নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

এখন বিশ্ব আমার হাতের মুঠোয়

গাজী কামরুল ইসলাম

My name is Md. Kamrul Islam. I completed MBA from Stamford University of Bangladesh. Now I'm Officer of Eastern Bank Ltd.

গাজী কামরুল ইসলাম › বিস্তারিত পোস্টঃ

মফিজ ক্যানভ্যাসার- ৩৩

০৪ ঠা এপ্রিল, ২০১৩ রাত ৮:০৫

৩৩

বাপ্পি এবার ঢাকা কলেজ থেকে ইংলিশে মাস্টার্স শেষ করলো। তার বাবার গর্ব ছেলে এক চান্সেই মাস্টার্স শেষ করেছে। এস.এস. সি থেকে মাস্টার্স পর্যন্ত প্রতি ক্লাসেই এ গ্রেড পেয়ে পাস করেছে।

বাড়ীতে এসে শুনি টুনির শিঘ্রই বিয়ে হচ্ছে। ছেলের নাম আতাহার আলী। আতাহার আলী কে ? তাকে আমি চিনি না। বশিরের কাছে জিজ্ঞাসা করলাম, ‘বশির, আতাহার আলীকে চিনিস ?’

বশির বললো, ‘চিনি, সে মফিজ মিয়ার হবু মেয়ে জামাই। এত দিন পর বাড়িতে এসে এই খবর নিয়ে ব্যস্ত! এখন বল কেমন আছিস ?’

বাপ্পি: ‘ভালো আছি । তুইতো পাক্কা হুজুর হয়ে গেছিস। দাড়ি রাখা, কবুলী পাঞ্জাবী-পায়জামা পড়া। বেশ ভাল। এখন বল বিয়ে করেছিস?’

বিয়ে সেরে ফেলেছি কিন্তু তোকে দাওয়াত দিতে পারি নাই দোস্ত। হুট-হাট করে বিয়ে। বাবা-মাকে বললাম এই দুনিয়া কয়দিনের ? নিজের চরিত্রটা ঠিক রাখার জন্য বিয়ে করা দরকার। বাবা-মা কয়েকদিনের মধ্যে মেয়ে দেখে বিয়ে করিয়ে দিল। সব কিছুর জন্য আল্লাহ কাছে অসীম শুকরিয়া।

‘বশির, তোর কি সেই দিনের কথা মনে পড়ে ? যখন তুই খুব দুষ্ট ছিলি।’

বশির:‘আমি খুব দুষ্ট ছিলাম ঠিকই কিন্তু আল্লাহ আমাকে এখন সঠিক বুঝ দিয়েছে। এই জন্য আল্লাহর কাছে লক্ষ কোটি শুকরিয়া। দোস্ত, আল্লাহ যা করে ভালোর জন্যই করে। আল্লাহ যেন সকলকে সঠিক বুঝ দান করে। আমীন।’

মফিজ মিয়ার সংসার এখন দুই জায়গায় । জরিনা, ময়না বিবির কাছে বেশীদিন থাকতে পারে নাই। কয়েকমাসের মধ্যেই তাদের মধ্যে মতের গরমিল হওয়ায় ময়না বিবি একদিন তাকে বাড়ী ছেড়ে চলে যেতে বলে। জরিনা চিন্তা করে এখানে থাকলে দু’জনের মধ্যে ঝগড়া-ঝাটি হবে। তার চেয়ে নিজ বাড়ীতে চলে যাওয়া ভাল। তাছাড়া দুই সতীনে মিলেমিশে থাকা খুব কঠিন। মফিজ মিয়া ছোট বৌয়ের কাছে বেশী থাকে। দু’ই বিয়ে করলে ছোট বৌয়কে বেশী সময় দেয় স্বামীরা। মফিজ মিয়ার বেলাও তাই।

টুনির লেখা-পড়ার যে গতি ছিল তা হঠাৎ শ্লথ হয়ে গেছে। মফিজ মিয়া এখন আর টুনির লেখা-পড়ার খবর রাখে না। আগে টুনিকে লেখা-পড়ার জন্য তাগাদা দিতো। সংসারে এলোমেলো, বাবা-মার দূরত্ব, নিজের সাথে তার বাবার দূরত্ব ইত্যাদি কারণে লেখা-পড়ার প্রতি আগের মত আকর্ষণ নাই।

