![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
একটু আগুন হবে?
- একটু আগুন কেন?
- সিগারেট ধরাতাম
হোসেন পকেট থেকে লাইটারটা বের করে দিল।
লোকটা লাইটার হাতে নিয়ে বসে আছে। হোসেন তাকিয়ে দেখে, লোকটা তার দিকেই তাকিয়ে আছে বড় বড় চোখ করে।
- কি? ধরান সিগারেট?
- সিগারেট ত নাই
- তাহলে লাইটার চাইলেন যে?
লোকটা এবার অবাক চোখে তাকিয়ে বলল
- ভাই, আপনি আমাকে দেখতে পাচ্ছেন?
- দেখতে পাবো না কেন?
- সত্যিই দেখতে পাচ্ছেন?
- ভালো ঝামেলা দেখি। হ্যা, দেখতেই তো পাচ্ছি। কি ব্যাপার বলুন দেখি?
- না মানে, আমি জানতাম, আমি অদৃশ্য , আমাকে আর দেখা যায় না।
- দেখা যাবে না কেন? মানুষ তো আপনি নাকি?
লোকটা এবার একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল
- হ্যা ভাই, মানুষ বটে। তবে জানেন, কিছু কিছু মানুষ কখনো কখনো একটা সময়ের পর আর দৃশ্যমান হতে চায় না।
- কেন? এমন কেন?
- এই ধরুন আমার কথা। কোলাহল ভালো লাগে না। এমন ছিলাম না আগে। কিন্তু মিশতে বেশ কস্ট হোতো। তাই নিজের মত করেই থাকতাম। জড়তাবোধ ভেংগে আড্ডার আসরে তাল মেলাতে পারতাম না।
মানুষ বুঝতাম বেশ কিন্তু নিজেকে বোঝাতে পারতাম না। সবকিছুর পর মানুষ তো নাকি! কিছু আশা, প্রত্যাশা তো থাকেই। এমন একের পর এক, হতেই থাকে। দিন যায়, কথা জমতে থাকে, অভিমান জমতে জমতে কালো মেঘ হয়ে ভাসে কিন্ত প্রবল বৃষ্টি হয়ে কখনো ঝড়ে পরে না। আস্তে আস্তে দুরত্ব বাড়তে থাকে , নিজেই দূরত্ব বাড়াতে থাকি। হাতে গোনা মানুষ যারা ছিলো তাও কমে আসতে থাকে। তাতেও পোষায় না।
- তারপর?
- তারপর, চেনাজানা পরিবেশ থেকে দূরে চলে এলাম। সবকিছু থেকে দূরে।
- দূরত্ব বাড়িয়ে কি সুখ পেয়েছেন?
- সুখ বড্ড আপেক্ষিক বিষয়, সুখ আসলে কেবল একটা সংগা নয়। যে সুখ কেউ পেলো কিনা বা তা হারালো কিনা।
- তবে সুখ কি?
- ও এক বাতুলতা
-বাতুলতা?
- বাদ দিন। আমি বলতে পারব না, এ কি জিনিস। আপনি যেদিন অনুভব করবেন ,বুঝে যাবেন।
- হুম।
- তো অদৃশ্য হয়ে গেছেন এ ভাবনা কবে থেকে এলো?
- দূরত্ব বাড়তে বাড়তে একটা সময় দেখলাম, চারপাশে অনেক মানুষ, কিন্তু আমি কাউকেই চিনি না, না আমায় কেউ চেনে। কি ভালো লাগার দিনে, কি খারাপ লাগার দিনে আশে পাশে কেউ নেই।
- কাছের মানুষ করে নিতে পারতেন?
- পারতাম, কিন্তু জানেন, মানুষের কাছে নিজেকে নতুন করে উপস্থাপন করার শক্তিটুকু আমার আসে না। বড্ড আলসেমি লাগে। একটা মানুষ আপনার সীমানায় এলে তাকে তো আপনার আংগিনা ঘুরে ফিরে দেখাতে হবে, আপনার মনে বাগান, না ঘন বন জংগল, না ঝোপঝাড় তা বোঝাতে হবে, আপনার মনের পাড় বাধানো পুকুর কতখানি গভীর, সচ্ছ না ঘোলাটে তা বোঝার সময়টুকু তো দিতে হবে। আমার ইচ্ছে হয় না। তাছাড়া, মানুষ সুন্দর খোজে। মনের গহীনে দরবার জানায় ঘুড়ে বেড়াবার, কিন্তু শুধু খোজে বাগান। হা হা। সবার কি আর বাগান থাকে বলেন?
