নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

লিখি, ছবি তুলি আর সিনেমা বানাই ।

জিপসি রুদ্র

লিখি, ছবি তুলি আর সিনেমা বানাই ।

জিপসি রুদ্র › বিস্তারিত পোস্টঃ

তানিয়া ও জিনিয়ার গল্প ।

২৫ শে অক্টোবর, ২০১৭ বিকাল ৪:৫৩

।।ছোটগল্প।।

তারা দুই বান্ধবী । মফস্বলের একটি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে শহরে এসেছে অনার্সে পড়তে । থাকে মেসে । তারা কয়েকজন কলেজ ইউনিভার্সিটি পড়ুয়া মেয়ে মিলে একটা বিল্ডিংযে ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়েছে । সেখানের একটা রুমে তানিয়া আর জিনিয়া থাকে ।

তারা দুইজনই খুবই সংস্কৃতিমনা । মফস্বলে থাকতে তারা টেলিভিশনে নাটক সিনেমা দেখতো আর রেডিওতে গান শুনতো । টেলিভিশনে শাবানা আর শাবনুরের অভিনয় দেখে তাদের ভিতর অভিনয়ের বাসনা জাগে । গ্রামেতো আর অভিনয়ের তেমন কোন সুযোগ সুবিধা নাই তাই তারা শহরে এসে অভিনয়ের ব্যাপারে খোঁজ খবর নেয় ।

তানিয়া খুবই শান্ত প্রকৃতির মেয়ে । আর জিনিয়া একটু চটপটে স্বভাবের । একদিন তারা দুইজন শিল্পকলা একাডেমিতে এসে অভিনয়ের ব্যাপারে ধারনা নিয়ে যায় । তারা জানতে পারে , শিল্পকলায় বিভিন্ন থিয়েটার গ্রুপ আছে যারা অভিনয় শেখায় । সেখানে ভর্তি হলেই তারা অভিনয় শিখতে পারবে এবং তারাও আস্তে আস্তে শাবানা শাবনুরের মতো দেশ কাঁপানো অভিনয় শিল্পী হয়ে উঠতে পারবে ।

জিনিয়া বুঝতে পারে , এইভাবে অভিনয় শিখে অভিনয় শিল্পী হতে হতে তার জীবন শেষ হয়ে গেলেও তাকে কেউই চিনবে না শুধুমাত্র শিল্পকলায় আসা থিয়েটারপ্রেমীরা ছাড়া । তাকে আরো কোন সহজ এবং সরল পথ খুঁজে বের করতে হবে । যাতে সে তাড়াতাড়ি সিনেমার নায়িক হয়ে উঠতে পারে ।
তানিয়া শিল্পকলার একটা থিয়েটার গ্রুপের ফরম কিনে তাদের সদস্য হয় । আর জিনিয়া সহজ ও সরল পথ খুঁজতে থাকে । তানিয়া থিয়েটারে ভর্তি হওয়ার পর থাকে একটা নাটকের স্ক্রিপ্ট দেওয়া হয় । সেখানে তার চরিত্রটি হচ্ছে, কেন্দ্রীয় চরিত্রের ছোট বোন । তাকে বলা হয় , নাটকের প্রত্যেকটি চরিত্র এবং সংলাপ খুব ভালো ভাবে পড়তে এবং বুঝতে । আর উচ্চারণের ব্যাপারটিও যেনো খুবই শুদ্ধ এবং সাবলীল হয় ।

প্রত্যেকদিন তানিয়া এবং জিনিয়া কলেজের ক্লাস শেষ করে রুমে আসে । রুমের প্রয়োজনীয় কাজ সেরে জিনিয়া ঘুমিয়ে পড়ে আর তানিয়া স্ক্রিপ্ট মুখস্থ করতে থাকে আর আয়নার সামনে প্র্যাকটিস করে । আর শুক্রবারে একদিন শিল্পকলায় যায় এবং সেখানে গ্রুপের সদস্যদের সাথে খুবই মনোযোগ দিয়ে রিহার্সেল করে । তানিয়া যখন রিহার্সেল করে তখন জিনিয়া শিল্পকলার বাইরে ঘুরতে থাকে । আর সে বুঝতে চেষ্টা করে শিল্পকলার পরিবেশ পরিস্থিতি ।

জিনিয়া দেখতে পায় শিল্পকলার বাইরে ছেলেপেলেদের ছোট ছোট বেশ কয়েকটি গ্রুপ আছে । তাদের কেউ কেউ বন্ধু বান্ধব নিয়ে আড্ডা মারছে , কেউ ফুটপাতের পাশে বসে বিড়ি গাঁজা টানছে , আবার কেউ গোল হয়ে বসে গান বাজনা করছে ।

জিনিয়া চিন্তা করলো , তাকে এমন একটি গ্রুপ খুঁজে বের করতে হবে যে গ্রুপে মিশে গেলে তার সাথে মিডিয়ার কারো না কারো সাথে পরিচয় হবে । যে গ্রুপটি গান বাজনা করছে তাদের একজনকে গিয়ে বলে, ভাইয়া আমি কি বসতে পারি আপনাদের সাথে? সে বলে, অবশ্যই । বসে পড়ুন আর গান শুনতে থাকুন । জিনিয়া সেদিন তানিয়ার রিহার্সেল শেষ না হওয়া পর্যন্ত গান বাজনা শুনেছে । আর দুই একটান বিড়ি টেনেছে । জিনিয়া জানে বিড়ি খুব দ্রুত গ্রুপের মধ্যে সম্পর্ক তৈরি করতে সাহায্য করে ।

পরের সাপ্তাহেও তানিয়া রিহার্সেল করতে চলে গেলো আর জিনিয়া রাস্তায় ফুটপাতে বসে পুরনো গ্রুপের সাথে বসে আড্ডা দিচ্ছে । গ্রুপের মধ্যে একজন ছেলে আসছে যার ক্যামেরা আছে । সে গ্রুপের আড্ডার ছবি তুলছে । আর সে ছবি তোলার পর বসেছে জিনিয়ার পাশে । জিনিয়াকে ছবি কেমন হয়েছে তা ক্যামারার মনিটরে দেখাচ্ছে । জিনিয়া নিজের ছবি ক্যামেরায় দেখে বেশ মুগ্ধ । আসলেই সে অনেক সুন্দর । সে ছেলেটিকে বললো, ভাইয়া আপনি কি ছবি গুলো আমার ফেইসবুকে ইনবক্স করতে পারবেন? ছেলেটি বললো , অবশ্যই ।

ছেলেটি জিনিয়ার ফেইসবুক আইডিটি নিয়ে ফ্রেন্ড রিকুয়েষ্ট পাঠিয়ে দিলো । আর বললো, ফোন নাম্বারটি দিতে । জিনিয়া ছেলেটিকে ফোন নাম্বার দিলো । আর ছেলেটি ফোন নাম্বার সেইভ করে একটা মিস কল দিলো । জিনিয়া জিজ্ঞাস করলো, ভাইয়া আপনার নামটা , ছেলেটি বললো, তানভীর । জিনিয়া নাম্বারটা সেভ করে বলল, ভাইয়া আপনি ছবিগুলো ইনবক্স করে আমাকে একটা ফোন দিয়েন । ছেলেটি বললো , অবশ্যই ।

তানিয়া রিহার্সেল থেকে বের হয়ে জিনিয়ার কাছে এসে বললো , এই চল আমার রিহার্সেল শেষ । আমাকে তোকে নিয়ে ফটোকপির দোকানে যেতে হবে । কিছু কাজ আছে । জিনিয়া গ্রুপের সবাইকে টা টা বলে উঠে গেলো ।

জিনিয়া জিজ্ঞাস করলো তানিয়াকে, এই রিহার্সেল কেমন চলছে । তানিয়া বললো, বেশ কঠিনরে । মনে করেছিলাম অভিনয় খুবই সহজ এবং সরল কিন্তু এখন মনে হচ্ছে । অভিনয় আসলে বিশাল একটা ব্যাপার । থিয়েটারে না ঢুকলে বুঝতেই পারতাম না ।

