নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অতিথি

হৃদয় হৃদয়ের জন্য

হৃদয় হৃদয়ের জন্য › বিস্তারিত পোস্টঃ

কেন আল্লাহ আমাদের সাথে কথা বলেন না?

০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ১:৩৪


কেন আল্লাহ আমাদের সাথে কথা বলেন না? — আল-বাক্বারাহ ১১৮

আজকাল সভ্য জগতের সভ্য মানুষেরা প্রশ্ন করেন, “সত্যিই যদি আল্লাহ বলে কেউ থাকে, তাহলে তিনি আমাদের সাথে কথা বলেন না কেন? আমি তো কোনোদিন কোনো অলৌকিক ঘটনা ঘটতে দেখলাম না? প্রমান কী যে আল্লাহ বলে আসলেই কেউ আছেন?” প্রথমত, তাদেরকে অভিনন্দন! তারা এমন একটি জটিল, আধুনিক, যুগোপযোগী প্রশ্ন আবিষ্কার করেছেন, যা ১৪০০ বছর আগে আরবের মরুভূমিতে ঘুরে বেড়ানো যাযাবর, অশিক্ষিত, অসামাজিক বেদুইনরা রাসুলকে করেছিল। শুধু তাই না, তাদের আগেও নবীদেরকে একই প্রশ্ন করা হয়েছিল। এর উত্তর আল্লাহ কু’রআনেই দিয়ে দিয়েছেন—

যারা বোঝে না, তারা বলে, “কেন আল্লাহ আমাদের সাথে কথা বলে না?” বা “আমাদের কাছে কোনো অলৌকিক নিদর্শন আসে না কেন?” ওদের আগের প্রজন্মও একই কথা বলে গেছে। ওদের সবার অন্তর আসলে একই রকম। আমি অবশ্যই আমার নিদর্শনগুলো যথেষ্ট পরিষ্কার করে দিয়েছি সেই সব মানুষের কাছে, যারা নিশ্চিত হতে চায়। [আল-বাক্বারাহ ১১৮]

যারা এই ধরনের প্রশ্ন করে, তাদের আসল সমস্যা হচ্ছে: তারা মনে করে না যে, ইসলাম এমন কোনো অসাধারণ ধর্ম, যা তাদের মানতে হবে। অথবা তারা মনে করে না যে, ইসলাম তাদেরকে এমন কিছু দিতে পারে, যা তারা নিজেরাই চিন্তা ভাবনা করে বের করতে পারে না। তাই তাদের দাবি হচ্ছে: আল্লাহ ﷻ যেন তাদের সাথে সরাসরি কথা বলে তাদেরকে বোঝান, কেন তারা ইসলাম মানবে? ইসলামে এমন কী আহামরি কিছু আছে যে, তা মানতে হবে?

আপনাকে যখন কোনো গাড়ির সেলসম্যান একটা সাধারণ গাড়ি বিক্রি করার চেষ্টা করে, সে আপনাকে অনেক বোঝাবে: কেন আপনার গাড়িটা কেনা উচিত, এই গাড়ির চমৎকার বৈশিষ্ট্য কী যা অন্য গাড়ির নেই, কীভাবে এই গাড়িটা সমাজে আপনার স্ট্যাটাস বাড়িয়ে দেবে ইত্যাদি। সে নানা ভাবে চেষ্টা করবে আপনাকে গাড়িটা গছিয়ে দেওয়ার, কারণ গাড়িটা এমন কোনো অসাধারণ কোনো গাড়ি নয়, যা কেনার জন্য মানুষ গভীর আগ্রহে কয়েক মাস আগে থেকে এপয়েন্টমেন্ট নেওয়ার জন্য লাইন ধরে থাকে।

ধরুন আপনি একদিন সিদ্ধান্ত নিলেন: আপনি একটা বিশেষ দামী ব্র্যান্ডের গাড়ি কিনবেন। আপনার বন্ধুরা আপনাকে অনেক বুঝিয়েছে যে, এর চেয়ে ভালো, নিরাপদ গাড়ি আর নেই। আপনি নিজেও অনেক পড়াশুনা করে দেখলেন যে, আসলেই এর চেয়ে শক্তসামর্থ্য, নিরাপদ গাড়ি এখন পর্যন্ত কোনো কোম্পানি বানায়নি। কিন্তু কেনার আগে আপনি দাবি করলেন: সেই গাড়ির কোম্পানির সিইও-র সাথে আপনি নিজে কথা বলবেন, তারপরেই সেই গাড়ি কিনবেন, নাহলে কিনবেন না। সিইও যেন নিজে আপনাকে ফোন করে তার গাড়ি কিনতে অনুরোধ করে।

