![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
‘‘আত্মত্যাগ সব সময় ভালো কিন্তু মাঝে মাঝে বিরক্তিকরও বটে...’’
জনাব আহমদ ফকির চাচার একটি আবেগীয় ভাবনা আমার লিখায় প্রকাশ করলাম। এটা খুব একটা আশ্চর্যের বিষয় নয়, বাংলাদেশ এক ‘হাটুরে গন্ডগোলে’ দিনাতিপাত করছে। আশ্চর্যের ব্যাপার ‘হে বঙ্গভান্ডারে তব বিবিধ রতন’দের মুখের জবান! তাদের ‘হাজার বছরের’ শিক্ষা-তাহজিব-তমদ্দুন এবং আখলাখ ও আমলের প্যানোরমা দেখে হতবাক হই! এখন বাংলাদেশের রাজনৈতিক আকাশে ভিন্ন এক ‘ঘনঘটা’ দেখা দিয়েছে। সম্মানিত শিক্ষিত জনগণদের কাছে তা ব্যক্ত করে জানানোর আদৌ ইচ্ছা ছিল না। কবরে এক পা চলে গেছে, অন্য পা থরথরে। এখন ‘ঘনঘটা’ আমাকে বিহ্বল করার কথা নয়। তবে একটা বিষয় খু-উ-ব পীড়া দেয়। জীবনে কতটা অশ্লীল, কুৎসিত, অশ্রাব্য, কর্কশ, অভব্য, অমার্জিত, বেয়াদবিপূর্ণ শব্দ মুখ দিয়ে উচ্চারণ করেছি, তার যদি হিসাব রেখে যেতে পারতাম। আল্লাহ তায়ালার কাছে শেষ রজনীর প্রার্থনা, এই জবান দিয়ে কতজনকে কতভাবে আঘাত করেছি; শেষ বিচারের দিনে ক্ষমা করে দিয়ো গো মাবুদ। একদা বাংলাদেশ শ্যামল সমৃদ্ধ ছিল। এখন গাছের ‘বাকল’ পড়ে যাচ্ছে, ডালের সবুজপত্র ঝরে পড়ছে এবং সেখানে আবার নতুনপত্র গজাচ্ছে। এ যেনো, দেশের কোনো কোনো ভিআইপি এখন দেশের জনগণের কোমর ভাঙ্গা অবস্থা বুঝে কথার মাধ্যমে হলেও ‘কোমরে বারবার যেন লাথি মারছেন’।
তারা নিজেদের দুর্দশাগ্রস্ত অবস্থা বুঝেও বুঝতে পারছেন না। আর এই নাজুক অবস্থার মাঝে অরুচিকর শব্দ লাগামহীনভাবে ব্যবহার করছেন। অথচ কেউ প্রতিবাদ করছেন না। করলেও ঝোপের আড়ালে রাখাল যেভাবে বসে বেণু বাজায়, সেভাবে। 5ই ফেব্রুয়ারী একটি জাতীয় দৈনিকের প্রথম পৃষ্ঠায় একটি খবর দেখলাম-‘খালেদা জিয়াকে স্টুপিড লিডার অ্যাখ্যা দিয়েছেন মুহিত সাহেব! জনগণের নেতা, জনগণের নেত্রী যা-ই বলা হোক না কেন, বেগম জিয়া এ দেশের একজন শ্রদ্ধাভাজন মহিলা। জাতীয় মর্যাদা রয়েছে তার। সাবেক প্রধানমন্ত্রী একবার নয়, তিনবার। বয়স এখন ঊনসত্তর বছর। তাকে ‘স্টুপিড’ বলাটা কি কোনো লোকের (শিক্ষিত বা অশিক্ষিত যাই হোন না কেন) সাজে!? কোনো মন্ত্রীর ভেরেন্ডা বৃক্ষতুল্য ভূমিকা রাখা বাঞ্চনীয় নয়। ভাগ্য ভালো, ‘অমল-বিমল-ইন্দ্রধনু’ (কলকাতা বেতারে গতানুগতিক ধারাবর্জিত নাটক) এই দেশ ত্যাগ করে তাদের ‘সব পেয়েছির দেশে’ চলে গিয়েছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষার একেবারে ‘ফাস্টোক্লাস’। মন্ত্রীর ‘রাবিশ’ ‘ননসেন্স’ ‘স্টুপিড’ শব্দ তার হাড়ের বনেদি ঠনঠনে মজ্জায় যেন গেঁথে গেছে। তিনি দেশকে তার ‘ফাস্টোক্লাস’ ব্রেন দিয়ে কতটুকু দিলেন!?
