নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর।

নিরন্তর যাত্রা

Be a positive thinker..

নিরন্তর যাত্রা › বিস্তারিত পোস্টঃ

অনন্য এক বিকেলের স্মৃতি

২৪ শে জুন, ২০১৩ বিকাল ৫:৫৪

ব্যক্তি মাত্রই চাই, তার জীবনে হাজারও দিনের মধ্যে অনন্য একটি দিন আসুক। হাটি-হাটি পা করে মানুষ এক একটা সিঁড়ি অতিক্রম করে, জীবনের একটা পর্যায়ে সেই পৌঁছে। অনেক ত্যাগ-সংগ্রাম, ভালবাসা-দ্বেষ, হাসি-কান্না, দুঃখ-কষ্ট সাথে নিয়ে মানুষ পৌঁছে যায় একসময় তার গন্তব্যে। সেইদিনটি তার কাছে- বালির উপর তৈরি কোন ভাস্কর্য, যা ছুঁয়ে দিলেই হেলে পড়ে যেতে পারে। গ্রীষ্মের কড়া রৌদ্রের তাপ-দাহ, যার অনলে পুড়ে ছারখার এই হৃদয়। গ্রীষ্মের বাগানে হাজারও ফলের মন মাতানো সৌরভ, যার সৌরভে নেচে উঠে নতুন করে বেঁচে থাকার স্বপন। বর্ষার বৃষ্টিস্নাত মুহূর্তে প্রাণ ছুঁয়ে যাওয়া কোন জলধারা, যা প্রকৃতির মত তাকে নতুন জীবন দিয়ে থাকে। বিলের পানিতে ফোঁটা শাপলার হাতছানি, যা আমাদের মনে হাজারও স্বপ্নের রং ছিটায়। বর্ষার কানায় কানায় পূর্ণ বড় কোন দিঘীর পাড়ে আঁচড় খাওয়া ঢেউ,যা জীবনে দুঃখের হাতছানির ডাক। শরতের মিষ্টি বাতাসে দোল খাওয়া ফসলের মাঠ, যা দুঃখকে তাড়িয়ে দিতে শিখায়। হেমন্তের বাতাসে মিষ্টি সুঘ্রাণ, যা আমাদের মনে উপভোগ করার তৃষ্ণা সৃষ্টি করে। শীতে আঁকড়ে ধরা কাঁথা-কম্বল, যা বুকে ধারণ করে রাখা যায়। বসন্তের বাগানে হাজারও কাঁটায় জড়ানো গোলাপ,.....................। সবশেষে দুরন্ত কিশোরের চঞ্চলতা। মানুষের জীবনের এই বিশেষ দিনটিকে নিয়ে সেই বেঁচে থাকার অবলম্বন হিসেবে বুকে আঁকড়ে থাকে বাঘিনীর বাচ্চা পালনের মত।

ঘড়ির কাঁটা ৬টাতে গড়াগড়ি খেতেই বাসা থেকে বের হয়ে হাটতে থাকি আনমনে। নিজেকে তখন খুব অন্যমনস্ক মনে হচ্ছিল। কোথায় যে হারিয়ে গেছিলাম অজানায়। হঠাৎ পায়ের সাথে ধাক্কা লাগা রিকশার চাকা আবিষ্কার করলাম। নিজেকে ফিরে পেলাম আবার। হালকা ব্যথা অনুভব করলাম। তবে বড় কিছু হয়নি। ভুলে গেলাম রিকশা চালককে কিছু বলতে। হোকনা অল্প ব্যথা, তাতে কি? আজ কি কিছু বলার দিন। আজ এই দিনটির জন্যই তো বিশটি বছর কাটিয়েছি। নিজের সত্ত্বার উল্টো একটা ছোট হাসি দিয়ে আবার হাটতে লাগলাম। এক সময় পৌঁছে গেলাম ঠিকই। ফোন দিয়ে জানতে চাইলাম কোথায়? নিউমার্কেটের মোড়ে, অযথা একটা জ্যাম আমার মত হাজারো তৃষ্ণার্তকে প্রতিদিন কষ্ট দিয়ে থাকে। একটি মুহূর্তকে মনে হচ্ছে অনন্তকাল। নিজেকে মনে হচ্ছে- ঠাই দাঁড়িয়ে থাকা কোন বট বৃক্ষ। বটবৃক্ষের যেমন অনন্তকালের কান্না কেউ দেখে না, ঠিক তেমনি আমার মনের আগুনের ফাগুণ-ধারা কেউ দেখে না। সারাদিনের কড়া রোদের পর ক্লান্ত সূর্য যখন পশ্চিমের আকাশে হেলে পড়ে, জানিয়ে দিচ্ছে নতুন দিনের আগমনী বার্তা। যান্ত্রিক এই শহরের রাস্তাগুলোতে যখন বর্ষার পানিতে টইটম্বুর ঝিলের মত ভোঁভোঁ করে ছুটে চলা গাড়ি গুলো আপন গন্তব্যে যাছে। পশ্চিমের আকাশে লালিমাগুলো যখন ক্লান্ত শরীরে ষোড়শী কোন যুবতীর রঙে নিজেকে রাঙিয়ে নেয়, ঠিক তখনি হুড ফেলানো রিকশা করে আসে- আমার হাজার বছরের বেঁচে থাকার স্বপ্ন পেত্নী। জীবনে সবসময় একটি জায়গায় গিয়ে পরাজিত হয়। আজও তার উল্টো হল না। রিকশা ভাড়াটা নিজে দিতে ছেয়েছিলাম, কিন্তু ব্যাটার কাছে ১০০ টাকার ভাংতি নাই। অগত্যা বাড়িয়ে দেওয়া কোন কুটিরে আগলিয়ে রাখা, ৫০টাকার নোট থেকে ৩০টাকা ভাড়া মিটিয়ে দিলাম। বাকিটা নিজের কাছে রেখে দিলাম।

