নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ট্রুথ নেভার ডাই্‌জ

নিজের সম্পর্কে লেখার কিছু নেই । সাদামাটা ।

আহমেদ জী এস

পুরোপুরি একজন অতি সাধারন মানুষ । আমি যা আমি তাই ই । শয়তানও নই কিম্বা ফেরেশতা । একজন মানুষ আপনারই মতো দু'টো হাত, চোখ আর নিটোল একটা হৃদয় নিয়ে আপনারই মতো একজন মানুষ । প্রচন্ড রকমের রোমান্টিক আবার একই সাথে জঘন্য রকমের বাস্তববাদী...

আহমেদ জী এস › বিস্তারিত পোস্টঃ

মহাবেকুব জাতক কথন- ষোল ।। অপুষ্ট মগজওয়ালা একটি জাতি……..

৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৫৭


আমাদের দেশের মানুষগুলো এখনও যে কেন “মানুষ” হইয়া উঠিতে পারিলোনা এমন আক্ষেপ আমাদের সবারই কমবেশি আছে, এই মহাবেকুবেরও আছে। ইহা লইয়া কতো কথাই তো আমরা বলিয়া থাকি- এ জাতিটা একেবারেই গোল্লায় গিয়াছে, কাহারো মানবিক মূল্যবোধ একেবারেই নাই, মানুষগুলা দিনদিন হিংস্র হইয়া উঠিতেছে, অধঃপতনে গিয়াছে গোটা সমাজটাই, মানুষ এখন পশু হইয়া গিয়াছে ইত্যাদি… ইত্যাদি।
মহাবেকুব বুঝিয়া পায়না, কেন এবং কি কারনে সবাই এই জাতিটারে গালাগালি দিয়াই খালাস কিন্তু কেন এমন হইলো উহার কোনও কার্য্যকরণ কেন হাতাইয়া হাতাইয়া বাহির করিতে পারিলোনা? কিছু বিজ্ঞজনেরা কেবল এক-আধখানা কারণ লইয়াই লুঙ্গি কাছা মারিয়া পড়িয়া রহিয়াছেন যে, সঠিক শিক্ষার অভাব মানুষের মন-মানসিকতার অধঃপতন ঘটাইয়াছে। লোভ তাহাদের খাইয়া ফেলিয়াছে। ইহার বাহিরে যেন আর কিছু নাই! আবার ইহা হইতে উত্তরণের জন্য তাহারা সঠিক শিক্ষার কথাও বাৎলাইতেছেন, বাৎলাইতেছেন “এলেম দ্বারা জ্ঞান ধরা হয়” এর রাস্তাও । ইহা লইয়া মোটিভেশনাল স্পিকাররা দু’পয়সা কামাইবার ভালো ব্যবসা ফাঁদিয়া বসিতে পারিতেছেন কিন্তু পাবলিকের মন-মানসিকতার দু’পয়সারও লাভ হইতেছেনা।
কিন্তু এই জাতিটা কেন গোল্লায় গিয়াছে তাহা কেহ ভাবিয়া দেখিয়াছেন কি? ইহা লইয়া কোনও সারগর্ভ গবেষণা হইয়াছে কি ? মূল কারনটি কি খুঁজিয়া-পাতিয়া বাহির করিয়া সমাধানের পথটি কি বাৎলানো হইয়াছে? হইলেও এই মহাবকুবের বেকুবী এন্টেনায় তাহা ধরা পড়ে নাই!