বেপরোয়া বাক্যের আবর্জনা দিয়ে দেশকে এক ডাস্টবিন বানানো কি উচিত? কেউ মনে করছেন নাকি, বাংলাদেশের জনগণ তার পৈত্তিক প্রপৈত্তিক প্রজা! একজন শিক্ষিত মর্যাদাবান ব্যক্তি ‘বন্দরবাজারি’ ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন হবেন, তা ভাবতেও কষ্ট হয়। কিছু দিন আগে এ দেশের এক গণ্যমান্য অর্থনৈতিক পন্ডিত ব্যক্তিকে মন্ত্রী অতি হেয় করেছেন; তাচ্ছিল্যসহকারে অপমান করেছেন। ‘অপমান’ কিসে হয়, সেই জ্ঞানও কি তার নেই!? মিনিমাম এই সেন্সটুকু তো থাকা উচিত, কাকে কী বলছেন। অগ্র-পশ্চাৎ না ভেবে যাকে তাকে যা তা বলা সুস্থ মস্তিষ্কের পরিচয় বহন করে না। মন্ত্রী যে এলাকার লোক, সেই এলাকার প্রাচীন বুজুর্গরা বলতেন-‘পুয়া শিক্ষিত ঐগেলে উরাতো নাম লেখে’! আশা করি, তিনি উরাতে (ঊরু) নাম লিখবেন না। তার সম্মানিত পিতৃজন 1951-52 সালে ‘শ্রীহট্টি’ (সিলেট) জেলা মুসলিম লীগের সেক্রেটারি ছিলেন। গুস্ফধারী, টার্কিশ টুপি পরিহিত ওই নেতা তরুণ-যুবসমাজে আলোচিত ছিলেন যে কারণে, তা এই ‘ঘনঘটা’। সভায় বক্তৃতা দিতে উঠেই তিনি প্রথম যে শব্দ উচ্চারণ করতেন, তা ‘ঘনঘটা’। যেমন- ‘আজ পূর্ব পাকিস্তানের ভাগ্যাকাশে যে ঘনঘটা দেখা দিয়েছে ...। ঘনঘটা ছিল ভাষা আন্দোলনের সময়ে, দুর্ভিক্ষে ও লবণের দুর্মূল্যে, চকবাজারে পুলিশের গুলি চালানো ইত্যাদি ...। লাগামহীন শব্দ ব্যবহার (Unparliamentary)বর্তমান ‘ঘনঘটা’কে আগামীতে আরো ঘন করে তুলতে পারে। এটা তার মতো সুধীজনের পক্ষে শোভনীয় নয়।
বিশেষ মন্তব্য : আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহম্মদ (সঃ) সবার জন্য একটি কথা বলে গেছেন, (ভুল হলে আল্লাহ মাফ করুন) যে ব্যক্তি তার দুটো জিনিস কে হেফাজত করবে; বিচারের দিবসে তার জন্য নবীজী জান্নাতের সুপারিশ করবেন। যথা- 01. জিহ্বা বা জবান এবং 02. লজ্জাস্থান।
সত্যিকার অর্থে এই দুটো জিনিস যে, মানুষকে কতটা নিকৃষ্ট কিংবা অন্যর কাছে হীন পর্যায়ে নিয়ে যেতে পারে তার একটির প্রকৃষ্ট উদাহরণ তো দিলাম, আর তা হলো জিহ্বা বা জবান।
©somewhere in net ltd.