যারা দাবি করে: আল্লাহ যেন তাদেরকে এমন কিছু করে দেখান, যাতে করে তাদের আর কোনো সন্দেহ না থাকে: ইসলাম একটি সত্য ধর্ম — তাদের অবস্থাটা হচ্ছে অনেকটা এরকম। তাদের বোঝা উচিত: একটা সত্যিকারের ভালো গাড়ি কেনার কাস্টোমারের কোনো অভাব নেই। একজন দুইজন মাথামোটা কাস্টমার তাদের গাড়ি না কিনলে কোম্পানির কিছুই যায় আসে না। বরং মাঝখান থেকে সেই কাস্টমারদের কপাল খারাপ যে, তারা একটা ভালো গাড়ি পেল না।

আবার যারা আল্লাহর ﷻ সাথে কথা বলার দাবি করে, তারা যে আসলে ইসলাম সম্পর্কে নিশ্চিত হতে চাচ্ছে তা নয়। তারা আগে থেকেই সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, তারা ইসলাম মানবে না। তারা শুধু খামোখা তর্ক দাঁড় করাচ্ছে, যেন তাদের নিজেদের বিশ্বাস এবং যুক্তিকে সঠিক বলে প্রমান করতে পারে। কারো যদি ইসলাম সম্পর্কে সত্যিই জানার আগ্রহ থাকে, নিজেকে পরিবর্তন করার মানসিকতা থাকে, সত্যকে মেনে নেওয়ার মত উন্মুক্ত মন থাকে, তার জন্য কু’রআনের আয়াতই যথেষ্ট। আল্লাহর ﷻ সাথে কথা বলার কোনো দরকার তাদের নেই। আল্লাহর ﷻ সাথে কথা না বলে গত ১৪০০ বছরে কোটি কোটি অমুসলিম মানুষ মুসলিম হয়েছে শুধুই কু’রআন পড়ে, মুসলিমদের সংস্পর্শে থেকে ইসলামকে কাছ থেকে দেখে।

একারণেই এই আয়াতে আল্লাহ ﷻ বলছেন যে, যাদের নিশ্চিত হওয়ার জন্য সত্যিকারের আগ্রহ আছে, যাদের নিজেদেরকে পরিবর্তন করার মত যথেষ্ট শক্ত মানসিকতা আছে, তাদের জন্য আল্লাহর ﷻ বাণী এবং আল্লাহর ﷻ তৈরী এই অসাধারণ সৃষ্টিজগতই যথেষ্ট। আল্লাহর ﷻ সাথে সরাসরি কথা বলার দাবি শুধুমাত্র বুদ্ধিহীনরাই করতে পারে।

আমাদের কাছে কোনো অলৌকিক নিদর্শন আসে না কেন?

আল্লাহ যে সত্যিই আছেন এবং কু’রআন যে সত্যিই তাঁর বাণী—তা নিয়ে অনেকেই মাঝে মধ্যেই দ্বিধা-দ্বন্দ্বে ভোগেন; বিশেষ করে যখন তার জীবনে কোনো বড় ধরনের সমস্যা শুরু হয়। বিংশ শতাব্দীর পর থেকে এই সমস্যাটা ইন্টারনেটের কারণে মহামারীর আকারে ছড়িয়ে পড়েছে। আজকের কিশোর-তরুণরা পাশ্চাত্যের কার্টুন, চলচ্চিত্র আর ইন্টারনেটের বদৌলতে এমন সব লেখালেখি পড়ছে, যেগুলো ধর্মীয় শিক্ষাকে ব্যঙ্গ করে; আল্লাহ অস্তিত্বকে যুক্তির গোলকধাঁধাঁয় হারিয়ে দিতে চায়। এগুলো পড়ে প্রথমত ধর্ম, নবী এবং সৃষ্টিকর্তার প্রতি তাদের শ্রদ্ধা যেমন পুরোপুরি চলে যাচ্ছে, একই সাথে তারা ডিসেন্সিটাইজড বা অনুভূতিহীন, ভোঁতা হয়ে যাচ্ছে। তাদেরকে তখন যথেষ্ট যুক্তি দেখালেও কোনো লাভ হয় না। তারা তাদের বিভ্রান্তির গোলকধাঁধায় ঘুরপাক খেতেই থাকে।

