![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
তখন ক্লাস ৮/৯ এ পড়ি। তিন গোয়েন্দা বই এর পোকা ছিলাম। সব সময় মাথায় একটাই চিন্তা থাকত, কখন নতুন একটা বই কারো কাছ থেকে নিয়ে এসে পড়ব। এভাবেই বই খুজতে খুজতে একদিন বিকাল বেলা তিন গোয়েন্দার একটা নতুন বই পেলাম। বইটা পড়ার যখন শুরু করলাম, ভেতর থেকে সাদা একটা পৃষ্ঠা বের হয়ে আসল। ওটা ছিল একটা চিঠি। বই পড়া বাদ দিয়ে চিঠি পড়া শুরু করলাম। ১৯৯২/৯৩ সালে লেখা একটা চিঠি। অবাক করা ব্যাপার হচ্ছে জীবনে অনেক কিছুই পড়েছি, আবার ভুলেও গেছি, কিন্তু এক যুগ এরও বেশি আগে পড়া চিঠিটা আজও ভুলতে পারি নাই। চিঠিটার সাথে একটা কবিতা ছিল। পুরো চিঠিটা লিখে দিলাম।
মারুফ,
অনেক দিন তোর সাথে ছিলাম। নিজে ছাত্র পড়িয়ে নিজের খরচ চালাচ্ছিস তুই, আর সেখানে আমি প্রায় একটা বছর তোর সেই কষ্টের টাকায় নিজের উদর পূর্তী করছি, আর চাকুরী খুঁজে যাচ্ছি। তুই কোনদিন যে আমাকে চলে যেতে বলবি না, তা আমি ভাল করে যানি। কিন্তু আর না, এবার নিজের পথ আমি নিজেই খুঁজে নেব। দোয়া করিস আমার জন্য। জীবনের পথ চলার বাঁকে হয়ত কোন একদিন দেখা হয়ে যাবে। ভাল থাকিস। আর নিজেকে নিয়ে নিজেই একটা কবিতা লিখে ফেলেছিলাম। তোর ঋণ তো কোনদিন শোধ করতে পারব না, তাই কবিতাটা তোকে দিয়ে যাচ্ছি।
ইতি, তোর সফিক
আমি জানি একটা সময় এসে কেড়ে নেবে
আমার সবুজ সারল্য পাতার কোমলতা হারিয়ে যাবে।
একটি বৃক্ষের অগোচরে ঝড়ে পড়ব মাটিতে,
আক্ষেপ ছাড়া কিছুই করার রইবে না আমার।
এক দিন প্রকৃতি পাগল করে বষন্ত আসবে,
বৃক্ষেরা মেতে রইবে নতুন ফুলের তোষামোদে।
বৃক্ষেরা ভুলে যাক আমায়,
পাতা কুড়ুনি মেয়েটি আমার দলে আছে,
সে এসে তুলে নেবে ঝড়ে পড়া এই পাতাটিকে,
অনেক যত্নে উঠিয়ে নেবে তার পাতার ঝুড়িতে।
এরপর নিয়ে যাবে আমায় তার বাড়ির কোন এক উষ্ণ প্রান্তে।
যেখানে আমার মত অনেক ঝড়া পাতা তাদের যায়গা খুঁজে পায়।
এরপর কোন এক সকালে আমাকে সে ছুড়ে ফেলবে সেই উষ্ণ চুল্লিতে।
পুড়ে যাবে আমার সেই জীর্ণ শরীর।
তাও আমি তৃপ্ত।
অন্তত কেউ একজন কিছুক্ষণের জন্য হলেও তো আমাকে তার মমতা দেখিয়েছে।
©somewhere in net ltd.