নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

এখন বিশ্ব আমার হাতের মুঠোয়

গাজী কামরুল ইসলাম

My name is Md. Kamrul Islam. I completed MBA from Stamford University of Bangladesh. Now I'm Officer of Eastern Bank Ltd.

গাজী কামরুল ইসলাম › বিস্তারিত পোস্টঃ

ফটকাবাজি -- পর্ব-৩

১১ ই নভেম্বর, ২০১৬ রাত ১:১০

মফিজ মাঝে মধ্যে ঢাকার বাহিরে ক্যানভাসে যায়। তার এক বন্ধুর বিয়েতে পাবনার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলো। সাথে কাপড়ের একটা পুঁটলি । পাবনায় আগে কখনও যায়নি। বন্ধুর দেওয়া ঠিকানা মতে মিরপুর ট্যাকনিক্যাল থেকে বাসের টিকিট কেটে ‘পাবনা এস্কপ্রেসে’ চড়লো। পাবনা বাস স্ট্যান্ডে নেমে যেতে হবে দিলালপুর রাজা-বাদশার গ্যারেজে। সেখানে তার বন্ধুর শ্বশুড় বাড়ি। বরযাত্রির সাথে মিলিত হবে দুপুর ১ টায়।
মফিজ বাস ড্রাইভারকে বললো, ‘ওস্তাদ, যাবার পথে বাসের ভিতরে বাতের মলমের একটু ক্যানভাস করবো। যা বিক্রি আসবে তিন ভাগের একভাগ তোমার।’
বাস ড্রাইভার বললো, ‘এসব এখানে চলে না। এটা লোকাল বাস না যে যা খুশি তা করবি।’
মফিজঃ ‘ওস্তাদ, যা বিক্রি হবে তার অর্ধেক তোমার।’
বাস ড্রাইভারঃ ‘রাখ ব্যাটা ভাগাভাগি।’
কিছুক্ষণ পরে বাস ড্রাইভার জিজ্ঞাসা করলো, ‘বাসে কি পরিমান বিক্রি আসবে?’
মফিজঃ ‘ওস্তাদ, এটা জায়গা বুঝে। তবে এসব বাসে নূনত্য এক হাজার টাকা বিক্রি আসে। বাতের মলমের সাথে কয়েকটা মানিব্যাগ আছে সব মিলিয়ে আশা করি ভাল বিক্রি আসবে।’
এ কথা শুনে বাস ড্রাইভার বললো, ‘সময় বেশী নিবি না। এখনকার অধিকাংশ যাত্রী আপার ক্লাসের। বেশীক্ষণ তোর লেকচার শুনবে না। লেকচারের মাঝে যে কোন সময় মারও খেতে পারিস। আল্লাহর নাম নিয়ে শুরু করিস।’
মফিজঃ ‘ঠিক আছে ওস্তাদ। বিরক্তির কাজ মফিজ মিয়া করে না। এমন একখান লেকচার মারবো সবাই তাক মেরে যাবে।’
বাস ছাড়লো। দশ মিনিট পর সিট থেকে উঠে সবার সামনে এসে দাড়ালো মফিজ মিয়া।
মফিজঃ ‘সম্মানীত যাত্রী ভাই ও বোনেরা, আপনাদের কিছু মূল্যবান সময় নষ্ট করব। আশা করি কেউ বিরক্ত হবেন না। চলতি পথে অপরিচিত কারো হাতে কিছু খাবেন না। পকেট সাবধান। আল্লাহ নাম সবসময় স্মরণে রাখবেন। সম্মানীত যাত্রী ভাই ও বোনেরা, আপনাদের সামনে আজ আমি এমন একটি জিনিস নিয়ে হাজির হয়েছি যা অনেকেই প্রয়োজন কিন্তু সময়মত পান না। এই বাসের ভিতরেই হয়তো অনেকের শরীরে ব্যাথা। মরার ব্যাথা শরীর থেকে যায় না। এই ব্যাথার জন্য অনেক নামী-দামী ডাক্তারের প্রিসক্রিপশনে ঔষধ খেয়েছেন কিন্তু আশানুরুপ ফল পান নাই। আমার কাছে আপনারা পাবেন এমন এক মহৌষধ যা নামী-দামী কোন কোম্পানীর না। তবে আমি একশভাগ নিশ্চয়তা দিতে পারি, আমার ঔষধ যে একবার ব্যবহার করবে তার শরীরে সাত দিন পর কোন ব্যাথা থাকবে না।’
