![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মেয়ে...........
কার্জন হলের প্রথম দিন
ছেলেটি কার্জন হলের গেইটে দাঁড়িয়ে আছে। দাঁড়িয়ে আছে একটি মেয়ের জন্য। মেয়েটি কিছুক্ষণের মধ্যে হয়তো এসে পড়বে। ছেলেটির মনে খুশির জোয়ার। মেয়েটির সাথে মনের কথা বলবে। ছেলেটি যদিও অগোছালো,তবে প্রেমে পড়লে একটা হাবাগোবা ছেলে বা মেয়ের মুখেও নাকি খই ফুটে। অনেক সহজ সরল, মেয়েটি। যা বলার খুব সহজে গুছিয়ে বলে দিতে পারে। ছেলেটি অনেক বড় বড় লেকচার দেয় যার আগা-মাথা কিছুই সে নিজে মানে না কিন্তু তবুও ছেলেটির লেকচার থামে না। মেয়েটি কিছুক্ষণ যুক্তি দিয়ে ওর কথার ভুল দেখাতে চাইবে পরে হাল ছেড়ে দেয়। এমন একজন ছেলের সাথে সুন্দর শুদ্ধ বাংলায় গুছিয়ে বলতে পারা মেয়েটির মিল হল, শুধু ভালবাসার জোরে।
পূর্ণতার মাঝে
গাছের নিচ বসে আছে। কারও মুখে কোন সাড়াশব্দ নেই। ছেলেটির নির্লজ্জ হাত ছোঁয়ার মাঝে তাদের নীরবতার ছেদ পড়লো। একটানে মেয়েটি হাত কেড়ে নিয়ে মাটির সাথে চোখ বুজে দিল পরম তৃপ্তিতে। অতঃপর গল্পের রাজ্যে হারিয়ে যাওয়া। আবার কখনো হাঁটতে থাকে দুজনে। যে হাঁটা কখনো না ফুরালেই পথিকের মনে শান্তি। দুজন দুজনার হাতে হাত ধরে। আবার কখনো গায়ে গা ঘেঁষে। কখনো বুকের মাঝে মুখ লুকিয়ে থেকে। ছেলেটি তাকিয়ে বলল,তোমাকে অনেক সুন্দর লাগছে। অনেক। মনে হচ্ছে আকাশের কোন পরী ভুলে ভুলে পৃথিবীতে নেমে এসে আমার সাথে হাঁটছে। অপূর্ব তুমি। বড় বড়,টানা টানা চোখ। লম্বা চোখের পল্লব। ঠোঁটের উপরে হালকা গোলাপি রঙ। চোখে অনাবিল এক সুখের মেলা। সারাদিন তাকিয়ে থাকলেও তৃষ্ণা মিটবে না ছেলেটির। ছেলেটি পাগলের মত দেখে যায় এই মায়াময় দৃশ্য।
বৃষ্টি ভেজা
এইতো হলে চলে যাবে মেয়েটি। ঠিক সেই মুহূর্তেই বিনা মেঘে বজ্রপাতের মত বিনা মেঘে বৃষ্টি। দু’জন আজ বৃষ্টি থেকে পালিয়ে যাবে। পালিয়ে যেতে চাই কিন্তু নীলক্ষেত এসে একটা হাসি দিয়ে বৃষ্টিতে ভিজবে বলে রিকশা থেকে নেমে পড়ে ছেলেটি। অতঃপর মেয়েটিও, পুরো শরীর ভিজে চলল দু’জনের। হাত ধরে দু’জনে বৃষ্টিতে ভিজছে। ঠাণ্ডায় ছেলেটি মেয়েটিকে জড়িয়ে ধরে আর সবকিছু ভুলে ওড়নার ঘ্রাণ নিতে লাগল। এত সুন্দর গন্ধ কোথাও নেই,কোথাও। এত কাছে মেয়েটিকে আগে কখনো পায়নি ছেলেটি। ছেলেটি হাত ধরে বলতে লাগলো,আমায় ছেড়ে কোথাও যেওনা। এই ওড়নার ঘ্রাণ আমি সারা জীবন পেতে চাই। দু’জনই নীরব,চারদিক নীরব,শুধু বৃষ্টির শব্দ।
বিদায় বেলা
