদের গরিবের বন্ধু হক সাহেব।” এ কথার পর আমি অন্যভাবে বক্তৃতা দিতে শুরু করলাম। সোজাসুজিভাবে আর হক সাহেবকে দোষ দিতে চেষ্টা করলাম না। কেন পাকিস্তান আমাদের প্রতিষ্ঠা করতেই হবে তাই বোঝালাম। শুধু এইটুকু না, যখনই হক সাহেবের বিরুদ্ধে কালো পতাকা দেখাতে গিয়েছি, তখনই জনসাধারণ আমাদের মারপিট করেছে। অনেক সময় ছাত্রদের নিয়ে পালিয়ে আসতে বাধ্য হয়েছি, মার খেয়ে।’
কত ত্যাগ আর অনুধাবন ছিল এ মহানায়কের। তিনি একটি প্রজ্ঞা আর ব্যক্তিত্বের রাজনীতি সৃষ্টি করতে চেয়েছিলেন এ বাংলায়। আজ বাংলাদেশে এ রাজনীতির বড় অভাব। ভোগবাদী রাজনীতি ধ্বংস করে দিচ্ছে, প্রজন্মের মনন। দুঃখের কথা হচ্ছে এদের লাগাম টেনে ধরার কথা ছিল যেভাবে- তা করা হচ্ছে না। ফলে, নিজ নিজ দলের ঝাণ্ডার ছায়ায় কিছু আধিপত্যবাদী দখল করে নিচ্ছে মানুষের ভিটেমাটি। অথচ বাংলাদেশ একটি চেতনা নিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধ করেছিল।
আমরা বিশ্বাস করি, এ প্রজন্মের কেউই ভুলে যায়নি সেই ৩০ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতার ধারালেখা। দু’লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে অর্জিত লাল-সবুজের পতাকার স্বপ্নবুনন। অবাক করা কথা হচ্ছে, দেশে আজ মুক্তিযুদ্ধকে পুঁজি করতে চাইছে সেই পরাজিত রাজাকার শক্তিও। তারাও মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা দেবে বলে ঘোষণা দিচ্ছে! অথচ আমরা জানি, আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আমাদের অনন্তকালব্যাপী প্রগতির পথ দেখাবে। আমাদের এ মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও প্রতীককে কেউ নস্যাৎ করতে পারবে না। এর ধারক হবে প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম।
বাঙালি অতীতে তো পেরেছে এবং তা পেরেছে ন্যায্য বিবেককে সামনে রেখে। আরো পারতে হবে। এর প্রমাণ, ৫২-এর ভাষা আন্দোলন। ৫৪-এর গণরায়। ৬২-এর শিক্ষা আন্দোলন। ৬৬-এর ৬ দফা ও ৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান। আমাদের মুক্তিযুদ্ধ আমাদের চেতনাকে আরো সূর্যরাগে উজ্জ্বল করেছে। শাণিত চেতনাপ্রবাহের মতোই এক বিশাল ব্যাপক আবেদন আমাদের সামনে এগিয়ে নিয়েছে স্বৈরশাসনের অবসানে।
আমাদের কাব্য-কলার বেদিতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা যেন এক স্বতঃউৎসারিত ধারা। দিন যতই সামনে যাবে মহান মুক্তিযুদ্ধের উত্তাপে লালিত হবে আমাদের সমাজচেতনা। দেশ মাটি ও মানুষকে ভালোবাসার অঙ্গীকারে শাণিত করবে। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সময় এবং এখনো আমাদের কবি, সাহিত্যিক ও শিল্পীরা নিয়ামকের ভূমিকা পালন করছেন। এর স্বীকৃতি হিসেবেই কণ্ঠযোদ্ধারা পেয়েছেন মুক্তিযোদ্ধা সনদ। সরকার স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের ১০৮ জন শব্দসৈনিক মুক্তিযোদ্ধার নাম গেজেট আকারে প্রকাশ করেছে। এর আগে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বীরাঙ্গনাদের মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি দিয়ে গেজেট প্রকাশ করা হয়েছিল। এ নিয়ে ১৭০ জন বীরাঙ্গনাকে মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। তারা প্রতি মাসে ভাতাসহ মুক্তিযোদ্ধাদের মতো অন্যান্য সরকারি সুযোগ-সুবিধা পাবেন। তা সত্যিই একদিকে বিস্ময়কর, অপরদিকে গর্ব ও গৌরবের বিষয়।