কাউকে অলৌকিক ঘটনা দেখানোর একটি সমস্যা হলো: ঘটনাটি যারা নিজের চোখে দেখে, তাদের উপরে ঠিকই বিরাট প্রভাব পড়ে, কিন্তু তাদের ভবিষ্যৎ বংশধরেরা—যারা শুধু তাদের পূর্বপুরুষের মুখে ঘটনার বর্ণনা শোনে—তাদের খুব একটা গায়ে লাগে না। ধরুন, আপনি একদিন কক্সবাজারে সমুদ্রের তীরে হাঁটছেন। এমন সময় প্রচণ্ড বাতাস শুরু হলো, আর দেখলেন বঙ্গোপসাগরের পানি দুইভাগ হয়ে গিয়ে সাগরের মধ্য দিয়ে একটা রাস্তা হয়ে গেল। তারপর সেই রাস্তা দিয়ে হেঁটে পার হয়ে এল বার্মার অত্যাচারিত মুসলিম।

এটা দেখে আপনার ওপর একটা বিরাট প্রভাব পড়বে। আপনি হয়তো পরের মাসেই উমরাহ করতে চলে যাবেন। কিন্তু আপনি যদি একদিন আপনার ছেলেমেয়েদের চোখ বড় বড় করে গল্পটা বলেন, “জানো? একদিন আমি দেখলাম: বঙ্গোপসাগরের পানি সরে গিয়ে সাগরের মধ্যে দিয়ে একটা শুকনা রাস্তা তৈরি হয়ে গেল, আর বার্মার গরিব মুসলিমরা হেঁটে বাংলাদেশে চলে এল!”—তাদের উপরে কাহিনিটার সেরকম কোনো প্রভাব পড়বে না, কারণ তাদের কাছে সেটা একটা গল্প ছাড়া আর কিছু নয়। তারা সেই ঘটনা শোনার পর দিন থেকেই ভিডিও গেম খেলা, মুভি বা হিন্দি সিরিয়াল দেখা, বিয়েতে সেজেগুজে অর্ধ নগ্ন হয়ে যাওয়া —সব বন্ধ করে আদর্শ মুসলিম হয়ে যাবে না।

আল্লাহ যে আছেন, তার প্রমাণ কী?

যারা এখনও আল্লাহর অস্তিত্ব নিয়ে ঠিক পুরোপুরি বিশ্বাস করেনি, একধরনের দোটানার মধ্যে ঝুলে আছে, তাদেরকে আপনি যদি প্রশ্ন করেন, “আপনি কেন বিশ্বাস করেন না যে, আল্লাহ সত্যিই আছেন?”—তাহলে আপনি নিচের কোনো একটা উত্তর পাবেন:

১) আল্লাহ থাকতেও পারে, আবার নাও পারে, আমি ঠিক জানি না। যেহেতু আমি জানি না সে সত্যিই আছে কি না, তাই আমি ধরে নিচ্ছি যে সে নেই এবং আমি আমার ইচ্ছা মতো জীবন যাপন করব।

২) আল্লাহ আছে কি নেই, সেটা বিজ্ঞান কখনই নিঃসন্দেহে প্রমাণ করতে পারবে না। যেহেতু আল্লাহর অস্তিত্ব প্রমাণ করা সম্ভব না, তাই আমি ধরে নিচ্ছি যে সে নেই, এবং আমি আমার মতো করে জীবন যাপন করব।

উপরের উত্তর দুটি লক্ষ করলে দেখবেন, সে ‘বেনিফিট অফ ডাউট’ দিচ্ছে ‘আল্লাহ নেই’-কে। সে কিন্তু ‘আল্লাহ আছেন’—এটা ধরে নিতে রাজি হচ্ছে না। সে যদি সত্যিই নিরপেক্ষ হয়, তাহলে সে কেন নিচের উত্তরগুলোর একটা দিচ্ছে না?

