![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
কখনো ভাবতে পারিনি আমার এমন হবে। শেষবার যখন তার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে ছিলাম, তখন মনে মনে প্রতিজ্ঞা করেছিলাম আর কখনো তার সামনে গিয়ে দাঁড়াবো না আর দাঁড়াতে সাহসও করিনি। তারপর অনেকটা মাস কেটে গেছে। সময়ও বদলে গেছে অনেক। আমিও বদলে গিয়েছি। তার মুখামুখি আর দাঁড়ানো হয়নি, তবে আজ আবার দেখা হয়ে গেল তার সাথে দূর থেকে। অফ পিরিয়ডে ডাকসুতে বসে খাচ্ছিলাম, সেও ডাকসুতে খেতে আসছিল। হঠাৎ করেই অনেক দিন পর তার দেখা পেলাম। আমি তার দিকে তাকিয়ে খুব অবাক হই। শ্যামলা মুখে মিষ্টি হাসির রেখা আমাকে দেখা মাত্রই উবে গেল। সদ্য পিতা হারানোর ছাপ তার মুখে স্পষ্ট। তবে তেমনি রয়ে গেছে যেমনটা দেখেছিলাম আগে। দ্রুত চোখ ফিরিয়ে নিই। আমার বুকের ভেতর যে লুকায়িত অশ্রুর সমুদ্র আছে, সেখানে প্রলয় উঠল যেন। মনে হল চারপাশের সকল কোলাহল থেমে গিয়েছে। নিশ্চুপ দাড়িয়ে রইলাম। তাকে আমি অনেক ভালবেসে ছিলাম। যতটা ভাল পৃথিবীর কেউ কোনদিন বাসেনি। আমার শরীরের প্রতিটি রক্ত কণিকায় ও মিশে গিয়েছিল। আমার সমস্ত হৃদয় জুড়ে ছিল কেবল সে। আকাশেও তত তারা নেই যতবার তাকে আমি ভালবাসি বলেছি। অথচ ও একদিন আমার ভুলে ধরে, আমার সকল ভালবাসাকে উপেক্ষা করে জীবন থেকে সরে গেল। আমার প্রতি তার অভিযোগের অন্ত ছিলনা। পৃথিবীতে যদি কোন মানুষ অকর্ম থাকে তার দৃষ্টিতে আমি ছিলাম অন্যতম। আমাকে কীট হিসাবে মূল্যায়ন ছিল তার। ওকে বুঝাতে পারিনি ভুল কখনো চিরস্থায়ী না, একদিন ভালবাসার পরশে ভুল শুধরে যাবে। কিন্তু আমার কোন ব্যাখ্যা তার কাছে তিল পরিমাণ তাড়না জাগায়নি। আস্তে আস্তে পাল্টে যায় তার সকল আচরণ। ওর এমন রহস্য ময়ী আচরণ আমার সাজানো পৃথিবীটাকে নরক বানিয়ে ফেলে ছিল। শত অবহেলা আর অবজ্ঞা সত্ত্বেও ওর জন্য রাস্তায় দাড়িয়ে থাকতাম। বেহায়ার মত হলের সামনে অকারণ গিয়ে উপস্থিত হতাম। ও আমার দিকে ফিরেও তাকাতো না। ওর চারপাশের সব মানুষকে আমার কাছে মুখ ফিরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করলো আর তাতে সফলও হল। সবাইকে আমার কাছে অপরিচিত বানিয়ে দিল। যেন তার খবর না পাই সব আয়োজন সম্পন্ন করে আমার কাছ থেকে চিরতরে সরে গেল। অপমানের যন্ত্রণায় নীল হয়ে গিয়ে ছিলাম। ঋতুর পরিবর্তনে পুরানো পাতারা যেমন করে গাছ হতে ঝরে পড়ে তেমনি করে আমি ওর জীবন থেকে নিঃশব্দে ঝরে পড়েছিলাম। শুনে ছিলাম নারীরা নাকি মায়াবতী হয়। কিন্তু কি আশ্চর্য ও যখন হটাৎ করেই বলে দিল অনেক হয়েছে আর নয়। তখন ওর মুখের দিকে তাকিয়ে মনে হয়েছিল ও যেন শক্ত পাথরের প্রতিকৃতি। আমি বোধহয় তখন পাগল হয়ে গিয়ে ছিলাম। বারবার মনে হত বেঁচে থেকে কি লাভ? আমি পারিনি, কিছুই করতে পারিনি। শূন্য হৃদয়ে বসে বসে কেঁদেছি। কত রাত যে অভুক্ত থেকে নির্ঘুম কাটিয়েছি তার হিসেব নেই। ধুসর বাস্তবতা আর হতাশার কুয়াশায় ঢেকে গিয়ে ছিল আমার পৃথিবী। সে হটাৎ করেই আজ ওকে সাপের মত শীতল মনে হল। হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে কপালের ঘাম মুছি। আনমনে বলি, আমি কখনো কারো শরীর পেতে চাইনি, মন পেতে চেয়ে ছিলাম। পাইনি। আমার জীবনে যে মরুভূমি সে সৃষ্টি করেছো তার প্রতিদান হয়তো সে পাবে।