কি আর করা!!!!!
তাই এই মহাবেকুব নিজে নিজেই ভাবিতে বসিলাম।
দেখিলাম, একদঙ্গল অপুষ্টিতে ভোগা, অনুর্বর মস্তিষ্কওয়ালা দরিদ্র জনগোষ্ঠীর নিকট হইতে সুচিন্তক, যৌক্তিক, আত্মনিয়ন্ত্রক কোনও কিছু আশা করার জায়গাটা আমাদের কোথায়ও আছে কিনা!
নাই…… থাকার কথাও নহে।
কারন জন্মের পর হইতেই দারিদ্রতাজনিত অপুষ্টি আর মানসিক চাপ এই জনগোষ্টির সত্যিকারের মগজের গড়নটাই বদলাইয়া দিয়াছে। জন্ম নিয়াছে অপুষ্ট মস্তিস্ক লইয়া একটি আত্মনিয়ন্ত্রহীন-অস্থির-অসংযমী ব্যক্তি-সমাজ-জনগোষ্ঠী! আমাদের কথামতো যাহারা গোল্লায় গিয়াছে। মহাবেকুব বুঝিয়া পায়না, গোল্লায় যাওয়ার জন্য যে অপুস্ট মগজটাই দায়ী তাহা দেশের তাবৎ বুজর্গগণ বুঝিতে না পা্রিয়া কেন শুধু মন-মানসিকতার, শিক্ষার দোষ দিয়াই যাইতেছেন!!!!!

এখন আপনারা বলিতেই পারেন, “আরে ব্যাটা বেকুব, দারিদ্রতা আর পুষ্টির সাথে দেশের জনগনের গোল্লায় যাওয়ার সম্পর্ক কি ?”
ইহার জবাব খুঁজিতে গিয়া অন্তর্জাল হাতরাইয়া পুষ্টির সহিত আর্থিক অস্বচ্ছলতা মানে দারিদ্রতা, দারিদ্রতার কারনে সামাজিক অসাম্য, সামাজিক অসাম্যের কারনে ব্যক্তি মানষ এমনকি পারিবারিক মানসিকতাতে চাপ, মানসিকতায় চাপের কারনে…….. ইত্যাকার হরেক কিসিমের যোগসাজসের গাদা-গাদা তথ্য পাইলাম। এই সব তথ্য পাইয়া এই বেকুবের জ্ঞান বৃদ্ধি পাইয়াছে বটে কিন্তু আমি মহাবেকুব বলিয়াই সাহস করিয়া সেই বিশাল তথ্য ভান্ডার হইতে অল্পসল্প জ্ঞান মাত্র লইয়া এই কথন কহিতে বসিলাম-----

আমরা সাধারণ জনগণ সচারচর যে বিষয়ের ভুক্তভোগী তাহা হইলো এই যে, গরীবের প্রতি সমাজের ধনী-মধ্যবিত্ত এমনকি কমগরীব মানুষেরও বৈষম্যমূলক আচরণ। মানসিক চাপটি আসে মূলতঃ সমাজের একটি অংশের এই বৈষম্যমূলক আচরণ হইতে। ঘোগের পেছনে ফেউয়ের মতো মানসিক চাপের পেছনে আরও যা আছে তাহা হইলো শিশুকাল হইতেই চাহিদার বিপরীতে প্রাপ্তি আর অপ্রাপ্তির মাঝের বিশাল সব ফারাক । দারিদ্রতার কারনে শিক্ষার উপকরণের অভাবে শিক্ষাক্ষেত্রের বৈষম্য । দরিদ্র বলিয়া প্রতিবেশী এবং সমাজের অবহেলা । জীবিকার প্রয়োজনে সর্বক্ষন ব্যস্ত অসহায় পিতামাতার আদর-স্নেহ-সাহচর্য্য, যথাযথ নির্দেশনা হইতে বঞ্চিত হওয়া।
তাই দরিদ্র- হতদরিদ্র মানুষ মনের দিক হইতেও ধনী আর স্বচ্ছলদের চাইতে যুগ যুগ ধরিয়া দরিদ্রই থাকিয়া গিয়াছে।

