নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বিশ্বজোড়া পাঠশালা মোর, সবার আমি ছাত্র।
আমার ছেলের বয়স দুই বছরের কাছাকাছি। কাজের বাইরে বাকিটা সময় ছেলেটাকে দেয়ার চেষ্টা করি। বাচ্চাটার সাথে সময় কাটাতে খুবই ভালো লাগে আমার। কাজে যাবার সময়টাতে ওর কাছ থেকে বিদায় নিতেও মন কেমন করে উঠে! সারাটাক্ষণ ওর সাথে কাটাতে মন চায়। বাচ্চাটা যখন হাতের আঙ্গুল ধরে ধরে হাটে তখন যে কি সুখানুভুতি হয় তা বলে বুঝাবার নয়! এই সুখ স্বর্গীয়! আল্লাহর রহমত। আমার চক্ষুশীতলকারী! বাচ্চাটা ভাঙা ভাঙা করে কথা বলতে পারে। আমাকে কখনো মা, কখনো বাবা, বাবাই, বাপ এইসব বলে ডাকে। আমি ছেলেটাকে যা বলি ছেলেটাও আমাকে তাই বলে। ব্যতিক্রম হলো আমি যখন বাচ্চাটাকে কয়েকবার ডাকার পরেও না আসে তখন বলি "ধুরু ব্যাটা"। আর বাচ্চাটা আমাকে রিপিট করে "ধুরু বাবা"। আর কিছক্ষণ পরে পরে বাইরে, বাইরে, বাইরে বলে বলে আমাকে দরজার কাছে নিয়ে যাবে। বাইরে ওকে নিয়ে যেতেই হবে তখন। আশেপাশের সব কিছুতেই ওর কৌতুহল। কৌতুহলের এই তো সময়। বিড়াল দেখলে ম্যাও ম্যাও বলবে, গরু দেখে হাম্বা বলবে আর গাড়ি দেখলে গায়ি... গায়ি... বলে গলাটা জড়িয়ে ধরবে। আকাশের চাঁদ দেখে আয় আয় আয় টি...প বলবে আর কপালে হাতের ইশারা করবে। সারাদিনে এমন হাজারো অ্যাক্টিভিটি করে আমার চারপাশটা ভরিয়ে রাখে সারাটাক্ষণ। ওর এমন আনন্দে আমিও খুশি হই। জান্নাতি সুখ অনুভব করি। হৃদয়-মন জুড়িয়ে যায়। কি যে সুখানুভুতি হয় তখন বলে বুঝানো যাবে না। একমাত্র সন্তানের মা-বাবারাই বুঝতে পারবেন। সন্তানের মুখের হাসি সারাদিনের ক্লান্তিকে ভুলিয়ে দেয়। নতুন করে বাঁচার প্রেরণা জোগায়। দোয়া করি সুস্থ ও সুন্দর থাক পৃথিবীর প্রতিটা সন্তান!
কয়েকদিন আগে লঞ্চে আগুন লাগার ঘটনায় শিশুদের প্রাণহানি আমাকে গভীরভাবে নাড়া দেয়। পত্রিকার পাতায় সে সংবাদ পড়ে নিজের অজান্তেই চোখ ভিজে উঠে। ছোট ছোট শিশুদের এমন মৃত্যুর সংবাদ শুনে মনটা ঢুকরে কেঁদে উঠে। লঞ্চের ডেকে ফিটারের আগুনে পুড়া ছবি বিষাদ এই মনটাতে আরো নাড়া দিয়ে যায়! কিভাবে সহ্য করছে তাদের মা-বাবারা! সন্তানকে কোলে নিয়ে লঞ্চ থেকে লাফ দেয়া আর তীরে এসে সন্তানের মৃত মুখ!! কি ভয়ংকর অভিজ্ঞতা! দোয়া করি কারো শত্রুরও যেন আর এমন পরিস্থিতিতে পড়তে না হয়। মনে পড়ে আমার ছেলেটার কথা। আল্লাহ যেন পৃথিবীর প্রতিটা শিশুর আগামী নিরাপদ ও সুন্দর করে দেন দোয়া করি।
আমি কন্যা শিশু ও ছেলে শিশুর মাঝে কোন পার্থক্য করিনা কখনো। বরং আমার কন্যা শিশুর প্রতিই বেশি দূর্বলতা কাজ করে। তারপরেও কন্যা শিশুর বাবা হতে নিজের মনে এক ধরনের ভয় কাজ করে। চারিদিকে শিশুদের প্রতি যে নৃশংসতার সংবাদ চোখে পরে সেই থেকেই আমার ভয়ের উৎপত্তি। ধর্ষণের যে খবরগুলো পত্রিকাতে পড়ি তাতে করে আর মেয়ে শিশু চাইতে পারিনা! আমরা যে শিশুদের জন্য এই পৃথিবী বাসযোগ্য করতে পারিনি! নৈতিকতার অবক্ষয় আর কত দূর গিয়ে ঠেকবে আমার জানা নেই। আমাদের বিচার ব্যবস্থার করুন দশা ধর্ষণকে আরো উৎসাহিত করে বলে মনে হয়। শিশু বান্ধব বাংলাদেশ আমরা কি তৈরী করতে পেরেছি? আসুন সুকান্তের ছাড়পত্র কবিতার মতো শপথ নেই শিশুদের জন্য নিরাপদ বিশ্ব গড়ার।
