নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর।

নিরন্তর যাত্রা

Be a positive thinker..

নিরন্তর যাত্রা › বিস্তারিত পোস্টঃ

বিশ্ববিদ্যালয়ে কাটানো পাঁচটি বছরের ক্ষত...

২৮ শে নভেম্বর, ২০১৬ সকাল ৮:০৭

প্রথম সেই দিনের কথা! প্রথম সেই ক্ষণের কথা! মনে আছে পাঁচ বছর আগে যেদিন ক্লাস শুরু হয়েছিলো, সে সময়টুকুর কথা? আমাদের সেই মুহূর্তের কথা? প্রথম যেদিন ক্লাসে ঢুকলাম নিজেকে প্রচণ্ড বোকা মনে হচ্ছিল। নতুন সব মুখ, অচেনা সব মানুষগুলো। কার পাশে বসবো, সিদ্ধান্ত নিতে পারছিলাম না দেখে ক্লাসে ঢুকে বট বৃক্ষের মত দাঁড়িয়ে ছিলাম অনেকক্ষণ। স্কুল কলেজে ছিলাম ব্যাক-বেঞ্চার, ব্যাক-বেঞ্চারের মহৎ কীর্তি কথা কে ভুলে যায়! তাই ভার্সিটিতে এসেও হলাম কীর্তিমান ব্যাক-বেঞ্চার। ব্যাক-বেঞ্চে বসে করলাম বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের প্রথম ক্লাস।
.
নদীর মত বয়ে চলল ক্লাস, অনেকের সাথে পরিচিত হলাম। আমার প্রথম বন্ধুটি ছিল সুমন! ক্লাসে লেকচার শুনার চেয়ে বাঁদরামি করে কাটতে লাগলো আমরা কজনের জীবন। প্রথম বর্ষের প্রথম সেমিস্টারের কেনা খাতায় চালিয়ে দিলাম চতুর্থ সেমিস্টার পর্যন্ত। টিএসসিতে ক্লাসের ফাঁকে টুয়েন্টি নাইনের রাণীর পিছনে দৌড়ানো হয়েছিল বেশ কদিন। ঢাকসুর রঙ চা সাথে আড্ডাবাজি। পড়ালেখার চেয়ে অনেক বেশি ব্যস্ত ছিলাম বাঁদরামিতে।
.
আমার একটা মুদ্রাদোষ ছিল কারো সাথে আগ-বাড়িয়ে কথা বলতে পারতাম না। তবে তা আজ ছাড়িয়েছি, ইসহাক তো বলেই ফেলে আমি নাকি মস্ত ফাজিল বা বদের হাড্ডি। আসলে আমারও তা মাঝে মাঝে মনে হয়! তবুও বন্ধুত্ব সীমায় থাকেনি, তবে আমাদের বন্ধুত্ব বয়ে চলেনি নদীর মত। বন্ধুত্বকে আঁকড়ে ধরার জন্য প্রথম সেমিস্টার থেকে নিরন্তর চেষ্টা করে ৬ষ্ট ব্যাচের ফেইসবুক গ্রুপ যথাসাধ্য একটিভ রেখে। সুমনের সাহায্যের কথা স্বীকার না করলে অকৃতজ্ঞ হব। একথাও সত্য যে, বন্ধু শান্ত, সাজিয়া ও ৬ষ্ঠ ব্যাচের সব বন্ধুদের সহযোগিতায় পরিণত হল আমাদের গ্রুপ। আমরা হয়ে উঠলাম একটা পরিবার। একটা ভালবাসার নীড়।
.
বিশ্ববিদ্যালয়ে ফক্সি জিনিষটা না থাকলে আমার জীবনটাই ফক্সি হয়ে যেত। বন্ধু তোফায়েল আর বলব না আমার ফক্সিটা দিস। অনেকে জ্বালিয়েছি-কাঁদিয়েছি দুষ্টামি করতে গিয়ে। কয়েকজন তো আমার নামে বদনামই করে বসেছিল। সেঁজুতি আমার নাম দিয়ে ছিল বান্দর। মাঝে মাঝে মনটা খুব খারাপ হতো। আর আমি ক্লাসে এসে চুপচাপ বসে থাকতাম। জোর করে কেউ না কেউ হাসিয়ে ছাড়ত।
.
সেই দিনগুলোর কথা মনে পড়ছে? সেই রাতগুলোতে বুঝতে পারতাম, বন্ধুত্ব জিনিসটার উপর কতটা ভালবাসার। ক্লাসে শেষে বাসায় গেলে কেমন যেন হাঁসফাঁস লাগতো। মনে হতো বন্ধুরা নেই, তাই শান্তি মতো কথাও বলতে পারছি না। দম বন্ধ হয়ে আসতো। পরদিন ক্লাসে ফিরেই শান্তি পেতাম আবার।
.
কেমন করে যেন পাঁচটা বছর চলে গেলো। আজ কদিন আগে ক্লাস শেষ হয়ে গেল। সারাদিন চটপট করছে। ভাবতেই দুচোখ পানিতে টলমল করছে। কখনো ভাবিনি সময়টা এতো দ্রুত চলে যাবে। পরীক্ষাটা শেষ হলেই চাকরীতে ব্যস্ত হয়ে যাব সবাই। কতদিনে অথবা কমাসে একবার দেখা হবে তাও জানি না। জানিনা, বন্ধু ছাড়া জীবন কতটা পানসে হবে। একবারও ভাবিনি এতটা দ্রুত সময় চলে যাবে? হারিয়ে যাব নিষ্ঠুর সময়ের মাঝে।
.
সেদিন সবার চোখ টলটল করছে। কেউ কেউ হয়তো কেঁদে দিয়েছিল। আজ আমি কাঁদছি, একলা, কাঁদার কোন সঙ্গী নেই। একা কাঁদতে হবে তাই তোদের ছাড়া আজ ল্যাপটপের কিবোর্ডকে সঙ্গী করে কাঁদছি। আমার কাঁদা উচিত... ভাল থাকিস বন্ধু ৬ষ্ঠ ব্যাচ, সবাই অনেক ভাল থাকিস!
.
ফারুক আহমদ
সবুজকানন, ঢাকা।
২৬.১১.২০১৬

মন্তব্য ০ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.