![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
শিক্ষাজীবন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে। সমাজতত্ত্ব বিভাগে। অনেকপরে আবার একই বিশ্ববিদ্যালয় হতে এম,বি,এ,করি। ১৯৯৬ সালের শেষের দিকে কর্মজীবনের শুরু। উন্নয়ন সংস্হায় প্রথম কাজ করি। এই সময় দেশের বিভিন্ন স্হানে ঘুরাঘুরির সুযোগ হয়। দেশের মানুষ ও প্রকৃতির রঙ, আর বিচিত্র পেশার মানুষে সাথে দেখা হয়। অতঃপর পোশাক শিল্পে কাজ করি। ২০০০-২০০৪ সালের এপ্রিল পর্যন্ত বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকে কর্মরত ছিলাম। ২০০৪ সালে আবার ফেরৎ আসি আমার প্রাণের কর্মক্ষেত্র পোশাক শিল্পে। সেই থেকে আজ অবদি কাজ করছি এখানে। বিচিত্র অভিজ্ঞতা, নানান দেশে ভ্রমণ করি। কাজের ফাঁকে পড়ি। মন চাইলে লিখি। ভাষার দক্ষতা তেমন নেই। চেষ্টা করছি ভাষা আয়ত্ত্ব করতে। কিছু বিচিত্র বিষয়ে লেখার ইচ্ছে আছে। লেখার কাজে হাত দিয়েছি। দেশে দেশে পোশাকের বিবর্তন নিয়ে লিখছি। এই নিয়ে পড়াশোনা করতে ভালই লাগে। যাপিত জীবনের কথা, ক্লেদ, প্রেম অভিজ্ঞতা লেখব ভাবছি।
ইতিহাসের কতিপয় গণহত্যা ও ১৯৭১
সামাজিক, রাজনৈতিক বাস্তবতায়, ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা, আধিপত্য বিস্তার, লুন্ডন প্রক্রিয়া কে আরো জোরদার করা, জুতদার,মজুতদার, ব্যবসায়িক প্রতিযোগিতার কারনে সারা বিশ্ব আজ এক চরম সময় পার করছে। বিরাজমান সংকট ও অস্তিরতার কারনে মানুষে মানুষে হানা হানি, খুনাখুনি একটা নিত্যনৈত্তিক ব্যাপারে পরিনত হয়েছে। খুন করা অন্যায়-অমানবিক অপরাধ; খুনের বিচার না হওয়া আরেক অপরাধ। যুদ্ধ হলে প্রতিপক্ক থাকে, সামনা সামনি লড়াই হয়; প্রতিপক্ষের যে কেও মারা যেতে পারে। যে কোন সংখ্যক মানুষ মারা যেতে পারে। কিন্তু যে মানুষ যুদ্ধের ময়দানে প্রতিপক্ষের সামনে বন্দুক তাক করেনি,কাওকে বোমা মারেনি, নিরীহ সাধারন একজন মানুষ যখন কোন কারন ছাড়াই ঘুমন্ত অবস্তায় বোমার আঘাতে মরতে হয় তাকে আমরা কি বলব; কিংবা যখন কোন নিরীহ মানুষ সন্ত্রাসের শিকার হয় কোন অপরাধ ছাড়াই তাকেইবা কিবাবে সংজ্ঞায়িত করা হবে। গণহত্যা কি? বা কখন কোন হত্যাকান্ডকে আমরা গণহত্যা হিসাবে চিন্হিত করব? এর সুরাহা করার জন্য একটা তত্তীয় কাঠামো প্রয়োজ়ন; সাধারন গৃহবিবাদ, ভূমি নিয়ে বিরোধ,চুরি, ডাকাতি, কিংবা সাধারন রাজনৈতিক কলহ নিয়ে যদি কোন ব্যক্তি, নারী বা শিশু মারা যায় তবে তাকে গণহত্যা বলা যাবেনা; এই বিষয়গুলো দেশীয় আইনে ফৌজদারী অপরাধ হিসাবে গন্য হবে; তার বিচার,শাস্তি, দমন কিংবা নিস্পত্তিও দেশীয় আইন দ্বারা নিরোপন করতে হবে; তবে কোন জাতির বা গোত্রের ব্যাপক সংখ্যক মানুষকে যখন নির্বিচারে হত্যা করা হয়,তাকে গণহত্যা বলে। গনহত্যার ইংরেজী প্রতিশব্দ হল Genocide, প্রতিশব্দ হিসাবে আমরা বেশ কয়টি শব্দ পাই যেমন; Racial killing, massacre, indiscriminate killing. ১৯৪৪ সালে পোলিশ ইহুদি আইনজ়ীবি রাফায়েল লেমকিন (Raphael Lemkin) জার্মান নাজিদের পরিকল্পিত হত্যাকান্ডের ব্যাপকতা তোলে ধরার জন্য একটা যুৎসই শব্দ ব্যবহার করেন; তিনি প্রাচীন গ্রীক শব্দ Genos (Race, tribe) এবং লেতিন শব্দ Cide( Killing) থেকে Genocide শব্দটির সমন্বয় করেন; বিশ্ব ইতিহাসে মানবতার বিরুদ্ধে এই অপরাধ সংঘটিত হয়েছে বহুবার, আজও তা ক্রমাগত সংঘটিত হয়ে চলেছে; আমাদের নিকট অতীতে বর্তমান ও বিগত শতাব্দীতে এই অপরাধ বিশ্বের নানা প্রান্তে বিভিন্ন উপায়ে সংঘটিত হয়েছে; মজার ব্যাপার হল মানবাধিকারের উচ্চকন্ঠ কিংবা মোড়ল তাদের প্ররোচনায় অথবা মদদে, সহযোগিতায় এই অপরাধ হয়েছে; আজও তা ভিন্নমাত্রায় নতুন কোন রূপে অব্যাহত রয়েছে। “ যে কোন পদক্ষেপ যার উদ্দেশ্য হল একটি সাম্প্রদায়িক বা ধর্মীয় বা জাতীয় কোন গোষ্ঠীকে আংশিক অথবা সার্বিকভাবে নির্মূল করার উদ্দেশে কোন হত্যাকান্ড কিংবা অনরোপ পদক্ষেপ কে গনহত্যা বলে ধরে নেয়া হবে।” * এই