নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

এখন বিশ্ব আমার হাতের মুঠোয়

গাজী কামরুল ইসলাম

My name is Md. Kamrul Islam. I completed MBA from Stamford University of Bangladesh. Now I'm Officer of Eastern Bank Ltd.

গাজী কামরুল ইসলাম › বিস্তারিত পোস্টঃ

মফিজ ক্যানভ্যাসার- ৩২

০৪ ঠা এপ্রিল, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:৩৬

৩২

মফিজ মিয়া তার এলাকায় এক বিয়ের মজলিসে। বিয়ের মজলিসে পাত্রের মামার দাবী ছেলেকে মটরসাইকেল দিতে হবে। তা না হলে মেয়েকে উঠিয়ে নিবে না। এ নিয়ে মেয়ের মামার সাথে ছেলের মামার বাক-বিতন্ডা। মেয়ের মামার কথা, ‘যৌতুক দিয়ে মেয়েকে বিয়ে দিব কেন ? আপনাদের সাথে এ বিষয়ে আমাদের কোন চুক্তি হয় নাই। এখন হুট করে এ দাবী যথেষ্ট অন্যায়। তাছাড়া এ রকম দাবী আপনারা করতে পারনে না! এটা যৌতুকের পর্যায়ে পড়ে।’

ছেলের মামার কথা, ‘আজকালকার বিয়েতে এসব বলে দিতে হয় না। ছেলেকে এমনিতেই মটরসাইকেল , টিভি, ফ্রিজ আরো অনেক কিছু দিয়ে সাজিয়ে দেয়।’

মেয়ের মামা বললো, ‘কোন ভদ্র সমাজের মানুষ বিয়ের মজলিসে এসব বিষয় নিয়ে কথা তুলতে পারে না। যাদের চিন্তা-ভাবনা নোংরা তারা সমাজের ভদ্র লোক হতে পারে না।’

মেয়ের মামার এমন কথায় পাত্র পক্ষের সবাই একটু অপমানবোধ করলো। কয়েকজন মেয়ের মামার সাথে এ নিয়ে তুমুল কথা কাটাকাটি শুরু করলো। তাদের প্রশ্ন ,‘কেন তাদের অভদ্র বলা হলো ?’

মেয়ের বাবা ছেলের বাবাকে বললো, ‘বেয়াই সাহেব আপনাদের যা দাবি তা আমি পরে মিটিয়ে দিবো। এ নিয়ে আর কথা কাটাকাটি না করে খেতে বসেন। আপনারা এ রকম করলে সমাজের মানুষ আমাদের নিয়ে হাসিঠাট্রা করবে।’

উত্তরে ছেলের বাবা বললো, ‘আমার শালার যা কথা সে মতেই কাজ হবে। যা বলার ওকে বলুন।’

ছেলের মামা বললো, ‘ছেলেকে মটরসাইকেল, টিভি , ফ্রিজ না দিলে আমরা মেয়েকে উঠিয়ে নিব না।’

এ কথা শুনে মেয়ের বাবা বললো, ‘আপনাদের এসব চাহিদা মিটিয়ে দিব। এখন খাওয়া-দাওয়া সেরে বৌকে ঘরে তুলে নেওয়া ব্যবস্থা করেন। সমাজ বলে একটা কথা আছে। বিষয়টা বুঝার চেষ্টা করেন।’

ছেলের মামা বললো, ‘সামাজিক কাজ আপনারা করেননি। এ রকম খালি হাতে কোন মেয়ের বিয়ে আমাদের সমাজে হয় না।’

মেয়ের বাবার মুখ থেকে আর কথা বের হচ্ছে না। ছেলের পক্ষ থেকে যে যা পারছে সুযোগ পেয়ে তাই বলছে।

বিয়ের মজলিসের দেনা-পাওনা নিয়ে কথা কাটাকাটি মেয়ের কানে গেল। মেয়ে জানে ছেলের পক্ষ থেকে এ ধরনের দাবির কথা ছিল না। আর কেনইবা দাবির কথা থাকবে! বিয়েতে কেন ছেলের পক্ষ মেয়ে পক্ষের কাছে মটরসাইকেল, টিভি , ফ্রিজ চাইবে। ছেলেকে লালন-পালন করতে, লেখা-পড়া শিখাতে, বড় করতে তার পরিবারের যেমন খরচ, মেয়ের বেলায়ও তাই বরঞ্চ মেয়েকে বড় করে বাবা-মা কাছে রাখতে পারে না। বিয়ের পর মেয়ে তার স্বামী, স্বামীর সংসার নিয়েই বেশী চিন্তা করে। মেয়ের বেলায় বাবা-মা বেশী ত্যাগ করে। সেই মেয়ের বিয়েতেই তার পরিবারকে ছেলের জন্য দাবিকৃত আর্থিক সুবিধা দিতে হবে। কি এক অন্যায্য ও আশ্চর্যের কথা!

সখিনা বিয়ের মজলিস থেকে উঠে গিয়ে ছেলেকে জিজ্ঞাসা করলো, ‘তোমার পরিবারের যে দাবি-দাওয়া সে সম্পর্কে তোমার মত কি?’

ছেলে উত্তর না দিতেই তার মামা বললো, ‘ওর আবার ভিন্ন মত কি ? আমাদের মতের বাহিরে ওর কোন মত থাকতে পারে না।’

সখিনা আবার ছেলেকে জিজ্ঞাসা করলো, ‘আমি তোমার মতামত জানতে চাই ?’