এবারে আসি অপুষ্টির সহিত “অপুষ্ট মগজ” গঠনের গল্পটিতে-------
জানিয়া রাখুন, অপুষ্টির কারনে শিশুকাল হইতেই এ দেশের মানুষের মস্তিষ্ক যথাযথ পূর্ণতা নিয়া গঠিত হইতে পারে নাই। এ জন্যই ধনীদের তুলনায় দেশের ৮০-৯০% মানুষ শুধু টাকা-পয়সাতেই দরিদ্র নহে, তাহারা মগজের দিক দিয়াও দরিদ্র হইয়া পড়িয়াছে এবং পড়িতেছে। এই ঘটনা ঘটিতেছে আমাদের বাপ-দাদাদের আমলেরও অনেক আগ হইতেই, প্রজন্মের পরে প্রজন্ম ধরিয়া, চক্রবৃদ্ধি হারে।
সাধারণত একটি শিশুর ৪ বছর বয়সকাল পর্যন্ত তাহার মগজ (ব্রেইন) বিশেষ করিয়া “গ্রে-ম্যাটার” দ্রুত বৃদ্ধি পাইতে থাকে। গ্রে-ম্যাটার হইলো কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের গুরুত্বপূর্ণ সংগঠন যাহা স্নায়ূকোষ দ্বারা ঠাসা এবং মূলত আপনার দৈনন্দিন সকল স্বাভাবিক কাজকে যাহারা পরিচালিত করিয়া থাকে। তবে মগজের ফ্রন্টাল লোবটি (Frontal Lobe) ধীরে ধীরে পূর্নবয়স্কতা প্রাপ্তি পর্যন্ত বৃদ্ধি হইয়াই চলে। এই দীর্ঘকালীন সময়ে অপুষ্টি এবং পরিবেশগত চাপে এই বৃদ্ধি ঝুঁকির মুখে থাকে।
শিশুদের জীবনযাত্রার সময়কালে মগজের এমআরআই (MRI) স্ক্যান বিশ্লেষণ হইতে দেখা গিয়াছে যে, ধনী পরিবারের শিশুদের তুলনায় দরিদ্র এবং প্রায় দরিদ্র পরিবারের শিশুদের মাথায় সামগ্রিক ফ্রন্টাল, প্যারিটাল এবং টেম্পোরাল লোবে ধূসর পদার্থের( গ্রে-ম্যাটার) গড় পরিমাণ উল্লেখযোগ্য ভাবে কম এবং আকৃতিতেও ঐ এলাকা দুইটি খর্বকায়।



Source: Hanson et al. 2013.
[ চিত্রে গ্রে-ম্যাটারের পরিমানের সহিত SES = Socio Economic Status এর সম্পর্ক। নীল রংয়ের রেখাটি খেয়াল করুন। ]

