নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

“আমি আপনার কথার সাথে দ্বিমত পোষণ করতেই পারি কিন্তু আপনার কথা বলার স্বাধীনতা রক্ষার প্রয়োজনে জীবনও উৎসর্গ করতে পারি”

রুপম হাছান

‘‘আত্মত্যাগ সব সময় ভালো কিন্তু মাঝে মাঝে বিরক্তিকরও বটে...’’

রুপম হাছান › বিস্তারিত পোস্টঃ

- আজ মহান মাতৃভাষা দিবস তথা “আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস” -

২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ২:২৪

ভাষা মহান রাব্বুল আলামিন এর পক্ষ থেকে মানুষের জন্য একটি অনুগ্রহ। একটি নেয়ামত। মহান আল্লাহর সৃষ্টি রহস্য ও তাঁর কুদরতের নিদর্শন। এই অনুগ্রহ বা নেয়ামত কোনো একটি বিশেষ ভাষার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। পৃথিবীতে মানুষ আগমনের পর মানুষকে যেমন বিভিন্ন গোত্র, গোষ্ঠী ও বর্ণে বিভক্ত করা হয়েছে, তেমনি সেসব গোত্র ও বর্ণের জন্য ভাষাও আলাদা করা হয়েছে। মহান রাব্বুল আলামিন পবিত্র কুরআনের সূরা আর রহমানে বলেন ‘খালাকাল ইনসানা আল্লামাহুল বায়ান’। অর্থাৎ আল্লাহ মানুষ সৃষ্টি করেছেন এবং তাদেরকে ভাষা শিক্ষা দিয়েছেন। পৃথিবীর প্রথম মানব হজরত আদম (আঃ)-এর পর থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত মানুষ যেমন বিভিন্ন জাতি ও গোষ্ঠীতে বিভক্ত হয়েছে, সেভাবে তাদের নিজ নিজ ভাষাও বিভিন্ন মাত্রার ধ্বনি গ্রহন করেছে। অথচো এই ভাষার জন্য আমাদের যুদ্ধ করতে হয়েছিলো!

প্রফেসর এবনে গোলাম সামাদ স্যারের লিখনি থেকে জানা যায়, 1938 সালে প্রথম আরম্ভ হয়েছিলো ভাষা নিয়ে আন্দোলন। যার নেতৃত্ব দিয়েছিলেন জনাব মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান (পরবর্তীতে বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি)। তার পিতা 1947 সালে মুর্শিদাবাদ থেকে আসন রাজশাহীতে। তিনি ছিলেন তৎকালীন মুর্শিদাবাদ মুসলিম লীগের সেক্রেটারী কিংবা প্রেসিডেন্ট (স্যারের মনে নেই)।তিনি বাংলা ভাষার জন্য আন্দোলনকে সমর্থন করতেন কিনা তা নিয়েও বেশ সন্দেহ আছে। কিন্তু হাবিবুর রহমান সাহেব ছিলেন বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার পক্ষে। পিতা-পুত্রের মধ্যে রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির ছিলো যথেষ্ট গরমিল। এরই পরবর্তীতে ভাষা আন্দোলনকে যুগপোযোগী করে তুলতে তৎকালীন ‘তমুদ্দিন মসলিশ’ নামে একটি সংগঠের জম্ম। ‘তমুদ্দিন মসলিশ’ ছিলো ইসলামি আদর্শে প্রভাবিত আধা রাজনৈতিক এবং আধা সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান। 1947 সালের সেপ্টেম্বরের প্রথম ভাগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিচু ছাত্র এবং শিক্ষকের উদ্যোগে এই প্রতিষ্ঠানটি গঠিত হয়। ‘সরুজ-জামাল’ মেসের একটি পুরনো দালানের ওপর তলায় ‘তমুদ্দিন মজলিশ’ এর অফিস স্থাপিত হয়। যা এখন রশিদ বিল্ডিং নামে পরিচিত।

ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে জানা যায়, ভাষা আন্দোলনে গোলাম আযমের ছিল একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। যেটা একটি ঐতিহাসিক সত্য। 1948-49 সালে গোলাম আযম ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের জেনারেল সেক্রেটারী। 1948 সালে তদানীন্তন প্রধানমন্ত্রী পূর্ব বাংলা সফরে আসেন। 27শে নভেম্বর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জিমনেসিয়াম মাঠে এক বিরাট ছাত্র সমাবেশে ভাষণ দেন। সেই ঐতিহাসিক সভায় গোলাম আযম ডাকসুর ভিপি হিসেবে লিয়াকত আলী সাহেবকে বাংলা ভাষার দাবি সংবলিত একটি স্মারকলিপি প্রদান করেন। কাজটি সে সময় ছিলো খুবই সাহকিতাপূর্ণ। 1952 সালে গোলাম আযম ছিলেন রংপুর কারমাইকেল কলেজের অধ্যাপক। রংপুরে ভাষা আন্দোলনে যোগ দেওয়ার কারণে তিনি গ্রেফতার হন। এবং 1948 সালে 11ই মার্চ রাষ্ট্রভাষার দাবিতে পিকেটিং করবার সময় ঢাকাতে তিনি দ্বিতীয় দফা গ্রেফতার হন। এবং এই দাবির পক্ষে অবস্থান নেন ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ, মাওলানা ভাসানীসহ প্রথম কাতারের মুসলিম আরো অসংখ্য নেতা।