শার্টের পকেটে নাজমুল হোসেন লেখা এক লোক চেঁচিয়ে বলল, ‘এই ব্যাটা, শরীরে যদি ব্যাথা না থাকে সেতো মানুষই না।’
মফিজঃ ‘স্যার আমি সে অর্থে বলি নাই। বলছি বাতের যদি কোন ব্যাথা থাকে তা নির্মূল হয়ে যাবে। সম্মানীত যাত্রী ভাই ও বোনেরা, আমার ঔষধের মূল্য মাত্র দশ টাকা। আছেন ভাই এমন কেউ যার ঔষধটা প্রয়োজন ? বসা থেকে হাত তুললেই আপনার কাছে ঔষধ নিয়ে পৌঁছে যাব। এইতো এক ভাই দশ টাকা দিয়ে এক কৌটা নিলো। আর কেউ ভাই? আপনাদের জ্ঞাতার্থে জানাচ্ছি, ফুল কোর্স কম্পিটের জন্য তিন কৌটা ব্যবহার করতে হবে।’
এ কথা শুনে একজন বললো, ‘ভাই, আমাকে তাহলে এক কৌটা দিলে কেন ?’
মফিজঃ ‘আরো দুই কৌটা নিয়ে নেন স্যার। চিন্তা নাই, কৌটার পিছনে আমার ঠিকানা ও মোবাইল নম্বর দেওয়া আছে। প্রয়োজনে ঠিকানা মত চলে আসবেন অথবা কল দিবেন ঔষধ জায়গামত পৌছে যাবে। কেউ চাইলে ডাকযোগেও ঔষধ নিতে পারেন। এখানে আরো দুই ভাই ফুল কোর্স নিলো।
একজন হাত উঠিয়ে বললো, ‘ভাই, আমাকে তিনটা ফুলকোর্স দাও।’
মফিজ একটু হাঁকিয়ে বললো, ‘একসাথে তিনটা ফুলকোর্স নিলো। ভাই জানে এই ঔষধের কি গুণ। কথায় না কাজে পরিচয়। বৃক্ষের পরিচয় তার ফলে। কারো লাগলে হাত তুলবেন কাছে পৌঁছে যাব। সম্মানীত যাত্রী ভাই ও বোনেরা, আপনাদের আর একটু সময় নষ্ট করবো।’
নাজমূল হোসেন চেঁচিয়ে বলল, ‘অনেকতো সময় নষ্ট করলে এখন বিদায় হও।’
মফিজ ভাবলো লোকটা পুলিশ। সে আবার পুলিশ ভয় পায়। ফ্যাসাদে ফেলে এরা পাঁচ টাকাও খায়। তাই অনুনয়ের সুরে বললো, ‘স্যার আর একটু সময় নষ্ট করবো, আপনি যদি অনুমতি দেন।’
নাজমূল সাহেব একটু গম্ভীর হয়ে বললো, ‘ঠিক আছে, তবে দশ মিনিটের বেশী না।’
মফিজঃ ‘আমার কাছে আরেকটি জিনিস আছে যা আপনাদের সবার প্রয়োজন। আপনাদের মূল্যবান আইডি কার্ড, এটিএম কার্ড, টাকা-পয়সা রাখার জন্য একটি নিরাপদ মানিব্যাগের প্রয়োজন। আমার কাছে এই মূল্যবান জিনিসটি পাবেন অতি অল্পমূল্যে।’
একজন জিজ্ঞাসা করলো, ‘মানিব্যাগে আইডি কার্ড রাখা যাবে †কন? যদি রাখা যায় তাহলে এর নাম আইডিমানিব্যাগ হওয়া উচিত ছিল, তাই না?’
মফিজঃ ‘ঠিক বলেছেন স্যার, ব্যাগটি নাম মানিব্যাগ কিন্তু এটা এমনভাবে তৈরি যাতে আইডি কার্ডও রাখা যায়। এটা আপনাদের সুবিধার জন্য। তাই এটাকে আইডিমানিব্যাগও বলতে পারেন। এই আইডিমানিব্যাগটির দাম মাত্র একশ টাকা, সম্পূর্ণ চামড়ার তৈরি।’
একজন বললো, ‘সম্পূর্ণ চামড়ার তৈরি মানিব্যাগ মাত্র একশ টাকা! বাজারে সব কিছুর দাম বাড়ছে চামড়ার দাম কি কমছে ?’