পদক্ষেপ গুলো ক) কোন গোত্রের সকল সদস্যদের কে হত্যা করা, খ) কোন গোত্রের সদস্যদের মানসিক, শারিরিকভাবে আঘাতকরা,গ) উদ্দেশপ্রণোদিতভাবে একটি গোষ্ঠীর উপর এমনভাবে অত্যাচার করা যাতে তাদের আংশিক বা সম্পুর্ন ধ্বংস / নির্মুল হয়ে যায়, ঘ) এমন পদক্ষেপ নেয়া যাতে কোন বংশে নতুন প্রজন্ম পৃথিবীর আলো দেখতে না পারে, ঙ) এক বংশের শিশুকে অন্যকোন বংশে ঠেলে দেয়া। * এই সনদে আরও উল্লেখ আছে যে, কোন দেশ নিজস্ব সীমানায় গনহত্যা চালালে তা আর আভ্যন্তরীণ বিষয় থাকে না বরং তা আন্তর্জাতিক বিষয়ে পরিনত হয়। * Convention on the Prevention and Punishment of the Crime of Genocide -1948 ইতিহাসে বর্বর গনহত্যার মহানায়ক হিটলার; প্রথম বিশ্বযুদ্ধের প্র জার্মানীর আর্থিক বুনিয়াদ ভেঙ্গে যায়; মানুষ তার সঞ্চয় নিঃশেষ করে ফেলে, ঋনের বোঝা প্রবল আকার ধারন করে। জোড় পূর্বক যুদ্ধের প্রস্তুতি অর্থনৈতিক কাঠামোকে ঠেলে আরো দুর্বিসহ করে। মানুষে জীবনে দুঃখ আর বেদনার মূহূর্তে হিটলার কৌশলে ইহুদিদের বিরুদ্ধে মানুষের কাছে ঘৃণার বাণী ( Messages of hate) প্রচার করে। দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধকালে হিটলার তার এই ইহুদি ঘৃনা কে কাজে লাগিয়ে তার নির্যাতন কেন্দ্রে (concentration center) হাজার হাজার নারী পুরুষ ও শিশুকে হত্যা করে ; আগুনে পুড়িয়ে, ইলেকট্রিক শক ও অন্যায় নানা কায়দায় এই মানুষগুলো কে হত্যা করে , হিটলারের এই হত্যাকান্ড ( (হলোকাষ্ট Holocast) নামে খ্যাত। ১৯৯০ সালের মাঝামাঝি সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙ্গে যাবার পর সাবেক যুগোস্লাভিয়া (Yugoslavia) যখন বিচিত্র প্রজাতান্ত্রিক রাষ্ট্রের কাঠামোয় নতুন করে জাতি রাষ্ট্রের ধারানায় রূপ নেয় তখননি ঘটে বিপত্তি। ইউরোপের কেন্দ্রস্থলে জাতিগত সংঘাত উসকে উঠে, বিভিন্ন জাতির মানুষ যুগোস্লাভিয়া রাষ্ট্রের কাঠামোর যেভাবে সহ- অবস্থান ও বিশ্বাস নিয়ে বেড়ে ওঠেছিল তা মাত্র অল্প কিছু দিনের মধ্যে হিংসা ও হানাহানিতে রূপ নেয়। পাশের ফ্লাটের মানুষ যার সাথে দীর্ঘদিনের বসবাস, যে প্রতিবেশী প্রতিদিন শুভেচ্ছা বিনিময় করছিল, যার সাথে চলতে গিয়ে ভাব ভালবাসা ও প্রণয় ছিল হঠাৎ করে তা তা ভেঙ্গেচুড়ে তচনছ হয়ে যায়; একে অপরের শত্রুতে পরিনত হয়।মহাসংকট তৈরী হয় বসনিয়াকে নিয়ে । স্লাভ কসাই জেনারেল রাদকো ম্লাদিচ (Ratko Mladic) হাজার হাজার বসনিয়া মুসলিম নিদন করে জাতিগত উৎখাত (ethnic cleansing) এ মেতে ওঠে। ইতিহাসে তা বসনিয়ার জ়েনো সাইড নামে পরিচিত। অটোমান সাম্রাজ্য ভেঙ্গে যাবার পর আধুনিক তুরস্কের জন্ম নেয়। তুরস্ক এই সময়ে আর্মেনিয়া খৃষ্ঠীয়ান মাইনরটিকে মূলোৎপাটন করে। আদিবাসীরা বিশ্বের নানা প্রান্তে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্নভাবে বাস্তচ্যুত কিংবা গনহত্যার শিকার হয়েছে। মানবধিকারের কোন লেশমাত্র তাদের জন্য অনুকম্পা হিসাবে দেখানো হয়নি। সাম্প্রতিক DNA পর্যালোচনায় জানা যায় আষ্ট্রেলিয়ার আদিবাসীর প্রায় ৫০,০০০ বছর আসে সেখানে এশীয় অঞ্চল হতে এসে বসতি স্থাপন করে । ১৯০৯ সালে গৃহিত অষ্ট্রেলিয়ার সরকারের নীতিমালা অনুসারে নবজাতক আদিবাসীকে তার পিতার মাতার কাছ থেকে ছিনিয়ে নেয়া হতো। যা ইতিহাসে চুরি হওয়া প্রজন্ম ( Stolen generation) নামে খ্যাত । এই বর্বর কর্মকান্ডের জন্য আজও বিতর্ক হচ্ছে, এর পেছনে অভিপ্রায় পরিস্কার ভাবে কেই স্বীকার করেনি। তবে কোন কোন ঐতিহাসিক মনে করেন, আদিম জীবন যাপনের পর্যায় থেকে উন্নত জীবন যাপনে তাদের অভ্যস করাই ছিল তার উদ্দেশ্য ;বিরোধী পক্ষ মনে করে সাদাদের কাছ থেকে দুরে রাখাই ছিল এটার উদ্দেশ্য ।সাদারা উন্নত জাতি যাতে আদি বাসীরা এদের সাথে মিলে না যায় এই জন্যই তা করা হয়। তথাপী এটা প্রতিয়মান হয় যে আদি বাসীদের ঐতিহ্য ও আলাদা জাতি সত্তার পরিচয় বিলীন করাই ছিল তার মুখ্য উদ্দেশ্য ।.