মফিজ মিয়ার চিন্তা কিভাবে টুনিকে আতাহার আলীর কাছে বিয়ে দিয়ে আতাহারকে ঘর জামাই করে রাখা যায়। এতে তার সংসারের দ্বায়িত্ব কিছুটা লাগব হবে। আর ময়না বিবির চিন্তা আতাহারকে তাদের সাথে রাখা সংসারের জন্য সুবিধার।

শ্যামল আমার একসময়ের খুব কাছের বন্ধু। স্কুল জীবনে এক সাথে স্কুলে যাওয়া। একই টেবিলে বসা এবং একই শিক্ষকের কাছে প্রাইভেট পড়া। উভয়ের বাবা-মার সাথে পারিবারিকভাবে সুসম্পর্ক। শ্যামল তিনবার পরীক্ষা দিয়েও স্কুল পেরিয়ে কলেজে যেতে পারে নাই। এই ফাঁকে আমি অনার্স পাস করে মাস্টার্সে চলে আসি।

একদিন শ্যামল বললো, ‘বাপ্পি তোর এককালের টুনির বিয়ে হয়ে যাচ্ছে। ওর বাবা দু’বিয়ে করে এখন মেয়ের দ্বায়িত্ব মাথায় রাখতে চাচ্ছে না। আবার শুনলাম টুনিও নাকি আতাহার আলীকে ভালোবাসে। তাদের মাঝে প্রেম-প্রীরিতির ভাব আছে। জানিস বাপ্পি, টুনি এসএসসিতে ভাল রেজাল্ট করেছে। একদিন মফিজ মিয়া এবং ময়না বিবি আমাকে বলেছিল টুনিকে আইএ, বিএ পাস না করিয়ে বিয়ে দিবে না। টুনিও লেখা-পড়ায় আগ্রহী হঠাৎ কিসে কি হলো! এখন শুনি আগামী মাসে টুনির বিয়ে। ’

বাপ্পি বললো: ‘শোন, মানুষ সময় ও সুযোগমত অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা করে। মানুষ অভিযোজিত না হয়ে বাঁচতে পারে না। এক সময় সেটা ছিল টুনির বাবা-মা ও তার আগ্রহের বিষয় এখন অবস্থাগুনে সেটাই তাদের অনাগ্রহের বিষয়। মানুষের মত বিচিত্র প্রাণী এই দুনিয়াতে কোনটা নাই। মানুষ স্বার্থের কারণে অনেক কিছু করতে পারে। এখন বল তুই কেমন আছিস ?’

শ্যামল বললো, ‘ভালো আছি। লেখা-পড়া হলো না এখন ব্রয়লার মুরগীর ফার্ম দিসি। আল্লাহ আয় রোজগার ভালই দিচ্ছে। ইচ্ছেতো ছিল লেখা-পড়া শিখে তোদের মত বড় বড় চাকুরী করবো কিন্তু বিধাতায় না চাইলে কিছু হয় না। বাবা-মা কম চেষ্টা করে নাই কিন্তু আল্লাহ ব্রেন দেয় নাই। লেখা-পড়া মাথায় থাকে না। যা পড়ি তার চেয়ে বেশী ভুলি। হার্ড এন্ড সোল লেখা-পাড়া করেও দেখেছি তাতে কেবল মাইনাসই হয়েছে। তা না হলে প্রথমবার কেবল ইংরেজীতে ফেল, পরেরবার সারা দিন-রাত লেখা-পড়া করে অংক, ইংরেজী, বিজ্ঞানেও ফেল। শেষে ভেবে দেখলাম আমাকে দিয়ে লেখা-পড়া হবে না। তার চেয়ে ব্যবসা করি। বাবার ব্যবসার তদারকি করছি তাতেই আমার ভবিষ্যত ভাল হবে।’

বাপ্পি: ‘বিয়ে-শাদী কবে করবি?’

এ কথা শুনে শ্যামল বললো, ‘তোরা এত এত লেখা-পড়া করে বিয়ের চিন্তা করছিস না আর আমার বিয়ে! তাছাড়া বিয়ে, হায়াত, মৌয়ত ও রিজিক আল্লাহর হাতে । আল্লাহ যেদিন তৌফিকে দিবে সেদিন এমনিতেই হবে।’

বাপ্পি:‘হাদিসতো ভালই জানিস কিন্তু তোর নামটা কে রাখলো বলতো ?’