জিনিয়া বলে , আজ এতোদিন হয়ে গেলো তোর নাটক আসলে মঞ্চস্থ হবে কবে ? জিনিয়া মুখ ভেঙচিয়ে বলে , এতো সহজ অভিনয় ! আগে স্ক্রিপ্ট মুখস্থ করো তারপর ডায়লগ ডেলিভারি প্র্যাকটিস করো তারপর এক্সপ্রেশন আরো কতো কি ! জিনিয়া বলে, তো নাটক মঞ্চস্থ হবে কবে ? তানিয়া বলে, সে অনেক দেরি । আমার কথা বাদ দে তোর কথা বল । জিনিয়া বলে , আমি শর্টকার্ট লাইন খুঁজতাছি । তানিয়া বলে, পাওয়া গেছে তোর শর্টকার্ট লাইন । জিনিয়া বলে, হু ।
রাতের বেলায় জিনিয়ার মোবাইলটা কেঁপে উঠলো । স্ক্রিনে নাম দেখে তানভীর । সে ফোনটা ধরে বলে, হ্যালো । ওপাশ থেকে তানভীর বলে , হ্যালো কিউটি বেবি তোমার ছবি ইনবক্স করে দিয়েছি । দেখো তারপর আমায় জানাও । ফোনের লাইন কেটে জিনিয়া ফেইসবুক ইনবক্স চেক করে । দেখে ছবিগুলোতে থাকে খুবই সুন্দর লাগছে । সে নিজের ছবি দেখে নিজেই মুগ্ধ । সাথে সাথে ডাউনলোড করে সে ফেইসবুকে আপলোড দিয়ে দিলো । ছবির ক্যাপশন লিখলো , কিউটি বেবি !

ফোন দিলো তানভীরকে । তানভীর ফোন রিসিভ করেই বললো, এতো দেরি কেনো ? জিনিয়া বললো, ভাইয়া ফেইসবুকে ছবি আপলোড করে তারপর আপনাকে ফোন দিয়েছি । তানভীর বললো, নো ভাইয়া আর নো আপনি । অনলি তানভীর আর অনলি তুমি ডাকবে । জিনিয়া বললো , ওহ তাই ! তানভীর বললো, হুম তাই’ই । তানভীর বললো, কাল তুমি ফ্রি আছো ? জিনিয়া বললো , হ্যাঁ ফ্রি আছি । সে বললো , কাল তুমি সমুদ্র পাড়ে এসো তোমার কিছু ফ্যাশন ফটোগ্রাফি করে দিবো । জিনিয়া বললো , ওহ রিয়েলি ! আমি খুবই এক্সাইটেট ! তানভীর বললো, এর চাইতে আরো বেশি এক্সাইটমেন্ট অপেক্ষা করছে তোমার জন্য যদি আমার সাথে ইজি গোয়িং একটা সম্পর্ক তৈরি করো । জিনিয়া বললো , তানভীর আমি তোমার সাথে খুবই ইজি । নো প্রবলেম ।

কথা শেষ হওয়ার পর , জিনিয়া ফেইসবুকে ঢুকে দেখলো এক ঘন্টায় তার লাইক পড়েছে তিনশো চুয়াল্লিশটা ! কমেন্টস একশো চারটা ! ইনবক্সে মেসেজ সাতান্নটা ! জিনিয়া পুরাই শকড ! যার আগে লাইকের সংখ্যা থাকতো সত্তর থেকে আশিটা সেখানে এতো লাইক এতো কমেন্টস এতো ইনবক্স ! জিনিয়া ভাবতেই পারছে না !
জিনিয়াকে অনেকেই ইনবক্সে অফার করেছে । মিউজিক ভিডিও, নাটক এবং শর্টফিল্মে অভিনয় করার প্রস্তাবও এসেছে দুই একটা ! জিনিয়া বুঝতে পারল , সে লাইন পেয়ে গেছে ! খুব শিগ্রই তার স্বপ্ন তার হাতে ধরা দিবে !
সকাল বেলা কলেজে যাওয়ার সময় জিনিয়া তানিয়াকে তার এই ঘটনা জানালো । তানিয়া বললো , এতোই সহজ অভিনয় ! ডিএসএলআর ক্যামেরায় ছবি তুলে ফেইসবুকে পোষ্ট করলেই অভিনয় শিল্পী হওয়া যায় ! জিনিয়া বললো , তাইতো মনে হচ্ছে !

