![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মধুমিতার কাছে আমি শেষ চিঠি লিখতে বসেছিলাম। চিঠিতে মধুমিতা কে সুষমা, অনুপমা, রামা, সুহাসিনী সব রকম উপমা দিলাম। তারপর শব্দ গুলো কেটে দিলাম। মধুমিতার কাছে এটা আমার শেষ চিঠি। শেষ চিঠিতে কেউ সুষমা, অনুপমা টাইপের কিছু উপমা দেয় না। এমন উপমা শুধু প্রেম পত্রে দেয়া হয় যাতে প্রেমিকা খুশি হয়ে আবার চিঠির প্রত্যুত্তরে একবার ভালবাসি শব্দ টা বেশি করে লিখে দেয়। কিন্তু এই চিঠিটা যখন মধুমিতার কাছে পৌঁছাবে তখন মধুমিতা আর আমার প্রেমিকা থাকবে না। সে এই মুহূর্তে অন্যকারো বাগদত্তা। অন্যকারো ঘরণী হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। ঠিক এমন সময় পুরনো প্রেমিকের কাছ থেকে অনুপমা টাইপের কোন চিঠি নিশ্চয়ই কেউ আশা করবে না।
শেষ চিঠি হবে এমন, যে চিঠি পড়ে কেউ কিছু সময় কাঁদবে। এতে আবেগ থাকবে, দুঃখ থাকবে। যখন মধুমিতা আমার পাশে ছিল তখনকার কোন সুখকর ঘটনা উল্লেখ করে প্রশ্ন করতে হবে "তোমার কি সেই ঘটনা গুলো একবারো মনে পড়ছে না?? " শেষ চিঠি টি লিখার সময় নিশ্চয়ই আমার চোখে জল আসা উচিৎ। কয়েকফুটা জল গিয়ে চিঠির পৃষ্ঠায় টপ করে পড়তে হবে যাতে মধুমিতা দেখে বুঝতে পারে চিঠি লিখার সময় আমি কাঁদছিলাম। টাকায় টাকা আসে ঠিক সে রকম একজনের চোখের জলে আরেকজনের চোখে জল আসে। কিন্তু আমার চোখে জল আসছে না। শুনেছিলাম অতিরিক্ত কষ্টে মানুষের চোখের জল শুকিয়ে যায়। আমার ও মনে হয় ঠিক তাই হয়েছে। আমি চিঠির এই পৃষ্ঠা টি ছিঁড়ে ফেলে দিলাম। নতুন করে চিঠি লিখতে বসলাম। এবার আর কোন উপমা দিলাম না লিখলাম বড় বড় অক্ষরে স্মৃতিচারণকারী মধুমিতা। যে জীবনে স্মৃতি হয়ে থাকবে তাকে ত স্মৃতিচারণকারী ই বলা যায়। চিঠির কয়েক লাইন লিখলাম। কিন্তু পড়ে মোটেও ভাল লাগে নি। লাইন গুলোতে কোন দুঃখ প্রকাশ হয় নি। এই চিঠি পড়ে মধুমিতা হেসে হেসে বলবে পাগল টা শেষ চিঠিতেউ রোমাঞ্চকর কথা বার্তা লিখেছে। মনে হচ্ছে আগের ছিঁড়ে ফেলা পৃষ্ঠা অভিশাপ দিয়েছে সেজন্য এই পৃষ্ঠার লিখা আগের চাইতেও বেশি বাজে হয়েছে। ছিঁড়ে ফেলা পৃষ্ঠা কষ্ট পেয়েছে তাই আমার এই পৃষ্ঠায় এসে নতুন করে লিখতে গিয়ে অভিশাপ লেগেছে। আমার এই কথা টা মধুমিতা কে চিঠিতে লিখতে হবে। বলতে হবে মধুমিতা ছিঁড়ে ফেলা পৃষ্ঠাও অভিশাপ দেয়। সে অভিশাপ নতুন করে আর কিছু লিখতে গেলে বাঁধা দেয়। মধুমিতা আমাকেউ তুমি একটা নষ্ট পৃষ্ঠার মতো তোমার জীবন থেকে ছিঁড়ে ফেলে দিয়েছ। তুমি সাবধান থেকো তোমার অভিশাপ লাগতে পারে। নতুন জীবন সাজাতে বাঁধা হতে পারে সে অভিশাপ। কিন্তু আমি তোমার সর্বদা মঙ্গল কামনা করছি। আমি ছেঁড়া পৃষ্ঠা টি আবার তুলে নিয়ে আঁটা দিয়ে প্যাডে লাগিয়ে নিয়েছি। আমার অভিশাপ কেটে গেছে। আমার লিখায় এখন অনেক আবেগ আসছে, আমার চোখে জল আসছে। দু এক ফুটা চোখের জল চিঠির লিখার উপর টপ করে পড়ছে। যেখানে পড়ছে সেখানে কাগজ নরম হয়ে যাচ্ছে। মধুমিতা আমার চোখের জল পৃষ্ঠার কাগজ যেরকম নরম করে দিচ্ছে সেরকম কি আমার চোখের জল তোমার মন কখনো নরম করেছিল?? তুমি প্রশ্ন এড়িয়ে যেতে জানো। আমি জানি তুমি খুব সুকৌশলে এই প্রশ্ন গুলোও এড়িয়ে যাবে। হয়তো আমার এই চিঠির উত্তর দেয়াও এড়িয়ে যাবে। শেষ চিঠিটি লম্বা হওয়া প্রয়োজন। শেষ চিঠিতে অনেক কিছু লিখতে হয়। আমি তোমাকে ছাড়া বাঁচবা না কিংবা তোমার চলে যাওয়া আমার জীবনে কি কি প্রভাব ফেলবে এমন টাইপের কিছু কথাও লিখা প্রয়োজন। তা না হলে মধুমিতা ভাববে আমি এতদিন ছল করেছি। আধৌ ওকে ছাড়া আমার কিছু যায় আসে কি না সে ব্যাপারে স্পষ্ট অভিমত ও লিখতে হবে। শেষ চিঠিটি স্পষ্ট হওয়া চাই। মধুমিতা কে নিয়ে কয়েকটা বেদনার কাব্য ও এতে লিখা যেতে পারে। কবিতা গুলো পড়ে হয়তো মধুমিতা ফিরে আসবে না ঠিক কিন্তু মনে মনে ভাববে আমি ত একটা কবির জন্ম দিলাম। এটাই বা মন্দ কি??। কবিতা গুলো পড়ে মধুমিতা কাঁদতেও পারে। কিন্তু আমার এই মুহূর্তে কোন দুঃখের, বিচ্ছেদের কবিতা মনে পড়ছে না। প্রিয়তমা টাইপের কিছু ছন্দ সামনে চলে আসছে যেগুলো শেষ চিঠির জন্য মোটেও উপযোগী নয়।
আমি কবিতা লিখার চিন্তা কাক তাড়ানোর মতো মাথা থেকে তাড়িয়ে দিলাম। তারপর আরও কয়েক লাইনন আনন্দ বেদনার কথা লিখলাম। কিন্তু তারপরও চিঠির দৈর্ঘ্য আমি আর বড় করতে পারছি না। শেষ চিঠি এত ছোট দেখে আমারও ছিঁড়ে ফেলতে ইচ্ছে করছে মধুমিতা হয়তো এত কম লিখা দেখলে অভিমানে চিঠি টি ছুঁড়ে ফেলে দিবে। অবশ্য ব্রেক আপ এর পরে কেউ অভিমান করে না, এড়িয়ে চলে। মধুমিতা এখন থেকে আমাকে এড়িয়েই চলবে। আমি চিঠিটি এখানেই সমাপ্ত রাখলাম। কিন্তু শেষার্ধ কি লিখে শেষ করবো?? ইতি টাইপের কোন কিছু দিবো?? না ইতি দেয়া যাবে না অনিরুদ্ধ রা মধুমিতাদের কখনো ইতি দেয় না। স্মৃতি করে রাখে। আমি ইতির বদলে দিলাম -
.
"তোমার স্মৃতিপট অনিরুদ্ধ..."
.
আমি চিঠিটা ভাঁজ করে একটি নীল খামে ভর্তি করলাম। মধুমিতাদের চিঠি সবসময় নীল খামে দিতে হয়। জ্যোৎস্নার নীল আলোর সাথে ওদের অনেক মিল থাকে। জ্যোৎস্নার আলো মুখে এসে পড়লেও জ্যোৎস্না কে কখনো স্পর্শ করা যায় না। তাই বলে জ্যোৎস্না হারিয়েও যায় না। প্রতিরাতে ঠিক ই আসে। এদের ধর্ম তাদের দূর থেকে দেখতে হয়। মধুমিতা আমার কষ্ট হচ্ছে তোমাকে জ্যোৎস্না ভাবতে। তবে মধুমিতা আমি তোমাকে না ছুঁতে পারলেও এখান থেকে আমি তোমার আরও কাছে আসার চেষ্টা করবো তোমার পাশে তারা হয়ে। প্রতিরাতে আমরা নক্ষত্র তিথি মেনে মেনে নিয়ম করে একসাথে আকাশে থাকবো। আমি তারা আর তুমি জ্যোৎস্না হয়ে।
.
