নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

#Reader #Writer #Secular #Humanist #Democreatic #FilmWatcher #Socialist & Trying To be A Filmmaker.

জিপসি রুদ্র

লিখি, ছবি তুলি আর সিনেমা বানাই ।

জিপসি রুদ্র › বিস্তারিত পোস্টঃ

"জয় বাঙলা": একটি জাতির চেতনার মহাকাব্যিক উচ্চারণ।

২৩ শে জুলাই, ২০২৫ রাত ৮:৩৯

"জয় বাঙলা”- মাত্র দুটি শব্দ। কিন্তু এই শব্দযুগলের পেছনে লুকিয়ে আছে হাজার বছরের সংগ্রাম, রক্ত, অশ্রু, ভালোবাসা আর মুক্তির স্পর্ধিত উচ্চারণ। এটি কেবল একটি স্লোগান নয়, এটি একটি জাতির পুনর্জাগরণ, একটি দেশের আত্মচেতনাকে জাগ্রত করার মহাকাব্যিক প্রস্তাবনা। “জয় বাঙলা” হলো সেই অগ্নিঝরা ডাক, যা এক বিক্ষুব্ধ জনতাকে শৃঙ্খল ভেঙে স্বাধীনতার পথে ধাবিত করেছিল।

“জয় বাঙলা” শব্দটি কোনো দলীয় স্লোগান নয়, এটি বাঙালি জাতির মুক্তির চূড়ান্ত রাজনৈতিক শ্লোগান। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে এই স্লোগানটি হয়ে ওঠে একটি জনযুদ্ধের মহাসংগীত। এটি ছিল পাকিস্তানি সামরিক জান্তার শোষণ ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে সর্বশেষ প্রতিরোধের ঘোষণা। “জয় বাঙলা” মানে ছিল: আর নয়, এবার বাঙালি তার নিজের রাষ্ট্র চায়, নিজের অধিকার চায়, নিজের পতাকা চায়।

এই স্লোগান একদিনে আসেনি। এর জন্ম হয়েছে শোষণ-বঞ্চনার হাজারো ইতিহাসের গর্ভে। ৫২'র ভাষা আন্দোলন, ৬৬'র ছয় দফা আন্দোলন, ৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান, ৭০ এর নির্বাচন এবং সবশেষে ১৯৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধ- প্রতিটি আন্দোলনের প্রতিটি পদক্ষেপে “জয় বাঙলা” শ্লোগানটি হয়ে উঠেছে আগুনের ভাষা।

“জয় বাঙলা” কেবল রাজনৈতিক প্রতিরোধের ভাষা নয়, এটি সাংস্কৃতিক প্রতিরোধেরও প্রতীক। পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী যখন বাঙলাভাষাকে দমনে মরিয়া, যখন রবীন্দ্রসংগীত, নজরুল, লালন, হাছন রাজাকে নিষিদ্ধ করার চক্রান্ত চলছিল- তখন “জয় বাঙলা” ছিল বাঙালির সাংস্কৃতিক অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার অস্ত্র। এটি ছিল এক সাংস্কৃতিক বিপ্লবের বীজমন্ত্র, যার মাধ্যমে বাঙালি বলে উঠেছিল: “আমার ভাষা, আমার গান, আমার সংস্কৃতি, আমার অস্তিত্ব- কেউ কেড়ে নিতে পারবে না।”

প্রতিরোধ মানেই শুধু অস্ত্রধারণ নয়, প্রতিরোধ মানে হচ্ছে অন্তরের আগুন জ্বালিয়ে অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়ানো। “জয় বাঙলা” সেই আগুন। এটি একদিকে যেমন পাকিস্তানি বর্বর বাহিনীর বিরুদ্ধে ছিল, অন্যদিকে ঠিক তেমনিভাবে আজও সকল স্বৈরাচার, সাম্প্রদায়িকতা, ধর্মান্ধতা, মৌলবাদ এবং বিভেদের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় আদর্শিক প্রতিরোধের ভাষা।

যখন “জয় বাঙলা” বলা হয়, তখন শুধু পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকেই নয়, বলা হয় সমস্ত অন্যায়কারীকে, ধর্মের নামে রাজনীতি করা জামাত-শিবিরকে, ইতিহাস বিকৃতিকারী রাজাকারদের উত্তরসূরিদের, এবং জাতিকে বিভক্ত করার চক্রান্তকারী প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠীদের প্রতিও।