জিনিয়া দুই একটা ইনবক্সের টেক্সট তানিয়াকে দেখালো । তানিয়া বললো , আমি শুনেছি এইসব শরীর ভোগের টোপ । মিউজিক ভিডিও, নাটক আর শর্টফিল্মে অভিনয়ের সুযোগ দেওয়ার নাম করে শরীর ভোগ করে । জিনিয়া বললো , সে আমি জানি । আমার টার্গেট অভিনয়ের মাধ্যমে নিজের খ্যাতি এবং টাকা আয় করা । সেখানে আমার শরীর একটা টোপ তাদের জন্য । তানিয়া বললো , তুই আর ভালো হইলি না ! জিনিয়া বললো তানিয়াকে , তুই ভালো হয়ে মুড়ি খা আর আমি খারাপ হয়ে খ্যাতি আর টাকা কামায় !

জিনিয়া তার সবচাইতে ভালো কাপড়টি পড়ে সমুদ্র পাড়ে গেলো । সেখানে তানভীর আর তার এক বন্ধু রাতুল জিনিয়ার জন্য অপেক্ষা করছে । জিনিয়ার সাথে তানভীর রাতুলের পরিচয় করায় দিলো । বললো, রাতুল মিউজিক ভিডিও , নাটক এবং শর্টফিল্ম বানায় । সে জিনিয়াকে দেখতে আসছে । জিনিয়া রাতুলের সাথে বেশ হাঁসি খুশি হয়ে পরিচিত হল । ছবি তোলার পর তারা খাওয়া দাওয়া করলো । খাওয়া দাওয়ার এক পর্যায়ে তানভীর বললো, রাতুলের বাসা খালি আছে । আজ রাত জিনিয়া রাতুলের বাসায় থাকতে পারবে কি না । জিনিয়া বললো , রাতে থাকা তার জন্য কোন সমস্যা না তবে কোন কাজ ছাড়া রাতে থেকে কি ফায়দা ? রাতুল বললো, তার স্ক্রিপ্ট নিয়ে রাতে জিনিয়ার সাথে কথা বলতে চায় । সাথে তানভীরও থাকবে । আরও একটি মেয়ে থাকবে তাদের সাথে । গল্প হবে আড্ডা হবে নেশাও হবে । জিনিয়া বললো , বাসা যদি সিকিউর হয় তাইলে সে রাতে থাকতে পারবে । সমস্যা নাই ।

রাতুলের বাসাটা বেশ সুন্দর । বুঝায় যায় পয়সাওয়ালা বাপের পোলা । দুই একটা মিউজিক ভিডিও বানাইছে । এখন একটা শর্টফিল্ম বানাবে । সেই শর্টফিল্মের একটা চরিত্র জিনিয়াকে দিবে । জিনিয়াও জানে এইজন্যে তাকে রাতুলের সাথে শুইতে হবে । কারো সাথে ফায়দা হাসিলের জন্য শোয়া জিনিয়ার জন্য কোন ব্যাপারই না !

রাতুলের বাসায় রাত কাটিয়ে সকালে ফিরার সময় রাতুলকে বলল জিনিয়া তার কিছু টাকা লাগবে , রাতুল জিজ্ঞাস করলো , কতো ? জিনিয়া বললো , হাজার তিনেক । রাতুল জিনিয়াকে তিন হাজার টাকা দিয়ে বলে , বেবি ডাকলেই এসো । এই লাইনে প্রচুর টাকা । জিনিয়া বলে , গোপনীয়তা মেনটেইন করলে অবশ্যই যখনই ডাকবে তখনই পাবে । রাতুল বলল, মেয়েদের গোপনীয়তা আমি রক্ষা করি ।
জিনিয়া সকালে বাসায় আসার সময় তানিয়ার জন্য একটা বডিস্প্রে একটা ঘড়ি আর একটা বার্গার নিয়ে আসলো । তানিয়া বলল, এইসব কোথা থেকে ? জিনিয়া বললো , তুই আমার জানে জিগার দোস্ত । মার্কেটে গেছিলাম আর তোর জন্য নিয়ে আসলাম । তানিয়া ঘড়ি , বডিস্প্রে উপহার পেয়ে খুবই খুশি !