মফিজঃ ‘স্যার, এ রকম ব্যাগ প্রতিদিন হাজার হাজার কপি বিক্রি হচ্ছে তাই আমরা তুলনামূলক কম দামে বিক্রি করতে পারছি। আমাদের †দাকান ভাড়া, ডেকোরেশন খরচ, মাস্তানদের চাঁদা দিতে হয় না। পাতিনেতা, উপনেতারা আমাদের নাগাল পায় না।’
দশটি মানিব্যাগ বিক্রি হলো। তিন হাজার টাকা বিক্রি আসলো। সাতশ টাকা ড্রাইভার ভাইকে দিলে তার মৌনতায়ই বুঝালো সে খুশি।
বাস থেকে নেমে মফিজ এক রিকশাওয়ালাকে জিজ্ঞাসা করলো, ‘রাজা-বাদশার গ্যারেজ যাবে ?’
রিকশাওয়ালাঃ ‘যাব।’
মফিজঃ ‘কত দিতে হবে ?’
রিকশাওয়ালাঃ ‘২৫ টাকা।’
মফিজঃ ‘১৫ টাকা দিব, যাবে ?’
রিকশাওয়ালাঃ ‘ না।’
মফিজঃ ‘বাংলাদেশের রিকশাওয়ালারা জমিদার টাইপের। যা ভাড়া চায় তাই দিতে হবে। একবার আমি মতিঝিল সিটি সেন্টারের কাছে এসে এক রিকশাওয়ালাকে বললাম, ‘ভাই, বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনে যাবে ?’
রিকশাওয়ালাঃ ‘যাব।’
মফিজঃ ‘কত দিতে হবে?’
রিকশাওয়ালাঃ ‘পঞ্চাশ টাকা।’
মফিজঃ ‘চল্লিশ টাকা পাবে।’
রিকশাওয়ালাঃ ‘চলেন।’
সে আমাকে দৈনিক বাংলা মোড় ঘুরিয়ে বকচত্বর হয়ে পিপলস ইনস্যুরেন্স ভবনের সামনে দিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনে নিয়ে আসলো। আমি কিছু বুঝলাম না কারণ জায়গাটা চিনতাম না। মনে মনে খুশি হলাম দশ টাকা কমাতে পেরে। পরে বুঝলাম আমাকে কি রকম বোকা বানিয়েছে।
যেতে যেতে রিকশাওয়ালাকে জিজ্ঞাসা করলাম, ‘ভাই, ইনকাম †কমন ?’
রিকশাওয়ালাঃ ‘আসে স্যার, তিনশ টাকা †ডলি।’
মফিজঃ ‘মানে নয়হাজার টাকা মাসে, বেশ ভাল।’
রিকশাওয়ালাঃ ‘বেশ ভাল! বলেন কি স্যার! সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছি। বৌকে সাধের জিনিস কিনে দিতে পারি না বলে রাতে ঠিকমত মজা করতে দেয় না।’
মফিজঃ ‘বৌকে যত দিবা তত চাইবে। চেখের গরমে রাখবা, দেখবা সব ঠিক।’
বিয়ের খাবার খেয়ে মফিজের বমি শুরু হয়ে গেল। সবাই ধরাধরি করে একটা রুমে নিয়ে শুইয়ে দিল। পোলাউ, মাংস পেটে গেলে থাকতে চায় না। কিছুক্ষণ চেখ বুঝে শুয়ে রইলো। চোখ মেলে দেখে একটা মেয়ে পাখা হাতে বাতাস করছে। চোখে চোখ পড়াতে লজ্জা পেল।
মফিজঃ ‘থাক থাক আর কষ্ট করতে হবে না। আমি এখন সম্পূর্ণ সুস্থ্য।’
মেয়েটি বললো, ‘আপনি শুয়ে থাকেন। অনেক বমি করেছেন। আরেকটু রেস্ট না নিলে শরীর ঠিক হবে না।’
মফিজঃ ‘তোমার নাম কি ?’
মেয়েটিঃ ‘নাম দিয়ে কাম কি?’
মফিজঃ ‘এমনিতেই। তুমি লেখা-পড়া কর ?’
মেয়েটিঃ ‘দরকার কি, আপনার কি বৌ নাই?’
মফিজঃ ‘হ্যাঁ, আছে।’
মেয়েটিঃ ‘বৌ থাকতে আমার দিকে নজর কেন ?’
মফিজঃ ‘তুমি দেখতে খুব সুন্দর তাই।’
এই কথা শুনে মেয়েটি পাখাটা মাটিতে ফেলে চলে গেল। মফিজ বিড় বিড় করে বললো, ‘সুন্দরীদের অহংকার বেশী।’