১) আল্লাহ থাকতেও পারে, আবার নাও পারে, আমি ঠিক জানি না। যেহেতু আমি জানি না তিনি সত্যিই আছেন কিনা, তাই আমি ধরে নিচ্ছি তিনি আছেন এবং আমি তাঁর আদেশ মতো জীবন পার করব।

২) আল্লাহ আছেন কি নেই, সেটা বিজ্ঞান কখনই নিঃসন্দেহে প্রমাণ করতে পারবে না। তাই আমি ধরে নিচ্ছি তিনি আছেন এবং আমি তাঁর আদেশ মতো জীবন পার করব।

কিন্তু এই ধরনের উত্তর আপনি পাবেন না। বেশিরভাগ মানুষ ধরে নিবে আল্লাহ ﷻ নেই, কারণ আল্লাহ ﷻ আছেন ধরে নিলেই নিজেকে পরিবর্তন করতে হবে: নামাজ পড়তে হবে, রোজা রাখতে হবে, যাকাত দিতে হবে, হিন্দি সিরিয়াল এবং পর্ণ দেখা বন্ধ করতে হবে, ফেইসবুকে হাঁ করে অন্যের বেপর্দা ছবি দেখা বন্ধ করতে হবে—এগুলো ঠিক করার কোনো ইচ্ছা তাদের নেই। তাহলে তাদের সাথে তর্ক করে শেষ পর্যন্ত কী লাভটা হচ্ছে?

যদি মৃত্যুর পরে গিয়ে দেখি সব সত্যি, তাহলে কী হবে?

ধরুন আপনি এদের কাউকে বললেন, “ভাই, আপনার কথা যদি সত্যি হয় যে, আল্লাহর অস্তিত্ব নেই, মৃত্যুর পরে কোনো জগত নেই, তাহলে আপনি যখন মারা যাবেন, তখন আপনার অস্তিত্ব শেষ। আপনি কোনোদিন জানতে পারবেন না যে, আপনার ধারণাটা সঠিক ছিল কিনা। কিন্তু ধরুন আপনি ভুল, আর মারা যাওয়ার পর দেখলেন, আল্লাহ সত্যিই আছেন। জাহান্নামের যেসব ভয়ঙ্কর শাস্তির কথা পড়ে আপনি হেসে উড়িয়ে দিয়েছিলেন, সেগুলো সব সত্যি ঘটনা। তখন কী হবে একবার ভেবে দেখেছেন?”

এই অবস্থায় বেশিরভাগ মানুষের প্রতিক্রিয়া হবে, “এরকম যুক্তি তো ভুতের বেলায়ও দেখানো যায়। তাই বলে কি ‘আল্লাহ আছেন’ ধরে নিয়ে আমাকে ইসলাম মানতে হবে নাকি? এটা কী রকম যুক্তি হলো?”

অথচ ‘আল্লাহ নেই’, এটা ধরে নেওয়াটা তাদের জন্য ঠিকই যুক্তিযুক্ত। তাদেরই যুক্তি অনুসারে: আল্লাহ আছেন, নাকি নেই–সেটা ৫০-৫০ সম্ভাবনা। তারপরেও তারা ‘আল্লাহ নেই’ এটা ঠিকই মেনে নিতে রাজি, কিন্তু ‘আল্লাহ আছেন’ এটা মেনে নিতে রাজি না।

একজন বুদ্ধিমান নাস্তিক এভাবে লাভ-ক্ষতির হিসেব করবে—

ধর্ম মানলে আমাকে প্রায় ৭০-৮০ বছর কিছু কষ্ট করতে হবে, কিছু ত্যাগ স্বীকার করতে হবে, কিছু আরাম-আয়েস ছেড়ে দিতে হবে। আর ধর্ম না মানলে, আমি ৭০-৮০ বছর আমোদ-ফুর্তি করে যাবো।

ধরে নেই ধর্ম মিথ্যা। তাহলে মৃত্যুর পরে আমার অস্তিত্ব সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে যাবে। এক্ষেত্রে দুটো ঘটনা ঘটতে পারে—
যদি আমি ধর্ম মেনে চলি, আর ধর্ম মিথ্যা হয়, তাহলে আমি আসলে বুঝবোই না আমি দুনিয়াতে কী হারিয়েছি, বা কী কী করতে পারতাম, যা ধর্ম মানার কারণে করতে পারিনি। আমার কোনোই আফসোস থাকবে না, কারণ আফসোস করার জন্য অস্তিত্বই থাকবে না। সুতরাং ধর্ম মিথ্যা হলে আমি আসলে কিছুই হারাবো না। তার মানে ধর্ম মিথ্যা হলে এবং আমি ধর্ম মানলে লাভ শূন্য, ক্ষতি তুলনামূলকভাবে অল্প।