২০০৪ সালে অষ্ট্রেলিয়ার সরকার তাদের পূর্বসূরীদের কৃত কর্মের জন্য দুঃখ প্রকাশ করে। আমেরিকান আদিবাসীদের সংখ্যা কলম্বাস আমেরিকায় যাবার পূর্বে কত ছিল তা পরিস্কার করে বলা না গেলেও অনেকের মতে তা ১ মিলিয়ন ছিল। ১৪৯২ সালের পরে বানের পানির মতো বর্তমান উত্তর আমেরিকায় বিপুল সম্পদ রাশির আকর্ষনে ইউরোপ হতে হাজার হাজার মানুষ গমন করে। দক্ষিন আমেরিকায় ফ্যান্সিসকো পিজেরো ইনকাদের নির্মুল করে; মেক্সিকোতে হারনান কর্টিস (Hernan Cortes) আজটেক (Aztecs) জাতিকে ধ্বংস করে। কিন্তু জলবসন্ত (small pox) তাদের আরো ব্যাপক ক্ষতিকরে যার কোন প্রতিশেধক তাদের হাতে ছিল না। এই মরামারী রোগটি ইউরোপীয়রা সেখানে বয়ে নিয়ে যায় এবং আদিবাসীদের কাছে ছেড়ে দেয়। বর্তমানে আমেরিকার আদিবাসীরা নানা প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। তাদের সভ্যতা জাতিসত্তা প্রথা ও রীতিনীতি সবই ধংস্ব করা হয়েছে। ইতিহাসের এই বর্বরতম আদিবাসী নিধনের নির্মম কাহিনী নিয়ে বর্তমনে অনেক গবেষনা চলছে। পিগমী জাতি সত্তার মানুষগুলো মধ্য আফ্রিকার বসবাস করে। এদের দেহের গঠন কাঠামো ক্ষুদ্রকার- বাওনা। উচ্চতায় ৫২ ইঞ্চি এর সমান। তাদের এই ক্ষুদ্রকার তা নিয়ে নানান তত্ত্ব প্রচালিত। আদিম জীবন যাপন, বনে প্রতিষ্ঠিত তাদের আবাস ভূমি ; তাদের ব্যাপক ক্ষতি হয় কংগোর গৃহ যুদ্ধ চলার সময়।কংগোর গৃহযুদ্ধ চলাকালে পিগমীদের কে বন্যপ্রাণীর মতো শিকার করা হয়। বর্তমানে মাত্র ৫০০,০০০ হাজারের পিগমী জীবিত আছে বলে ধারনা করা হয়; আর বাকীরা সবাই উৎখাত হয়েছে অথবা হত্যা করা হয়েছে। তাদেরকে মানুষ হিসাবেই গন্যই করা হয় না। আইরিশ দুর্বিক্ষ এর কারন অনুসন্ধান করে ইংরেজদের সরাসরি দায়ী করা যায়নি কেননা আইরিশ দুর্বিক্ষ(Potato Famine) কেন সংঘটিত হয়েছিল তা পরিস্কার করে কেই না বললেও অনেকেই আলুর ক্ষয়রোগ (Blight)কে দায়ী করে ।আবার অনেকেই গঠনমূলক প্রতিকারের ব্যবস্থা না করায় ব্রিটিশদের কে পরিকল্পিত গনহত্যার দায় দিতে চান।দীর্ঘকাল ধরে Protestant British and- Catholic Irish মধ্যে বিরোধ ভাবাপন্নতা চলে আসছিল। যার প্রত্যক্ষ ফলশ্রুতি হলো আইরিশ রিপাবলিক আমির জন্ম। আয়ারল্যান্ড একটা উর্বরভূমি। আয়ারল্যান্ড আলুর ক্ষয়রোগ বিপদদশা নিয়ে উৎবিঘ্ন তখন বৃটেন তার বন্দরগুলো বন্ধ করে দেয়; খাদ্য সরবরাহের ব্যাপক সংকট দেখা দেয় কিন্তু এই মহা সংকটে খাদ্য খাটতি মেটাতে পারেনি আইরিশরা। দুর্ভিক্ষে ক্ষুধার যন্ত্রনায় - অনাহারে এক মিলিয়নের অধিক মানুষ মারা যায় আরো ১ মিলিয়ন মানুষ আবাসভূমি ত্যাগ করে দেশান্তরী হয়। বৃটিশ ভূমি মালিকরা খাজনা না দেয়ার কারণে তাদের ভূমি থেকে বিতারিত করে। ১৮৪৬ সাল ১৮৫২ সাল পর্যন্ত এই অবস্থা চলতে থাকে। এখানে উল্লেখ্য যে, ১৭৭০ ও ১৯৪৩ সালে বাংলার যে দুর্ভিক্ষ হয় তার জন্য বৃটিশরা দায়ী। হুতু (Hutu)তুতাসি (Tutsi) জাতিগুলো মূলত বান্তু ভাষাভাষী (Banto) জাতি গোষ্ঠির উপশাখা। বেলজিয়ান ও জার্মান সাম্যাজ্যবাদী শাসন আমলের আগে এদের মধ্যে তেমন কোন পার্থক্য ছিল না।ইউরোপীয়রা তাদের পরিস্কার দুটি ভাগে বিভক্ত করে অর্থনৈতিক মর্যদার উপর ভিত্তি করে তুতসিরা সম্পদশালী (দশটি ছাগলের মালিকানাকে সম্পদের ভিত্তি হিসাবে ধরা হয়)। হূতিরা গরীব এমনকি হুতিরা টাকা পয়সা অর্জন করে তুতসি বনে যেতো । তুতসিরা দীর্ঘদিন রয়ান্ডা (Rwanda)শাসন করে আসছিল। ১৯৯০ দশকে শুরুতে দুটি দলে বিদ্রোহ দেখা দেয়। হুতিরা তুতসিদের কে কচুকাটা করতে থাকে; মহানিধন যজ্ঞে হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করা হয়। গোলাবারুদের দাম বেশী হওয়ায় তারা নিধনযজ্ঞে দেশীয় ছোরা, ভল্ল্ রামদা ব্যবহার করে; নারীদের ধর্ষণ করে ভয়ভীতি প্রদান করে। অঙ্গহানি কিংবা রোগব্যাধির বিস্তার ঘটানো হয়। এই নিধন যজ্ঞে প্রকৃত পক্ষে কতজন মানুষ মারা যায় তার হিসাব মেলা ভার। অনেকেই ৫ লাখ থেকে মিলিয়ন পর্যন্ত মানুষ মরার কথা স্বীকার করেন। মাউরী জনগোষ্ঠী হলো পলি-নিশান যারা নিউজিল্যান্ডে বসবাস করে।