অপুষ্টি আর মানসিক চাপ শিশুকাল হইতে ২০-২২ বছর বয়স পর্যন্ত মগজের মানে মস্তিষ্কের ফ্রন্টাল লোবের “প্রি-ফ্রন্টাল কর্টেক্স” অংশটিকে স্বাভাবিক ভাবে বাড়িয়া উঠিতে দেয় না।
অপুষ্টি তাদের মস্তিষ্কের প্রি-ফ্রন্টাল কর্টেক্সের স্বাভাবিক নিউরোকেমিক্যালস যেমন- ডোপামাইন, সেরোটোনিন, গ্লুটামেট, নরইপিনেফ্রিন, গাবা, এসিটাইলকোলিন ইত্যাদির কার্যকারিতা কমাইয়া দেয়। দারিদ্রতা প্রয়োজনীয় পুষ্টি যেমন ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড, আয়রন, জিঙ্ক, ভিটামিন ইত্যাদির ঘাটতির সহিত জড়িত। এই পুষ্টিগুলি প্রিফ্রন্টাল কর্টেক্সের নিউরোট্রান্সমিটারগুলোকেকে প্রভাবিত করে। অথচ এই নিউরোকেমিক্যালসগুলোই বাড়ন্ত শিশুদের অনুপ্রেরণা প্রক্রিয়াজাতকরণ এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণকে প্রভাবিত করে। মেজাজ সংবেদনশীল প্রতিক্রিয়া, এবং সামাজিক আচরণগুলোও এরা নিয়ন্ত্রণ করিয়া থাকে। মনোযোগ, উত্তেজনা এবং মানসিক সংকটজনিত প্রতিক্রিয়াগুলিকে প্রভাবিত করার পাশাপাশি কিছু শেখা এবং স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতেও এই অঞ্চলটি সহায়তা করিয়া থাকে। অর্থাৎ মস্তিষ্কের এই অংশটিই কিন্তু সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও প্রবৃত্তি নিয়ন্ত্রণের সহিত জড়িত। এই অঞ্চলটিকে আপনি “ সিইও (CEO) অব ব্রেইন” বলিতে পারেন যাহার কাজ হইলো আপনি কী করিবেন তাহার পরিকল্পনা করা, আপনার ব্যক্তিত্ব প্রকাশে সাহায্য করা এবং আপনাকে ভাল সিদ্ধান্ত নিতে সহায়তা করা। এটি আপনাকে সামাজিকভাবে গ্রহণযোগ্য আচরণ করার জন্যও নির্দেশনা দেয়। মোদ্দা কথা হইলো, প্রিফ্রন্টাল কর্টেক্স আপনার লক্ষ্যে পৌঁছাইতে সাহায্য করার জন্য আপনার চিন্তাভাবনাকে আপনার কর্মের সহিত সংযুক্ত করে। কোনটি ভালো বা কোনটি মন্দ বুঝিতে শেখায়। কোন ধরনের কাজের পরিনাম কি হইতে পারে তাহারও ধারনা দেয়।
এসব নিউরোকেমিক্যালসগুলোর প্রভাব কমিয়া গেলে উল্টোটাই আমরা ঘটিতে দেখি। অপুষ্টির ফলে এই সিইও (CEO) অঞ্চলটি প্রশ্নফাঁস জেনারেশনের সিইও (CEO) দের মতোই আকামের সব সিদ্ধান্ত গ্রহন করিয়া থাকে!
মোট কথা,পিতামাতার আর্থিক অস্বচ্ছলতা শিশুদের জ্ঞানীয় কর্মক্ষমতার (cognitive performance) উপর ঋণাত্মক প্রভাব ফেলে।
এজন্য গরীব-দরিদ্র ঘরের ছেলেমেয়েদের আত্মসংযম, আত্মনিয়ন্ত্রণ এবং সামাজিক যোগাযোগ ক্ষমতা শোচনীয়ভাবে দূর্বল হইয়া পড়ে। যেহেতু দেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠীই যুগ যুগ ধরিয়া গরীব বা দরিদ্র সেহেতু অবিবেচক, অসংবেদনশীল, অসংযমী, হিংস্র, উন্মত্ত চরিত্রের এক একটি প্রজন্ম আমাদের সামনে আসিয়া হাজির হয়।

শিশুদের নিউরোএন্ডোক্রাইন ফাংশন, প্রাথমিক মস্তিষ্কের বিকাশ এবং জ্ঞানীয় ক্ষমতার উপর দারিদ্র্তার প্রভাবের ক্রমবর্ধমান প্রমানের পর্যালোচনা করিয়া বিশেষজ্ঞ গবেষকেরা বলিতেছেন যে, দিন দিন ইহাই পরিষ্কার হইয়া উঠিতেছে যে, মগজের উপরে মানসিক চাপের বিষক্রিয়াই দরিদ্র্ শিশু এবং প্রাপ্তবয়স্কদের স্বাস্থ্য এবং সুস্থতার উপর প্রভাব ফেলিতেছে। সব মিলাইয়া গবেষকরা ইহাও দেখিয়াছেন, শুধু একক পরিবার ভিত্তিক দারিদ্রতাই নহে, পরিপার্শ্বিক দারিদ্রতাও প্রজন্মের মন ও মননে একই রকমের প্রভাব ফেলিয়া যাইতেছে।
গবেষকরা আরও দেখিয়াছেন, নিম্ন পারিবারিক আর্থ-সামাজিক অবস্থা এবং অন্যান্য প্রাথমিক জীবনের চাপ (যেমন, শারীরিক নির্যাতন, অবহেলা) শিশুদের মগজের হিপোক্যাম্পাস এবং অ্যামিগডালার পরিমাণ কম হওয়ার সাথে সম্পর্কিত।
মগজের “ অ্যামিগডালা” (amygdala) অঞ্চলটি আপনাকে পরিবেশগত হুমকি এবং চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় কিভাবে আপনার আবেগকে যথাযথ ভাবে নিয়ন্ত্রন করিতে হইবে তাহা শিখাইয়া; আগ্রাসী মনোভাবকে দমাইয়া সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহন করিতে শেখায়। অন্যদিকে হিপোক্যাম্পাস, মস্তিষ্কের এমন একটি এলাকা যা স্থানিক এবং প্রাসঙ্গিক তথ্য প্রক্রিয়াকরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এবং দীর্ঘমেয়াদী স্মৃতি কার্যকারিতা এবং সংরক্ষনের সাথে সম্পর্কিত। দেশের ৮০-৯০% জনগোষ্ঠীর এই হিপোক্যাম্পাস এলাকাটি আর্থ-সামাজিক অবস্থার কারনে সম্ভবত ক্ষুদ্র হইয়া গিয়াছে বলিয়াই আমরা আক্ষেপ করি --- “হায়রে! গোল্ডফিস মেমরী বাঙালী, কিছুই মনে রাখেনা!” অর্থাৎ শত-শত বছর ধরিয়া দারিদ্রতার মধ্যে বসবাস করিতে গিয়া হিপোক্যাম্পাসের স্বাভাবিক কার্যকারীতা হারাইয়া (আয়তনে কম হওয়ার কারনে), সব কিছু ঘটনা-ইতিহাস ভুলিয়া বসা একটি স্মৃতিভ্রষ্ট জাতির প্রতিই ইঙ্গিত করি আমরা।

