নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
লিখি, ছবি তুলি আর সিনেমা বানাই ।
।। জেলখানার জিন্দেগী ।।
জেলখানায় নয়া কেউ গেলে তারে পুরানরা জিগাই , মামলা কি ? আমারেও জিগাইছিলো । আমি কইতাম , আইসিটি এক্ট । বেশির ভাগই বুঝতো না । বেশির ভাগই পাল্টা জিগাইতো , ইবা আবার কি মামলা ? আমি কইতাম , ৫৭ ধারা । আবার জিগাইতো , ইবা কি ধারা ? আমি কইতাম , তথ্য যোগাযোগ ও প্রযুক্তি আইন । তারপরেও বেশির ভাগ লোক বুঝতো না আমার অপরাধ কি । বলতো, তুমি করছোটা কি ?
আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ, আমি একজন রাজাকার যুদ্ধাপরাধী , রাজাকার যুদ্ধাপরাধীর মেয়ে ছাত্রীসংস্থার সাবেক নেত্রী এবং জামাত থেকে আসা আওয়ামীলীগের এমপির বিরুদ্ধে লিখেছি । তখন বলতো , অহ বুঝছি । তুমি হইলা গিয়া "কলম মার্ডার" । আমি প্রথমে বুঝি নাই । "কলম মার্ডার" কি ? জেলখানায় বেশির ভাগ মামলারই কিছু উপনাম আছে । যেমন আমি গ্রেফতার হইছি , তথ্য যোগাযোগ ও প্রযুক্তি আইনে আর আমার মামলার উপনাম "কলম মার্ডার" । মানে আমি লেখা দিয়া মার্ডার করছি । কলম দিয়াই যেহেতু লেখা তাই তারা নাম দিয়েছে এই "কলম মার্ডার" ।
আমি একদিন , ওয়ার্ড থেকে বাইর হইয়া , সিগারেট ফুকতাছি । যেখানে সিগারেট ফুকতাছি তার পাঁশে "কোরান দফা" । মানে এই ঘরে কোরান তেলোয়াত করা হয় । সকাল আটটা থেকে দুপুর বারোটা পর্যন্ত ।
কোরান দফা থেকে একজন ছেলে বের হইয়া (প্রায় আমার সমবয়সী) একটা পান নিলো বেশি কইরা জর্দা দিয়া । ছেলেটির পরনে সাদা জুব্বা , মুখে দাড়ি । তারপর আমার পাঁশে আইয়া জিগাইলো, ভাই কি মামলা ? আমি কইলাম, আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ, আমি একজন রাজাকার যুদ্ধাপরাধী ও রাজাকার যুদ্ধাপরাধীর মেয়ে ছাত্রীসংস্থার সাবেক নেত্রী এবং জামাত থেকে আসা আওয়ামীলীগের এমপির বিরুদ্ধে লিখেছি ।
ছেলেটি বললো , আওয়ামীলীগ হইলো কুত্তার দল । এরা ইহুদি নসরা । এরা আলেম ওলেমাদার সম্মান দেয় না । আওয়ামীলীগ আলেম ওলেমা বিরোধি । আওয়ামীলীগ ইসলাম বিরোধি । কোন ঈমানন্দার মুসলমান আওয়ামীলীগ করতে পারে না । আওয়ামীলীগ করলেই জাহান্নাম নিশ্চিত । দেলোওয়ার হোসাইন সাইদির মতো একজন আলেমরে যুদ্ধাপরাধী কইয়া জেলে আটকায় রাখছে । কত্ত বড় জালিম এই আওয়ামীলীগ ! আল্লাহর গজব পড়বে এই হাসিনার উপর ! এই নাস্তিক সরকারের পতন একদিন হবেই হবে ! এই জালিম সরকারের পতন একদিন হবেই হবে ।- ইনশাআল্লাহ ।
ছেলেটি আমারে উপদেশের সহিত কইলো, ভাই জামাতের বিরোধিতা করেন সমস্যা নাই কিন্তু আলেমওলেমাদের বিরোধিতা কইরেন না । আল্লাহর গজব পড়বে । রাজাকার যুদ্ধাপরাধী কি আওয়ামীলীগে নাই ? তাদের বিরুদ্ধে লেখেন । আলেমওলেমাদের রাজাকার যুদ্ধাপরাধী কইলে আল্লাহর গজব পড়বে ।
আমি তারে জিগাইলাম ভাই আপনার কি মামলা , ছেলেটি কয় সে চাঁদগাও একটা মাদ্রাসায় হাফেজি পড়াইতো (মানে কোরান পড়াইতো) আর নামাজ কালাম শিখাইতো । ইসলামের দাওয়াত দিতো । কিন্তু স্থানীয় আওয়ামীলীগের লোকেরা এইটা সহ্য করতে পারতো না । তাই তারা ক্ষমতার জোর খাটাইয়া তার মতো একজন আলেমকে জেলে ঢুকাই দিছে । যেনো কোরানের আলো ছড়াইয়া না পরে ।
ছেলেটির মুখে এই কথা শুইনা আমি পুরাই তবদা খাইগেলাম । মনে মনে নিজের লজ্জা হইতে লাগলো । একজন লোক কোরান শিখায় নামাজ কালাম শিখায় আর তারেই আওয়ামীলীগ জেলে ঢুকাই দিলো ! আমিতো জানি আওয়ামীলীগ ইসলাম বিরোধি নয় । কিন্তু এখনতো যা শুনছি তাতে মনে হচ্ছে , আওয়ামীলীগ ইসলাম বিরোধি । ছেলেটির কথা শুইনা আমার নিজের উপর নিজেরই ঘৃণা হইতে লাগলো । কারণ আমি একজন আওয়ামীলীগ সমর্থক । আমি ধর্মনিরপেক্ষ অসাম্প্রদায়িক চেতনা এবং জাতির পিতার আদর্শ মনে প্রাণে ধারন করি । লজ্জায় অপমানে আমার বলতে ইচ্ছা করছিলো , হে মাটি তুমি ফাঁক হয়ে যাও আমি ঢুকে যাই ! ছেলেটিকে আর কিছু না বলে , আমি চলে আসলাম আমার ওয়ার্ডে ।