বার্গার খেতে খেতে তানিয়া জিজ্ঞাস করে, রাতে কই ছিলি ? জিনিয়া বলে , একজন উঠতি ডিরেক্টরের সাথে । এই কথা শুনে তানিয়ার খাওয়া বন্ধ হয়ে গেলো ! জিনিয়া বলে , বার্গার খা । খুবই ভালো বার্গার কেএফসি’র বার্গার । তানিয়া বলে , তুই ডিরেক্টরের সাথে সেক্স করেছিস ? জিনিয়া বলে , হ্যাঁ । শুধু সেক্স না দোস্ত । মদ গাঁজাও খেয়েছি । কালকের রাতটা বলতে পারিস আমার এই বয়সের সেরা রাত ! তানিয়া বলে , তুই আর ভালো হইলি না ! জিনিয়া বলে , তুই ভালো হয়ে আপাতত বার্গার খা আর তারপর পানি খাইস ! আমি বাথরুমে ন্যাংটো হয়ে গোসল করবো অনেকক্ষণ । এর মধ্যে তুই আমার জন্য এককাপ গরম গরম চা বানাই রাখবি । আমি যেনো গোসল সেরে আরামচে চা খাইতে পারি !

তানিয়ার আজকে প্র্যাকটিস আছে । প্র্যাকটিসটা খুবই গুরুত্বপূর্ন । আগামী সাপ্তাহে শিল্পকলার হল রুমে তাদের নাটক মঞ্চস্থ হবে । তাই সকলের চরিত্র ঠিকঠাক ভাবে ফুটিয়ে তুলতে হবে । যারা যারা চরিত্র ঠিকঠাক তুলতে পারবে না । তারা তারা বাদও পড়তে পারে । তানিয়া চায় না সে বাদ পড়ুক । তাকে অভিনয় শিল্পী হতেই হবে । সে খুব মনোযোগ দিয়ে রিহার্সেল করছে । তার ধ্যানজ্ঞান আপাতত শুধুই অভিনয় ।

আর বাইরে যথারীতি জিনিয়া ফুটফাতে বসে আড্ডা দিচ্ছে । এমন সময় একটা ফোন আসলো , হ্যালো বলতেই ওপাশ থেকে পরিচয় দিলো , রাতুল । আগামী পরশু শুটিং আছে কক্সবাজার দুই দিন থাকতে হবে । জিনিয়া কি যেতে পারবে ? জিনিয়া বললো , যেতে পারবে । তবে কতটাকা দিবে তাকে? রাতুল বললো , পঁচিশ হাজার থেকে ত্রিশ হাজার দিবে । সে বললো , সে রাজি তবে তাকে হাফ এডভান্স করতে হবে । বাকিটা কাজ শেষে । রাতুল বলল, সে কথা বলে জানাবে ।

তানিয়া রিহার্সেল শেষ করে বের হয়ে জিনিয়ার কাছে এসে বসলো । জিনিয়া জিজ্ঞাস করলো , কিরে তোর রিহার্সেল কেমন হলো ? তানিয়া বললো , বেশ ভালো হয়েছে । তো তোর মন খারাপ কেনো ? তানিয়া বলল , ফ্যামেলিতে টাকা পয়সা নিয়ে সমস্যা চলছে । এই মাসে টাকা পাঠাতে পারবে না । মেস ভাড়া খাওয়া খরচ কলেজের যাতায়ত কিভাবে ম্যানেজ করবে তা বুঝতে পারছি না ! জিনিয়া বললো , নো প্রবলেম বেবি ! মে হু না !