1948 সালেই তারা রাষ্ট্রভাষার দাবিকে জনপ্রিয় করে তুলতে সক্ষম হন। ‘তমুদ্দিন মজলিশ’ এর প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগ এতটা গণসম্পৃক্ত হয়ে উঠেছিলো। ঠিক সেই সময়ে 24ই মার্চ জিন্নাহ সাহেব ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাবর্তন অনুষ্ঠানে ইংরেজি ভাষায় এক বক্তৃতায় (জিন্নাহ সাহেব উর্দু ভালো বলতে পারতেন না। তিনি বেশির ভাগ সময় বক্তৃতা করতেন ইংরেজি ভাষাতেই। কারণ তাঁর মাতৃভাষা ছিলো গুজরাটি।) উর্দুকেই পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা করার কথা বলেন। তাঁর এই বক্তৃতার সময় পাবনার মতিন (ভাষাসৈনিক মতিন)উঠে দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ করেছিলেন। তৎপরবর্তী 1952 সালের শুরুর দিকে রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই এর দাবি গণমানুষ তথা ছাত্র-জনতার প্রধান দাবিতে রুপান্তরিত হয়েছিলো। রুপান্তরিত হলো গণ-আন্দোলনে। তখন ছাত্রদের স্বতঃস্ফুর্ত মিছিলে পুলিশ বাধা দিলো। গণ মানুষের প্রাণের দাবিকে বন্দুকের গুলিতে উড়িয়ে দিতে উদ্যত হলো। তারই ফলশ্রুতিতে 20ই ফেব্রুয়ারী 144 ধারা জারি করা হয়। এই আন্দোলন ঠেকানোর জন্য গণমিছিলে পুলিশ গুলি করতে লাগলো। কিন্তু ফল হলো তার উল্টো। (এখানে কিছু অপ্রকাশিত কথা উল্লেখ করা ঠিক হবেনা ভেবে দেই নি কারণ তাতে ব্যক্তিগত সমস্যার সম্মুখীন হওয়ার সম্ভবনা থাকবে আশঙ্কায়)। পরবর্তীতে ছাত্র-জনতা 144 ধারা ভঙ্গ করে মিছিল চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলো। এই 144 ধারা ভঙ্গ করার পক্ষে যারা ছিলেন-অলি আহাদ, আব্দুল মতিন (ভাষা মতিন), শামসুল হক ও গোলাম মাওলা। সেই অপ্রতিরোধ্য মিছিলে পুলিশ গুলি চালালো। শহীদ হলেন- সালাম, বরকত, জব্বার, রফিক ও শফিকেরা।

ব্যাপক রক্তপাতের কথা শুনেই মওলানা ভাসানী ছুটে আসেন ঢাকায়। পরদিন ভাষা শহীদদের স্মরণে যে গায়েবানা নামাজে জানাজা হয় মেডিক্যাল কলেজ প্রাঙ্গণে, মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী এতে উপস্থিত থেকে গায়েবানা নামাজের জানাজা পরিচালনা করেন। মেডিক্যাল কলেজের সম্মুখে তিনি লক্ষ লোকের একটি গায়েবানা নামাজের জানাজার নেতৃত্ব করেন। 21শে ফেব্রুয়ারীর বর্বরোচিত ঘটনা সম্পর্কে মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী এক বিবৃতিতে বলেন, ‘ঢাকায় যা ঘটেছে তাকে নিন্দা করার ভাষা আমার নেই। কেনো সভ্য সরকার এরুপ বর্বরোচিত কান্ড করতে পারে, দুনিয়ার ইতিহাসে তার নজির খুঁজে পাই না... দিনটি ছিলো 1952 সালের একুশে ফেব্রুয়ারী, ফাল্গুনের 8 তারিখ।

আজ বাঙ্গালীর সেই মহান মাতৃভাষা দিবস। সারা পৃথিবীতে যার নজির আর খুঁজে পাওয়া যাবে না যে, ভাষার জন্য কোনো জাতি যুদ্ধ করেছে কিংবা করেছিলো। আমরা সেই বীরের সন্তান। যাদের রক্তের দামে ক্রয় করতে হয়েছিলো মুখের ভাষা। সেই শ্রদ্ধেয়, সম্মানিত বীরদের রক্তের বিনিময়ে যে ভাষা আমরা আজ গৌরবের সাথে ব্যবহার করে থাকি, তার বদলৌতে এই জাতি তথা পুরো বিশ্ব পেয়েছে একটি সম্মান জনক দিবস। যাকে ‘আন্তর্জাতিক ভাষা দিবস’ হিসেবে পালন করে থাকে পৃথিবীর সাড়ে সাত শত কোটি মানুষ। সত্যি গর্ব হয় বীর বাঙ্গালী সেনানীদের জন্য। আজ তাঁদের পবিত্র রুহের মাগফিরাত কামনা করছি এবং জানাচ্ছি-

সালাম সালাম হাজার সালাম
শহীদ ভাইদের স্মরণে
আমার হৃদয় রেখে যেতে চাই
তাঁদের স্মৃতির চরণে।।

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ২:২৬

রুপম হাছান বলেছেন: আজ তাঁদের পবিত্র আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি। হে রাব্বাল আলামিন তাঁহাদের যাবতীয় গুণাহ মাফ করো এবং তাঁদেরকে জান্নাতুল ফেরদাউস নছিব করো। আমিন।

২| ২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সকাল ৭:১৫

জাফরুল মবীন বলেছেন: সকল ভাষা শহীদদের সশ্রদ্ধ সালাম জানাই।

ভাল লিখেছেন।

ধন্যবাদ আপনাকে।

২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ১১:০২

রুপম হাছান বলেছেন: আপনাকে ধন্যবাদ জনাব মবীন ভাই। লাইকস।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.