![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
My name is Md. Kamrul Islam. I completed MBA from Stamford University of Bangladesh. Now I'm Officer of Eastern Bank Ltd.
৩৭
আতাহার আলী এখন নিজেই ক্যানভাসিং করে। ক্যানভাসিংয়ে শ্বশুড় মফিজ মিয়াকে গুরু মানে এবং সবকিছু তার থেকেই কিনে। প্রথমে কয়েকটা যাদু দেখিয়ে ক্যানভাসিং স্থলে লোক জমায়। গাজীপুর, টঙ্গি, মুন্সিগঞ্জ এসব এলাকায় বেশী ক্যানভাসিং করে। ক্যানভাস করে যা উপার্জন আসে তা দিয়ে তাদের ভালোভাবেই চলে। তার ইচ্ছা ক্যানভাসিংয়ে একটু আধুনিকতার ছোয়া আনা। ইতিমধ্যেই নিজের ভিজিটিং কার্ড বানিয়েছে। নিজের পণ্যের গুনাগুনা নিয়ে একটি সুন্দর নির্দেশিকা ছেপেছে। সামনে পরিকল্পনা একটি নিজস্ব অফিস নেওয়ার। সেখানে রুগি দেখবে, ঔষধ বিক্রি করবে। টুনি থাকবে তার সহযোগী হিসেবে।
মানুষের সাথে সুসম্পর্ক সৃষ্টি করা তার অন্যতম বৈশিষ্ট্য। অনেকে বলে ক্যানভাসিং ব্যবসার এক বছরের মধ্যেই সে তর শ্বশুড়কে ছাড়িয়ে গেছে ।
টুনি বাড়িতেই বিভিন্ন জনের কাছে পাথরে আংটি বিক্রি করে। পাথরের গুনাগুন সম্পর্কে তাকে বুঝিয়ে দিয়েছে আতাহার আলী। সে মানুষকে পাথরের গুনাগুন সম্পর্কে বিস্তারিত বলতে পারে।
তার শ্বাশুড়ি ময়না বিবির স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। আতাহার তার পরিবারের সুখ-দুংখের সাথী । তার মনে নতুন আনন্দের সঞ্চার। মেয়ের জামাই তাকে খুশি করার শত চেষ্টা করে। শ্বাশুড়ির কাছে প্রতিদিনই আতাহার জিঞ্জাসা করে, ‘আম্মা, আপনার কিছু লাগবে ?’
সে বরাবরই না বলে। তার সব সময় খোঁজ-খবর নেয়। কিছু প্রয়োজন হলে নির্ধিদায় বলতে বলে। টুনিকে বার বার সাবধান করে, মার যেন কোন কিছুতেই কোন সমস্যা না হয়। এতে টুনিও মনে মনে বেশ খুশি।
আতাহার এখন বাঁশিও বিক্রি করে। শাহবাগে প্রতি শনিবার বসে বাঁশি নিয়ে। তার বাঁশির সুরে আকৃষ্ট হয়ে অনেকেই বাঁশি কিনে। তার বিক্রিত বাঁশির নাম ‘আতাহার আলীর বাঁশি।’ বাঁশির সাথে এই নামে একটি স্টিকার লাগানো থাকে। সে স্পেশাল ওয়ার্ডার দিয়ে বাঁশি বানিয়ে আনে।
একদিন একটা মেয়ে তাকে জিঞ্জাসা করে, ‘বাঁশি বাজানো উপড় আপনার কি কোন ডিগ্রী আছে ?’
আতাহার উত্তর করে, ‘আছে।’
সে বললো, ‘কোথা থেকে নিয়েছেন ?’
আতাহার: ‘ মফিজ একাডেমি থেকে।’
মেয়েটি বললো, ‘এ একাডেমির নামতো আগে কখনও শুনিনি। কোথায় এই একাডেমিটা ?’
আতাহার: ‘ভারতে।’
আতাহারকে এ ধরনের প্রশ্ন করলে বিষম রাগ হয়। বাঁশি বাজাতে আবার বড় ডিগ্রি লাগে। কি সব বোকা মানুষ।
মেয়েটি বলেেলআ, ‘আমাকে কি আপনি বাঁশি বাজানো শিখাবেন ?’
