![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
পড়ন্ত বিকাল, একটি অচেনা বদ্ধ ঘর, মাথার উপর বিদ্যুতের পাখা ঘুরছে বিকট শব্দ করে, পাখাটি স্থির অবস্থায়ও দেখে মনে হয়েছিল আশির দশকের আগের। আর দক্ষিণ দিকে দেয়ালের সাথে লাগানো কিছু দূরত্বে লোহার তৈরি দুটো জানালা, হুহু বাতাস ঢুকছে। তবুও ঘেমে যাচ্ছি। আমার কাছে মনে হল মধ্য পাচ্যের মরুভূমিতে তৈরি কোন ঘরের মধ্যে আছি। পাশে দাঁড়িয়ে আছে আমার কয়েকজন বন্ধু। তাদের প্রত্যেককে দেখে মনে হচ্ছে আজ তারা সুখী, ঠোঁট দুটিতে যেন হাসির ফোয়ারা বইছে। কিন্তু তাদেরকে কেমন জানি আজ আমার অপরিচিত অপরিচিত লাগছে। পরিবেশটাকে মনে হচ্ছে কৃত্রিম।
পাশে বসে আছে একটি মেয়ে। মায়াবী দৃষ্টিতে থাকিয়ে আছে আমার দিকে, দু চোখে অশ্রু, মাথায় ব্যান্ডেজ আর মাঝে মাঝে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে। আর বলছে আমি মুক্তি চাই। তোমরা আমাকে ছেড়ে দাও। আমি এ মানি না। পাশে কেউ একজন বলছে, অনার্স পরীক্ষার পর মেয়েটি নাকি বাবা-মার কাছে চলে যাচ্ছিল। গাড়ি থেকে জোর করে মেয়েটিকে তুলে আনা হয়েছে। আনার সময় নাকি জোরাজোরিতে মাথা ফেটে গিয়েছে। এত কিছুর পর ও চেহারার মাঝে যথেষ্ট মায়া আছে, এবং তাকে আমার সবচেয়ে নিকটজন বলেই মনে হচ্ছে, মনে হচ্ছে তাকে হাজার বছর আগে থেকে চিনি-জানি।
হঠাৎ লক্ষ করলাম, এই সভার নায়ক আমি (যদিও পরে নিজকে ভিলেন হিসাবে আবিষ্কার করি) এবং নায়িকা পাশে বসা মেয়েটি। এখানে উপস্থিতির কারণ, আজ আমাদের বিয়ে হবে। সবাই বলছে এত দেরি হচ্ছে কেন? একজন মৌলবি উপস্থিত হলেন। ইসলামী রীতিতে বিয়ে পড়ানো হল। এবং একটা ফরম দেয়া হল, তিনটি স্থান দেখিয়ে স্বাক্ষর করতে বলা হল। আমি সাবলীল ভাবে তিনটি স্বাক্ষর করলাম। মেয়েটিকে জোর করে স্বাক্ষর করানো হল। হাসিখুশি এবং যথেষ্ট আনন্দের জোয়ার বইছে বন্ধুদের মাঝে। আমি খুশি কিনা জানিনা তবে দুঃখিত না। মেয়েটির মুখে কথা নেই তবে চোখ দিয়ে অশ্রু পড়ছে। কাল বৈশাখী ঝড়ের পর ক্লান্ত হরিণীর মত আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
মনে করতে পারছি, আমার পাশে কনে হয়ে যে মেয়েটি আমার বউ হয়েছে সে আমার স্বপ্নেরই জন, যার জন্য অনেক রাত না ঘুমিয়ে কেটেছে। যার জন্য জীবনের অনেক শ্রেষ্ঠ সময়কে গলা টিপে হত্যা করেছি। যার জন্য কতশত বার এদিক সেদিক বসে থেকেছি। অনেক রাত না খেয়ে থেকেছি। যাকে দুটো চোখ সব সময় খুঁজে ফিরত। যাকে দূর থেকে দেখে মনের মধ্যে শীতলতা অনুভব করতাম। তবে ঠিক সেই মুহূর্তে তার নামটি আমি মনে করতে পারছিনা, তার নাম মনে করার খুব আগ্রহও আমার মাঝে আছে বলে মনে হচ্ছে না।
এই যে কাজ করেছি আমি কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছি না। নিজের বিবেকের কাছে দংশিত হচ্ছি। এই কাজ ক্ষমার যোগ্য নয়। এটা কোন বিবেকবান মানুষের কাজ নয়। আমি যেন লজ্জায়-ভয়ে চুপসে গেলাম। অস্থিরতা অনুভব করতে লাগলাম, আমি শেষ পর্যন্ত এমন একটা কাজই করে ফেললাম যা আমি কখনোই পছন্দ করতাম না! অথচ এখন আমি কি করলাম, কিভাবে করলাম…আমার নিঃশ্বাসের বেগ বেড়ে গেলো, নিজের মধ্যে খুব অস্থিরতা অনুভব করতে লাগলাম…এই অবস্থায় আমার ঘুম ভাঙল, আমি ডান পাশ হয়ে শুয়ে আছি। আমি খুব জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিচ্ছি।
মোবাইলে সময় দেখলাম ভোর ৪.০০টা। কিন্তু আমি খুব ভয় পেলাম! খুব অস্থির ভাবে দোয়া ইউনুস পড়ছিলাম। আমি এই স্বপ্নের কথা আজ সারাদিন মনে করেছি এবং ভেবেছি, আমি এমন স্বপ্ন কেন দেখবো?! আর যদি সেটা নেহায়েত একটা স্বপ্ন-হবে, তবে আমি এভাবে ভয় পেলাম কেন?! আমিতো ভূত দেখলেও এভাবে ভয় পেতাম বলে আমার মনে হয়না!!! এটা গ্রহণযোগ্য না...
আল্লাহ রক্ষা কর্তা…
ফারুক আহমদ
৫.২০ মিনিট- ৩০.০৪.২০১৪
ঢাবি ১০০০
©somewhere in net ltd.