চিঠি খামে ভরে পোষ্টঅফিস যাচ্ছি চিঠি মধুমিতার ঠিকানায় ড্রাফট করতে। পথেই পোষ্টঅফিসের পিয়ন কাকুর সাথে দেখা। পিয়ন কাকু কে দেখে বললাম, নমষ্কার কাকু, দেখা হয়ে ভালই হয়েছে আমি আপনার কাছেই যাচ্ছিলাম।
পিয়ন কাকু নমষ্কারের উত্তর দিয়ে বললেন, ভাইপো অনিরুদ্ধ.. আমিও ত তোমার কাছেই যাচ্ছিলাম ব্যাটা...।
আমি বললাম, কেন কাকু??
পিয়ন কাকু পানের পিক ফেলে বললেন, দেখো ত ভাইপো.. তোমার নামে একখানা চিঠি এসেছে..। এই পথেই যাচ্ছিলাম তাই ভাবেছিলাম তোমার বাড়িতে একবার উঁকি দিয়ে বৌঠান কেও দেখে আসবো আর তোমার চিঠিটাও তোমাকে দিয়ে আসবো...তা তোমার মা কেমন আছেন??
আমি বললাম, কাকু মা ভালই আছেন। কই চিঠিটা দেখি??
কাকু চিঠিটা ঝুলি থেকে বের করতে করতে বললেন, তোমার মুখখানা অমন শুকনো লাগছে কেন বাপু??
আমি বললাম, না কাকু। এই ক'দিন ধরে শরীর খানা খারাপ যাচ্ছে। হয়তো সেজন্যই মুখ খানা এমন মলিন লাগছে।
পিয়ন কাকু আমার হাতে চিঠিটা ধরিয়ে দিয়ে বললেন, আচ্ছা বাপু তাহলে আমি এখন যাই। সবার চিঠি সবার হাতে পৌঁছে দিতে হবে ক্ষণ।
আমি বললাম, কাকু বাড়িতে একবার গিয়ে মাকে দেখে আসবেন...।
কাকু বললেন, সময় হলে ক্ষণ যাবো নে...।
তারপর কাকু চিঠি টি আমার হাতে দিয়ে চলে গেলেন।
কাকু চলে গেছেন। কিন্তু আমি উনার হাতে আমার চিঠিটি দিতে ভুলে গেছি। মনে মনে ভাবলাম অর্ধেক টা পথ ত এসেই গেছি আর কয়েক ক্রোশ হাঁটলেই পোষ্ট অফিসে। কষ্ট করে গিয়েই চিঠি টি পোষ্ট করে আসবো।
.
চিঠিটি লাল খামে মোড়ানো। খামের উপর হাতে আঁকা নকশা করা। এমন খামে মধুমিতাই আমাকে চিঠি দেয়। অসময়ে মধুমিতার চিঠি। অসময়ের ফল ভালো হয় না। আমি চিঠি টা খুলে দেখলাম। চিঠিটির দৈর্ঘ্য অত্যন্ত ছোট। দুই লাইনের একটা চিঠি। পড়ে বুঝলাম এটা আসলে চিঠি নয়, সতর্কবাণী। চিঠিতে লিখা " অনিরুদ্ধ আমার বিয়ের কথা বার্তা হচ্ছে এতটুকুই তুমি জানতে। কিন্তু এর মধ্যে বরপক্ষরা আমাকে দেখার পর তাড়াতাড়ি বিয়ের আয়োজন করতে বলে। বর বিলেত প্রবাসী। গঞ্জে দোকান বাড়ির অভাব নেই। এমন বর মা-বাবারা হাত ছাড়া করতে চান নি। তাই বরপক্ষের কথায় এই সপ্তাহেই বিয়ের আয়োজন করা হয়ে গেছে। তোমার হাতে যখন চিঠিটি পৌঁছাবে তখন হয়ত আমি আর তোমার মধুমিতা থাকবো না। অন্যকারো ঘরণী হয়ে এক বাধ্য বধূর বেশে অন্য কোন পুরুষের বুকে মাথা রাখবো। হয়তো এর ফাঁকে আমার চোখের জল গড়িয়ে পড়বে কিন্তু কেউ বুঝবে না। তুমিও জানবে না। আমাকে আর কোনদিন চিঠি লিখো না। জানই ত মেয়েদের একবার বিয়ে হয়ে আর পিছনে ফেরার পথ থাকে না। আমাকে ক্ষমা করে দিও..ইতি মধুমিতা"