আর যদি আমি ধর্ম মেনে না চলি, আর ধর্ম মিথ্যা হয়, তাহলেও আমি কিছুই টের পাবো না। তবে আমি প্রায় ৭০-৮০ বছর কিছু আমোদ ফুর্তি করে যাবো। সুতরাং ধর্ম মিথ্যা হলে, আর আমি ধর্ম না মানলে লাভ কিছুটা, ক্ষতি শূন্য।

ধরে নেই ধর্ম সত্যি। তাহলে দুটো সম্ভাবনা—

আমি ধর্ম মানলে তুলনামূলকভাবে অল্প ত্যাগের বিনিময়ে বিরাট পুরস্কার পাবো। সুতরাং এক্ষেত্রে লাভ বিরাট, ক্ষতি অল্প।
আর যদি ধর্ম সত্যি হয়, আর আমি ধর্ম না মানি, তাহলে অল্প আমোদ-ফুর্তির জন্য আমি বিরাট শাস্তি পাবো। সুতরাং এক্ষেত্রে লাভ অল্প, ক্ষতি বিরাট।

দেখা যাচ্ছে, ধর্ম মিথ্যা হলে লাভের সম্ভাবনাও অল্প, ক্ষতির সম্ভাবনাও অল্প। কিন্তু ধর্ম সত্যি হলে লাভের সম্ভাবনাও বিরাট, ক্ষতির সম্ভাবনাও বিরাট। যাদের কিছুটা ব্যবসায়ী বুদ্ধি আছে, তাদের আশা করি বুঝতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয়, তাদের এখন কীসে ঝুঁকি নেওয়া উচিত।

অলৌকিক কিছু দেখালে কী লাভ হবে?

যারা অলৌকিক প্রমাণ দেখতে চায়, ধরুন তাদেরকে একটা অলৌকিক প্রমাণ দেখানো হলো। একদিন সে সকাল বেলা ঘুমের থেকে উঠে দেখল: তার সামনে আলোর তৈরি এক মধবয়স্ক প্রবীণ ভদ্রলোক দাঁড়িয়ে আছেন। সেই অলৌকিক পুরুষ গম্ভীর স্বরে তাকে বললেন, “বৎস, আমি আল্লাহর ﷻ কাছ থেকে প্রেরিত দূত। তুমি কালকে থেকে কু’রআন মানতে পারো। আমি তোমাকে গ্যারান্টি দিচ্ছি: কু’রআন সত্যিই আল্লাহর বাণী।”—এখন সে প্রমাণ করবে কী করে যে, সেটা তার কোনো হেলুসিনেশন বা মতিবিভ্রম ছিল না? আবার ধরুন: আগামীকাল থেকে সে আকাশ থেকে গম্ভীর স্বরে এক ঐশ্বরিক বাণী শোনা শুরু করল। সে কীভাবে প্রমাণ করবে যে, সেটা তার কোনো মানসিক সমস্যা নয়?

তর্কের খাতিরে ধরুন: আপনি এদের কাউকে একদিন প্রমাণ করে দেখালেন যে, আল্লাহ সত্যিই আছেন। আপনি এমন এক কঠিন প্রমাণ দেখালেন, যার বিপক্ষে সে কোনো কিছুই উপস্থাপন করতে পারল না। আপনার প্রমাণ দেখার পর, সে কি পরদিন থেকেই একদম আদর্শ মুসলিম হয়ে যাবে, কারণ সে আপনার যুক্তি খণ্ডন করতে পারেনি? সে কি তার লাইফ স্টাইল একদম পালটিয়ে ফেলবে এবং ইসলামের নিয়ম অনুসরণ করা শুরু করবে?

