নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
লিখি, ছবি তুলি আর সিনেমা বানাই ।
ছেলেটার নাম মোহাম্মদ আলী হোসেন । বাড়ি টেকনাফ কলেজ রোড । কর্ণফুলী চার নাম্বার ওয়ার্ডের ইনচার্জ । ইনচার্জ মানে হইলো, মেটের সেকেন্ড ইন কমান্ড । ওয়ার্ডের সবাই থাকে আলী ভাই কখনো কখনো আলী মেট বইলা ডাকে । বয়স আনুমানিক আটাশ ত্রিশ হবে । উচ্চতা পাঁচ ফুট তিন চার মতন । ওজন ৫০ থেকে ৫৫ কেজির উপরে হবে না ।
দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে । আসরের নামাজের পর ফজায়েল আমল , মোকসুদুল মোমিনিন এবং আরো অন্যান্য ধর্মীয় বই পুস্তক পড়ে । মাগরিবের নামাজের পর ওয়ার্ডের অতি ধার্মিকদের লইয়া ফজায়েল আমল অথবা মোকসুদুল মোমিনিনের লেখাগুলা পড়ে পড়ে শুনায় এবং তার বিশদ ব্যাখ্যা বুঝাইয়া দেয় । তারপর খুব লম্বা একটা মোনাজাত ধরে । মোনাজাতের সময় দশ মিনিটের কম হয় না । মোনাজাত করার সময় সে চিল্লাইয়া চিল্লাইয়া কাঁদে তবে তার চোখে আমি পানি দেখি নাই । তার কান্না মিশ্রিত মোনাজাত অন্যদের চোখে ঠিকই পানি আইনা দেয়
জেলখানায় নাশকতা মামলায় যতো জামাত শিবির , বিএনপি এবং হেফাজতিদের নেতা কর্মী আছে তাদের সকলের সাথেই তার খুবই ভালো সম্পর্ক । তার সুস্পষ্ট বক্তব্য হচ্ছে, আওয়ামীলীগ ইসলামের শত্রু বলে আজ জামাত শিবির এবং হেফাজতিদের মিথ্যা মামলা দিয়ে জেলখানায় পাঠাইছে । পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ছাড়া জেলখানায় তার কাজ হইলো , কোন কোন ওয়ার্ডে জামাত শিবির এবং হেফাজতিদের নেতা কর্মী আছে তাদের খোঁজ খবর নেওয়া এবং তাদেরকে জেলখানার ভিতর কোন সাহায্য সহযোগিতা করা যায় কি না তার তদবির করা ।
আলী হোসেন মনে করে , আওয়ামীলীগ রাজাকার যুদ্ধাপরাধীদের কথা বলে আসলে দেশের আলেম সমাজের মাথা কেটে দিচ্ছে । দেশকে আলেম শূন্য করে দিচ্ছে । ইসলামকে ধবংস করার জন্য যুগে যুগে নমরুদ ফেরাউনদের জন্ম হয়েছিলো আর এই বাঙলাদেশে আওয়ামীলীগই হইলো নমরুদ ফেরাউনের উত্তরসূরি । যারা আওয়ামীলীগ করবে হাশরের ময়দানে তাদেরকে জাহান্নামের আগুনে পুড়তে হবে ।
আমি একদিন তাকে ডেকে জিজ্ঞাস করলাম , আলী ভাই আপনার মামলা কি ? সে বললো , সে ট্রাকের হেল্পারি করতো । ক্লাস সেভেন পর্যন্ত পড়া লেখা করেছে । অভাব অনটনে বেশিদূর পড়তে পারে নাই । সে ট্রাকের জোগানে ইয়াবা লইয়া টাকায় পৌছাইয়া দিতো । প্রতি পিসে এক টাকা তার । একদিন টেকনাফ থেকে কাঠ বোঝাই কইরা ট্রাক নিয়া ঢাকায় যাচ্ছিলো । আর ট্রাকের জোগানে ছিলো এক লাখ পিস ইয়াবা । সোর্সের মারফত পুলিশ খবর পাইয়া পটিয়া থানা পুলিশ ট্রাক আটকায় । এবং এক লাখ পিস ইয়াবা ট্রাকের জোগানে পায় । আর পটিয়া থানা পুলিশ তাকে মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রন আইনে মামলা দেয় । আর সেই মামলায় তার পনেরো বছর সাজা হয়েছে ।
আমি এই কথা শুনে তারে জিগাইলাম, আলী ভাই আপনি কি জানেন হারামখোরের শরীর জান্নাতে প্রবেশ করিবে না ? আলী ভাই কয় , জানি । তাইলে আপনি হারাম ব্যবসা করতেছিলেন কেনো ? ভাই আল্লাহর কাছে মাফ চাইতেছি আল্লাহ মাফ কইরা দিবে । বুঝলাম আল্লাহ মাফ কইরা দিবে । এই যে আপনি লোকজনরে বইলা বেড়াইতাছেন আওয়ামীলীগ করলে জাহান্নামের আগুনে পুড়তে হবে তা কি ঠিক হইতাছে । সে কয় , অবশ্যই ঠিক হচ্ছে । আওয়ামীলীগ ইসলামের শত্রু আওয়ামীলীগ করলে জাহান্নাম নিশ্চিত ।
আমি আর তার লগে কথা বাড়াইলাম না । আমি একটা ধারনা পাইলাম , মোহাম্মদ আলী হোসেন নিজের অপরাধ ঢাকার জন্য ধর্মকে ঢাল হিসাবে ব্যবহার করছে । তার কাছে ধর্ম বড় নয় তার কাছে ব্যবসা বড় । তাই সে ধর্মকে ঢাল হিসাবে ধইরা নিজের অপরাধ আড়াল করছে । আর এতে মানুষ বুঝতেই পারছে না , আলীর মতো পাঁচ ওয়াক্ত একজন নামাজি যে ধর্ম ছাড়া চলেই না সে কিভাবে অপরাধ করতে পারে !
আমি এইটা নিশ্চিত , যারা নিজের অপরাধ ঢাকতে ধর্মকে ঢাল হিসাবে ব্যবহার করে তারা ধার্মিক নয় তারা ভন্ড । মোহাম্মদ আলী হোসেনও ভন্ড ।
মোহাম্মদ আলী হোসেনদের মতো লোক এখন এই বাঙলাদেশে যত্রতত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে ।
©somewhere in net ltd.
১| ২০ শে অক্টোবর, ২০১৭ দুপুর ১২:৩২
রাজীব নুর বলেছেন: আপনার 'জেলখানার জিন্দেগী'র আমি নিয়মিত পাঠক।
পরের পর্বের অপেক্ষায় থাকি নিয়মিত।