তানিয়া বললো , মে হু না মানে কি ! তোর ফ্যামেলির খবরতো আমি জানিই ! তোর খরচ চালাইতে হিমশিম খায় ! তুই আমার খরচ চালাইবি কেমনে ! জিনিয়া বলে , আমিতো আর তোর মতো ভোদাই না ! আমি জীবনকে চালাইতে জানি । তুই টেনশন নিস না ! আমার একটা কাজের অফার আছে । কাজটা হলে প্রায় পচিশ হাজার মতো টাকা পাবো । আর এতেই তোর আর আমার আরামচে বেশ কয়েকমাস কেটে যাবে !

তানিয়া বলে , কি বলিস তুই ! আমি এতো দিন অভিনয় শিখে একটা নাটক মঞ্চস্থ করতে পারছি না ! আর তুই শিল্পকলায় আড্ডা দিয়ে গাঁজা বিড়ি খেয়েই অভিনয় করবি ! জিনিয়া বলে , একেই বলে দোস্ত অভিনয় শিল্পী হওয়ার শর্টকার্ট রাস্তা !
রাতে জিনিয়ার নাম্বারে একটা ম্যাসেজ আসে । জিনিয়া ওপেন করে দেখে বিকাশ করা হয়েছে তার নাম্বারে পনেরো হাজার টাকা । জিনিয়ার চোখ কপালে উঠে গেছে । বিশ্বাসই হচ্ছে না ! এর মধ্যে রাতুলের ফোন আসে । জিনিয়া ফোন রিসিভ করে হ্যালো বলতেই ওপাশ থেকে রাতুল জিজ্ঞাস করে , টাকা আসছে কি না ? জিনিয়া বলে । হ্যাঁ টাকা আসছে । রাতুল বলে , কাল সকাল দশটায় শিল্পকলায় অপেক্ষা করতে সেখান থেকে একজন লোক তাকে পিক করবে । যে পিক করবে সে প্রডিউসার । প্রডিউসারের নাম্বার তাকে টেক্সট করে দেওয়া হয়েছে । জিনিয়া বলে , নো প্রবলেম । সে উপস্থিত থাকবে ।

সকালে যাওয়ার আগে বাসার নিচের দোকান থেকে ক্যাশ আউট করে পাঁচ হাজার টাকা তানিয়াকে দিয়ে জিনিয়া বলে , আমি দুই তিনদিন কক্সবাজার থাকবো । তুই টেনশন করিস না । এই টাকা দিয়ে তুই চল । আমি কক্সবাজার থেকে এসে আমরা আর এই মেসে থাকবো না । আমি আর তুই একটা আলাদা ফ্ল্যাট নিবো । সেখানে তুই আর আমি থাকবো ।

তানিয়া বলে , কি বলিস তুই ! এতো টাকা পাবো কই আমি ! জিনিয়া বলে , তোর টাকা পাইতে হবে না ! টাকা পাবো আমি । তুই শুধু খাবি পড়বি আর অভিনয় শিখবি ! আর টেনশন নিস না ! তুই একটা বাসা খোঁজ তিন রুমের । দুই বাথ ড্রয়িং ডাইনিং আলাদা এবং অবশ্যই যেনো বেলকনি থাকে ।
তানিয়া জিনিয়াকে বলে , তুই আর ভালো হইলি না ! জিনিয়া তানিয়াকে বলে , তুই ভালো হয় হা পিত্তেস কর আর আমি আমার মতো জীবন যাপন করে টাকা আর খ্যাতি কামাই !