তারা সেখানে প্রায় ৮ শত বছর ধরে এই অঞ্চলে বসবাস করে আসছে।প্রায় ৫০০ বৎসর পূর্বে মাউরীদের কতিপয় দল পাশ্ববর্তী চট্টম দ্বীপে উপনীত হয়। তারা নিজেদের সমাজে শান্তি প্রিয় জীবন যাপন করে আসছিল। তারা নিজেদেরকে মাউরিওরাই বলে দাবী করে। কিন্তু আদিম মাউরিরা আমেরিকান ও ইউরোপীয়ানদের সংস্পর্শে আসে। তাদের সংস্পর্শে এসে মাউরিরা যুদ্ধ ভাবাপন্ন হয়ে উঠে। পশ্চিমাদের বন্দুক তাদের প্রিয় উঠে। ১৮৪৫ সালে দিকে যখন মাউরিরা পশ্চিমাদের সাথে ব্যাপক বাণিজ্য বিস্তারে রত হয় তখন তারা চট্টম দ্বীপে আগমন করে। তারা এখানে তাদের জাত ভাইদের কে হত্যা কিংবা হত্যা কিংবা নরমাংশ খেয়ে (Canibalism) ফেলতে আরম্ভ করে; যারা বেচেঁ যায়,তারা মাউরীদের দাসে পরিনত হয়। এই অবস্থায় অন্তত ৩০ বৎসর কাল ধরে চলে । সর্বশেষ ১০১ জন মাউরিওরাই বেচেঁ ছিল। ১৯৩৩ সালে বিশুদ্ধ সর্বশেষ মাউরিরাইর জীবন অবসান ঘটে। কুর্দিরা প্রাচীন ইরোপীয়য়ান জাতি গোষ্ঠীর বংশধর যাদের বিস্তৃতি মধ্য প্রাচ্যের কতিপয় রাষ্ট্রের সীমানা অতিক্রম করেছে। ইরাকের প্রায় ২০ শতাংশ কুর্দি জনগোষ্টি; এই কুর্দিরা ইরাকের উত্তর দিকে তুরস্ক ও ইরানের সীমানা বরাবর বসবাস করে।ঐতিহাসিক ভাবেই ইরাক সরকারের সাথে তাদের বিরোধ অব্যাহত ছিল। ১৯৮০ দশকে ইরান ইরাকের যুদ্ধের সময় উত্তেজনা আরে বৃদ্ধি পায়। সাদ্দাম হোসাইনের বাত পাটি দুর্দি আল আনফাল অভিযান চালায়। এই অভিযানটি সাদ্দাম হোসেনের কাজিন আলী হাসান আল মাজিদের তত্ত্বাবধানে সংঘটিত হয়। সে এই অভিযানে মাষ্টার্ড গ্যাস,সেরিন গ্যাস ও VX নার্ভ গ্যাস ব্যবহার করে। এই পরিকল্পিত হত্যা কান্ডে ১৮০,০০০ কুর্দি নিহত হয়। ১৯৭১ সাল ২৫ মার্চ রাত আনুমানিক ১২ টার পর পাকিস্তান হানাদার বাহিনী সমস্ত ঢাকা শহরে অন্ধকার ফাঁদ তৈরী করে;আধুনিক প্রশিক্ষিত সেনাবাহিনী মারনাস্র সহ অপারেশন সার্চ লাইট অভিযান পরিচালনা করে। মধ্যরাতে এই অভিযানে কত মানুষ মারা যায় তার সঠিক হিসাব পাওয়া অত্যন্ত দুস্কর। অপারেশন সার্চ লাইটের নামে পাকিস্তান আর্মি যে অবননীয় গনহত্যা মেতে উঠে ইতিহাসে তা বিশ্বের উন্নত জাতি সমূহ গনহত্যা বলতে নারাজ কিন্তু গনহত্যার যে সংজ্ঞা জাতি সংঘ কর্তৃক প্রনয়ন করা হয় তার প্রতিটি শব্দের সাথে এর মিল আছে। এন্তনি মাসকারেনন হাস দ্য রেইপ অব বাংলাদেশ গ্রন্থে গনহত্যা নামক একটি অধ্যায়ে তার বিবরন তোলে ধরেন;তিনি বাংলাদেশে পাকিস্থান আর্মির বর্বর হত্যাকান্ডের বিবরন দিয়েছেন। ১৯৭১ সালের ১৩ ই জুন দি সানডে টাইমস পত্রিকার প্রথম পাতার Genocide এর বিবরণ তোলে ধরেন। ২৫ শে মার্চ ১৯৭১ হতে ১৬ই ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশের আনাচে কানাছে হাজার হাজার নর নরী, শিশু ধর্ম বর্ণ নিবিশেষে এদেশীয় দোসরদের সহযোগীতায় হত্যাকান্ডের শিকার হয়। এই নাম জানা অজানা শহীদের সংখ্যা ৩ মিলিয়ন। অধিকন্তু ১ কোটি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়ে- পাশ্ববর্তী দেশে শরনার্তী শিবিরে আশ্রয় নেয়। রোগে শোকে অনাহরে আরো অনেক মানুষ মানুষ মারা যায়। ১৯৭১ সালের অপারেশন সার্চ লাইট সাজানো হয় মূলত ঢাকা শহর কে কেন্দ্রকরে ;আক্রমনের প্রধান টার্গেট ঢাকায় প্রশিক্ষিত বাহিনী মোতায়েন করা হয়। শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মোতায়েন হয় ১৮ পাঞ্জাব, ২২ বেলুচ ও ৩২ তম পাঞ্জাব রেজিমেন্ডের সমন্বয়ে একটি কম্পোজিট বাহিনী; ঢাকায় সাজানো হয় পুরো যুদ্ধের রনকৌশলে ব্রিগেডিয়ার আরবার তার নেতৃত্ব দেন। ( Siddik Selek; Witness to Surrender);ঢাকা শহরে এইদিন লাশের স্তুব পরেছিল; মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে হাজার হাজার মানুষ গৃহহারা হয়; হাজার হাজার মানুষকে ধরে নিয়ে গিয়ে নির্যাতন করা হয় এবং হত্যা করা হয়। দেশের বিভিন্ন স্হানে আজও গণকবর আবিস্কৃত