আজকের পরিবর্তনকামী জনগণকে সাহস জোগাতে সকল সৃজনশীল বুদ্ধিজীবীকে এগিয়ে আসতে হবে। বর্তমান সরকার বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ দলিলপত্র (১৫ খণ্ড) গ্রন্থমালা প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করেছে। এর ফলে নতুন প্রজন্মের শিক্ষার্থীরা নিজ প্রতিষ্ঠানে বসেই তাদের পূর্বসূরিদের আত্মত্যাগ ও বীরত্বগাথা জানতে ও পড়তে পারবে। তারা মহান মুক্তিযুদ্ধের শত্রæ-মিত্রদের যথাযথ ভূমিকা সম্পর্কে জানতে পারবে। মহান মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস শিখতে পারবে। এর মাধ্যমে নতুন প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ ও অনুপ্রাণিত হবে। এর পাশাপাশি বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ‘মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস’ নিয়ে আলোচনা, শর্টফিল্ম প্রদর্শনী, আলোকচিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করা যেতে পারে।
এক সমুদ্র রক্ত ও লাখো প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে এ স্বাধীনতা। মুক্তিসেনার রক্তে রঞ্জিত এক সুদীর্ঘ সংগ্রামের ফসল এ স্বাধীনতার সঙ্গে অনেক সংগ্রামী চেতনা বিজড়িত। তবে ঐক্যবদ্ধ জীবনপ্রচেষ্টা, মিলন-বিরহ, আশা-নিরাশার বাস্তব অনুভূতি সংবলিত এক অপ্রতিদ্ব›দ্বী অপরাজেয় এ চেতনার সঙ্গে প্রতিনিয়ত নতুন করে পরিচিত হচ্ছে বর্তমান প্রজন্ম। আর তাই কেউ বা মুক্তিযুদ্ধের বই পড়ে আবার কেউ বা দাদা-দাদি, বাবা-মা অথবা মুক্তিযোদ্ধাদের কাছ থেকে জেনে নিচ্ছেন সেই সময়ের মুহূর্তগুলো। পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধের কথামালাকে চলচ্চিত্রের সুতোয় বেঁধে উপস্থাপন করা হচ্ছে বর্তমান প্রজন্মের কাছে। কীভাবে বাঙালি জাতিকে চিরতরে মাথা নুইয়ে দেওয়ার জন্য এ দেশের দোসররা পাক বাহিনীর সঙ্গে হাত মিলিয়েছিল। আর কীভাবে নিজের প্রাণ বাজি রেখে এ দেশের দামাল ছেলেদের পাশাপাশি মেয়েরাও মুক্তিযুদ্ধে বীরদর্পে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। ‘মুক্তির গান’, ‘একাত্তরের যিশু’, ‘আমার বন্ধু রাশেদ’- এ রকম অনেক চলচ্চিত্র আমাদের অনবদ্য দলিল।
বাঙালি প্রজন্মকে তাই সেই সত্যের দিকে এগোতে হবে। আমরা যা পারিনি, তার কারণ খুঁজতে হবে। তবে সবচেয়ে বড় যে শক্তিটি দরকার তা হলো- মানবতার ঐক্য। যে চেতনায় এ বাংলায় বিজয় ছিনিয়ে এনেছিল এই জাতি- সেই চেতনাই হতে হবে মূল পাথেয়।
==================================================
দৈনিক খোলাকাগজ ॥ ঢাকা ॥ ৯ ডিসেম্বর ২০১৬ শুক্রবার প্রকাশিত

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ১০ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ সকাল ১১:৩৩

চাঁদগাজী বলেছেন:


কালা ও অন্ধ নাকি আপনি?

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.