ছেলে এবার ম্যাঁনম্যাঁন করে বললো, ‘মামার মতই আমার মত।’

এ কথা শুনে মেয়ে উচ্চস্বরে উপস্থিত সকলকে শুনিয়ে বললো, ‘আমি এই মূহুর্তে, এইখানে দাড়িয়ে স্বজ্ঞানে এই ছেলেকে ডিভোর্স দিলাম। কসম, আমার এই সিদ্ধান্ত কেউ পরিবর্তন করতে পারবে না।’

তার বাব-মা বললো, ‘মা, এ তুই কি বললি ? তোর কথা ফিরিয়ে নেয়।’

তার বাবা ছেলে পক্ষকে উদ্দেশ্য করে বললো, ‘আপনারা কিছু মনে করবেন না। আমার মেয়ের পক্ষ থেকে আমি আপনাদের কাছে ক্ষমা চাচ্ছি।’

সখিনা এ কথা শুনে বললো, ‘বাবা, আমি তোমার কোন কথা রাখতে পারবো না। আমাকে মাফ করে দিও। যারা বিয়ের মজলিসে যৌতুক দাবী করে তাদের বাড়ির বৌ হয়ে আমি যাব না। বাবা এরা বিয়ের মানে বুঝে না। যাদের কাছে বিয়ে মানে মেয়ের পক্ষ থেকে কিছু অর্থ-কড়ি হাতিয়ে নেওয়া তারা ভদ্র সমাজের মানুষ হতে পারে না। তাই আমার সিদ্বান্ত অটল থাকবে।’

তার মা বললো, ‘মা, এ যে তোর জীবনে কলঙ্ক হয়ে থাকবে। মেয়েদের এত জেদ ভাল না। ওদের সাথে আমরা কথা-বার্তা বলে দেনা-পাওনা চুকিয়ে নিব। তুই তোর সিদ্বান্ত থেকে ফিরে আয়।’

মেয়ের মামা বললো, ‘না সখিনা, তুই তোর সিদ্ধান্ত থেকে ফিরে আসবি না। এ সমাজে তোর জন্য এই ছেলের চেয়ে আরো ভাল ছেলে আছে। যারা মানুষকে মূল্য দিতে জানে না তারা তোর জীবনকে মূল্য দিবে কিভাবে ? সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করার দরকার নাই। আমি আছি তোর সাথে। ’

বিয়ের মজলিসের অনেকেই একসাথে বলে উঠলো, ‘আমরাও আছি তোমার সাথে।’

ছেলে উঠে আসলো মেয়ের কাছে। এসে বললো, ‘সখিনা, আমার ভুল হয়ে গেছে । আমাদের কোন চাওয়া-পাওয়া নাই। তোমার কথা তুমি উঠিয়ে নেও।’

এ কথা শুনে তার মামা বললো, ‘তুই তোর হয়ে ক্ষমা চেয়ে নেয়। আমাদের হয়ে ক্ষমা চাওয়ার দরকার নাই। আমরা তোর বিয়েতে নেই মনে করে সবকিছু করিস।’ এ কথা বলে তার মামা এবং কয়েকজন বিয়ের বাড়ি থেকে চলে যাচ্ছে।

সখিনা ছেলের মামাকে উদ্দেশ্য করে বললো, ‘মামাজান আপনার ভাইগনাকেও সাথে নিয়ে যান কারণ আমার মত পাল্টাবো না।’

বিয়ের মজলিস থেকে বৌ স্বামীকে ডিভোর্স দিয়েছে এই খবর বিদ্যুৎ বেগে চারদিকে ছড়িয়ে পড়লো। বিভিন্ন পত্রিকার সাংবাদিকরা বিয়ের বাড়িতে এসে হাজির। প্রায় পত্রিকারই লিড নিউজ বিষয়টি। ঐড়ঃহবংি২৪.পড়স প্রথম এ নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। অনেকেই হটনিউজকে ধন্যবাদ জানায় এ রকম একটি নিউজ প্রথম প্রকাশ করার জন্য। এ প্রত্রিকার মাধ্যমেই বিষয়টি মন্ত্রী পর্যায়ে চলে যায়।

এতক্ষণ বরের নামটিই বলা হয়নি। বরের নাম আজগর বেপারী। সে উপজেলা সমাজসেবা অফিসের সরকারী কর্মচারী। ছেলের মামাও সমাজসেবা অধিদপ্তরের একজন কর্মকর্তা। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যখন মন্তব্য করলো, ‘যারা সমাজে যৌতুক লোভী তারা যৌতুকের আইনে দোষী সাবস্ত্য হলে শাস্তি প্রদান করা হবে।’ ততক্ষণে সমাজসেবা অধিদপ্তর মামা, ভাইগনাকে চাকরী থেকে সাময়িক অব্যহতি দেয় এবং তার কয়েকদিন পর স্থায়ী অব্যহতি দেয়।

সখিনার সাক্ষাৎকার বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় এবং টিভি চ্যানেলগুলোতে ফলাও করে প্রচারিত হয়। সখিনা এখন দেশের একজন নারী নেত্রী। সখিনা আমার বোনের মেয়ে। আমিই তার মামা।



আগের প্রশ্নের উত্তর: শচীন টেন্ডুলকার।

প্রশ্নঃ ওয়ানডে ক্রিকেটে দ্রুততম সেঞ্চুরী করেন কে ?

উত্তর:

আপনার উত্তরটি সঠিক হয়েছে কিনা পরের অধ্যায়ের শেষে মিলিয়ে নিন ।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.