দারিদ্র্তার মধ্যে বসবাসকারী শিশুরা জীবনের চাপ বৃদ্ধি, পারিবারিক অস্থিরতা বৃদ্ধি এবং সহিংসতার ক্রমবর্ধমান সংস্পর্শের মুখোমুখি হওয়ার সময় পিতামাতার যে সংস্পর্শ তাহাদের অতীব প্রয়োজন তাহা হইতে অধিকাংশ সময়ই বঞ্চিত থাকে। কারন দরিদ্র পিতা-মাতাকে জীবিকার প্রয়োজনে বেশীর ভাগ সময়ই বাহিরে বাহিরে থাকিতে হয় বলিয়া সন্তানদের প্রতি আদৌ মনযোগী হইতে পারেন না, এমনকি সন্তানদের মানসিক, শারীরিক সংকটের কালেও।
দরিদ্র পরিবারের বাড়িগুলি বেশি জনাকীর্ণ, প্রায় আলো-বাতাসহীন, অরক্ষিত এবং সেখানে প্রায়শই জ্ঞানীয় উদ্দীপনা প্রদান ও গ্রহনের কোনও পরিবেশ বিরাজ করেনা। পারিপর্শ্বিক দারিদ্রতাও ইহাতে ইন্ধন যোগাইয়া থাকে। ফলে শিশুরা পরিচর্যাহীন ভাবেই প্রবৃত্তিপরায়ণ ও আত্মসংযমহীন হইয়া বড় হইতে থাকে। তাই এই বয়সকালের প্রজন্মের ভেতর হঠকারী সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং অনিয়ন্ত্রিত প্রবৃত্তির আলামত প্রকট হইতে দেখা যায়। সোশ্যাল মিডিয়াতে তাহাদের রূচির দৈন্যতা দেখিয়া আপনার ঘৃনার উদ্রেক হয়। তাহারা অস্বাভাবিক সব কন্টেন্ট তৈরী করে, মত প্রকাশে তাহারা সভ্যতা-ভব্যতা সব গুলাইয়া খাইয়া ফেলে। অন্যদিকে সমাজে চুরি-ডাকাতি-ছিনতাই- রাহাজানি জাতীয় ঘটনার আধিক্য দেখা যায় আর যার কারনেই পাড়ায়–মহল্লায় কিশোর গ্যাংদের দৌরাত্ব্য দেখিতে পান আপনি। এই গ্যাংয়ের সদস্যদের প্রায় সবাই-ই কিন্তু দরিদ্র পরিবারের। একই কথা খাটে দরিদ্র, নিম্নবৃত্ত পরিবার হইতে আগত প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের বেলাতেও। তাহারাও ঘুষ-দূর্নীতির যে মহোৎসব দেখাইতেছেন, নির্বাহী কার্যকারীতায় সুচিন্তার যে ঘাটতি তাহাদের কাজেকামে প্রকাশিত হইতেছে তাহাও ঐ কিশোর গ্যাংয়ের কার্যকলাপেরই অপর পিঠ। নুন আনতে যে জনগোষ্ঠীর পান্তা ফুরায় ব্যতিক্রম বাদে তাহাদের কপালে এর বিপরীত কিছুই ঘটেনা!

