নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

রাত পোহাবার কত দেরী পাঞ্জেরী !

ফাহিম আবু

রাত পোহাবার কত দেরী পাঞ্জেরী !

ফাহিম আবু › বিস্তারিত পোস্টঃ

মেঘের রাজ্যে (সাজেক ভ্যলি) যাওয়ার হাতছানি !!

২১ শে জানুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৩:১৫

ট্যুরের পরিকল্পনাঃ
২০১৫ সালের নবেম্বর মাস ! বছর প্রায়ই শেষের দিকে, অফিসের ব্যস্ততাও একটু কমে এসেছে, অফিসের কাজের ফাঁকে আমি ,এহসান ,হাছান মহিউদ্দিন ও মিনহাজ ভাই আলোচনা করছিলাম কোথায় যাওয়া যায় ,কারন আমাদের কম বেশি সবারই এডভ্যাঞ্চারের তৃষ্ণা পেয়েছে, যেটা ছোটখাট এক দিনের ট্যুর দিয়ে আমাদের তৃষ্ণা মেটানো সম্ভব না । তারপর অনেক তর্ক বিতর্কের পর সিদ্ধান্ত নিলাম সাজেক ভ্যালি যাওয়ার যেটাকে অনেকে বলে বাংলাদেশের দার্জিলিং !! এহসান ভাই তৈরি করল সাজেক ভ্যালি কস্টিং ।

যাত্রা শুরু, ১৬ ই ডিসেম্বরঃ
আমাদের প্লান ছিল ১০-১২ জনের গ্রুপ নিয়ে আমাদের এই ট্যুরটা হবে, কিন্তু সবার অনুরুধ রাখতে গিয়ে আমদের গ্রুপটা হলো ১৯ জনের গ্রুপ। আমরা হলাম মিনহাজ, হাসান মহিউদ্দিন , এহসান , দেলোয়ার , নজরুল , রাশেদ , এরশাদ , আশফাক, মাহফুজ ,কলি , সবুজ ,পমেল , সেবক দা, মিল্টন দা, সুব্রত দা, আরও তিন জন সবুজ ভাইএর বন্ধু এবং আমি মোট ১৯ জন । সকাল ৭ টায় আমরা সবাই চলে আসলাম অক্সিজেন বাস টার্মিনালের শান্তি পরিবহনের বাস কাউন্টারে, শুধুমাত্র এক জন ছাডা সে হল এরশাদ ভাই । আমাদের গাডীর স্টারটিং টাইম ছিল 7.45 মিনিট। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে এরশাদ ভাই উপস্থিত হতে না পারাই , ওকে ছাডাই আমরা যাত্রা করলাম খাগডাছডির অভিমুখে !! আমাদের পরের বাসে করে এরশাদ ভাই খাগডাছডি শহরে এসে মিলিত হল ।

খাগডাছডিতে রাত্রিযাপনঃ
খাগড়াছড়ি সদরে বাস থেকে নেমে " মনটানা রেস্টুরেন্ট ও বিরানী" তে ঢুকলাম দুপুরের খাওয়া দাওয়া করলাম । এই রেস্টুরেন্টে আমরা শুধু বিভিন্ন আইটেমের ভর্তা খেয়েছি যা মাছ মাংস থেকে অনেক বেশি শুস্বাধু ! খাওয়া শেষে হোটেল খুজতে বের হলাম , কিন্তু এই সময় ছিল পিকনিকের ভরা মৌসুম , তাই অনেক কষ্টে দুইটা হোটেলে মোট ৫টা রুম নিলাম। রুমে গিয়ে সবাই ফ্রেস হয়ে তারপর আমরা রিছাং ঝর্না ও আলুটিলা দেখার জন্য বের হলাম।আমরা ভালো করে খাওয়া দাওয়া ও প্রাকৃতিক কাজ সেরে নিলাম কারন আলু টিলা ও রিসাং ঝর্নার আশেপাশে কোন ভাত খাবার দোকান নেই এবং কোন বাথরুম নেই।