আতাহার: ‘না, আমার সেই সময় নাই।’ কিছুক্ষণ পর মেয়েটি চলে গেল । সে হাফ ছেড়ে বাঁচলো।
পরের শনিবার আবার আসলো মেয়েটি। এসে বললো,‘আমাকে আপনার বাঁশি বাজানো শিখাতেই হবে। টাকা যা চান তাই দিব।’
আতাহার: ‘আমারতো সময় নাই।’
সে বললো, ‘আমার জন্য আলাদা সময় লাগবে না এখানে বসেই প্রতি শনিবার যেটুকু পারেন শিখাবেন।’
‘আতাহার: ‘ঠিক আছে।’
পরের শনিবার আর মেয়েটি আসলো না। অনেকদিন পরে একটা ছেলেকে নিয়ে এসে বললো, ‘ভাই কিছু মনে নিবেন না। আপনার সাথে যেদিন আমার শেষ কথা হয় তার পর দিনই বাড়ি থেকে পালিয়ে বিয়ে করি। তাই আপনার কাছে আর আসতে পারি নাই।’
আতাহার মনে মনে ভাবলো, আমার কাছে যারা আসতে চায় তাদের এরকম ঝামেলাই হয়।’
মেয়েটি আতাহারের হাতে এক প্যাকেট মিষ্টি ধরিয়ে দিয়ে বললো, ‘বাসায় গিয়ে সবাইকে নিয়ে খাবেন। আমার বিয়ের মিষ্টি।’ যাবার সময় একটা বাঁশি কিনে নিয়ে গেল। বললো, ‘আমার স্বামীকে আপনার মত বাঁশি বাজানো শিখাবো।’
আতাহার প্রতি শুক্রবার টুনিকে নিয়ে ঘুরতে বের হয়। ফ্যান্টাসী কিংডম, শিশুপার্ক, টিএসসি এসব জায়গায়। নিজের বৌকে সুখী করার শত চেষ্টা দেখে বৌ তাকে স্পেশাল ভালোবাসে।
টুনি, স্বামীর যে কোন খেদমতে নিজেকে তৃপ্ত মনে করে। আসল ভালোবাসা মনে হয় এরকমই। দু’জনেই চেষ্টা থকে তাদের সর্বোচ্ছ ভালোবাসাটা ঢেলে দিতে। টুনি পাঁচ ওয়াক্ত নামায পড়ে বিধাতার কাছে প্রার্থনা করে আল্লাহ যেন সবসময় স্বামীর খেদমত করার শক্তি দেয়।
শ্বাশুড়ী আতাহারকে পিঠা-পায়েশ তৈরি করে প্রায়ই খাওয়ায়। জামাই হওয়ার পর আপ্যায়নের মাত্রা বেড়ে যায়।
ছোট শ্বাশুড়ী জরিনা আতাহারকে ভালোচোখে দেখে না। আতাহারের শ্বাশুড়ীপ্রিতি তার চোখে শুলের মত বিধেঁ। শ্বশুড়ের কানে এটা-ওটা তোলে। শ্বশুড় তার কথায় সায় দেয় না।
জরিনার আগের স্বামী বেঁচে থাকলে তারও টুনির মত মেয়ে অথবা ছেলে থাকতো। কথায় আছে ভাগ্যেও লিখন না যায় খন্ডন। সে সবসময় মফিজ মিয়াকে নিজের কাছে রাখতে চায়। তার মনের মত করে সাজাতে চায়। মফিজ মিয়ার কি কি খেতে পছন্দ সেদিকে তার যথেষ্ট খেয়াল। নিজের যা উপার্জন তার সবটাই তুলে দেয় তার হাতে ।
আতাহার থাকায় ময়নাবিবির সংসার নিয়ে মফিজ মিয়ার কোন চিন্তা নাই। টুনির বিয়ের সময় সে কোন গহনা দিতে পারে নাই। এই অপূর্ণতা তাকে মাঝে মাঝে ব্যথা দেয়। এবার তার হাতে কিছু টাকা জমলে জরিনাকে না জানিয়ে টুনিকে একজোড়া স্বর্ণের চুড়ি, আতাহারকে একখানা ঘড়ি কিনে দেয়।
ঘড়ি হাতে দিয়ে আতাহার সব জায়গায় যায়। অনেকেই তার কাছে সময় জানতে চায়, বলতে পারে না। কারণ ঘড়ির কাটা চিনে না। বিষয়টা কাউকে খুলে বলতে পারছে না তাই কয়েকদিন পরে ঘড়িটা খুলে রাখে। একদিন টুনি জানতে চায় কেন ঘড়ি খুলে রাখা হলো? উত্তরে বলে এমনিতেই।
টুনি বলে, ‘এমনিতেই কেউ শ্বশুড়ের দেওয়া উপহার খুলে রাখে? সত্যি করে বলো, কেন ঘড়ি খুলে রাখো ?’
সত্যি কথাটা বলে। টুনি অনেক চেষ্ট করে ঘড়ির কাটা চিনাতে কিন্তু আজও সম্ভবপর হয়ে উঠে নাই।
আগের প্রশ্নের উত্তর: জয়সুরিয়া (১৭ বলে), শ্রীংলকা।
প্রশ্নঃ কবে থেকে বিশ্বকাপ ক্রিকেট শুরু হয় ?
উত্তর:
আপনার উত্তরটি সঠিক হয়েছে কিনা পরের অধ্যায়ের শেষে মিলিয়ে নিন ।
©somewhere in net ltd.