![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
My name is Md. Kamrul Islam. I completed MBA from Stamford University of Bangladesh. Now I'm Officer of Eastern Bank Ltd.
আজ মফিজ গুলিস্থানে। গুলিস্থানে গোলাপ শাহ মাজারের পাশে তার ক্যানভাস স্থল। এখানে জমে বেশ। আগে দু’বার বসেছে। প্রতিবারই দু’হাজার টাকা বিক্রি এসেছে। তার প্রত্যাশা আজও সমপরিমান বিক্রি আসবে। এখানকার কাস্টমাররা বেশ চালাক। ক্যানভাসের সময় উল্টা-পাল্টা কথা বলে। তাদের ঠান্ডা রাখা বেশ কঠিন। এমনসব প্রশ্ন করে যেন তার ইন্টারভ্যু নিচ্ছে। মাঝে মাঝে শালার ভাই, চুদির ভাই বলেও গালি দেয়।
মলমের কয়েকটা কৌটা একটা বিছানা চাদরের উপর রাখা। পাথরের আংটি রাখা কাঁচের ব্রিইফকেইজের উপড়।
মফিজঃ ‘ভাই আমার কাছে পাবেন এমনই এক মহাষৌধ যা একবার ব্যবহার করলে শরীরের যত ব্যাথা আছে সব নির্মূল হয়ে যাবে। যে কোন বাতের রোগ ভাল হবে।’
এক বুড়ো জিজ্ঞাসা করল, ‘আমারতো মাজায় ব্যাথা, তা কি ভাল হবে ?’
মফিজঃ ‘অবশ্যই, হোয়াই নট! বাজান, মাজার ব্যাথাইতো বাতের আসল ব্যাথা। বাত খুবই দুষ্ট প্রকৃতির রোগ। যাকে একবার ধরে তাকে আর ছাড়তে চায় না, কবর পর্যন্ত নিয়ে যায়।’
এ কথা শুনে বুড়ো বললো, ‘তোমার ঔষধ খেয়ে যদি বাত ভাল হয় তা হলে বড় বড় ডাক্তারদের প্রিসক্রিপশনের মূল্য কি ? তারা লাক্ষ লাক্ষ টাকা খরচ করে ডাক্তারী পড়ে কি করতে?’
মফিজঃ ‘বাজান, ডাক্তারী পড়লেই প্রকৃত ডাক্তার হওয়া যায় না। আমার ঔষধ খেয়ে এই পৃথিবীর যত লোক ভাল হয়েছে কোন কোন ডাক্তার সেই পরিমান প্রিসক্রিপশনই দিতে পারে নাই। আমি হাতে কলমে শিখে ডাক্তার, বই পড়া অন্ধ ডাক্তার না।’
বুড়োঃ ‘বুঝেছি। এবার তোমার মহাষৌধের এক কোর্স আমাকে ফ্রি দাও। খেয়ে দেখি রোগ ভাল হয় কিনা। রোগ ভাল হলে কসম খেয়ে বলছি , দ্বিগুণ দাম পরিশোধ করব।’
মফিজ মনে মনে বললো, ‘এই সেরেছে, বুড়োটা বেশ বজ্জাত।’
শোনেন বাজান, আমার ঔষধে যার ভরসা নাই তাকে আমি টাকাতেও ঔষধ দেই না। ‘ভক্তিতে মুক্তি’ খাঁটি এই উক্তি। আমার ঔষধ যে ভক্তিতে নিবে না তার এ ঔষধ খেয়ে কোন লাভ নাই। এই ঔষধ একবার ভক্তিতে আনলেই রোগ অর্ধেক সেরে যায়। শেখ হাসিনা, খালেদা জিয়ার খুব কাছের নেতারাও আমার মলম ব্যবহার করে উপকার পেয়েছে। রোগ থেকে মুক্তি পেয়ে অনেকে আমাকে সালাম করে গেছে। ভক্তি করে বিষকে ঔষধ জ্ঞানে নিলেও রোগ ভাল হয়ে যায়।’
বুড়ো বললো, ‘এসবের প্রমাণ কি ?’
মফিজঃ ‘প্রমাণের দরকার নাই। সত্যের জন্য প্রমাণ দিতে হয় না। সত্য স্বপ্রকাশিত।’
বুড়ো বললো, ‘শোন মিয়া, রাজনীতিবিদের মত চাপা মারবা না। চাপা মেরে তিলকে তাল বানানো যায় না।’
মফিজঃ ‘বাপজান আমি চাপা মারি না। মানুষের উপকারে আর আমার পেটের জন্য এই কাজ করা। কাউকে ধোঁকা দিয়ে কিছু করি না। মানুষকে ঔষধের গুণের কথা বলে তার বিনিময়ে টাকা নেই। বনাজী ঔষধের গুণের কথা সবারই জানা। পৃথিবীর নামী দামী সব ঔষধ জঙ্গলার গাছ-গাছড়া খেকে আসে।’
বুড়ো বললো, ‘চাপা আর কত মারবা ? তোমার বনাজী ঔষধে রোগ মুক্তির গ্যারান্টি কি ?’
মফিজঃ ‘বাজান আপনাকে বুঝানো আর গল্পের মুইল্লাকে বুঝানো সমান। মুইল্লা নাকি কোন সময়ই সঠিক বিষয়টা বুঝতো না। তাকে একবার জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল দুই আর দুই কত ? সে উত্তর করলো পাঁচ। এ উত্তর শুনে তার দ্বিতীয় শ্রেণীর পড়ুয়া ছেলে বললো, ‘বাবা, দুই আর দুইতো চার হয় এই সহজ বিষয়টা তুমি বুঝ না?’
সে বললো, ‘শোন ব্যাটা, আমি যদি না বুঝি আমাকে বোঝানোর সাধ্য এই দুনিয়ায় কার আছে?’
বুড়ো বললো, ‘আমি সব বুঝি। এখন আমাকে এক কোর্স ঔষধ ফ্রি দাও। তোমার ঔষধ খেয়ে রোগ ভাল হলে অবশ্যই কিনে খাব।’
মফিজঃ ‘রোগ ভাল হলে ঔষধ দিয়ে কি হবে ? আর একখান কথা, ফ্রি ঔষধে রোগ সারে না। ’
বুড়ো মুখ বাঁকা করে বললো, ‘তুমি মিয়া ভুয়া ঔধষ বিক্রি করে মানুষ ঠকাও। একদিন ঠিকই এর প্রায়শ্চিত্ত করবে।’
মফিজ নিজেও জানে না সে মানুষ ঠকাচ্ছে কি না। কারণ ঔষধ সে তৈরী করে না, করে তার গুরু। তবে এবার জানতে হবে ঔষধ আসল না ভেজাল ? ভেজাল থাকলে এই ব্যবসা সে করবে না।
বুড়োর সাথে কথার মাঝে অনেকেই চলে গেল। এ রকম সমস্যায় মাঝে মধ্যে পড়েতে হয়। আজ আশা পরিমান বিক্রি আসে নাই।
©somewhere in net ltd.