রিছাং ঝর্নায়ঃ
চেজ্ঞি বাস টার্মিনালে গিয়ে বাসে উঠে প্রথমে গেলাম রিছাং ঝর্নায় । গেট থেকে ২.১০ কিমি হেটে যেতে হবে ঝর্না পর্যন্ত। কিন্তু হাঁটা পর মনে হল ৩ কিমি এর বেশি হবে আর পাহাড়ি পথে ৩ কিমি আর সময় কম থাকলে বেশ কষ্ট কর। গল্প করতে করতে হাঁটা দিলাম, কিন্তু পথ আর শেষ হয় না, কেবল নিচে নামছি আর ভাবছি ফেরার সময় হালুয়া টাইট হয়ে যাবে
অনেক হাঁটার পর ঝর্নার আওয়াজ পাচ্ছি ফাক ফোঁকরে দেখতেও পাই কিন্তু আমরা নিচে নামার পথ পাচ্ছি না , ইটের রাস্তাও শেষ, ঝর্না থেকে আমরা অনেক উপরে এখনও। সামনে আরেকটু এগিয়ে এবার সিঁড়ি পেলাম। তারপর পৌছে গেলাম ঝর্নায়। অনেককে দেখলাম ঐখানকার ভাডাই খাটা মোটর সাইকেলে করে উপরে উঠে যাচ্ছে , তবে খুবই রিস্কি, কষ্ট হলেও হেটে উঠা ভাল ।

যখন আমরা যাচ্ছিলাম , দুপাশের সৌন্দর্য দেখে চোখ ও হ্রদয় দিয়ে মনে গাথা ও আর ছবি তুলছিলাম

ঝর্না দেখার আবার উপরে উঠা শুরু করলাম , নামার সময় যা কষ্ট হয়েছে , উঠার সময় তার তিনগুন বেশি পরিশ্রম হচ্ছে ! তারপর আমরা যাত্রা করলাম আলুটিলা দেখার জন্য।

আলুটিলাঃ
আলুটিলায় হল সম্পুর্ন নতুন অভিজ্ঞতা, যেটা আগে কখনোই ছিল না ।বাংলাদেশের খাগড়াছড়ি জেলার মাটিরাঙ্গা উপজেলায় মূল শহর হতে ৭ কিলোমিটার পশ্চিমে সমুদ্র সমতল হতে ৩০০০ ফুট উচ্চতা বিশিষ্ট আলুটিলা বা আরবারী পাহাড়ে আলুটিলা গুহা অবস্থিত। স্থানীয়রা একে বলে মাতাই হাকড় বা দেবতার গুহা। এটি খাগড়াছড়ির একটি নামকরা পর্যটন কেন্দ্র। আলুটিলায় যেতে প্রবেশ ৫ টাকা করে এবং মশাল কিনতে হবে ১০ টাকা করে । এই গুহাটি খুবই অন্ধকার ও শীতল। কোন প্রকার সূর্যের আলো প্রবেশ করে না বলে মশাল নিয়ে ভিতরে প্রবেশ করতে হয়। সুড়ঙ্গের তলদেশ পিচ্ছিল এবং পাথুরে ও এর তলদেশে একটি ঝর্ণা প্রবাহমান। গুহাটি দেখতে অনেকটা ভূ-গর্ভস্থ টানেলের মত যার দৈর্ঘ্য প্রায় ৩৫০ ফুট। গুহাটির এপাশ দিয়ে ঢুকে ওপাশ দিয়ে বের হতে আনুমানিক ১০ থেকে ১৫ মিনিট সময় লাগে। গুহাটির উচ্চতা মাঝে মাঝে খুব কম হওয়ায় নতজানু হয়ে হেটে যেতে হয়।

আলুটিলা থেকে বের হতে সন্ধ্যা হয়ে গেল , তারপার বাসযোগে আমরা আমাদের হোটেল চলে আসলাম। রেষ্টুরেন্টে গিয়ে সান্ধকালীন নাস্তা করে পরের দিনের সাজেক যাওয়ার প্রস্তুতি নিতে লাগলাম ও সাজেকের জন্য প্রয়োনীয় কেনাকাটা করলাম ও যাওয়ার পথে শিশুদের দেওয়ার জন্য চকলেট কিনলাম। সাজেক যাওয়ার জন্য দুইদিনের জন্য দুটি চাঁদের গাডী ভাডা করলাম। রাতের খাওয়া দাওয়া করে পরের দিনের সুখস্বপ্ন দেখে ঘুমিয়ে গেলাম ।