শরীরটা বড় বেশি ক্লান্ত লাগছে। আমি বাসায় ফিরছি। বাসায় ফিরে খুব নিঃসঙ্গ লাগলো। ঘরের বাতি জ্বালাতে ইচ্ছে করলো না। চেয়ারে বসে রইলাম। বাহিরে কোলাহল। আর অগণিত টুংটাং শব্দ। কিছুই ভাল লাগছে না আজ। পাশের ফ্ল্যাট থেকে উচ্চ শব্দে গান ভেসে আসছে। কিছু উচ্ছল তরুণীর হাসি বুকে বিঁধছে। যৌবনের উচ্ছ্বাস দেখেও ভাল লাগছে না। এত কোলাহলের ভেতরও নির্জীব পড়ে রইলাম চেয়ারে। কোন কিছুই আজ স্পর্শ করছেনা আমাকে। সে কি কখনও আমায় ভালবেসে ছিল? সে কি সত্যি আমাকে কোনদিন ভালবেসে ছিল, নাকি সবি ছিল তার খেলা! নারী হৃদয় বড় বেশি বৈচিত্র্যময়। নারীদের মুখের কথার সাথে তাদের মনের কথার কোন মিল নেই। হঠাৎ করেই মনের মধ্যে ঝড়ো হাওয়া বইতে শুরু করলো। তীব্র বাতাসের শো-শো শব্দে চারদিক অন্ধকার হয়ে গেল। মনের মধ্যে বৃষ্টির ফোটা পড়তে শুরু করলো। সব শব্দ পেড়িয়ে এখন শুধু রিমঝিম বৃষ্টির শব্দ। সবুজ মাঠের প্রথম দেখা । সব কিছু যেন স্মৃতির পাতায় ভেসে উঠছে আজ। ধীরে ধীরে সব মনে পড়ছে। খেয়াল করলাম ওর হাত ধরে থাকতে ভাল লাগে। ওর মুখের দিক তাকালে বুকের ভেতর কেমন যেন করে। সারাক্ষণ ওরে ভাবতে ভাল লাগে। বুঝতে পারিনি কখন যে আমি ওর প্রেমে পড়েছি। একদিন ওকে খুলে বললাম। কার্জন হলের মাঠে আমি কিছুটা বিব্রত হয়ে হয়ে ওর দিকে তাকিয়ে রইলাম। জীবনের সেই দুরন্ত প্রথম প্রেম আজ মনের বাদল দিনে রঙ্গিন পর্দার মত চাখের সামনে ভেসে উঠলো। হটাৎ করে মোবাইলে রিংটোন বেজে উঠায় এক ঝটকায় বাস্তবে ফিরে এলাম। মনের গহীনে বৃষ্টি এখনও নামছে অঝর ধারায়। ডিসপ্লেতে অচেনা নাম্বার। ধরতে ইচ্ছে হল না। রুমে এসে বাতি অন করলাম। শীত শীত লাগছে। বাহিরে বৃষ্টির শব্দ। আজ সারা রাত ধরে হয়ত এই বর্ষণ চলতে থাকবে। নামুক বৃষ্টি, ভাসিয়ে দিক শুকনো বুকের শহরটাকে। পবিত্র পানির স্পর্শে পবিত্র হোক সব। আমার বুকে বাজে ওর কথা। সত্যিই তো আজ আর কিছুই যেন অবশিষ্ট নেই। বুকের ভেতরে জমে থাকা ভালবাসা গুলি কান্না হয়ে বালিশে শুকিয়ে গিয়েছে যেন। আমি ভুলে গিয়াছি আমার প্রথম ভালবাসা কে ছিল! এ হৃদয় যেন সাহারা মরুভূমি! শুকিয়ে যাওয়া নদীতে নৌকা চলেনা। মরুভূমি হয়ে গেছে আমার হৃদয় নহর। সেখানে আর তার জন্য কোন ভালবাসা নেই। তাকে ভুলে গিয়েছি আমি। তার সাথে কথা বলারও ইচ্ছে নেই আমার। ভুলে গিয়েছিলে ভুলেই থাক বাকিটা জীবন…। শেষ কথা গুলো ভাবতেই পরাজয়ের যন্ত্রণা কিছুটা কমেছে। আমি অন্ধকারে তাকিয়ে ভাবছি কে বেশি কালো অন্ধকার নাকি তার হৃদয়?
১৩ ই মার্চ, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:১৪
নিরন্তর যাত্রা বলেছেন: অচেনা নাম্বার অচেনাই ছিল! মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ
২| ১২ ই আগস্ট, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:৫০
মামুন রশিদ বলেছেন: সুন্দর লিখেছেন । ভালো লেগেছে ।
১৩ ই মার্চ, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:১৫
নিরন্তর যাত্রা বলেছেন: থ্যাংকস ভাইয়া
©somewhere in net ltd.
১|
১২ ই আগস্ট, ২০১৪ রাত ১২:০৬
হিমালয় হিমু বলেছেন: অচেনা নাম্বারটা কি তার ছিল?