কমলাপুর। তারা দুজনে বাড়ি যাবে একই দিনে। ট্রেন ছাড়ার আগমুহূর্তে বিদায় বেলায় দৌড়ে এসে ছেলেটিকে বুকে জড়িয়ে কেঁদে উঠলো মেয়েটি। ছেলেটি পাঁথরের মত নিশ্চুপ। তার মুখে কোন কথা নেই। শুধু মাথায় হাত বুলিয়ে বলে, আমি আবার তোমার হয়ে ফিরে আসবো তোমার মাঝে। আমার জন্মই তোমার জন্য। এই বাঁধন সারা জীবন অটুট থাকবে। আর কপালে ছোট্ট একটা চুমু বসিয়ে দেয় ছেলেটি। সারা স্টেশনের মানুষ তাকিয়ে আছে পাগলের মত মেয়েটির দিকে। তাদের চোখে এক অনাবিল প্রশান্তি এমন মিলন যেন না ভাঙ্গে কখনো। এমনই যেন ভালবাসা থাকে আজীবন।
ছোট্ট সংসার
দু’জনের ছোট সংসার, মাঝে মাঝে রান্না করা। একসঙ্গে ক্যান্টিনে বসে খাওয়া। দু’জন দু’জনাকে হাত দিয়ে খাইয়ে দেওয়া। রান্না করা অধিকাংশ তরকারি ছেলেটির ভাগ্যে জুটতো। এমনটি করতে পারলে মেয়েটি যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচত। মেয়েটির লবণ বেশি খাওয়া, খেলে খুব রাগ করতো ছেলেটি আর বকা দিত ভীষণ। তবুও মেয়েটি একটু সুযোগ ফেলেই বা ছেলেটি অন্য মনস্ক হলে লবণ খেয়ে নিত। আর খাওয়ার মাঝে চিমটির কাটি আর গল্প হত দু’জনের। সারা রমজান মাস একে অপরের সাথে ইফতার করা অতঃপর পাশাপাশি বসে থাকা।
দুষ্টামি আর ভালবাসা
শাড়িতে অপরূপ লাগছে মেয়েটিকে। বেগুনি রঙয়ের শাড়িতে অসম্ভব রকমের মানায় তাকে। এই রকম শাড়ি পড়ে বিকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ধানমন্ডি লেকের পানির দিকে তাকিয়ে কত কথা বলে যাচ্ছে দু’জনে। কখনো হাসি, কখনো চোখ টিপুনি। আঙ্গুলের লুকোচুরি খেলাও চলে তাদের। এক হাতের আঙ্গুলগুলি অন্য হাত দিয়ে চেপে ধরতো। আর বলা হত এই আঙ্গুল ধরতে পার কিনা দেখি। মেয়েটি অধিকাংশ সময় ধরতে পারলেও ছেলেটি মিথ্যা বলতো। কখনো হত গানের খেলা। মেয়েটি গান গাইতো আর গানের শেষ অক্ষর দিয়ে ছেলেটিকেও গাইতে হবে। ছেলেটি গানের ‘গ’না বুঝলেও মিথ্যা মিথ্যা গান বানিয়ে বলতো। মেয়েটির গানের গলা খুবই ভাল।
চায়ের নেশা
মেয়েটির চায়ের প্রতি ভালবাসাটা ছিল প্রচুর। প্রতিটা মানুষের একটা নেশা থাকে আর মেয়েটিরও ছিল যাকে বলে চা’খোর। ছেলেটি কোন এক কারণে চা পছন্দ করতো না। কিন্তু মেয়েটির সঙ্গ’তে আজ চায়ের কাপে ছেলেটির সখ্যতা। কিন্তু রবীন্দ্র সরোবরের সেই চা ছিল ছেলেটির কাছে প্রিয়। ওয়ান টাইমের কাপে চা খাওয়ার ঢং ও ছিল ভিন্ন রকমের দু’জনের দুহাত x আকৃতি অতঃপর মুখামুখি হওয়া।
ছেলেটির জন্মদিন
ছেলেটির আজ জন্মদিন। জন্মদিন পালন হল। কেকের উপর জ্বলন্ত উনিশটা মোম। বড় বড় অক্ষরে GADHA লিখা। এক একটা মোমের আলো অন্ধকারকে দূরে টেলে দিয়ে আলো ছড়িয়ে দিচ্ছে। একটা মোমে আগুন দিতেই শোঁ শোঁ করে আগুন উপরে উঠে গেল। কেক কাঁটা হল আর অনেক উপহার তালু বন্ধী হল ছেলেটির। ছেলেটির জন্মের পর আজ প্রথম জন্মদিন পালন করা হল। আর কি কখনো জন্মদিন এভাবে কাটবে ছেলেটির!