তাছাড়া আমন্ত্রন ছাড়া কেউ তো নিমন্ত্রনে আসে না তাই না।
- মানুষ বুঝতে এত কিছু লাগে?
- এ তো কম ই। আপনার কি মনে হয় আপনার আমার সিগারেটের ব্র্যান্ড মিলে গেলো আর সব মিলে গেলো? তা নয়। এ বড্ড ভুল। আমরা সচরাচরই এই করি, আর শেষে গিয়ে পস্তাই।
-হুম।
- এখন বোধহয় মাথায় গন্ডগোলই দেখা দিয়েছে, তাই নিজেকে অদৃশ্য ভাবছি অনেকদিন ই। কাউকে চিনি না, কেউ চেনে না, চিনতে ইচ্ছেও করে না, চেনাতেও শখ জাগে না। এ আর অদৃশ্য হয়ে যাবার থেকে কম কি।
- হুম
- আরো একটা কথা খুব মনে হয়, বলব?
- হ্যা বলুন না।
- এই প্রকৃতির নিয়মে আসলে অদৃশ্য তো হয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। অতিপ্রাকৃত বিষয়। তাই প্রথম স্তরে মানূষ একলা হতে শুরু করে, এরপর ধীরে ধীরে দূরত্ত বাড়ায়।
- আর ধাপ আছে নাকি?
- হ্যা আছে। সেটাই মনে হয় শেষ স্তর। আমি ঠিক জানিনা। সবশেষে মানুষ সম্ভবত শেষ পর্যায়ে গিয়ে ভাবে শরীর থেকে তার মুক্তি দরকার। তার কাছে শরীরটা এক ধরনের খাচার মত লাগে।
- আপনি কি বলতে চাচ্ছেন...
- হ্যা, যা ভাবছেন তাই ই।
- আপনার কোন স্তরে তাহলে এখন
- বলতে পারছি না, তবে আমার শরীরকে এখনো বোঝা মনে হয় না।
-হুম।
ভোররাত শেষ হচ্ছে। এসময়টা খুব ভালো লাগে। সকাল শুরু হবার আর রাত্রি শেষ হবার ঠিক আগ মূহুর্তে এক ধরনের শীতল বাতাস বয়। ঠিক কনকনে নয়। মন জুড়ায়। এমন এক বাতাস শরীর জুড়ে ছুয়ে গেলো, হোসেন দীর্ঘ এক শাস নিলো। সাথে সাথেই মনে হোলো এই ই তো সুখ। আহ।
জামাল মিয়া হাইওয়ে রাস্তায় পাকা বাস ড্রাইভার। বেশ সময় সচেতন। রাস্তা শুধু শুধু সময় নস্ট করা তার পছন্দ নয়। ভোর হতে শুরু করেছে, জ্যামের কারনে বেশ কিছু সময় নস্ট হয়েছে রাস্তায়।
তাড়া দিয়ে বাসের সুপারভাইজারকে বলল,
- ভালো করে দেখেন সামনের স্ট্যান্ডে কোনো যাত্রি আছে কিনা। না থাকলে দাঁড়ায় সময় নস্ট করব না। টেনে চলে যাবো।
সুপারভাইজার মাথা নেড়ে সায় দিয়ে জানালা দিয়ে ভালো করে দেখতে লাগলো। কোনো যাত্রি নেই।
- দেখসেন? আসে কেউ?
- না, ওস্তাদ। নাই।
- ভালো করে দেখসেন তো? আমিও ত কাউরে দেখি না। পরে আবার ঝামেলা না হয়।
- নাই কেউ। টান দেন।
- আচ্ছা দিলাম।
হোসেন আর লোকটি চুপ করে ভোর হওয়া দেখছে। জীবনের অনেক অনেক অর্থ আজ বোঝা গেল। একটা বাস নীরব পরিবেশের আমেজকে চূর্ন করে চলে যাচ্ছে। চলে গিয়ে সামনের মোড়ে অদৃশ্য হয়ে গেল একসময়।
©somewhere in net ltd.
১|
০৮ ই জুন, ২০২৫ সকাল ১০:৪৪
শেরজা তপন বলেছেন: ভালো লিখেছেন তবে একটু উচ্চমার্গীয়