সহীহ দেশপ্রেমনামা

১০ ই এপ্রিল, ২০১৫ সকাল ৯:৪৯

মেয়েদের মন আর বাঙালীর ইমোশন দুইটাই দেখলাম একই ক্যাটাগরির জিনিস।

বোঝেন নাই?
না বোঝারই কথা।

আজকাল কেমন যেন দার্শনিক টাইপ কথাবার্তা বলা শুরু করে দিছি। সহজে কাউকে বুঝাতেই পারিনা!
আসেন বুঝায়ে দেই।

মেয়েদের যেমন কখন কোন জিনিসের উপর মন বসে, আবার মন উঠেও যায়, কয়দিন পর আবার সেই একই জিনিসের উপর মন বসেও যায়, তার কোন পূর্বাভাষ নাই;
তেমনি আমরা বাঙালীরাও কখন কোন জিনিস ভালবাসি, আবার খারাপও বেসে ফেলি, কয়দিন পর আবার ওই জিনিসই 'আমার হারিয়ে যাওয়া ভালবাসা' হয়ে যায়, তার পুর্বাভাষ দেয়া ভার (আজকাল অবশ্য আমরা বাঙালীরা এসব লুলামির দিক দিয়ে পুর্বাভাষসাপেক্ষ)।

চলেন, ঘটনার গভীরতা একটা উদাহরণ দিয়েই এক্সপ্লেইন করি।
এই, কয়দিন আগে আমাদের কিছু লুলাংশ ফেবু ইভেন্ট করে, স্ট্যাটাস দিয়ে, কমেন্টের প্রতিবাদী বুলেট ছুঁড়ে পুরো ফেসবুক ঝাঁঝরা করে দিয়েছিল।

ইস্যু কি ?
-ইন্ডিয়া চিট করছে।
আমাদের কি করা উচিত্?
-সমস্ত ইন্ডিয়ান পণ্য বর্জন, হ্যাশট্যাগ মেরে স্ট্যাটাস, এই ওই ইত্যাদি ইত্যাদি।

ঠিক আছে বচ। সংখ্যাগরিষ্ঠের দিকেই থাকি।
ইন্ডিয়ার কপালে লাথি!
চলল দেশপ্রেমের ব্যাবসা ধুমছে কয়দিন। উরাধুরা দ্যাশপ্রেম যাকে বলে আর কি।

কি স্পিরিট আমাদের দেখছেন? আমরা ইন্ডিয়ান পলিটিক্যাল, পাবলিক ফিগার, প্রোডাক্ট, এমনকি আইসিসির ফেবু পেজে গিয়ে পর্যন্ত দ্যাশপ্রেমের বমি করে আসছি! আরো কতো কতো বাঁশঝাড়ে যে দ্যাশপ্রেম দেখিয়ে আরো কতো কতো কি কি যে করছিলাম, ওইটা না হয় ভদ্রতা দেখিয়ে না-ই বললাম।

নাহ, এগুলোতো খারাপ নাহ। ভালো তো!
বাঙালী বুদ্ধিমান হইছে, ভালো কথা!
সুখবর!!


কিন্তু আমরা বাঙালীরা বুদ্ধিমান জাতি আসলেই না।
আমরা হলাম ইস্যূবাজ জাতি।
ইস্যু পেলেই আমাদের মাথায় দেশপ্রেম চাঁড়া দিয়ে ওঠে।
ইস্যু Is Over, দেশপ্রেম Is Over Too।

যেই লুলরা এই সেদিন ইভেন্ট করে, স্ট্যাটাস দিয়ে, রাস্তায় প্লাকার্ড হাতে প্রতিবাদের বুলেট ছুঁড়েছিল; এই এদিনে এসেই তাদের আবারঃ
১) আইপিএল না দেখলে শরীর ম্যাড়ম্যাড় করে। আইপিএলের সময় কারেন্ট চলে গেলেই স্থানীয় বিদ্যুত্ অফিসে কল দিয়ে কারেন্ট আসার দোয়া শোনায়।
২)বলিউড মুভি ছাড়া 'সময় যেন কাটেনা, বড় একা একা লাগে'।
৩)ফেয়ার এন্ড লাভলী/গার্নিয়ার ছাড়া মুখ ফর্সা হয় না।
৪)সানসিল্ক ছাড়া চুল ঝলমলায় না।
৫)ডাবর আমলা/ভাটিকা তেল ছাড়া চুলে খুস্কি ধরে।
৭)ডাভ সাবান না মাখলে গায়ে 'চিকচিক করে বালি'।
৮)ক্রিকবাজ মোবাইল এপ ছাড়া খেলার আপডেট নেয়া হল মহাপাপ।
৯)দীপিকা, প্রিয়াঙ্কা, আলিয়া, শাহরুখ, সালমানরা অভিনয় না করলেতো 'মুভি' শব্দটাই ব্যর্থ।
১০)ডার্মিকুল ট্যাল্ক ব্যাবহার না করলেই গায়ে চুলচুলানি দেখা দেয়।
১১)গতকাল শাহরুখ ভাই কি ছুন্দর একখানা টিশার্ট গায়ে দিয়ে কেকেআর রে চিয়ার করতে আসছিল, ওইটা কোন ব্র্যান্ড এর রে? আবভি মুঝে উও চাহিয়ে।
ইত্যাদি ইত্যাদি।

সত্যি বলতে কি, এসব প্রোডাক্টের 'গ্ল্যামার' কি বাংলাদেশী প্রোডাক্টে পাওয়া যায়?
যায় নাতো।
দেশী প্রোডাক্ট ব্যবহার করলে যে তাদের গ্ল্যামারাস ইমেজটার ১২টা বেজে যাবেরে ভুপেন।

বাদ দেন এসব।
আমরা যখন ইভেন্ট করে ইন্ডিয়ার প্রতি তথাকত্থিত ঘৃণা, প্রতিবাদ জানাচ্ছিলাম; তখন ইন্ডিয়ান কোম্পানীগুলো কি করছিল জানেন?
দিব্যি পায়ের উপর পা তুলে ভাউচার লিখছিল বাংলাদেশে কি পরিমাণ প্রোডাক্ট আগামী মাসে সাপ্লাই দেয়া হবে।

কারণ তারা জানে, 'সারাদিন রাগারাগি করে সন্ধ্যার পর বাবু ঠিকই মায়ের কাছে এসে ঘুমোবে'।
আমাদের জায়গায় যদি ওদিন ইউএসএ অথবা চায়না-জাপান থাকত, তাহলে শ্রীনির পাছার চামড়া তুলে এই ইন্ডিয়ানরাই পায়ের উপর এনে রাখত।

ইন্ডিয়ানরা জানে, বাঙালীরা ললিপপ পেলেই চুপ হয়ে যায়। বাঙালীর গায়ে তোষামোদের তেল মালিশ করে টাইম ওয়েষ্ট করে লাভ নাই।

কারণ,
বাঙালী ইস্যুবাজ জাতি।
ইস্যু is over, দেশপ্রেম is over too..

(কারো চামড়ায় ফোস্কা পড়লে আমার কিছু করার নাই। ফোস্কা পড়ানোর উদ্দেশ্যেই এই লেখা।)

০ টি +০/-০