বিকালে মফিজ পাবনার হেমায়েতপুর মানসিক হাসপাতাল গেল দেখতে। কত প্রকার পাগল যে এখানে অবস্থান না দেখলে বিশ্বাস হয় না।
তাকে এক পাগল জিজ্ঞাসা করলো, ‘তুই কি কুত্তার মাংস খাস?’
উল্টা পাগলকে সে জিজ্ঞাসা করলো ‘তুই কি কুত্তার মাংস খাস?’ পাগলটা চুপ হয়ে গেল। একটু পর উত্তেজিত হয়ে বললো, ‘আমি খাই না বলেইতো তুই খাবি।’ এই বলে দৌড়ে পালায়। পরে জানা যায় পাগলা কুকুরের তাড়া ও কামড় খেয়ে তার এ অবস্থা।
মফিজ জানতো পাগল যে প্রশ্ন করে তাকে উল্টো সেই প্রশ্ন করলেই দমে যায়। পাগলদের নিয়ে বাংলাদেশে প্রকৃত কোন গবেষণা নাই। লেখক গাজী কামরুল ইসলাম একটি উপন্যাস লিখছে যেখানে গবেষক আনিসুজ্জামান পাগলদের নিয়ে গবেষণা করছে। আনিসুজ্জানের মতে বাংলাদেশে অনেক মৌসুমী পাগল আছে। চ্যানেল আইয়ে মাওফুজ আহমেদের ‘চৈতা পাগল’ নাটক দেখলে সেটা বুঝা যায়। যাদের সঠিক চিকিৎসা দিলে অল্পতেই সেরে উঠতো।
আগামীকাল বিরোধীদল হরতাল ডেকেছে। আজ বিকালেই পাবনা বাস স্ট্যান্ডের কাছে দু’টো গাড়ীতে আগুন দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশের হরতালের পূর্ব চিত্র এটা। আজ বিকাল থেকেই সব গাড়ী চলাচল বন্ধ। বাংলাদেশের সরকারীদল তাদের নিজের স্বার্থে যেটা ভালো সেটা করে আর বিরোধীদল তাদের দাবী আদায়ের অন্যতম মাধ্যম হিসেবে হরতালকেই বেছে নেয়। হরতালে সহিংস্রতা এদেশের সাধারন চিত্র। আলোচনার মাধ্যমে কোন সমস্যার সমাধান এখানে হয় না। বাংলাদেশে গণতন্ত্রের নামে রাজতন্ত্র বা পরিবারতন্ত্র প্রচলিত।
মফিজ ঢাকা যাওয়ার কোন গাড়ী পাচ্ছে না। তার বন্ধু বললো থেকে যা, হরতালে গাড়ী পাবি না।
মফিজ রেগে বললো,‘হরতালের নিকুচি করি। বাড়িতে কাল গুরুত্বপূর্ণ কাজ ছিল। এদেশের সাধারন মানুষের কাজ বন্ধ থাকলে খাওয়া-দাওয়া বন্ধ হয়ে যায় এটা কি বাংলাদেশের রাজনীতিবিদরা বুঝে না! যারা জনগনের সমস্যার সমাধান করবে তারা আরো জনগনকে সমস্যায় ফেলে। এ ধরনের রাজনীত এখনই বন্ধ হওয়া উচিত।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১১ ই নভেম্বর, ২০১৬ দুপুর ১:০২

হাতুড়ে লেখক বলেছেন: এখানে আমি টা কে? আগামাথা কিছুই পাইলাম না।

২| ১১ ই নভেম্বর, ২০১৬ দুপুর ২:২২

গাজী কামরুল ইসলাম বলেছেন: এখন পড়ুন আগা-মাথা পাবেন।

৩| ১২ ই নভেম্বর, ২০১৬ সকাল ৭:৩১

আজিব দুনিয়ার মানুষ। বলেছেন: গল্প খুবই সাদাসিধে হলেও পড়তে ভাল লাগছে। লেখাগুলো আরেকটু দীর্ঘ হলে ভাল হত।

৪| ১৩ ই নভেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৩:৪৬

গাজী কামরুল ইসলাম বলেছেন: ধন্যবাদ। এটি একটি চলমান উপন্যাস আরো লেখা আসতে আছে

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.