নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
লিখি, ছবি তুলি আর সিনেমা বানাই ।
জেলখানায় যাওয়ার পর আমি ব্যাভাছ্যাকা খাইয়া বইয়া রইছি ওয়ার্ডে। বইয়া বইয়া আমার অসুস্থ মা আর ছোট তিন বোনের কথা ভাবতেছিলাম। এমন সময় আছরের নামাজের আজান দেয় গুটি ( ইয়াবা) মামলার আসামি করিম হুজুর। আযান শুইনা ওয়ার্ডের লোকজন যারা নামাজ পড়ে তারা বাথরুমের দিকে যাচ্ছে অযু করার জন্য। আর যারা নামাজ পড়ে না তারা হয় ওয়ার্ডে চুপচাপ বইয়া থাকে নইলে নিচে বারান্দায় আইসা বইয়া থাকে। নইলে সিগারেট বিড়ি ফুঁকে ফুঁকে আড্ডামারে।
আমি নিচের দিকে নামতে যাচ্ছিলাম। এমন সময় মোঃ শামসুল আলম আমাকে বলল, চৌধুরী সাব নামাজ পড়বেন না? আমি কইলাম, না আমি নামাজ পড়বো না। শামসুল আলম আবার জিগাইলো, ক্যা? আমি কইলাম, ভাই আমার মন নামাজ পড়তে চাচ্ছে না এখন। মন চাইলে নামাজ পড়তাম। শামসুল আলম কইলো, মনের বিরুদ্ধে জিহাদ করেন। আমি কইলাম, ভাই আমি মনের বিরুদ্ধে জিহাদ প্রত্যেকদিনই করি বাট জিহাদে মন জিতে যায় বারবার আর আমি হেরে যায়। এইবার শামসুল আলম আমার হাতটা ধইরা কয়, ভাইরে জেলখানায় আছি আমরা। আল্লাহ ছাড়াতো আর কেহ নাই। আল্লাহ'রে না ডাকিলে জামিন হইবে কেমনে? আমি কইলাম, ভাই জামিন হইবে কেমনে- এইডা জানি না তবে একটা কথা জানি আল্লাহ আমারে খুবই ভালোবাসেন। তাই আপনি নিশ্চিত থাকতে পারেন আমার জামিন হইয়া যাইবে। আমি উইঠা নিচের দিকে হাঁটা দিলাম।
দেখি আমার লগে লগে শামসুল আলমও আসতাছে। আমি কইলাম, ভাই আপনি নামাজ পইড়া আসেন। আমি নিচে আছি। শামসুল আলম কয়, ভাই আপনারে আইজ একটা কথা কইবো। আমি কইলাম নামাজ পইড়া বইলেন। শামসুল আলম কয়, নামাজ পরে পড়বো। আগে কথা শুনেন। আমি কইলাম, চলেন।
বারান্দায় আমি আর শামসুল আলম। সিগারেট ফুঁকতাছি। শামসুল আলম কয়, ভাই বিশ্বাস করবেন কি না জানিনা। আমি মাত্র দেড় হাজার টাকা দিয়া গুটি ব্যবসা শুরু করেছিলাম। আইজ আমার কক্সবাজারে বাড়ি আছে, টেকনাফে বাড়ি আছে। বউ আছে দুইটা। একটা কক্সবাজার আরেকটা আমার পুরান বাড়ি টেকনাফে থাকে। আমার মেয়েরে আমি কক্সবাজার থেকে বিমানে করে ঢাকায় আনি ঈদের শপিং কইরা দিতে। আমি কিন্তু ইংরেজি পড়তে জানি না। আমার মাইয়া নাইনে পড়ে সে সব পড়তে পারে। আমার মাইয়া'ই টিকেটের ইংরেজি পইড়া আমারে দেখাইয়া দে বিমান কোনটা।
জায়গা কিনছি দুইকানি। ধার দেনা ছিলো প্রায় আড়াই লাখ তাও শোধ করছি। অস্ত্র কিনছি দুইটা। একদিন মা আইসা কয়, তোর এখন এতো টাকা! আল্লাহ যদি আমার হজ্বটা নসিবে রাখতো! মা'রে কইলাম, মা আমারে একটা মাস সময় দাও আমি হজ্বের টাকা জোগাড় করি।