মুক্ত মেয়েটি
আজ মেয়েটির কোন পিছুটান নেই। দেরি করে খাইলে কেউ বকা দেয়না। সন্ধ্যার সময় তাড়াতাড়ি টিউশনিতে না গেলে কেউ গালি দেয়না। ফোন না ধরলে, ফোন না দিলেও কেউ মারেনা। অল্পতে কেউ রাগারাগি করেনা। আজ মেয়েটি স্বাধীন। সত্যি আজ মেয়েটি মুক্ত। কেউ তাকে জ্বালায় না, রাগায় না। আজ হয়তো সে নিজেকে গুছিয়ে নিয়েছে।
আজ এক বছর পূর্ণ হল স্মৃতির পাতার জখমগুলোর। ছেলেটি আজকে আবার কার্জন হলে গেল। আজ তবে একা। অনেক একা। কালকের সেই মাঠে গাছের নিচে বসল। গাছের নিচে বসলো কিন্তু গল্পের মাঝে হারিয়ে যাওয়ার কেউই ছিলোনা। কিছুক্ষণ পর আজকেও বৃষ্টি নামতে পারতো। ছেলেটি রিকশা থেকে নেমে বৃষ্টিতে ভিজতো। আজকে কেউ নেই। কোন ওড়নার ঘ্রাণ নেই। ট্রেন স্টেশনের বিদায়ের কান্না কেউ করে না, কেউ তাকিয়ে থাকেনা ছেলেটির পথ পানে। রান্না হয়, তবে ক্যান্টিনে বসে খাওয়া হয়না সেই আগের মত। চুরি করে কেউ লবণ খেলেও ছেলেটি আজ রাগ করে বকা দেয় না। কোন ইফতার একসাথে হয়তো হবেও না। ধানমন্ডি লেক আছে এখনো, বেগুনি শাড়ি পড়া হাজারো মেয়ে আছে ঠিকই, কিন্তু আজ ছেলেটির সাথে সেই মেয়েটি নেই। তবে হয়তো সেখানে আর আঙ্গুলের লুকোচুরি খেলা হয় না। হয় না কোন গান বাঁধা। রবীন্দ্র সরোবরের চা’ওয়ালার সেই চা হয়তো X আকৃতির ঢং’এ আজ কেউ খাইনা। জন্মদিন আসে-তবে কেকের উনিশটি সাদা আলোর মাঝে কেউ হাসে না, আর হয়তো কেক কাঁটাও হবেনা কোনদিন। আজ ছেলেটি হাসলেও কারো মনে তৃপ্তি জাগাবে না। দু চোখ ভাসিয়ে কাঁদলেও কেউ ওর চোখের জল মুছে দিবে না। এমন না বলা হাজারো স্মৃতি নিয়ে বেঁচে আছে হয়তো বাকি জীবন বেঁচে থাকবে, ছেলেটি।
“যদি ডেকে বলি, এসো হাত ধরো
চল ভিজি আজ বৃষ্টিতে।
এসো গান করি,মেঘমল্লারে,
করুণা-ধারা দৃষ্টিতে”।
আসবেনা তুমি,জানি আমি জানি…
©somewhere in net ltd.