নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সাদাসিদে কথা কাজের ফাঁকে কিছু করা,ব্যস্ততার মাঝে যাকিছু ভাবি তাই লিখি।

HannanMag

শিক্ষাজীবন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে। সমাজতত্ত্ব বিভাগে। অনেকপরে আবার একই বিশ্ববিদ্যালয় হতে এম,বি,এ,করি। ১৯৯৬ সালের শেষের দিকে কর্মজীবনের শুরু। উন্নয়ন সংস্হায় প্রথম কাজ করি। এই সময় দেশের বিভিন্ন স্হানে ঘুরাঘুরির সুযোগ হয়। দেশের মানুষ ও প্রকৃতির রঙ, আর বিচিত্র পেশার মানুষে সাথে দেখা হয়। অতঃপর পোশাক শিল্পে কাজ করি। ২০০০-২০০৪ সালের এপ্রিল পর্যন্ত বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকে কর্মরত ছিলাম। ২০০৪ সালে আবার ফেরৎ আসি আমার প্রাণের কর্মক্ষেত্র পোশাক শিল্পে। সেই থেকে আজ অবদি কাজ করছি এখানে। বিচিত্র অভিজ্ঞতা, নানান দেশে ভ্রমণ করি। কাজের ফাঁকে পড়ি। মন চাইলে লিখি। ভাষার দক্ষতা তেমন নেই। চেষ্টা করছি ভাষা আয়ত্ত্ব করতে। কিছু বিচিত্র বিষয়ে লেখার ইচ্ছে আছে। লেখার কাজে হাত দিয়েছি। দেশে দেশে পোশাকের বিবর্তন নিয়ে লিখছি। এই নিয়ে পড়াশোনা করতে ভালই লাগে। যাপিত জীবনের কথা, ক্লেদ, প্রেম অভিজ্ঞতা লেখব ভাবছি।

HannanMag › বিস্তারিত পোস্টঃ

নদীর নাম কর্ণফুলি ২

০৪ ঠা নভেম্বর, ২০১৬ দুপুর ১২:০২


বাংলাদেশে নদীর সংখ্যা কত? বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড ২০০৫ সালে প্রকাশিত ৩১০টি নদীর বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করে; অন্যান্য সূত্রের হিসাব মতে এই নদীর সংখ্যা ৭০০ থেকে ১০০০ হতে পারে; ৫৭ টি আন্তর্জাতিক (৫৪ টি ভারত – বাংলাদেশ এবং ৩ টি বাংলাদেশ –মিয়ানমার)। কর্ণফুলি নদী বাংলাদেশের দক্ষিন পূর্বাঞ্চলের নদী গুলোর মধ্যে আকারে বড় এবং সামুদ্রিক জোয়ার ভাটায় দ্বারা নাব্যতা –পানির গতি প্রকৃতি নির্ধারিত হয়ে। এই নদীর বয়স কত, কিভাবে তার উৎপত্তি হয়েছিল তার সঠিক কোন দিন, তারিখ জানা না গেলেও বিভিন্ন ঐতিহাসিক তথ্য কিংবা ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ দ্বারা তার একটা কাল হয়ত জানা যাবে। তবে ভারতের আদি গ্রন্হ সমূহের এই নদীর নাম দেখতে পাই। হাজার বছর ধরে এই নদী প্রবাহিত হয়ে মিঠা পানির প্রধানমত উৎস এই নদী; কাপ্তাই বাঁধের ভাটিতে জোয়ার –ভাটার প্রভাবে লোনার পানির প্রভাব আছে। দি হিস্টোরী অব চিটাগং গ্রন্থে বৈষ্ণব পূরাণের উদ্ধৃতি দিয়ে কর্ণফুলী নদীর নাম উল্লেখ করেন।

ক। কর্ণফুলি গতিধারা;-
কর্ণফুলি নদী উত্তরে রাউজান উপজেলা ও দক্ষিণে বোয়ালখালি উপজেলাকে রেখে রাঙ্গুনিয়া উপজেলার ভেতর দিয়ে পশ্চিমমুখী প্রবাহিত হয়েছে। কালুরঘাট সেতু বরাবর হালদা নদী এসে কর্ণফুলির সঙ্গে মিশেছে। এরপর দক্ষিণে বাঁক নিয়ে বোয়ালখালি ও অন্যান্য কিছু খালের জলে সমৃদ্ধ হয়ে পশ্চিমমুখী প্রবাহিত হয়ে চট্টগ্রাম নগরীর পূর্ব ও দক্ষিণ পাশ দিয়ে চক্রাকারে প্রবাহিত হচ্ছে। চট্টগ্রাম বন্দর-এর প্রত্যন্ত পশ্চিম কোণ থেকে সরাসরি দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে প্রবাহিত হয়ে নদীটি চট্টগ্রাম শহর থেকে প্রায় ১৭ কিমি সম্মুখে বঙ্গোপসাগরে পতিত হয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দর পর্যন্ত সমুদ্রগামী বড় বড় জাহাজ সারা বছর এ নদীর উপর দিয়ে চলাচল করতে পারে এবং কাপ্তাই পর্যন্ত বড় নৌকা, ট্রলার এবং সবধরনের ফ্রেইটার ও লঞ্চ আসা যাওয়া করতে পারে।