তানিয়ার আজ নাটক মঞ্চস্থ হবে । কিন্তু তার আজ মনটা খুবই খারাপ । কারণ জিনিয়া দেখতে পারছে না তার অভিনয় । জিনিয়া দেখলে তার খুবই ভালো লাগতো । রাতের বেলায় তার সাথে অভিনয় নিয়ে আলাপ আলোচনা করা যেতো । কিন্তু সে গেছে কক্সবাজার । তার বেশ রাগ লাগছে । মাথা থেকে জিনিয়ার অনুপস্থিতি তানিয়া কোন ভাবেই নামাতে পারছে না । এর মধ্যে বেল বেজে উঠলো । মানে একটু পরেই সবাইকে মঞ্চে উঠে যেতে হবে । নাটক শুরু হবে । তানিয়া চেষ্টা করছে , জিনিয়ার চিন্তা মাথা থেকে বাদ দেওয়ার কিন্তু সে কোন ভাবেই বাদ দিতে পারছে না । সে ভাবছে , তার অভিনয় কেমন হয়েছে তা কাকে সে জিজ্ঞাস করবে !

জিনিয়ার শুটিং শুরু হয়েছে । পরিচালক তাকে কি কি করতে হবে সব বুঝিয়ে দিয়েছে রাতে । সাথে প্রডিউসারও ছিলো । পরিচালক এবং প্রডিউসার জিনিয়াকে বলেছে , অভিনয় হলো ডিরেক্টর নির্ভর একটি আর্ট । যে আর্টিষ্ট ডিরেক্টরের সাথে খুব সহজ সুন্দর এবং ইজি গোয়িং সম্পর্ক তৈরি করতে পারবে । সে আর্টিষ্ট খুব দ্রুত মিডিয়ায় উপরে উঠতে পারবে । আর মিডিয়ায় উপরে উঠতে হলে পরিচালক এবং প্রডিউসারের সাথে খুব সহজ সুন্দর এবং ইজি গোয়িং সম্পর্ক রাখতে হয় ।

জিনিয়া মিডিয়া কি সেটি বুঝে যায় । আর সে ডিরেক্টর এবং প্রডিউসারের সাথে খুবই ভালো সম্পর্ক মেইন্টেইন মানে কি তাও জেনে যায় !
শুটিং শেষে প্রডিউসার জিনিয়াকে বলেছে , তার আচার আচরন এবং কাজে সে খুবই সুন্তষ্ট । আগামী মাসে তার একটা টেলিফিল্মের জন্য সে জিনিয়াকে ব্যাংকক নিয়ে যেতে চায় । জিনিয়া যেতে পারবে কি না ? জিনিয়া প্রডিউসারের কাছে জানতে চায় , কয়দিনের জন্য এবং কতো টাকা দিবে ? প্রডিউসার জিনিয়াকে বলে , পনেরো দিনের জন্য এবং এর জন্য এক লাখ টাকা পেমেন্ট দিবে । জিনিয়া বলে সে যেতে পারবে এবং তার জন্যে ফিফটি পার্সেন্ট টাকা এডভান্স দিতে হবে নগদ । আর ফিফটি পার্সেন্ট কাজ শেষে । প্রডিউসার বলে , নো প্রবলেম ।

জিনিয়া কক্সবাজার থেকে প্রডিউসারের সাথে ফ্লাইটে ফিরলো । প্রডিউসার তাকে বাসায় নামিয়ে দিতে ছেয়েছিলো । কিন্তু জিনিয়া বলেছে , সে একাই বাসায় যেতে পারবে । জিনিয়ার এখন স্বপ্ন পূরণ হচ্ছে । সে থিয়েটারে অভিনয় না শিখেও এখন অভিনয় করতে পারছে এবং টাকা কামাতে পারছে । তার শর্টকার্ট ফর্মুলা বেশ সুন্দর কাজে লেগেছে ।
জিনিয়া মার্কেটে গিয়ে তানিয়ার জন্য তিনটা জামা এবং দুই জোড়া জুতা, বেশ কিছু নামী ব্র্যান্ডের ফারফিউম, প্রসাধনী আর একটা দামী মোবাইল সেট কিনলো । তারপর বাসায় ফিরলো ।