সাজেকের পথে যাত্রা , ১৭ ই ডিসেম্বরঃ
খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে সবাই রেডি হয়ে চলে আসলাম নির্ধারিত বাস টার্মিনালে যেখান থেকে আমাদের সাজেকের যাত্রা শুরু হবে , তার আগে অবশ্য আমরা সবাই নাস্তা করে নিয়েছি । বাস টার্মিনালে এসে দেখি আরেক নাটক , আগেরদিন যাদের সাথে ট্যুরের গাডীর ব্যাপারে কথা বললাম , তারা আজকে দেখি ভাডা বেশি নিয়ে অন্য আরেক গ্রুপ এর সাথে চলে গেছে। অনেক দেনদরবার করে শেষ পর্যন্ত
দুইটা গাডি নিলাম !!!

সকালের ঘন কুয়াশায় নিজেকে ঢেকে রওনা হলাম পাহাড়ের পথ ধরে। কেবল আমরা নই, পুরোটা পথ জুড়ে সবুজ পাহাড়, তারা যেন নিজেকে আবৃত করেছিল কুয়াশার নরম চাদরে। কুয়াশার ঘনত্ব ভেদ করে গাড়ি চালানো বেশ কষ্টকর হওয়ায় যাত্রাপথে প্রথম বিরতি বাঘাইহাট বাজারে।
পাহাড়ের কোল ঘেঁষে এই পাহাড়ি বাজারের পাশ দিয়ে চলে গেছে কাচালং নদী। পাহাড়ি-বাঙালির দ্বন্দ্বের কারণে নদীর পাড়ের এই বাজার অনেকদিন ধরেই বন্ধ রয়েছে। তবুও বাজারে নেমেই হালকা কেনাকাটা ও পেপে কেনা হল এবং সবাই তা খেয়ে নিলাম আর শীতের সকালে কিছুটা উষ্ণতা গায়ে মেখে নিলাম ।সাজেক যাওয়ার পথে সবচেয়ে মজার ব্যাপার হচ্ছে যাওয়া ও আসার পথে ট্যুরিষ্টদের গাডী দেখা মাত্র ছোট্ট ছোট্ট শিশুগুলো হাই ফাই / টা টা দেখাতে আর আমরা কৃতজ্ঞতাস্বরুপ ওদের দিকে চকলেট ছুডে দিচ্ছি
চকলেটগুলো কুডিয়ে নেওয়ার পরে ওদের চোখে যে একটা খুশির আভা , তা আমরা জীবনেও ভুলতে পারব না ।

কিছুক্ষণের বিরতি শেষ করে আবার চলা শুরু। রাস্তার দুপাশের বিচ্ছিন্ন পাহাড়ি ঘর। বাঘাইহাট বাজারের পর গঙ্গারাম মুখ। দুপাশ থেকে বয়ে আসা দুটি নদী এক হয়েছে এখানে। পাহাড়ের বুক চিড়ে বয়ে যাওয়া নদী চলে গেছে দূরের পথ ধরে।
মুক্ত আকাশের নিচে বিশাল সমৃদ্ধ বনভূমির সন্ধান পাবেন কেবল সাজেক ভ্যালির পথে। পাহাড়ের ভাঁজে ভাঁজে জুম চাষ, কয়েকরকমের জুম চাষে ভরপুর পাহাড়।
উড়োবাজার, গঙ্গারামমুথ, নন্দরাম এসব পাহাড়ি পাড়া পেরিয়ে আমাদের দ্বিতীয় যাত্রা বিরতি মাচালং বাজার। পাশের সীমান্ত ঘেঁষা ভারত থেকে আসা মাচালং নদীর অববাহিকায় গড়ে উঠেছে ছোটখাট বাজার। এই এলাকা সাজেক ইউনিয়নের প্রধান কেন্দ্রস্থল। আদিবাসী আর বাঙালি— মিলেমিশে এই বাজারে ব্যবসা করে। দূরদূরান্তের পাহাড়িরা একদিন আগেই বাজারে আসতে শুরু করেন।
মাচালং বাজার থেকে সাজেকের পথের দূরত্ব ১৮ কিলোমিটার। বন্ধুর পথ— দুপাশেই আকাশচুম্বী পাহাড়ের বুকে উদ্ধত শিখর তুলে দাঁড়িয়ে আছে বৃক্ষরাজি। দীর্ঘজীবি বৃক্ষের দেখা মেলে এই পথে, মাঝে মাঝে বিচ্ছিন্ন বসতি। দূরের পাহাড়ে মেঘের গড়াগড়ি দেখতে না দেখতেই আমরা পৌঁছে যাই সেই মেঘের রাজ্যে।