কর্ণফুলি নদী চট্টগ্রাম শহরের কালুরঘাট থেকে নিম্নমুখে তার গতিপথের সবচেয়ে বেশি পরিবর্তন করেছে। এ পরিবর্তন এক শতকেরও বেশি সময় ধরে চলছে। একসময় নদীটির গতিপথ ছিল কালুরঘাট থেকে পশ্চিম ও দক্ষিণ-পশ্চিমমুখী এবং এর দক্ষিণ তীর বরাবর ছিল সাম্পানঘাটা, সুলুপবাহার, কাপাসগোলা, চকবাজার, রুমঘাটা, ঘাট ফরহাদবেগ, বক্সিরহাট ও পাথরঘাটা প্রভৃতি স্থান। কিন্তু ধীরে ধীরে এটি বাম দিকে পিছিয়ে আসে এবং ডান তীর বরাবর বিশাল ও বিস্তীর্ণ উর্বরভূমির সৃষ্টি করে যা এখন চরবাকলিয়া, চান্দগাঁও, চরচাকতাই ইত্যাদি নামে পরিচিত। উল্লিখিত ঘাট ও বাজারসমূহ এক সময় শহরের পূর্ব প্রান্ত বরাবর কর্ণফুলি নদীর ডান তীর জুড়ে অবস্থান করত, কিন্তু বর্তমানে সেগুলি নদীর গতিপথ থেকে অনেক দূরে। এর একটি ঐতিহাসিক প্রেক্ষিত ও গুরুত্ব রয়েছে, কেননা এ নদীর মাধ্যমেই মুগল ও ব্রিটিশ রাজত্বের প্রথম দিকে চট্টগ্রাম শহরের পূর্ব সীমানা চিহ্নিত করা সহজ হয়।

পর্বতমালার উচ্চতার সঙ্গে তাল রেখে কর্ণফুলি নদী তার পুরাতন গতিপথ অব্যাহত রেখেছে বিধায় এটিকে একটি ভূমিজপূর্ব বা প্রাচীন (antecedent) নদী বলা হয়ে থাকে। নদীটি কাপ্তাই-চন্দ্রঘোনা সড়ক বরাবর প্রাংকিয়াং থেকে ওয়াগ্গাছড়ি পর্যন্ত সংকীর্ণ ও সরল। এ ঋজুতা সম্ভবত একটি চ্যুতির কারণে যা প্রাংকিয়াং থেকে ওয়াগ্গা পর্যন্ত নদীখাতটিকে নিয়ন্ত্রণ করছে। কর্ণফুলীর প্রধান শাখা নদীসমূহ হচ্ছে ডানতীরে কাসালং, চেঙ্গী, হালদা ও ধুরং এবং বামতীরে শুভলং, কাপ্তাই, রেংখিয়াং ও থেগা।

যে কোন নদীই সাধারণত উঁচু ভূমি বা পাহাড় গিরিখাত থেকে সৃষ্ট ঝরণাধারা, বরফগলিত স্রোত কিংবা প্রাকৃতিক পরিবর্তন থেকে নদীর জন্ম । হাজার হাজার ফুট উঁচু পাহাড় থেকে তীব্র বেগে ধেয়ে আসা জলরাশিতে এক ধরণের প্রচন্ড গতি সঞ্চারিত হয়; ছুটে আসা এই দ্রুত গতিসম্পন্ন জলস্রোত স্থলভাগ অতিক্রম করার সময় নদী নামে পরিচিত হয় নদী যখন পাহাড়ি এলাকায় প্রবাহিত হয় তখন তার যৌবনাবস্থা। এ সময় নদী ব্যাপক খননকাজ চালায় এবং উৎপত্তিস্থল থেকে নুড়ি, বালি, পলি প্রভৃতি আহরণ করে অতি সহজে সমুদ্রে নিক্ষেপ করে । নদী সৃষ্টির মূলে একাধিক ক্ষুদ্র জলধারা ও তাদের পর্যায়ক্রমিক সমন্বিত প্রক্রিয়া
( পাত,প্রবাহ,মিহিনালি,শিলানালি,গুহানালি ও নদী উপত্যকা তথা শুরু,বৃদ্ধি ও বর্ধিতকরনের মাধ্যমে পূর্ণরূপান্তর) সমূহের ভূমিকা কে কোনভাবেই খাটো করে দেখার উপায় নেই । কর্ণফুলি নদী এই ধারার ব্যতিক্রম নয়। কিন্তু কর্ণফুলি নদীর তার গতি পথে স্বাভাবিক প্রাকৃতিক নিয়মে প্রবাহিত নয়। কেনানা এই নদীর উপর বাঁধ নির্মান করে ড্যাম তৈরী করা হয়েছে।