এই শব্দটি একাধারে কারো বাবার লাশের পাশে দাঁড়িয়ে বলা শ্লোগান, আবার কারো প্রথম প্রেমের মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতিচিহ্ন। এটা সেই আবেগ, যা মানুষকে রণক্ষেত্রে পাঠায়, আবার সেই ভালোবাসা, যা মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রীর চোখে জল এনে দেয়। "জয় বাঙলা" বলা মানে নিজের মাটিকে ভালোবাসা, নিজের মানুষকে ভালোবাসা, নিজের পতাকাকে ভালোবাসা।

আজ যখন জাতি বিভক্ত; রাজনৈতিক মতানৈক্য, ধর্মীয় বিভেদ, শ্রেণিচ্যুতি, ভাষাগত অহংকারে যখন জাতি বিপন্ন- তখন আবার দরকার “জয় বাঙলা”। এটি সেই ডাক, যা বাঙালিকে আবার একত্রিত করতে পারে। এটি এমন এক শব্দ, যার মধ্যে বাঙালি, হিন্দু-মুসলমান-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান একসাথে মুক্তিযুদ্ধ করেছিল; যেখানে রাজনীতি, ধর্ম ও সংস্কৃতি এক হয়ে গিয়েছিল দেশ ও জাতি গঠনের চূড়ান্ত মুহূর্তে।

এখন কেউ কেউ “জয় বাংলা” এর বিকল্প খুঁজে। কেউ বলে “বাংলাদেশ জিন্দাবাদ”, কেউ “ধর্মীয় উক্তি”কে রাষ্ট্রীয় শ্লোগান বানাতে চায়, কেউ ভিনদেশি শ্লোগান আমদানি করে প্রতিষ্ঠিত করতে চায় কিন্তু তারা ভুলে যায়, “জয় বাঙলা” এমন এক শব্দ, যার মধ্যে ধর্মনিরপেক্ষতা, গণতন্ত্র, মানবিকতা, বৈষম্যবিরোধিতা এবং বাঙালির চূড়ান্ত আত্মমর্যাদা নিহিত। "জয় বাঙলার" বিকল্প এইদেশে বাঙালি জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী মানুষের মধ্যে প্রতিষ্ঠিত করা সম্ভব নয়।

“জয় বাঙলা” শব্দটি দিয়ে জাতি গড়েছে, দেশ পেয়েছে। যারা এই স্লোগানকে বাদ দিয়ে নতুন কিছু খুঁজে, তারা মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী এবং পাকিস্তানপ্রেমি। “জয় বাঙলা”-র কোনো বিকল্প নেই, হতে পারে না। যেমন করে "লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ"-র কোনো বিকল্প নেই মুসলমানদের জন্য, তেমনি “জয় বাঙলা” হলো বাঙালি জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী মানুষের মধ্যে বিকল্পহীন মুক্তির কালেমা।

জয় বাঙলা মানে আত্মমর্যাদার শিখরে দাঁড়িয়ে চিৎকার করে বলা- “আমরা আছি!” একটি জাতির জীবনে কিছু শব্দ আসে যা তাকে গড়ে তোলে। “জয় বাঙলা” তেমনই একটি শব্দ। এটি কোনো সরকার, কোনো দল বা ব্যক্তির নয়- এটি গোটা জাতির।

আজ যখন দেশে-বিদেশে ষড়যন্ত্র, বিভাজন, চেতনা ধ্বংসের প্রয়াস চলছে, তখন আবার বলতে হবে: “জয় বাঙলা”।

এটি কেবল অতীতের স্মৃতি নয়, এটি আগামীদিনের লড়াইয়ের পূর্বসংগীত।

“জয় বাঙলা”- এটি একটি জাতির নাম, চেতনা, অস্তিত্ব ও আত্মমর্যাদার অমোঘ মন্ত্র। নিশ্চিহ্ন করার সকল চেষ্টা পরাজিত হতে বাধ্য।

জয় বাঙলা।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২৩ শে জুলাই, ২০২৫ রাত ১০:০১

কাঁউটাল বলেছেন: চাঘলের দল, তোদের পভুপাদ মুদির দেশ ভঁড়ৎে গিয়া মর।

২| ২৩ শে জুলাই, ২০২৫ রাত ১১:২৩

লোনার বলেছেন: তাই নাকি?!

৩| ২৪ শে জুলাই, ২০২৫ সকাল ৯:৪৩

ইএম সেলিম আহমেদ বলেছেন: দূরে গিয়ে মর।

৪| ২৪ শে জুলাই, ২০২৫ দুপুর ১২:৩৭

রাজীব নুর বলেছেন: জয় বাংলা।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.