হচ্ছে; মিরপুর, রায়ের বাজার ( ঢাকা) পাহাড়তলী ( চট্বগ্রাম) তার সাক্ষ্য বহন করে; ১৯৭১ গণহত্যার বিবরণ আমরা খুজ়ে পাই বিশ্বর বিভিন্ন দেশের নামকরা লেখক, গবেষক ও যুদ্ধ সংক্রান্ত দলিলে; “The human death toll over only 267 days was incredible. Just to give for five out of the eighteen districts some incomplete statistics published in Bangladesh newspapers or by an Inquiry Committee, the Pakistani army killed 100,000 Bengalis in Dacca, 150,000 in Khulna, 75,000 in Jessore, 95,000 in Comilla, and 100,000 in Chittagong. For eighteen districts the total is 1,247,000 killed. This was an incomplete toll, and to this day no one really knows the final toll. Some estimates of the democide [Rummel’s “death by government”] are much lower — one is of 300,000 dead — but most range from 1 million to 3 million. … The Pakistani army and allied paramilitary groups killed about one out of every sixty-one people in Pakistan overall; one out of every twenty-five Bengalis, Hindus, and others in East Pakistan. If the rate of killing for all of Pakistan is annualized over the years the Yahya martial law regime was in power (March 1969 to December 1971), then this one regime was more lethal than that of the Soviet Union, China under the communists, or Japan under the military (even through World War II). (Rummel, Death By Government, p. 331.) এই বাংলার মানুষ আজন্ম লালিত স্বপ্নের দেশ পাবার জন্য যে আত্মত্যাগ করেছে তার তুলনা ইতিহাসে বিরল; ১৯৭১ সালে আমরা একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশ; একটি লাল সবুজের পতাকা- আমাদের সবার অহংকার বাংলাদেশ; কবি শামসুর রাহমানের ভাষায়: “তুমি আসবে বলে হে স্বাধীনতা, সখীনা বিবির কপাল ভাংলো… সিতিঁর সিদুঁর মুছে গেল হরিদাসীর… তুমি আসবে বলে হে স্বাধীনতা, অবুঝ শিশু হামাগুড়ি দিল পিতামাতার লাশের উপর”।
গণহত্যার আর্থসামাজিক -রাজনৈতিক কাঠামো; বাংলাদেশ ১৯৭১ গণহত্যার আর্থসামাজিক -রাজনৈতিক কাঠামো; বাংলাদেশ ১৯৭১ বৈশ্বিক রাজনৈতিক অর্থনৈতিক পরিমন্ডলে গণহত্যা কিংবা এর পরিণতিকে কিভাবে মূল্যায়ন করা হবে তার তাত্ত্বিক মূল্যায়ন করা অত্যন্ত কঠিন; যুথবদ্ধ সমাজে মানুষ বসবাস করার মোলিক কারন হল তার সার্বিক নিরাপত্তা ও পরস্পর সহযোগিতার ভিত্তি তৈরি করা। গোত্র, জাতি,উপজাতি, ভাষাতাত্তিক, ধর্মীয় কিংবা বংশগত পরিচয় যে ভাবেই মানুষ বসবাস করুক না কেন তারা যখন বৃহৎ কোন শক্তি, পরাশক্তির আধিপত্যবাদের শিকার হয়, তখন নিগৃহিত জাতিসত্তার অর্থনৈতিক সামাজিক কাঠামো ভেঙ্গেপড়ে; রাজনৈতিক উপরিকাঠামোর পতন হয়।মানুষ সহায় সম্পত্তি হারিয়ে উদ্বাস্তুতে পরিণত হয়; যেসকল জনগোষ্ঠী গণহত্যার শিকার হয় –তাদের বংশধর কিংবা আত্মীয় পরিজন যারা জীবিত থাকে তারা প্রান্তিক জনগোষ্ঠীতে পরিনত হয়; ১৯৭১ সালে পাকিস্হানী হানাদার বাহিনীর হত্যা –নির্যাতন শিকার হয়ে ১ কোটি মানুষ ভারতে আশ্রয় গ্রহন করে। বিশ্বায়নের যুগে, বিশ্বের জাতি রাষ্ট্র সমূহের উপর নানাবিধ মাত্রায় এর হুমকি বিরাজমান; এই হুমকি জাতিরাষ্ট্রের সীমানা অতিত্রূম করে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক রূপ পরিগ্রহ করে। বিশ্বের জাতি রাষ্ট্রের সীমানা ভেঙ্গে নতুন কাঠামো তৈরী করতে পারে; মধ্যপ্রাচ্যের বর্তমান পরিস্হিতি তারই প্রধান উদাহরন; বাস্তুহারা মানুষ, নারী শিশুরা আরো অসহায়; শিক্ষা, চিকিৎসা সহ মৌলিক মানবিক অধিকার হতে তারা বঞ্চিত হয়। বিশ্ব শান্তি, নিরাপত্তা ও সভ্য সমাজের জন্য এই বেহাল অবস্হা ভীতিকর হয়ে ওঠে। Genocide is the moral threat of the greatest magnitudes. In the words of the UN general assembly