বাবা হবার আগে যখন বাসা থেকে দূরে থাকতাম তখন আমাকে বিদায় জানাতে গিয়ে প্রায়ই মায়ের চোখে জল দেখতে পেতাম। দেখতাম লুকিয়ে আচল দিয়ে চোখ মুছতে। তখন এতটা ফিল করতে পারতাম না। এখন বুঝি মা কেন সন্তানকে বিদায় দিতে গিয়ে চোখের জল মুছে। আমি ক্ষণিকের জন্য কাজে আসি, তবুও কেমন লাগে। আর সন্তান রেখে দূরে থাকাটা কত কষ্টের! বাড়ি যাবার সংবাদে দেখতাম বাবা আমার পছন্দের টুকটাক জিনিস গুছিয়ে রাখতো। মা আমার পছন্দের খাবার রান্না করতেন। এখনো করেন। বাবা-মা মুখে না বললেও বুঝি তাদের অন্তরে সন্তানের জন্য কেমন অনুভূতি হয়।
ছোটবেলায় যখন দেখতাম কারো বিয়ে হলে শ্বশুর বাড়ি যাবার সময় কান্না করে বাবা-মা তখন বলতাম কান্না করার কি আছে। মেয়েকে তো বিয়ে দিতেই হবে। আমি এখন এই বিষয়টা নিয়ে ভাবি মাঝে মাঝেই। আমার মেয়ে হলে তাকে শ্বশুরবাড়ি পাঠাতে কতটা কষ্ট হবে আমার। ছোট থেকে এত আদর-যত্ন করে মানুষ করার পর অন্যের ঘরে পাঠাতে প্রতিটা মা-বাবার কত কষ্ট হয়। সামাজিক এই নিয়মের বাইরে আমরা যেতে পারবো না এটা যেমন সত্য তেমনি সত্য হলো আদরের মেয়েকে অন্যের ঘরে পাঠাতে গিয়ে মা-বাবাদের কলিজা ছিঁড়ে যাবার দৃশ্য! এই কথা মনে হলেই বাচ্চার মায়ের সাথে আর রাগ করতে পারিনা কোন কিছুতেই। দোয়া করি ভালো থাকুক প্রতিটা সন্তান।
পরিশেষে সুকান্ত ভট্টাচার্যের ছাড়পত্র কবিতাটি নিবেদন করছি আপনাদের জন্য।
যে শিশু ভূমিষ্ঠ হল আজ রাত্রে
তার মুখে খবর পেলুমঃ
সে পেয়েছে ছাড়পত্র এক,
নতুন বিশ্বের দ্বারে তাই ব্যক্ত করে অধিকার
জন্মমাত্র সুতীব্র চিৎকারে।
খর্বদেহ নিঃসহায়, তবু তার মুষ্টিবদ্ধ হাত
উত্তোলিত, উদ্ভাসিত
কী এক দুর্বোধ্য প্রতিজ্ঞায়।
সে ভাষা বোঝে না কেউ,
কেউ হাসে, কেউ করে মৃদু তিরস্কার।
আমি কিন্তু মনে মনে বুঝেছি সে ভাষা।
পেয়েছি নতুন চিঠি আসন্ন যুগের
পরিচয়-পত্র পড়ি ভূমিষ্ঠ শিশুর
অস্পষ্ট কুয়াশাভরা চোখে।
এসেছে নতুন শিশু, তাকে ছেড়ে দিতে হবে স্থান;
জীর্ণ পৃথিবীতে ব্যর্থ, মৃত আর ধ্বংসস্তূপ-পিঠে
চলে যেতে হবে আমাদের।
চলে যাব- তবু আজ যতক্ষণ দেহে আছে প্রাণ
প্রাণপণে পৃথিবীর সরাব জঞ্জাল,
এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য ক’রে যাব আমি
নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
অবশেষে সব কাজ সেরে
আমার দেহের রক্তে নতুন শিশুকে
করে যাব আশীর্বাদ,
তারপর হব ইতিহাস।।
এত দীর্ঘ পোস্ট কষ্ট করে পড়ার জন্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি সকলকে। ভালো থাকবেন সবাই। দোয়া চাই আমার সন্তান আর পরিবারের জন্য।
ছবি: পরিবার ডট নেট
১৪ ই জানুয়ারি, ২০২২ রাত ২:৪১
হাবিব বলেছেন: আপনার পর্যবেক্ষণ অনেকাংশেই ঠিক আছে। আপনার সাথে একমত
২| ১৩ ই জানুয়ারি, ২০২২ সকাল ৮:৩৬
সোবুজ বলেছেন: সবই বুঝলাম এবং পড়ে ভালও লাগলো।কিন্তু অভিজ্ঞতা ছাড়া স্বর্গীয় সুখ কিভাবে বুঝলেন?
