নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

“আমি আপনার কথার সাথে দ্বিমত পোষণ করতেই পারি কিন্তু আপনার কথা বলার স্বাধীনতা রক্ষার প্রয়োজনে জীবনও উৎসর্গ করতে পারি”

রুপম হাছান

‘‘আত্মত্যাগ সব সময় ভালো কিন্তু মাঝে মাঝে বিরক্তিকরও বটে...’’

রুপম হাছান › বিস্তারিত পোস্টঃ

-গণতন্ত্র বনাম প্রকৃতি-

০২ রা মার্চ, ২০১৫ সকাল ১১:৩৬

13ই ফেব্রুয়ারী বসন্তের প্রথম দিনেই একটি টিভি চ্যানেলে রাত 10টায় টকশোতে যা দেখলাম তাতে মনে হলো, একটি গ্রাম্য ঝগড়া-সুস্থ মস্তিষ্কধারী জ্ঞানী মানুষের কথাবার্তায় এত উগ্রতা কখনো দেখিনি। দেখিনি অনুষ্ঠান সঞ্চালকের এমন দায়িত্বহীন কর্মকান্ড। নীরবে তিনি সদাহাস্যমুখে তা উপভোগ করছেন! মনে হচ্ছিল, সঞ্চালককারিণী একটি দলের পক্ষে ভূমিকা নিয়ে অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করছেন। পক্ষপাত-আক্রান্ত এসব অনুষ্ঠান জাতির ভাগ্যাকাশে আরো বিপর্যয় ডেকে আনবে। মাননীয় নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান যেভাবে বক্তব্য দিচ্ছিলেন, মনে হচ্ছিল ওই অনুষ্ঠানে তিনিই একক বক্তা, অন্য বিশিষ্টজনরা তার ছাত্র। অনুষ্ঠানটির যবনিকাপাত ঘটেছে অনেকটা এভাবে-সব দোষ নন্দঘোষের। অর্থাৎ এখন পর্যন্ত দেশে যা ঘটেছে বা ঘটছে তার সব দোষ বিএনপির! মন্ত্রীর পুরো বক্তব্যই অনুষ্ঠানে প্রাধান্য পেয়েছিল। একপর্যায়ে বীর মুক্তিযোদ্ধা অবঃ মেজর জেনারেল ইব্রাহিম বীরবিক্রম এর সাথে সঞ্চালককে বাকবিতন্ডায় জড়িয়ে পড়তে দেখা যায়। ভাষা প্রয়োগে অসুস্থতার পরিচয় দিয়েছেন সঞ্চালক। এভাবে পক্ষপাত রোগে আক্রান্ত প্রচারযন্ত্র থেকে দেশ ও জাতির অপকারই বেশি হবে, যদি এভাবে চলতে থাকে।

জাতির দর্পন হলো গণমাধ্যম, সেখানেও যদি দেশের মানুষ সত্য কথাটি খুঁজে না পায়, তাহলে দেশের জন্য তা বিপর্যয় ডেকে আনবে। দেশে হরতাল-অবরোধ এবং সহিংতার ব্যাপকতা কেন বাড়ে তার বিবরণ দেয়া প্রয়োজন বোধ করছি না। এসবের মূল কারণ অনেকটা প্রকৃতির মতো। মানুষ যখন প্রকৃতির বিরুদ্ধে কাজ করে তখন প্রকৃতি বসে থাক না, রুদ্রমূর্তি ধারণ করে; এতে দেশ ও জনগণের চরম ক্ষতি হয়। ঝড়, ঝলচ্ছাস, বন্যা, গোর্কি, ভাঙ্গন এবং অতিমাত্রায় তাপদাহ ও ঋতুচক্রের আমূল পরিবর্তনই-এসব দুর্যোগের কারণ। প্রকৃতির বিরুদ্ধে আচরণের কারণেই এসব দুর্যোগ ভয়াহব রুপ ধারণ করে। তদ্রুপ গণতন্ত্রও তাই। কারণ তার আদর্শ আছে, নীতি আছে-যখন এর বিরুদ্ধাচরণ করা হবে, তখন গণতন্ত্র তার স্বাভাবিক রুপ হারিয়ে ফেলে বিকৃত উগ্র রুপ ধারণ করে। আর বর্তমানে সেটাই হয়েছে।