এক সময় উঁচু পথের সমাপ্তি হয়, পা রাখি রুইলুই পাড়ায়। এটা সাজেক উপত্যকার মূল কেন্দ্র। রুইলুই পাড়ায় লুসাই, পাংখোয়া, ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর বসবাস। পাড়ার সবগুলো বাড়ির রং লাল-সবুজ।



সাজেক পৌছেই আমরা রাতে থাকার জন্য কটেক খোজতে লাগলাম !! শেষ পর্যন্ত আমরা ভাডা করলাম এক পাহাডীদের তিনটা রুম ! আমাদের ব্যাগ ও জিনিসপত্র রুমে রেখে দুপুরের খাওয়া অর্ডার দিতে গেলাম আমি আর সবুজ ঐখানের এক দিদির দোকানে । দিদি বলল খানা রেডি করতে প্রায়ই ৪ টা বাজবে , তাই এই ফাঁকে আমরা রাতের মুরগীর বারবিকিউ করার জন্য মসল্লা মাখতে শুরু করলাম

দিদির বাসাই খাওয়া দাওয়া শেষে আমরা বেরিয়ে সাজেকের রুপ দেখতে বেরিয়ে দেলাম
[img|http://s3.amazonaws.com/somewherein/pictures/Fahimabu/Fahimabu-1453372401-a307ef5_xlarge.jpg
সন্ধায় আসার পথে চা নাস্তা করে ও রাতের জন্য পরটা ও পাউরুটির জন্য অর্ডার দিলাম।
কটেজে এসে শুরু করে দিলাম বারবিকিউর প্রোগ্রাম !!

সাথে সাথে উপভোগ করতে লাগলাম জোছনার আলোয় আলোকিত উপত্যকার পুরো রাজ্য।
পাহাড়ের গায়ে হেলান দিয়ে এখানে আকাশ ঘুমায়, পাহাড়ের বন্ধনহীন মিলন দেখা যায়। কোথাও কোথাও তুলার মতো দলছুট মেঘের স্তুপ ভেসে বেড়ায় পাহাড়ের চূড়ায়, যেন স্বপ্নরাজ্য।
পূর্ণিমায় আলোয় আলোকিত পুরো পাড়া। সহস্র নক্ষত্রে ঢাকা সাজেকের বিস্তৃত আকাশ আর নক্ষত্রের আলোয় নিচের পৃথিবী, ধবধবে জোছনার আলোয় আলোকিত উপত্যকার পুরো রাজ্য।
জ্যোৎস্না রাতের আলোয় কাছে দূরের পাহাড়ের ভাঁজে ভাঁজে জেগে উঠছে ঘন সাদা কুয়াশা। এমনই ঘন যে, কুয়াশাকে মনে হয় মেঘের ভেলা। এরকমই মেঘের ভেলায় ডুবে যাওয়া পাহাড়ের চূড়াকে মনে হচ্ছিল সমুদ্রের পানিতে দাঁড়িয়ে থাকা বিচ্ছিন্ন দ্বীপ। বিভ্রম জাগে, এ কি আমাদের চেনা পৃথিবী!

ঘোরলাগা রাত এক সময় ভোর হয়, মেঘ পায়ের কাছে হেসে লুটোপুটি খায়- নতুন দিনের অভিবাদন জানায়। হলুদ নদী, সবুজ বন, গেরুয়া পাহাড় সবটুকু অদৃশ্য হয় সাদা মেঘের আড়ালে। মেঘ কেটে কেটে ফিরতে লাগলাম চেনা লোকালয়ের পথে।


মন্তব্য ৩ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ২৪ শে জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ৮:২০

সাদা মনের মানুষ বলেছেন: সাজেক ভ্যালী, আলু টিলা গুহা এসব ছবি দেখলে রোমাঞ্চিত হই.....পোষ্টে ভালোলাগা জানিয়ে গেলাম

২৫ শে জানুয়ারি, ২০১৬ সকাল ১০:২৮

ফাহিম আবু বলেছেন: ধন্যবাদ !!

২| ২৪ শে জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ৮:২১

সাদা মনের মানুষ বলেছেন:

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.