বেশিরভাগ মানুষই সেটা করবে না। মানুষ আল্লাহকে তখনি বিশ্বাস করে, যখন সে নিজে থেকে ‘উপলব্ধি’ করতে পারে যে, তিনি সত্যিই আছেন। যারা সেটা পারে না, তাদেরকে কিছু যুক্তি-প্রমাণ দেখালেই তারা আল্লাহর উপর পুরোপুরি বিশ্বাস করা শুরু করে দেয় না এবং তাদের জীবনকে পালটিয়ে ফেলে না। ঈমান একটি দীর্ঘ সফর, যার গন্তব্যে শুধু তর্ক করে পৌঁছা যায় না।

আল্লাহর অস্তিত্বের প্রমাণ

আল্লাহর অস্তিত্ব যে রয়েছে, তার পক্ষে হাজার হাজার প্রমাণ মহাবিশ্বে ছড়িয়ে আছে। তাঁর অস্তিত্বের পক্ষে সবচেয়ে বড় প্রমাণ হলো এই সৃষ্টিজগত। আল্লাহর অস্তিত্বে বিশ্বাস না করা মানে হলো এটাই বিশ্বাস করা যে, এই পুরো সৃষ্টিজগত এসেছে শূন্য থেকে, কোনো কারণ বা ঘটক ছাড়া—যা একটি অবৈজ্ঞানিক দাবি। যাদের বিজ্ঞান নিয়ে যথেষ্ট পড়াশুনা আছে, তারা এই ধরনের অবৈজ্ঞানিক দাবি করেন না। শুধুই উঠতি ‘বিজ্ঞানীদের’ মধ্যে এই ধরনের হাস্যকর দাবি করতে দেখা যায়, যাদের পড়াশুনা বিজ্ঞানের দুই-একটি শাখার মধ্যেই সীমাবদ্ধ।

যারা নিরপেক্ষভাবে, আন্তরিক জানার আগ্রহ থেকে আল্লাহকে খুঁজে বেড়ান, শুধু তাদের পক্ষেই শেষ পর্যন্ত তাঁকে খুঁজে পাওয়া সম্ভব হয়। তাঁকে ﷻ খুঁজে পাওয়াটা একটা বিরাট সন্মান। এই সন্মান মানুষকে অর্জন করতে হয়।

নাস্তিক এবং অধার্মিকদের দেখানো জনপ্রিয় সব যুক্তি এবং প্রমাণগুলোর মধ্যে যে আসলে কত ফাঁকফোকর আছে, সেটা জানার জন্য এই তিনটি বই বেশ কাজের– ১) গণিতবিদ, ফিলসফার এবং বেস্ট সেলার লেখক ড: ডেভিড বারলিন্সকি-এর লেখা The Devil’s Delusion, ২) ‘আধুনিক নাস্তিকতার জনক’ নামে কুখ্যাত নাস্তিক ফিলসফার এনথনি ফ্লিউ-এর ৭০ বছর পর আস্তিক হয়ে যাওয়ার পরে লেখা There is a God, ৩) The Human Genome প্রজেক্টের প্রধান, বিশ্বের সবচেয়ে নামকরা বিজ্ঞানীদের একজন: ড: ফ্রান্সিস কলিন্স-এর লেখা The Language of God।

শূন্য থেকে সৃষ্টিজগত তৈরি হওয়াটা যে যৌক্তিকভাবে হাস্যকর একটা তত্ত্ব, সেটা নিয়ে ড: ডেভিড বিস্তারিত যৌক্তিক প্রমাণ দিয়েছেন। এমনকি মাল্টিভারস তত্ত্ব যে আসলে একটা পলিটিকাল কৌশল, যেখানে দুর্বোধ্য গণিতের আড়ালে নাস্তিকরা লুকিয়ে থেকে তাদের সেক্যুলার মতবাদ প্রচার করে যাচ্ছে–সেটা তিনি বিস্তারিতভাবে তুলে ধরেছেন। DNA-তে ৩০০ কোটি অক্ষরে যে এক প্রচণ্ড সৃজনশীল এবং অকল্পনীয় জ্ঞানী সত্তার স্বাক্ষর স্পষ্টভাবে লেখা আছে, সেটা ড: ফ্রান্সিস সুন্দরভাবে দেখিয়েছেন, যা আধুনিক নাস্তিকতার জনক এনথনি ফ্লিউকেও শেষ পর্যন্ত আস্তিক হতে বাধ্য করেছে।

যারা আমাকে পাওয়ার জন্য যথেষ্ট চেস্টা করবে, তাকে আমি অবশ্যই, অবশ্যই পথ দেখাবোই| আল্লাহ অবশ্যই তাদের সাথে আছেন, যারা ভালো কাজ করে। [আল-আনকাবুত ২৯:৬৯]

সংগৃহীত ও সংকলিত

https://www.facebook.com/elias.ahmed.733/posts/789669931098816:0

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.