regulation condemning genocide. “Genocide is a denial of the right of existence of the entire human groups, as homicide is the denial of the right to live on individual human beings; such denial of the right of existence shocks the conscience of mankind, results in great losses of humanity in the form of culture and other contributions represented by these human groups, and is contrary to moral law to the spirit of the United Nations.” * *Ref given by Kenneth J. Campbell, Oct 2000 in his article: Genocide and the proper use of force. (Montreal Institute for Genocide and Human rights Studies) বিগত শতাব্দীর শুরুতে হতেই বিশ্বের নানা প্রান্তে যুদ্ধের ঢাকঢোল বাজতে থাকে, দুটি বিশ্বযুদ্ধ, নানান আঞ্চলিক আন্তঃরাষ্ট্রীয় সংঘাত, জাতি রাষ্ট্রের বিকাশ, বাম রাজনৈতিক আন্দোলন, কমিউনিষ্ট রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার হিংসাত্বক সশস্র সংগ্রাম, মতাদর্শ বিরোধী নির্মুল অভিযান; কখনো রাষ্ট্র দ্বারা কিংবা অতিবিপ্লবী গোষ্টী দ্বারা অব্যাহত ভাবে চলতে থাকে; উপনেবিশিক শক্তির হাত এই কর্ম্কান্ড কে আরো বেগমান করে তোলে। আমরা যদি গণহত্যার কালানোক্রমিক চিত্রের দিকে তাকাই তা হলে এই অপরাধমূলক আচরনের ভয়াবহতা অনুধাবন করা যাবে; যেমন আর্মেনীয় গণহত্যা চলে ১৯১৫ -১৬ আঠার মাস ব্যাপী, সোভিয়েত লিকুইডেশন চলে ১৯২৯-৩৩, হিটলারের হলোকাষ্টের সময়কাল হল ১৯৪১-৪৫, বাংলাদেশে১৯৭১, ভিয়েতনামে খেমার কিলিং চলে ১৯৭৮-৭৯, রোয়ান্ডা গণহত্যা ১৯৯৪, বসনিয়া ১৯৯৩-১৯৯৫। বিগত শতাব্দী কে গণহত্যার শতাব্দী হিসাবে আখ্যায়িত করা যায়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ধ্বংসাত্বক কর্মকান্ড, হত্যা, লুন্ঠন, ও যবরদকলের মধ্য দিয়ে নতুন বিশ্বব্যবস্হার যে শৃংখলা রচিত হয়; ঠাণ্ডাযুদ্ধের লড়াই, হিংসা, অস্র উৎপাদন, মারনাস্র বৃদ্ধির ক্রমাগত প্রতিযোগিতা কখনই তা শান্তি প্রতিষ্টার পুরোপুরি অনুকূলে ছিলনা; যুদ্ধকালে যারা পরস্পর বন্ধু রাষ্ট্র ছিল, তারাই আঞ্চলিক আধিপত্য ও বৈশ্বিক ব্যবস্হাপনা নিয়ন্ত্রনের প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়। জাপান, জার্মান ও ইতালি অক্ষ শক্তির মধ্যে যৌথবদ্ধ থাকলেও, যুদ্ধের পর তাদের রাজনৈতিক মিত্রতা পরিবর্তন করার কৌশল অবনম্ভন করে. ঠান্ডামাথায় জাপানের হিরোশিমা কিংবা নাগাসাকিতে বোমা মেরে হাজার হাজার মানুষ হত্যা করলেও একে গণহত্যা বলা হয়না। লেমকিন ১৯৩০ এর দশকে গণহত্যা নিয়ে কাজ আরম্ভ করেন যা মূলতঃ নাজিদের হলোকাষ্ট তৈরী হবার অনেক পূরবেই; তিনি মনে করেন একটা দলের সকল সদস্যকে শারীরিক কিংবা জৈবিক দমনের মধ্যেই শুধুমাত্র গণহত্যার বিষয়টি লুকায়িত থাকেনা- তিনি আটটি কৌশলের উপর জোর দেনন; তার আলচিত কৌশল গুলি সংক্ষিপ্ত ভাবে আলচনা করা হল; রাজনৈতিক কৌশল-( Political Technique)আক্রান্ত দল স্বশাসনের অধিকার হারায়; এই ব্যবস্হাপনা যখন দখলদার বাহিনীর হাতে চলে যায় তখন হত্যা নির্যাতন কিংবা দেশান্তর ঘটতে থাকে-১৯৭০ সালে নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামীলীগ সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হিসাবে জাতিকে নেতৃ্ত্ব দেবার অধিকার লাভ করে তখন উপনিবেশিক রাজনৈতিক কায়দায় ক্ষমতা হস্তান্তর এর পরিবর্তে চক্রান্ত করে দেশ শাসনের অধিকার চিনিয়ে নেয়; বরং সামরিক কায়দায় দমন –নিধন চালাতে গিয়ে গণহত্যায় মেতে ওঠে। পরবর্তিতে নয় মাস অর্থাৎ ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্ভর পর্যন্ত এই গণহত্যা বজায় রাখে; বর্তমানে এই সকল অপরাধের বিচার চলছে; যে কয়টি বিচারের রায় প্রকাশিত হয়েছে তাতে অনেক গণহত্যার আলামত পষ্ট এবং প্রমাণিত। ১৯৪৭ সালে একটি রাষ্ট্রের কাঠামোয় শুধুমাত্র ধর্মীয় মূল্যবোধের কারনে জাতিগঠনের ত্রুটি থাকায় উপনেবিশিক