মধুমিতা আমাকে আজ "ইতি মধুমিতা" লিখেছে। অন্যদিন লিখত তোমার মধুমিতা। চিঠির পৃষ্ঠার ভিতর প্রতিবার মধুমিতা ষড়ঋতুর কোন একটা ফুলের পাপড়ি ছিটিয়ে দিতো। আমি বলতাম ফুল গুলো ছিঁড়ে এভাবে পাপড়ি দেয়ার কি দরকার। ফুল ছিঁড়তে নেই। মধুমিতা বলতো এতে নাকি চিঠির পৃষ্ঠার ফুলের ঘ্রাণ লেগে থাকে। মধুমিতা এবার চিঠির সাথে ফুলের পাপড়ির ঘ্রাণ লাগিয়ে দেয় নি। কিন্তু আমি চিঠির মধ্যে ঠিক ই ঘ্রাণ পাচ্ছি। দুঃখের ঘ্রাণ, কষ্টের ঘ্রাণ, কান্নার ঘ্রাণ। আমি আমার বুকপকেট থেকে মধুমিতার জন্য লিখা চিঠিটি বের করলাম। মনে মনে বললাম, মধুমিতা তোমার কথার অনর্থ হবে না। এই চিঠি আমার বুকপকেট থেকে কখনো আর ড্রাফট হবে না। আমার কলম তোমার জন্য আর কোন চিঠি অক্ষর খুঁজবে না। এই হাত আর কখনো চিঠি লিখবে না। অনিরুদ্ধের মুখে আর কখনো মধুমিতার নাম আসবে না।
আমি ধীরে ধীরে দক্ষিণের পদ্মপুকের ডাঙায় গেলাম। এখানে অনেক পদ্ম ফুটে থাকে। আমি আর মধুমিতা সেই পদ্মের পাতায় কাগজের নৌকা বানিয়ে ভাসিয়ে দিতাম। মধুমিতা আলতা পা পানিতে ডুবিয়ে সে কাগজের নৌকার চলে যাওয়া দেখত আর আমি দেখতাম মধুমিতা কে।
নৌকাটি যদি সব বাঁধা অতিক্রম করে বয়ে যেত তাহলে মধুমিতা হাত তালি দিয়ে হাসতো। আর যখন অর্ধেক টা গিয়ে ডুবে যেত তাহলে কালো মেঘের মত মুখ খানা খারাপ করে রাখত। আমি তখন সান্ত্বনা দিতাম। আর আমার সান্ত্বনা শুনে মধুমিতা আমার কাঁধে মাথা রাখে পদ্মের দিকে চেয়ে থাকতো। আমি আমার শেষ চিঠিটি কাগজের নৌকা বানিয়ে ভাসিয়ে দিলাম। কিছুদূর গিয়ে নৌকা টি ডুবে গেলো। আমি পাশে তাকিয়ে দেখলাম আজ সেই নৌকা ডুবে যাওয়ায় কারো মন খারাপ নেই। আজ আমার পাশে মধুমিতা নেই। তবে মধুমিতা তুমি ভেবো না তুমি চলে গেলে কি হবে তোমার আমার প্রতিটা মুহূর্ত গুলো আমি বাঁচিয়ে রাখবো। এই পদ্মপুকুরে আমি আরও নৌকা বানিয়ে ভাসাবো। এই পুকুরে আমি আরও পদ্মের মেলা বসাবো। মধুমিতা তুমি তোমার স্বামী নিয়ে এই রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় একবার সেই পদ্মপুকুরে এসো। একটা করে প্রতিদিন নৌকা ভাসিয়ে দিও। পারলে একটা করে খালি পৃষ্ঠার চিঠিও পাঠিও। ফুলের ঘ্রাণ লাগবে না। তোমার সিঁদুরের রঙ সিঁতি থেকে সেই সাদা কাগজে লাগিয়ে দিও। তখন আমি বুঝবো তুমি সুখে আছ, তোমার সিঁতির সিঁদুর এখনো অক্ষয় আছে।
.................. সমাপ্ত..............
০২ রা ডিসেম্বর, ২০১৬ দুপুর ২:৪৬
হাবিব শুভ বলেছেন: ধন্যবাদ .। কমেন্ট দেড়িতে দেয়ার জন্য দুঃখিত.।
২| ০২ রা জানুয়ারি, ২০১৭ দুপুর ১:৩৪
বিজন রয় বলেছেন: পোড়া চিঠির গন্ধ পেলাম।
খুব ভাল লিখেছেন।
+++++++
০২ রা জানুয়ারি, ২০১৭ রাত ৮:০৫
হাবিব শুভ বলেছেন: ধন্যবাদ
©somewhere in net ltd.
১|
২২ শে নভেম্বর, ২০১৬ রাত ১০:৪০
মনিরা সুলতানা বলেছেন: মধুমিতার না পাওয়া চিঠি ভালো হয়েছে !
শুভ কামনা