এইসব কিছু না জানিয়া, না বুঝিয়াই আমরা শত শত বছর ধরিয়া দারিদ্রতার মধ্যে বাড়িয়া ওঠা প্রজন্মের পর প্রজন্মকে গালাগালি, দোষারোপ, অভিসম্পাৎ দিয়াই গিয়াছি। বর্তমান কালের মানুষের অনাচার-অত্যাচারে বিষাইয়া উঠিয়াছি, তাহাদের সোজা করিতে কতো কতো নিষ্ঠুর পন্থা মনে মনে দাঁড় করাইয়াছি। লেখালিখিতে যে যাহার মতো তাহাদের চৌদ্দগুষ্ঠী উদ্ধার করিয়া মন-মানসিকতার পরিবর্তন করার ওয়াজ নসিহত করিয়াছি।
দেশের চতৃর্দিকে ঘুষ-দূর্নীতি-হানাহানি-দখল-মারামারি- নৃশংস ভাবে হত্যা, কবর হইতে মৃতের লাশ উঠাইয়া পোড়াইয়া ফেলার মতো ঘটনা দেখিয়া শুনিয়া এই মহাবেকুবেরও অনেক সময়ই মনে হইয়াছে, একটি এটমবোমা মারিয়া দেশের মানুষগুলিকে জাহান্নামে পাঠাইয়া, নতুন একটি প্রজন্ম যদি গড়িয়া তোলা যাইতো তবে ঐসব অনাচার-অনাসৃষ্টি আর দেখিতে হইতোনা, অমানুষগুলার হাত হইতে রক্ষা পাওয়া যাইতো! এই ব্লগেই দেশের মানুষের মন-মানসিকতার দুর্ভিক্ষের প্রতি আক্ষেপ জনিত কোনও একটি পোস্টে এই মহাবেকুব এমন মন্তব্য করিয়াছিলো যে, জাতির “হোল ব্লাড ট্রান্সফিউশন” করা ছাড়া আর গতি নাহি! মহাবেকুব বলিয়াই হয়তো অমন বিধ্বংশী ভাবনা ভাবিয়াছি! এই বেকুবের মতো আপনারও হয়তো আরও ভয়ঙ্কর কিছু ভাবনা ভাবিয়াছেন!

কিন্তু বুঝিতেই পারিতেছেন, কিছুতেই কিছু হইবেনা যদি “যতো দোষ, নন্দঘোষ” দারিদ্রতা সমূলে দূরীকরণ না করা যায়। একমাত্র পারিবারিক এবং প্রতিবেশ/পারিপার্শ্বিক দারিদ্রতার পর্যায়ক্রমিক অনুসঙ্গের কুফলের কারনে এই মাটিতে কেন যে একটি সুশৃঙ্খল-আত্মমর্যাদা সম্পন্ন, জ্ঞানবুদ্ধিতে সমৃদ্ধ,পরমত সহিষ্ণু, প্রজ্ঞাবান, প্রবৃত্তিপরায়নহীন, আত্মসংযমী জাতি শত বছর ধরিয়াও গড়িয়া উঠিতে পারে নাই তাহা এখন বিলক্ষন অনুধাবন করিতে পারিতেছেন।
এতোক্ষনে ইহাও নিশ্চয়ই বুঝিতে পারিতেছেন, জুতা আবিষ্কারের মতো “মন-মানসিকতা পরিবর্তন” এর ঝাড়ু দিয়া সারা দেশ ধুলাময় না করিয়া কেবলমাত্র “দারিদ্রতা বিমোচন” এর জুতাখানি বানাইয়া পরাইতে পারিলেই এই অমানুষ জনগোষ্ঠীকে হয়তো “মানুষ” বানানো যাইতো।