পরের সাপ্তাহে এক লাখ গুটি নিয়া আল্লাহর নামে রাওনা দিলাম টেকনাফ থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে। মনে মনে নিয়ত করলাম এই গুটি বেইচ্ছা যা টাকা পাবো তার সবটুকু আমার মা'র হজ্বের জন্য ব্যয় করবো। আমার সাথে আরো চারজন ছিলো। তারও গুটি ব্যবসায়ী। আমরা পাঁচজন পাঁচ গাড়িতে উঠলাম। কিন্তু কি আল্লাহর রহমত চাইরজনই ধরা খাইছে। কিন্তু আমি ধরা খাইনাই। অথচ আমার গোটা গাড়ির সবাইকে চেক করলো আমারে চেক করে নাই। আমারে চেক করতে গেছিলো এমন সময় পেছন থেকে একটা ট্রাক এসে ধাক্কা মারে গাড়িতে। এবং এইডা লইয়া ট্রাক ড্রাইভার আর বাস ড্রাইভারের লগে লাইগলো ক্যাচাল আর ক্যাচাল থামাইতে পুলিশ ব্যস্ত হইয়া নাইমা গেলো। আর আমি পার পাইয়া গেলাম।
আল্লাহ'রে না ডাকলে কোনদিন কামিয়াব হওয়া যাবে না। আপনি চুরি করেন ডাকাতি করেন গুটি বেঁচেন সমস্যা নাই কিন্তু নামাজ না পড়লে সমস্যা আছে। নামাজই হইলো সব। যার নামাজ নাই তার জন্য বেহেস্তও নাই। বুঝলেন ভাই? আমি কইলাম, বাঙলায়তো কইলেন না বুইঝা উপায় আছে!
আইচ্ছা ভাই, আপনার মা'কে হজ্ব করাইছিলেন?
শামসুল আলম কয়, হ্যাঁ আমার মা'কে হজ্ব করাইছি।
শামসুল আলম দুই হাজার গুটি লই ধরা খাইছে আকবর শাহ থানায়। এখন সে কর্ণফুলী চার নং ওয়ার্ডে প্রায় এগারো মাস ধরে হাজত কাটছে।
২| ২৭ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৭ সকাল ৯:২৯
খায়রুল আহসান বলেছেন: গুটির পয়সায় মায়ের হজ্জ্ব- কবুলের মালিক আল্লাহ!
৩| ২৭ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৭ দুপুর ১২:১৮
কি করি আজ ভেবে না পাই বলেছেন: অহনোতো কৈলেন্না কি কেস?
আপ্নের চেহারাতেও গুটিখোর একটা ভাব আছে...............পুরাই
২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৭ দুপুর ১:১২
জিপসি রুদ্র বলেছেন: ৫৭ (২) ধারায় ।
৪| ২৭ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৭ দুপুর ২:২৮
রাজীব নুর বলেছেন: মন্দ নয়।
৫| ২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৭ দুপুর ১২:২১
টারজান০০০০৭ বলেছেন: @কি করি আজ ভেবে না পাই ! হেতে জিপসি মানুষ, বাড়িত বেশিদিন থাকিতে পারে না বোধহয় ! মন উদাস হইলে জেলখানায় ভ্রমণ কইরা আসে ! উনি আবার ইসলামের সংস্কারকও ! ঐখানে গিয়া উনি ইসলামের সংস্কার কইরাও আসেন !
৬| ২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৭ সকাল ৭:৩৩
কি করি আজ ভেবে না পাই বলেছেন: হেনো কুনু কেস নাই ৫৭ধারায় পড়েনা,ঝাইড়া কাশেন
৭| ২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৭ সকাল ৭:৩৭
কি করি আজ ভেবে না পাই বলেছেন: @টারজান০০০০৭
হ'রে ভাই,তাইতো দেখতাছি!!
দোস্তিও তার সব গুটি ব্যবসায়িগো লগে,সবাই আবার হুজুর!!!
আশংকা করি আবার না অসৎ সঙ্গে পৈড়া গুটি ধৈরালচে।পোষ্ট সব কিরাম জানি লাগে।জিপি,আর-সেভেন না............ডাইরেক্ট চম্পার ঘেরান পাই.....................আফসোস
©somewhere in net ltd.
১| ২৭ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৭ রাত ৩:৩৮
ঠাকুরমাহমুদ বলেছেন: ভাই জিপসি রুদ্র,
আপনার লেখা “জেলখানার জিন্দেগী” আরো একটি পর্ব পড়েছি এবং ভালো লেগেছে, আমার অনুরোধ আমাদের জন্য পড়তে সুবিধা হবে যদি “জেলখানার জিন্দেগী” প্রতিটি’র পর্ব ১, ২, ৩, ক্রমানুসারে এভাবে লিখেন । জেলখানার জিন্দেগী আরো ঘটনা লিখবেন অপেক্ষায় রইলাম । ধন্যবাদ ।।