শ্যামল: ‘আমার আসল নাম আশিকুর রহমান (শ্যামল)। সহজ বলে সবাই ব্রাকেটের নামটাই ডাকে।’

বাপ্পি: ‘তোর নামে কোন মুসলমানের নাম শুনি নাই, তাই বললাম।’

শ্যামল: ‘নামে জাত-পাত থাকা উচিত না।’

দোকানে চা খেয়ে যাওয়ার সময় টুনির সাথে বাপ্পির দেখা।

টুনি: ‘বাপ্পি ভাই কেমন আছেন ?’

বাপ্পি: ‘ভাল। তোমারতো অনেক পরিবর্তন !’

টুনি: ‘কেমন পরিবর্তন?’

বাপ্পি: ‘ অনেক বড় ও সুন্দর হয়েছো।’

এ কথা শুনে টুনি লজ্জা পেয়ে বাপ্পিকে বললা, ‘বাপ্পি ভাই বাসায় আসিয়েন। আমাদের বাড়িতে আপনার চা খাওয়ার দাওয়াত রইলো।’

বা্িপ্প: ‘চায়ের দাওয়াতে বাড়িতে যাব না। তোমার বিয়ের দাওয়াতের অপেক্ষায় আছি।’

টুনির বিয়ে দিন ধার্য হলো জানুয়ারির ১৫ তারিখ। গায়ে হলুদ ১৪ তারিখ। বর কনে একসাথে বসিয়ে গায়ে হলুদ দেওয়া হবে। বিয়ের আনন্দে আতাহার আলীর সবকিছুতেই বাড়াবাড়ি। মধ্যরাত পর্যন্ত বাঁশি বাজিনো। এলাকার যাদের সাথে তার পরিচয় তাদের সবাইকে গাজীদের মসজিদে বাদ আছর বিয়ের অনুষ্ঠানে দাওয়াত করা।

মফিজ মিয়া আতাহার আলীকে একদিন বললো, ‘বাবা কিছু টাকা-পয়সা না দিলেতো বিয়ের অনুষ্ঠান ঠিকমত উঠাতে পারছি না। ’

এ কথা শুনে আতাহার আলী বললো, ‘যেভাবেই হোক কিছু টাকা-পয়সা ম্যানেজ করবো। আপনি কোন চিন্তা করবেন না।’ এই কথা বলে নিজেই চিন্তায় পড়ে গেল। কোথা থেকে টাকা ম্যানেজ হবে। ক্যানভাসিং করে বেশী টাকা হুট করে পাওয়া যায় না। শেষে আমার কাছে বিয়ের জন্য বিশ হাজার টাকা ধার চাইলো।

কি কারণে জানি আমার মনে হলো বিয়েতে টুনির বর ছোট হয়ে থাকবে এটা হতে দেওয়া যায় না। আমার হাতে কিছু টাকা ছিল। আমি আতাহার আলীকে জিজ্ঞাসা করলাম, ‘আমার থেকে টাকা ধার নিলে কিভাবে শোধ দিবে ?’

উত্তরে সে বললো, ‘বাপ্পি ভাই, আমি আপনার কাছে তিন মাসের সময় নিলাম। এর মধ্যে যেভাবেই হোক টাকা শোধ দিবো।’

আমি বললাম, ‘শোনো, তোমাকে আমি তিন মাসের না আরো সময় দিলাম। তুমি দুই মাস পর আমার ব্যাংক একাউন্টে প্রতি মাসে দু’হাজার টাকা করে জমা দিবে। এভাবে বার মাসে আমার টাকাটা যেভাবেই হোক শোধ করবে।’

টাকা নিয়ে আতাহার আলী মফিজ মিয়াকে বললো, ‘বিয়ের মিষ্টি আর কাবিনের টাকা আমি দিবো। এগুলো নিয়ে আপনার চিন্তা করতে হবে না।’

এ কথা শুনে মফিজ মিয়া বললো, ‘তুমি কি টাকা-পয়সা জোগাড় করতে পেরছো ?’

আতাহার: ‘জ্বি, কিছু টাকা ম্যানেজ করেছি।’

আতাহার আলী ও টুনির বিয়ে হলো।



আগের প্রশ্নের উত্তর: পাকিস্তানর শহীদ আফ্রিদি ( ৩৭ বলে )

প্রশ্নঃ ওয়ান ডে ক্রিকেটে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ইনিংসের মালিক কে?

উত্তর:

আপনার উত্তরটি সঠিক হয়েছে কিনা পরের অধ্যায়ের শেষে মিলিয়ে নিন ।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.