মহাবেকুব বলিয়া যতো সহজে “দারিদ্রতা বিমোচন” কথাটি বলিয়া ফেলিলাম, আপনারা মহাজ্ঞানী-মহাজন বলিয়া ততো সহজেই ইহা ফুঁ দিয়া উড়াইয়াও দিতে পারেন।

তথ্য সূত্র –
http://www.irp.wisc.edu/publications/focus/pdfs/foc282f.pdf.
https://jamanetwork.com/journals/jamapediatrics/fullarticle/2381542
https://pmc.ncbi.nlm.nih.gov/articles/PMC5765853/

চিত্র – “ইন্সটিটিউট ফর রিসার্চ অন পভার্টি”র সৌজন্যে।

মন্তব্য ৭ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (৭) মন্তব্য লিখুন

১| ৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৫ রাত ১০:২৩

শায়মা বলেছেন: ভাইয়া

কত কত বড় লোকের কুলাঙ্গার সন্তান দেখিয়াছি ..... এত ডিম দুধ ফল মূল পনির ঘি খাইয়াও তো তারা নিজেদের জন্য ভালো কিছু পরিকল্পনা করিতে পারে নাই...... তাইলে আর ২০/২২ পর্যন্ত এত এত ভালো ভালো পুষ্টিকর খানাদানার কি কাজ পড়িলো? :((

৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৫ রাত ১০:৫৯

আহমেদ জী এস বলেছেন: শায়মা,




তাহারা যতোই ডিম দুধ ফল মূল পনির ঘি খাইয়া থাকুক সে সবে সেরোটনিন, ডোপামিনের ঘাটতি ছিলোই কারন তাতে তো কেমিক্যাল মেশানো ছিলো। :P
বড় বড় লোকের সন্তান কুলাঙ্গার হইয়াছে সঙ্গ দোষে। টাকার কারনে দরিদ্র প্রতিবেশিরা তাহাদের বেশি বেশি কদর করে বলিয়া তাহারা চতুর্পাশ্বের দরিদ্র পরিবেশের সাথেই বেশি সময় কাটাইয়াছে। আর যদি গুলশান-বনানীর কথা বলেন তবে বলিতেই হয়, সেখানে বসবাসের আবহাওয়ায় জৌলুষ আছে বটে কিন্তু তাতে বসবাস করা মানুষগুলোতো অপুষ্ট মগজের, জৌলুষবিহীন.... #:-S

২| ৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৫ রাত ১০:৫০

শেরজা তপন বলেছেন: আহা কতদিন /মাস বাদে আপনার লেখা পেলুম- এবার আরাম করে সময় করে আমাদের মহাবেকুব জাতক কথন পড়ব :)

৩| ৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৫ রাত ১০:৫২

করুণাধারা বলেছেন: অনেক রাত হয়ে গেছে এবং আমার চোখে ব্যথা করছে। তাই আপাতত একটা লাইক দিয়ে যাচ্ছি।

৪| ৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:৫৬

শাইয়্যানের টিউশন (Shaiyan\'s Tuition) বলেছেন:




হিংস্রতা মানুষের মজ্জাগত, জীনে দিয়ে দেওয়া হয়েছে।

আমাদের পূর্বপুরুষ হিংস্র ছিলেন, ভাইয়ের হত্যাকারী ছিলেন।

ধর্মের কথায়, নবী আদমের দুই ছেলের বিয়ে করা নিয়ে যে মতানৈক্য হয়, তাতে এক ভাই আরেক ভাইকে হত্যা করেন।

সেই হিংস্রতা, বর্বরতা এখনো আমাদের মাঝে এখনো রয়ে গিয়েছে।

৫| ০১ লা অক্টোবর, ২০২৫ রাত ১২:৩৬

মোহাম্মাদ আজাদ বলেছেন: :(

৬| ০১ লা অক্টোবর, ২০২৫ রাত ১:১৭

কামাল১৮ বলেছেন: বেশিরভাগ মানুষ বেকুব ধর্মের কারণে।সারা বিশ্বেই মুসলমানরা একটু বেকুব।একটা মাত্র বই মুখস্ত করে জ্ঞানি হবার সম্ভাবনা শূন্য।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.