জনাব মুহাম্মদ ওয়াছিয়ার রহমান এর গবেষণায় তিনি বললেন, নীতির পরিবর্তন ছাড়া কখনো সমাধান সম্ভব নয়। রাজনৈতিক ব্যক্তিরা সব সময় তাদের সুবিধা হাসিলের জন্য নিয়ম-নীতিকে কাটসাট করেন। যা যুক্তিসংগত নয়। তিনি 1757 সাল থেকে 2015 পর্যন্ত প্রায় আড়াই শ’ বছরের বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাস ব্যাখ্যা করেছেন। প্রথম 190 বছর বিদেশী ইংরেজরা এ দেশ শাসন করেছে। যেটা স্রেফ বিদেশী জবরদখলীয় শাসন। এরপর সাড়ে 67 বছরের বাংলাদেশের শাসনকে তিনি 15টি ভাগে ভাগ করেছেন এবং সেটা দেখালেন এভাবে : (01). 14ই আগস্ট 1947 থেকে 25এ মার্চ 1971 পর্যন্ত এই 24 বছর পাকিস্তানি শাসন। (02). 11ই এপ্রিল 1971 থেকে 12ই জানুয়ারী 1972 পর্যন্ত তাজউদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের শাসন। (03). 12ই জানুয়ারী 1972 থেকে 15ই আগস্ট 1975 পর্যন্ত মুজিব আমলের সাড়ে তিন বছর আওয়ামী লীগের ও একদলীয় শাসন। (04). 15ই আগস্ট 1975 থেকে 6ই নভেম্বর পর্যন্ত মোশতাক মার্কা বাকশালী শাসন। (05). 7ই নভেম্বর 1975 থেকে 30শে মে 1981 পর্যন্ত বিচারপতি এ এস এম সায়েম অন্তরালে ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফ এবং জেনারেল জিয়ার দ্বৈত ও একক সামরিক-বেসামরিক শাসন। (06). 31শে মে থেকে 24শে মার্চ 1982 পর্যন্ত বিচারপতি আব্দুস সাত্তারের বিএনপি দলীয় শাসন। (07). 24শে মার্চ 1982 থেকে ৬ই ডিসেম্বর 1990 পর্যন্ত লেঃ জেনারেল এরশাদের সামরিক-বেসামরিক শাসন। (08). ৬ই ডিসেম্বর 1990 থেকে 20শে মার্চ 1991 পর্যন্ত বিচারপতি সাহাবুদ্দীনের নেতৃত্বাধীন কেয়ারটোকার শাসন। (09). 20শে মার্চ 1991 থেকে 30শে মার্চ 1996 পর্যন্ত বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপির দ্বিতীয়বার শাসন। (10). 30শে মার্চ 1996 থেকে 23শে জুন পর্যন্ত বিচারপতি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমানের নেতৃত্বে কেয়ারটেকার শাসন। (11). 23শে জুন 1996 থেকে 15ই জুলাই 2001 পর্যন্ত শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের প্রথম শাসন। (12). 15ই জুলাই 2001 থেকে 10এ অক্টোবর পর্যন্ত বিচারপতি লতিফুর রহমানের নেতৃত্বে কেয়ারটেকার শাসন। (13). 10এ অক্টোবর 2001 থেকে 29শে অক্টোবর 2006 পর্যন্ত বেগম খালেদা জিয়ার তৃতীয়বার শাসন। (14). 29শে অক্টোবর 2006 থেকে 6ই জানুয়ারী 2009 পর্যন্ত প্রফেসর ড. ইয়াজউদ্দিন আহম্মদ এবং ফখরুদ্দীন আহমদ অন্তরালে জেনারেল মইন ইউ আহম্মেদ এর শাসন এবং (15). 6ই জানুয়ারী 2009 থেকে আজ পর্যন্ত শেখ হাসিনার দ্বিতীয় ও তৃতীয়বার দলীয় ও জোটগত শাসন চলছে।

আমাদের দেশের সাড়ে 67 বছরের রাজনৈতিক ইতিহাসের 15টি অধ্যায়ের মধ্যে বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমেদ, বিচারপতি হাবিবুর রহামন ও বিচারপতি লুতিফুর রহমান এর অস্থায়ী তিনটি শাসন তিন মাস করে মাত্র 9 মাসের শাসন স্বল্পস্থায়ী হলেও সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য শাসন বলে ধরে নেয়া হয়। তারা নির্বাচিত না হলেও সাংবিধানিক কাঠামোর মধ্যে বিকল্প ব্যবস্থা ছিল তাদের শাসন। বলতে গেলে আর কোনো সরকারই জনগণের মনের ভাষা বুঝে দেশ চালাতে পারেনি। সবচেয়ে বড় খারাপ লাগে গত 24 বছর গণতন্ত্রের লড়াই করে স্বাধীনতার পর ক্ষমতায় এসে সব রাজনৈতিক দল এবং চারটি ছাড়া সব সংবাদপত্র বন্ধ করে স্বেচ্ছাচারী হয়েছিলেন গনতান্ত্রীক দলটি। এর পরবর্তী 43 বছরেও তাই দেখে আসছে দেশটি। এই 43 বছরের মধ্যে যে পদ্ধতিটি সবচেয়ে বেশি গ্রহনযোগ্য ছিল সেটিও বিগত সরকারের আমলে ষোল কোটি মানুষের প্রাণের চাওয়াকে উপেক্ষা করে বাতিল করা হয়েছে। যার ফলে পরোক্ষভাবে বলা চলে যে, এই পদ্ধতি বাতিলের মাধ্যমে মূলত গণতন্ত্রকেই হত্যা করা হয়েছে। এ ব্যাপারে পূর্বেই বলা হয়েছে- প্রকৃতির বিরুদ্ধে আচরণ করলে যেমন প্রকৃতি বসে থাকে না তেমনি গণতন্ত্রের পাতা কাটলে গণতন্ত্রের ধারক ও বাহকরাও ছেড়ে দিবে না।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.