ওয়ার্ডে আইসা বই নিয়া বসলাম । আমার পাশে একজন ছেলে এসে বলল, যে ছেলের সাথে কথা বলছো তুমি তারে চিনো ? আমি বললাম না । আইজই কথা হইলো । ছেলেটি বললো , ও আগে আমাদের এই ওয়ার্ডে থাকতো । এইখানে নামাজ পড়াইতো । এখন এই বিল্ডিংয়ের চারতলায় থাকে ১২ নং ওয়ার্ডে । সেখানে ইমামতি করে । আমি বললাম , ওহ । ছেলেটি বললো , তার মামলা কি জানো ? আমি বললাম , সে কইছে কোরান হাদিস শিখায় বলে তারে আওয়ামীলীগের লোকেরা ক্ষমতার অপব্যবহার কইরা জেলে ঢুকাই দিছে ।
ছেলেটি হাইসা দিয়া কয় , মাদারিচুদ আলা পোদাপোয়া । সেরা ভন্ড । আমি কইলাম কি কন! ছেলেটি কয় , সে চাঁদগাও'তে একটা মাদ্রাসায় হাফেজি পড়াইতো । হাফেজি পড়ানোর সময় একটা ছয় বছরের ছেলেকে তার অফিস রুমে ডেকে নিয়ে যায় । তারপর ছেলেটিকে বলৎকার করার সময় ছেলেটি চিৎকার দিলে বাকি ছাত্ররা দৌড়ে ভেতরে গিয়ে দেখে ছেলেটি কাপড় চোপড়হীন অজ্ঞান হয়ে পড়ে রইছে । হৈচৈ শুরু হলে আশেপাশের লোকজন চলে আসে । তারপর শুরু হয় ব্যাপক মাইর । মাইরের পর তাকে পুলিশের কাছে তুলে দেওয়া হয় । থানায় নিয়ে গেলে ছেলের বাবা বাদী হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতনে তার বিরুদ্ধে একটা মামলা করে । সেই মামলায় হুজুর এখন প্রায় ১১ মাস জেলখাটছে । শালা "পাছা মার্ডার" । ভন্ডের ভন্ড ।
তারপর আমি বুঝতে পারলাম , একজন অপরাধী তার অপরাধ ঢাকতে ধর্মকে ঢাল হিসাবে কিভাবে ব্যবহার করে । কিভাবে আওয়ামীলীগের বিরুদ্ধে ধর্ম এবং ধর্মীয় অনুভিতিকে অস্ত্র হিসাবে ব্যবহার করে ।
ছেলেটির নাম জিয়াউর রহমান । বাবার নাম খুব সম্ভবত মাহবুব । বাড়ি পুকুরিয়া (চানপুর) , বাঁশখালী । মাদ্রাসা থেকে পড়াশুনা করে দীর্ঘদিন দেশের বাইরে ছিলো । হেফাজত ইসলামের সে একজন একটিভ কর্মী । আর এখন সে কর্ণফুলি বিল্ডিংয়ের চার তলায় ১২ নং ওয়ার্ডে ইমামতি করে । আর চব্বিশঘন্টা আওয়ামীলীগ এবং সরকারকে ইসলাম বিরোধি নাস্তিক কইয়া লোকোজনরে বুঝায় ।
আইচ্ছা এমন হুজুর কি বাঙালি জাতি কখনোই চাইছিলো ?
২| ১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৭ দুপুর ২:৪৬
রানার ব্লগ বলেছেন: দেখুন ভাই অপরাধবোধ তখনি হবে যখন অপরাধ বলে নিজের ভিতরে আকুতি জাগবে, ওই ধরনের লোক ওই ধরনের কাজ কে অন্যায় ভাবে না তারা এটাকে ইসলামের দাওয়াতের অংশই মনে করে। জান্নাতে গোলেমান বলে একটা ব্যাপার আছে (শোনা কথা) এরা এর টেস্ট পৃথিবীতেই নিতে চায়। এই আর কি । এটা তো অপরাধ না তাই না ?
৩| ১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৭ বিকাল ৩:২৪
রাজীব নুর বলেছেন: ক্ষমতার কাছে সাধারন মানুষ অসহায়।
৪| ১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৭ বিকাল ৩:৫২
নতুন বলেছেন: Everybody is innocent in here, dont you know that?
https://www.youtube.com/watch?v=SLMig9fTx6Y
৫| ১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৭ সকাল ১১:১৫
মোঃ মাইদুল সরকার বলেছেন: লেখাটা দুবার কেন একই পোস্টে ? অপরাধীরা চিরকাল অপরাধ লুকাতে চায়। জেলখানায় আরও কতকিছু ঘটে সেসব বিস্তারিত লিখে একটা পোস্ট দিবেন।
©somewhere in net ltd.
১| ১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৭ দুপুর ২:৩৫
সাইফুর রহমান খান বলেছেন: অপরাধ লুকিয়ে নিজেকে নিরপরাধ প্রমানে ব্যস্ত হওয়াও যে একটা অপরাধ!! সেটা সবাই জানে। তবু লুকায়