আগুনের দিকে তাকানো গেলেও সূর্যের দিকে তাকানো যায়না। চোখে চোখ পড়তেই সারা শরীরে অজানা এক শিহরণ অনুভূত হল। তৃষ্ণার্ত চোখ গুলো হয়ে গেল মুহূর্তেই স্নেহের পরশ বুলিয়ে দেওয়া কোন নীড় *(আমার চোখগুলি দেখে মনে হচ্ছিল, ক্ষুধার্ত- আমার সামনে রাখা সে আস্ত ভাঁজা মুরগী)। তার চোখের মধ্যে খুঁজে পেলাম জীবনানন্দ দাশের “পাখির নীড়ের মত নাটোরের বনলতা সেন”। তাকে কাছে পেয়ে মনে হচ্ছিল, বিশটি বছর এই জন্যই তো আমার আমি, আমি এক নিরন্তর। নিজেকে হারিয়ে ফেলেছিলাম অন্য জগতে। ভাবতে পারিনি সেই এমন ভাবে আমার কাছে ছুটে আসবে। বিশ্বাস হচ্ছিল না আমি আজ তাকে এত কাছে দেখছি? কোন রকম সত্য মনে হচ্ছিল না যে- আমার জীবনের সাধনার ধন, আমার জীবনের নিঃশ্বাস আমার কাছে! নিজের চোখের প্রতি অজানা অবিশ্বাস জন্মে উঠল। খসে পড়ে যাওয়া কোন বস্তুর মত করে হাতটি ধরে ফেললাম। হাতটি ছাড়িয়ে নিতে জোর করলেও ইচ্ছে হচ্ছিল না ছেড়ে দিব। তাই বার বার ধরার চেষ্টা করলাম। *(কথা না আগে কোন ধরণের অভদ্রতা)। তারপরও হাতটি ধরে খোলা আকাশে নিছে বিছানো ঘাসের উপর বসে পড়লাম। সামনা-সামনি বসে নিজেকে ঠিক রাখতে পারছিলে না। আমি চোখে চোখ রেখে হারিয়ে গেলাম অজানায়। পাশাপাশি বসে পড়লাম। নিজেকে মনে হচ্ছিল আজ আমার জীবন সার্থক, পরিপূর্ণ মায়া- ভালবাসা আজ আমাকে ছুঁয়ে গেছে। কবির ভাষায়-

ভোরের সূর্যের আলো পৃথিবীর গুহায় যেমন

মেঘের মতন চুল — অন্ধকার চোখের আস্বাদ

একবার পেতে চায় — যে জন রয় না — যেই জন

চলে যায়, তারে পেতে আমাদের বুজে যেই সাধ —

যে ভালোবেসেছে শুধু, হয়ে গেছে হৃদয় অবাধ

বাতাসের মতো যার — তাহার বুকের গান শুনে

মনে যেই ইচ্ছা জাগে — কোনোদিন দেখে নাই চাঁদ

যেই রাত্রি — নেমে আসে লক্ষ লক্ষ নক্ষত্রেরে শুনে

যেই রাত্রি, আমি তার চোখে চোখ, চুলে তার চুল নেব বুনে!



হাত ধরে রাস্তা পার করে নিতে চেয়ে ছিলাম কিন্তু পারলাম না। আমার কি শুধু ভালবাসার অধিকার? বিপদের সময় আগলিয়ে রাখার অধিকার নেই? এই ছুঁয়া, এই আলিঙ্গনই- আমাকে জাগিয়ে দেয় আমি মানুষ। হাত ধরে হেঁটেছি জোর করে *(শিল্পের পর্যায়ে পড়েনা, কোন শিল্প গুণ নেই)। তোমাকে বুকে আগলিয়ে রাখার, তোমাকে ছুঁয়ে দেওয়ার ইচ্ছা পূরণ করলাম। তোমার হাতের স্পর্শ পেয়ে প্রাণ পেল এই গ্রীষ্মের রৌদ্রের অনলে পোড়া মন। ছুটে গেলাম এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায়, একটু নিরিবিলি পরিবেশ খুঁজতে *(একটু স্তিমিত ছিল)। আমি তো ভাল করে প্রপোজ করতে পারিনি সেই দিন, তাই সাতটি গোলাপকে ঘাস দিয়ে বেঁধে দিলাম। সাতটি গোলাপ আর ঘাসের মর্ম কি তা অজানায় থেকে যাবে। তবে হয়ত বলবে সাতটি গোলাপ তো মহিলার কাছে অজানায় নিয়ে ছিলে? আর ঘাস তো বাঁধার কোন কিছু না পেয়ে বেঁধে ছিলে? আর এই দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখলাম আমার আমি আমার স্পর্শে। নিজের রাগকে কন্ট্রোল করতে না পেরে রিকশায় বিদায় দিলাম। জানি, এটা আমার ভুল ছিল। আবার নিজেকে কন্ট্রোল করতে না পেরে তোমার কাছে ছুটে গেলাম। তোমার চরণে আমার এই লাইনগুলি-

ভালবাসা একখানা কেশ-সরু সাঁকো

একসাথে দুটি হৃদয় পার হবে হায়,

ঝোলে পড়ে মাঝপথে, খসে পড়ে যায়

যেতে যদি পার তব পাবে তার সন্নিধান।

প্রয়োজন তব হায় মানুষ বানায় সাঁকো

নিজেরও প্রয়োজনে, এই তো নয় দেখার

অবাক নয়নে, না দেখে শুধু কর যতন

তাহলে পাবে এই সাঁকো নিজের মতন।



*তার কথা।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.