ধারার শাসন প্রতিষ্ঠার একটা শক্তিশালী ভিত গড়ে ওঠে। পশ্চিম পাকিস্হান পূর্ব পাকিস্হানে তাদের আধিপত্য বিস্তার ও উপনেবিশিক শাসন পরিচালনা করার অপপ্রয়াস থেকেই এই ধারার জন্ম নেয়। পশ্চিম পাকিস্হানের শাসকরা মনেই করত পূর্ব পাকিস্হানে তাদের শাসনকাল হবে চিরস্হায়ী; আভ্যন্তরীণ উপনেবিশিক বাজার, শ্রম, উৎপাদন যন্ত্রপাতি ভূমির মালিকানা, ব্যবসা –বানিজ্য, আমদানী –রপ্তানি এইসবে তাদের থাকবে একচত্র দখলদারি; বস্তুত ছিলও তাই। বাঙ্গালী মুসলমান যারা পাকিস্হান প্রতিষ্টার আন্দোলনে অগ্রনীভূমিকা পালন করে তাদের ভুল ভাঙতে বেশী সময় লাগেনি। ১৯৪৭ সাল হতে ১৯৭১ পর্যন্ত পুরো সময়টাই ছিল সামরিক শাসনের যাঁতাকলে পিষ্ট একটা দেশ। নানাবিধ কায়দাকানুনের বেড়াজালে এবং সামরিক শাসনের আড়ালে মূলতঃবাঙ্গালী জাতির স্বাধীকার আন্দোলনের আকাঙ্ক্ষা কে অবদমিত করাই ছিল মূল উদ্দেশ্য। এই জন্য পশ্চিম পাকিস্হান শাসক গুষ্ঠী প্রথমেই বেছে নেয় বাঙ্গালির প্রাণের অহঙকার ভাষার উপর আঘাত করা। ভাষার অধিকার সকল মানুষের জন্মগত অধিকার; কিন্তু পশ্চিম পাকিস্হান একে অস্বিকার করতঃ সংখালঘুদের ভাষা উর্দূ কে একক ভাষা হিসাবে চাপিয়ে দেবার নীতি অবলম্ভন করে; ভাষা কে নির্মূল করতে পারলে বাঙ্গালী জাতি আর কোনদিন মাথা উচু করে দাড়াতে পারবে না, সেই সুযোগে তারা এখানে তাদের শাসন ব্যাবস্হাকে চিরস্থায়ী করার সুযোগ পাবে; ১৯৫২ ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে বাঙ্গালী জাতির সূর্য সন্তানরা বুকের তাজা রক্ত দিয়ে তাদের দাবি প্রতিষ্ঠা করে। কিন্তু শাসক গুষ্ঠী তাতে দমে যায়নি, নতুন নতুন কৌশলের আশ্রয় নিয়ে আবার আঘাত করে। তার নজির আমরা গনতান্ত্রিক সরকার কে উৎকাত করে সামরিক শাসনজারি। ১৯৬৬ সালে পেশকৃত ছয়দফা আন্দোলন কে রাষ্ট্র বিরোধী আখ্যা দেয়া, ১৯৬৮ সালে আগরতলা ষড়যন্ত্র করে রাজনৈতিক নেতাদের নির্মূল করার পরিকল্পনা; ১৯৭০ সালে নির্বাচনে জয় লাভের পর ক্ষ মতা হস্তান্তর না করার মাধ্যমে তাদের আসল উদ্দেশ্য ধরা পরে; ১৯৭১ সালে দখলদার বাহিনী ও এ দেশে তাদের দোসররা প্রতিহিংসার বশঃবর্তী হয়ে গণহত্যা চালায়; হাজারো গণকবর মেধা তার সাক্ষ্য বহন করছে; সামাজিক কৌশল ( Social Technique); এই ক্ষেত্রে জাতীয় ও আধ্যাত্মিক সম্পদের উপর আক্রমন করার কৌশল অবলম্ভন করা এবং তা অব্যাহত রাখার নীতি গ্রহন করা হয়। বুদ্ধিভিত্তিক বিনাশ সাধন করাই এর মূল উদ্দেশ্য। ১৯৭১ সালে আমরা কি প্রত্যক্ষ করি ? যুদ্ধ চলাকালীন ও যুদ্ধের প্রায় শেষ দিকে, বিজয়ের মাত্র দুই দিন আগে বাঙ্গালী বুদ্ধিজীবি, সাংবাদিক, কবি, শিক্ষক, ডাক্তার, বিজ্ঞানী, প্রকৌশলী, রাজনীতিক ও অন্যান্য পেশার মানুষ কে নির্বিচারে হত্যা করে। বুদ্ধিজীবি হত্যার কৌশলটি অত্যন্ত মর্মস্পর্শী। জাতিকে মেধা শুন্য করাই ছিল এর প্রধান উদ্দেশ্য। এই হত্যাকান্ড ঘটানোর পূর্বে পরিকল্পিতভাবে তালিকা প্রনয়ণ করা হয়। দেশ স্বাধীন হবার মাত্র দুইদিন আগে এই বর্বর কান্ড ইতিহাসে শুধু নিন্দনীয়ই নয় তা জঘন্যও বটে। সাংস্কৃতিক আগ্রাসন (Cultural Aggression): এই কৌশলটির মর্মকথা হল –যে জাতিকে দমন করতে হবে,বিনাশ করতে হবে তার গৌরবের, ঐতিহ্যের সম্বৃদ্ধ উৎস গুলো বন্ধ করে দিতে হবে, বিনাশ করে দিতে হবে। তার ভাষার বিনাশ করতে হবে, সাহিত্য,সংস্কৃতির ভিত্তি সমূলে বিনাশ করে দিতে হবে; তার স্হলে পরভাষা ও সংস্কৃতির ভিত খাঁড়া করে দিতে হবে। সমাজের চিন্তার বিকাশে বাধা দান করা। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর পূ্র্বপাকিস্হানে সংখ্যা গরিষ্ট মানুষের মুখের ভাষা বাংলা ভাষার স্হলে ঊর্দুকে রাষ্ট্র ভাষা করার নিরন্তর প্রচেষ্টা, হাজার বছরের ঐতিহ্যের অধিকারী বাংলাকে কবর দেয়ার মাধ্যমে ঊর্দুকে প্রতিস্হাপনের উলংগ চেষ্টা সাংস্কৃতিক আগ্রসনেরই মুখ্য উদাহরন; ১৯৫২ সালে রক্ত দিয়ে ভাষার দাবি আদায় সম্ভব হলেও পশ্চিম পাকিস্হান তার ২৪ বছরের শাসষন আমলে নানা কায়দায় তার উদ্দেশ্য সাধনে নিমগ্ন হয়, তার বাহ্যত উদাহরন হল, বাংলা লিপির পরিবর্তে আরবি লিপি প্রচলনের চেষ্টা, ১৯৬২ সালের কুখ্যাত শিক্ষানীতি, রবীন্দ্র সংগীত বর্জন, নজরুলের কবিতার সংশোধন করার কুচক্রী চিন্তাভাবনা মধ্যদিয়ে সাংস্কৃতিক আগ্রসনের এক নজির রেখে যায়। আর্থিক কৌশল (Economical techniques); If you want to destroy any nation, just cripple them economically. এখানে লেমকিন যে কৌশলটির কথা তোলে ধরেন তা হল- দখলদার কর্তৃক দখলীকৃত অঞ্চলের সম্পদ অর্থ স্হানান্তর করা। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে তা পুরোপুরি মিলে যায়। যেমন ধরুন বাংলা দেশের তৎকালীন প্রধান অর্থকরি ফসল পাটের রপ্তানী আয়ের সিংহভাগ আয় পশ্চিমে স্হানান্তর হতো; চাকুরি, ব্যবসা –বাণিজ্য, শিল্প কলকারখানা,পন্যের যোগান, আমদানী - রপ্তানি প্রায় সবই ছিল পশ্চিমের দখলে। একই দেশের এক অংশ ব্যবহৃত হয় আভ্যন্তরীণ উপনিবেশিক অঞ্চল হিসাবে। এ অঞ্চলের মানুষ থাকতো অভুক্ত- অনাহারে; বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হত; শিক্ষা, স্বাস্হ্য, অবকাঠামোগত কোন দৃশ্যমান উন্নতি এ অঞ্চলে স্হাপন করা না হলেও পশ্চিমে একের পর নতুন রাজড়ধানী গড়ে ওঠে। জৈবিক কৌশল (Biological Techniques) এই ক্ষেত্রে যে কৌশলের অবলম্ভন করা হয় তা হল অধিকৃত অঞ্চলে বিবাহ নিষিদ্ধ, কিংবা নারী পুরুষ কে আলাদা রাখা; পূর্ব পাকীস্হানে ব্যাপক জনসংখ্যার কারনে এই কৌশল কার্যকরি করা সম্ভব হয়নি বটে কিন্তু বর্তমান বার্মায় রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সাথে এই আচরন করা হচ্ছে।তথাপী ধর্ষণ ছিল এই শ্রেনীর অপরাধভুক্ত। যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে নীরিহ নারী, যুবতি মেয়েদের উপর এই অত্যাচার চালানো হয়। মানবতা বিরোধী অপরাধ ট্রাইবুনাল এই অপরাধের ব্যাপকাতাকে চিন্হিত করেছে। দৈহিক বিনাশ (Physical Annihilation) উদ্দেশ্যমূলকভাবে হত্যা, নির্মূল করা যার প্রত্যক্ষ প্রয়োগ ১৯৭১ সালে ঘটানো হয়। ৩০ লাখ মানুষকে প্রাণ দিতে হয়। ১ কোটি মানুষ ভারতে শরণার্থী হয়ে আশ্রয় নেয়। পৃথিবীর ইতিহাসে মাত্র নয়মাসের যুদ্ধে এতবেশী মানুষের হত্যাকান্ড হয়েছিল কিনা জানা নেই। ** ছাত্রাবাস, বস্তি উজার হল। ( শামসুর রাহমান) ধর্মীয় কৌশল ( Religious Techniques)– এই কৌশলটি মূলতঃ দখলদার কর্তৃক আক্রান্ত জনগোষ্ঠীর ধর্মকর্ম পালনে বাধা প্রধান করা হয় কিংবা ধর্মীয় কাঠামোতে আঘাত করা হয়। ১৯৭১ সালে ব্যাপক হারে হিন্দুধর্মীয় বিশ্বাসধারী জনগনের উপর আক্রমন, হত্যা ও দেশান্তর ঘটানো হয়। বাঙ্গালী মুসলমান কে সত্যিকারের মুসলিম মনে না করা, কাফের ফতোয়া প্রদান অথবা দেশদ্রোহী আজ্ঞা দেয়া কিংবা সরাসরি চ্যালেঞ্জকরা হত। মুসলিম সমাজে খৎনা করানোর রীতি প্রচলিত আছে; সেইজন্য পাক সেনারা অনেক মানুষকে উলংগ করে খৎনা করানো আছে কিনা তা দেখা হত; এইটা মানুষের আত্মসম্মান কে ছোট করে দেখানো, বিশ্বাস না করা কিংবা অপমান করার একটা ওজুহাত। মূল্যবোধ ও চেতনা বিনাশ করার কৌশল। পাক সেনারা যে শুধু হিন্দু জনগোষ্ঠী কে হত্যা করেছে তাই নয় তারা সমহারে মুসলিম নিধনেও পিছপা ছিল না। নৈতিক কৌশল ; (Moral Technique) এই কৌশলের ধরন হল মানুষের আত্মিক প্রতিরোধের মনোবৃত্তিকে দুর্বল করা; “Moral and national thinking ideology” এর কাঠামো কে ভেংগে দেয়া; মানুষের মৌলিক চিন্তা চেতনা কে তুচ্ছতাচ্ছিল্য, ব্যক্তিগত রস আস্বাদন মূলক চেতনায় রূপান্তর –পর্ণোগ্রাফী ও নেশায় মত্ত করে তোলা। ১৯৭১ সালে এই কৌশলটি পুরুপুরি কাজ করেনি ; কেননা বাঙ্গালীজাতি তার সাহস ও চেতনার মূল্য আত্মত্যাগের মাধ্যমে প্রদান করেছে; জাতির অহংকার হাজার হাজার মানুষ যুদ্ধে যোগদেয় ও এবং দেশের জন্য শহীদ হয়। বৃটিশরা চীনে এই কৌশল অবলম্ভন করে ছিল যা ইতিহাসে আফিম ওয়ার নামে পরিচিত।
©somewhere in net ltd.