১৪ ই জানুয়ারি, ২০২২ রাত ২:৪২
হাবিব বলেছেন: কিন্তু অভিজ্ঞতা ছাড়া স্বর্গীয় সুখ কিভাবে বুঝলেন?
----- এই লাইন দ্বারা কি বুঝাতে চাইলেন বুঝলাম না ভাই।
৩| ১৩ ই জানুয়ারি, ২০২২ সকাল ১০:২৬
মোঃ মাইদুল সরকার বলেছেন:
আপনার বাবুটার জন্য আদর ও দোয়া।
কন্যা সন্তান বাবাদের পছন্দ সেটার উদারহণ আমি নিজেই। আমার এতটুকু মেয়েটা আমার জুতা এগিয়ে দিবে, খাবার খাইছি কিনা দেখবে, রাগ করলে না খেতে সে নিজেই খাওয়ানোর জন্য জোড়াজুড়ি করে আরও আরও অনেক কিছু যা পুত্র সন্তান হয়তো করতনা।
সব শিশুর নিরাপদ জীবন হোক।
১৪ ই জানুয়ারি, ২০২২ রাত ২:৪৩
হাবিব বলেছেন: আমিন। আপনার সন্তানদের জন্যও দোয়া রইলো
৪| ১৩ ই জানুয়ারি, ২০২২ দুপুর ২:০৬
মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন: অনেকদিন পরে এলেন।
১৪ ই জানুয়ারি, ২০২২ রাত ২:৪৩
হাবিব বলেছেন: নিয়মিত লেখার ইচ্ছা থাকলেও হয়ে উঠছে না। দোয়া চাই
৫| ১৪ ই জানুয়ারি, ২০২২ রাত ১২:২৭
জটিল ভাই বলেছেন:
বাবুর জন্য ভালবাসা রইলো স্যার
১৪ ই জানুয়ারি, ২০২২ রাত ২:৪৪
হাবিব বলেছেন: অশেষ কৃতজ্ঞতা ভাইয়া
৬| ১৭ ই জানুয়ারি, ২০২২ রাত ৯:১৯
খায়রুল আহসান বলেছেন: সুন্দর অনুভূতির সুন্দর কথকতা, খুব ভালো লাগল।
প্রতিটি মুহূর্তই মায়ার এবং একই সাথে মায়ার বাঁধন ছিন্ন করার! আমরা যদি একটু অনুধাবনের চেষ্টা করি!
সুন্দর পোস্টে তৃতীয় প্লাস রেখে গেলাম। + +
২২ শে জানুয়ারি, ২০২২ সকাল ৭:৫৭
হাবিব বলেছেন: পাঠ এবং চমৎকার মন্তব্যের জন্য অশেষ ধন্যবাদ প্রিয় ভাই। দোয়া করবেন।
©somewhere in net ltd.
১| ১৩ ই জানুয়ারি, ২০২২ সকাল ৮:৩৫
বিটপি বলেছেন: কন্যা শিশুর প্রতি সব বাবারাই বেশি দূর্বলতা কাজ করে। এর কারণও আছে। আমার ছেলে ছোটবেলা থেকেই নিজের বিক্রম দেখাতে শুরু করে। তার সমস্ত কর্মকান্ডেই সে যে কারো মুখাপেক্ষী নয় - এটা বুঝিয়ে দেবার একটা ইঙ্গিত ছিল। আর আমার মেয়েটা হল একটু কর্ত্রিত্ব পরায়ণ। সবাই ঠিকমত খেলো কিনা, সময়মত ঘুমাতে গেল কিনা। ঠিকমত সব কাজ না করলে কি হবে - এসব ব্যাপারে সচেতন করা - এই ব্যাপারগুলো আমার চরম ভালো লাগে। আবার খারাপও লাগে কেউ একজনের হয়তোবা এসব ভালো লাগবেনা - সে তাকে উঠতে বসতে কষ্ট দেবে।