তানিয়া জিনিয়াকে দেখে চিনতেই পারছে না ! তার হেয়ার স্টাইল তার গেট আপ মেকাপ জিনিয়াকে বদলে দিয়েছে । জিনিয়া তানিয়াকে জড়িয়ে ধরে বললো, দোস্ত আমার স্বপ্ন পূরণ হচ্ছে । আমি আগামী মাসে ব্যাংকক যাচ্ছি পনেরো দিনের জন্য । একলক্ষ টাকা পেমেন্ট । এই নে তোর জন্য জামা কাপড় জুতা প্রসাধনী আর মোবাইল । তানিয়া বলে, আমি আজ এতোদিন থিয়েটার করে এক টাকাও কামাইতে পারলাম না আর তুই শিল্পকলার ফুটপাতে বসে গাঁজা বিড়ি খেয়ে এতো টাকা কামাইতেছিস ! তোর শর্টকার্ট লাইনতো তোর ভালোই কাজে লাগছে !
জিনিয়া তানিয়াকে বলে , দোস্ত অভিনয় হইলো ডিরেক্টর নির্ভর একটা আর্ট । অভিনয় দিয়ে তুই যদি টাকা ইনকাম করতে চাস তাইলে তোকে ইজি গোয়িং হতে হবে । ডিরেক্টর এবং প্রডিউসারের সাথে শুইতে হবে । না শুইলে টাকা কামাইতে পারবি না । অভিনয় করতে পারবি কিন্তু অভিনয় করে জীবন চালাইতে পারবি না । তোরা যারা থিয়েটারে অভিনয় করিস তারা অভিনয় করতে পারবি বাট অভিনয় করে জীবন চালাইতে পারবি না ।

তানিয়া জিনিয়াকে বলে , আমার অভিনয় করে জীবন চালাইতে হবে না । আমি অভিনয় করে শুধু সম্মানটুকু কামাইতে চাই । অভিনয়ের নাম দিয়ে ডিরেক্টর এবং প্রডিউসারের সাথে শুইয়ে আমার টাকা কামানো লাগবে না । অভিনয় আমার কাছে একটি নেশা এটি আমার কাছে পেশা নয় ।

জিনিয়া তানিয়াকে বলে , দোস্ত অভিনয় আমার কাছে পেশা । এইটাকে আমি পেশা হিসাবে নিলাম । এবং এই পেশায় আমাকে টিকে থাকতে হলে আমাকে ডিরেক্টর এবং প্রডিউসর নির্ভর হইতে হবে । কারণ এই পেশায় ডিরেক্টর এবং প্রডিউসররাই হলো ঈশ্বর । আর ঈশ্বর যদি কোন আর্টিষ্টের উপর খুশি থাকে তাহলে ওই আর্টিষ্টের কাজের অভাব হবে না । আর কাজ মানে অঢেল টাকা । আর টাকা মানে সম্মান সামাজিক খ্যাতি নাম যশ সবই !

জিনিয়া তানিয়াকে জিজ্ঞাস করে , বুঝা গেছে ব্যাপারটা ?
জিনিয়া তানিয়াকে বলে, তুই আর ভালো হইলি না !
তানিয়া জিনিয়াকে বলে, তুই ভালো হইয়া মুড়ি খা আর আমি ডিরেক্টর আর প্রডিউসারদের খুশি কইরা ব্যাংকক যাইগা !

মন্তব্য ৫ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ২৫ শে অক্টোবর, ২০১৭ বিকাল ৫:০৭

চাঁদগাজী বলেছেন:



ইনকিলাবের সংবাদের মতো লাগলো

২| ২৫ শে অক্টোবর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:০৬

অনন্য দায়িত্বশীল আমি বলেছেন: ভালো লাগলো।


ভালো থাকুন সবসময় সবখানে।

৩| ২৫ শে অক্টোবর, ২০১৭ রাত ১০:৪৪

বিচার মানি তালগাছ আমার বলেছেন: সময় নষ্ট হলো...

৪| ২৬ শে অক্টোবর, ২০১৭ রাত ১:০৪

মেহেদী হাসান তামিম বলেছেন: বেশ

৫| ২৬ শে অক্টোবর, ২০১৭ ভোর ৬:৪৪

সোহানী বলেছেন: সমসাময়িক বাস্তবধর্মী গল্প......... ++++

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.