নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
লিখি, ছবি তুলি আর সিনেমা বানাই ।
জেলখানায় হাজতিদের লগে দুইভাবে দেখা করা যায় ।
এক। সরকারি ভাবে ।
দুই । ভিআইপি মর্যাদায় ।
সরকারি ভাবে দেখা করতে হলে আপনাকে সকাল আট টা থেকে বিকাল পাঁচটার আগে স্লিপ কাটতে হবে । কার সাথে দেখা করতে চান তার নাম তার বাবার নাম সে কোন ওয়ার্ডে থাকে- এই তথ্য গুলো দিয়ে । এইটা বিনামূল্যে হলেও কিছু টাকা দিতে হয় যারা স্লিপ লেখে তাদেরকে ।
স্লিপ কাটার পর আপনি একটা ঘরের ভিতরে অপেক্ষা করবেন । স্লিপ ভিতরে চলে গেলে ওয়ার্ড থেকে সেই লোকটিকে ডেকে আনা হবে আপনি যার সাথে সাক্ষাৎ করতে চান । সে এসে খাঁচার ভেতর থেকে আপনার সাথে কথা বলবে আর আপনি খাঁচার বাইর থেকে কথা বলবেন । অনেক লোকজন থাকে বেশ চিল্লায় চিল্লায় কথা বলতে হয় । অনেক ভিড় থাকে । একজন কি বলছে আরেকজন তা অনেক সময় শুনতেও পায় না । বেশ কয়েকবার চিল্লায় চিল্লায় বলতে হয় ।
ভিআইপি ভাবে দেখা করতে হলে আপনাকে সকাল আটটা থেকে বিকাল পাঁচটার আগে ভিআইপি স্লিপ কাটতে হবে । কার সাথে দেখা করতে চান তার নাম তার বাবার নাম সে কোন ওয়ার্ডে থাকে- এই তথ্য গুলো দিয়ে । এই জন্য আপনার থেকে তেরশো টাকা দিতে হবে ।
স্লিপ কাটার পর আপনি বাইরে অপেক্ষ করবেন । স্লিপ ভিতরে চলে গেলে ওয়ার্ড থেকে সেই লোকটিকে ডেকে আনা হবে আপনি যার সাথে দেখা করতে চান । তারপর আপনাকে ভিতরে ঢুকানো হবে । ঢুকানোর পর আপনার হাতে একটা সিল দিয়ে দিবে । এই সিল হচ্ছে চিহ্ন । আপনি দেখা করতে এসেছেন । আর যার সাথে দেখা করতে এসেছেন তার হাতে একটা কলম দিয়ে একজন সাইন করে দিবে । সাইনের এর প্রমাণ হইলো এই লোক হাজতি । তারপর আপনারা সামনা সামনি মুখোমুখি হয়ে কথা বলতে পারবেন বিশ মিনিট । বিশ মিনিট শেষে সিল মারা লোকটিকে বের করে দিবে আর সাইন দেওয়া লোকটিকে ভিতরে ঢুকিয়ে দিবে ।
দেখা করতে এসে অনেকেই হাজতিদের টাকা দেয় । ভিআইপি ভাবে দেখা করতে এসে টাকা দিলে হাজতিকে ভিতরে ঢুকলেই একশো টাকা দিয়ে দিতে হবে জেলখানার জমাদারকে । নইলে সে সব টাকা নিয়ে ফেলবে চেক করে । এই চেক মানে পাছার জোরা পর্যন্ত চেক করে । টাকা একশো দিয়ে দিলে কতো টাকা দিলো তা আর দেখে না । আর যে আপনাকে ডেকে আনছে তাকে দিতে হবে পঞ্চাশ টাকা ।
আর যদি সরকারি ভাবে দেখা করতে এসে টাকা দেয় তাইলে হাজারে একশো টাকা করে দিয়ে দিতে হবে ।
জেলখানায় ক্যাশ টাকা অবৈধ । কিন্তু ক্যাশ টাকা ছাড়া জেলখানায় চলায় যায় না ! কি অদ্ভুদ না !
জেলখানায় কারো সাথে দেখা করতে আসলে অবশ্যই হাতে মিনিমাম তিন ঘণ্টার সময় নিয়ে আসবেন । কারণ এইখানে নিয়মের তোয়াক্কা সব সময় ঠিক থাকে না । একেক সময় একেক রকম হই যায় !
জেলখানায় কারো সাথে কেউ দেখা করতে আসলে তাকে বলা হয় "দেখা আসছে" । কোন হাজতি যদি একবার দেখা করতে যায় কারো সাথে সেটা সরকারি হোক আর ভিআইপি হোক হাজতিকে অবশ্যই ওয়ার্ডের একজন চেয়ারম্যান আছে যার কাজ হচ্ছে টয়লেট আর ওয়ার্ড পরিস্কার রাখা এবং পানি টানা । তাকে এক বান্ডিল বিড়ি দিয়ে দিতে হবে এবং সেইদিনের লক আপ দিতে হবে পঞ্চাশ টাকা । দেখা করতে এসে হাজতিকে টাকা দিক আর না দিক । বিড়ি আর লক আপের পঞ্চাশটাকা হাজতিকে দিয়ে দিতেই হবে ।
দিতে না পারলে হাজতি বুঝে মাইর নইলে মা বোন তুইলা গালি ! লক আপ মানে হইলো সকালে ওয়ার্ডের দরজা খুইলা দেওয়া আর বিকালে দরজা বাইন্ধা দেওয়া । জেলখানার একজন মিয়াসাব এই কাজটা করেন । তাকে দৈনিক পঞ্চাশটাকা করে দিয়ে দিতে হয় । এইটাকেই বলে লক আপ দেওয়া । মেট এই টাকাটা যারা দেখা করতে যায় মানে যাদের লগে দেখা করতে লোক আসে তাদের থেকে নিয়ে দে ।
তাই যারা হাজতিদের সাথে দেখা করতে যাবেন তারা অবশ্যই চেষ্টা করবেন হাজতিদের হাতে কিছু টাকা পয়সা দিয়ে আসতে । হাজতিরাও দেখা করতে যায় কিছু টাকা পয়সা আর মামলার অগ্রগতি জানার আশায় ।
জেলখানার জিন্দেগী বড়ই নির্মম এবং নির্দয় । টাকা আছেতো ভালো টাকা নাইতো কষ্ট কষ্ট এবং অবর্ননীয় কষ্ট !
©somewhere in net ltd.
১| ৩১ শে অক্টোবর, ২০১৭ বিকাল ৩:২৫
রাজীব নুর বলেছেন: এই সব নিয়ম কি সরকার করেছে?