খ। কাপ্তাই জল বিদ্যুৎ কেন্দ্র;-
বাংলাদেশের একমাত্র জল বিদ্যুত কেন্দ্র এই নদীর উপর কাপ্তাই নামক স্হানে। “বন্দর নগরী চট্টগ্রামের ৫০ কিলোমিটার দূরবর্তী রাঙ্গামাটি জেলার কাপ্তাই উপজেলায় অবস্থিত দেশের একমাত্র জলীয় শক্তি দ্বারা পরিচালিত বিদ্যুৎ স্থাপনা। বাংলাদেশের বৃহত্তম জলসম্পদ উন্নয়ন প্রকল্প ‘কর্ণফুলী বহুমুখী প্রকল্প’-এর অংশ হিসেবে এ জলবিদ্যুৎ স্থাপনাটি তৈরি করা হয়েছে। ১৯৬২ সালে চালু করার পর জলবিদ্যুৎ স্থাপনা জাতীয় গ্রিডে ৮০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে সক্ষম ছিল। পরবর্তী সময়ে দুটি পর্বে স্থাপনাটির বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি করে মোট ২৩০ মেগাওয়াটে উন্নীত করা হয়। এ বহুমুখী প্রকল্প দেশের বিদ্যুৎ চাহিদা পূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা ছাড়াও বাঁধের ভাটি অঞ্চলের সেচ ও বন্যা ব্যবস্থাপনা স্থাপনা হিসেবে মূল্যবান অবদান রেখে আসছে”। কাপ্তাই বাঁধ এটি মাটি ভরাট করে নির্মিত ৬৭০.৬ মিটার দীর্ঘ একটি বাঁধ। বাঁধটি ৪৫.৭ মিটার উঁচু যা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৩৬ মিটার (এম.এস.এল) উচ্চতার সমান। এর চূড়ার সর্বোচ্চ প্রস্থ ৭.৬ মিটার ও পাদদেশের প্রস্থ ৪৫.৭ মিটার। ১২.২ মিটার দৈর্ঘ্য ও ১১.৩ মিটার প্রস্থ বিশিষ্ট মোট ১৬টি জলকপাট সংযুক্ত একটি জল নির্গমন কাঠামো রয়েছে যার মাধ্যমে একত্রে ৬,২৫,০০০ কিউসেক পানি নির্গমন সম্ভব। জলাধারটিতে গড় বার্ষিক প্রবাহের পরিমাণ প্রায় ১৫৬৪.৬ কোটি ঘন মিটার, বন্যা বিশোষণ ক্ষমতা ৮২.৫ লক্ষ একর-ফুট এবং ৩৩ মিটার এম.এস.এল উচ্চতা পর্যন্ত প্লাবিত অঞ্চল ৭৭৭ বর্গ কিলোমিটার। এই বাঁধ নির্মানের ফলে ভাটি অঞ্চলে আকস্মিক বন্যার প্রকূপ থেকে জনবসতিগুলো রক্ষা পায়। কিন্তু উজানে তৈরী হয় সমস্যা ও সম্ভাবনার এক বিশাল ক্ষেত্র। মিঠা পানির মাছের এক বিরাট ভান্ডার। পর্যটন শিল্পের জন্য উপযোগী–নৈসর্গিক রূপ।

গ। কাপ্তাই লেকের কারনে সৃষ্ট সমস্যা;-
জলাধারটির কারণে বিশাল এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়ে। হাজার হাজার লোক ঘরবাড়ি, আবাদি জমি হারিয়ে সর্বস্বান্ত হয়। ক্ষতিগ্রস্ত জনগণ অবশ্য এসকল জমির প্রকৃত মালিক ছিল না, কারণ পার্বত্য চট্টগ্রাম ম্যানুয়েল অনুসারে এলাকার সব জমিই রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি হিসেবে ঘোষিত হয়েছিল। তথাপি মানবিক কারণে সরকারকে ক্ষতিগ্রস্তদের ন্যায্য ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হয়েছিল। প্রকল্পের দলিল-দস্তাবেজ অনুযায়ী লেকের কারণে সমুদ্রপৃষ্ঠের সর্বোচ্চ ৩৩.২২ মিটার উঁচু পর্যন্ত এলাকাসমুহ নিমজ্জিত হওয়ার কথা। মূল লেকটির আয়তন প্রায় ১৭২২ বর্গ কিমি, তবে আশপাশের আরও প্রায় ৭৭৭ বর্গ কিমি এলাকাও প্লাবিত হয়। কাপ্তাই বাঁধের কারণে আনুমানিক ১৮,০০০ পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়, ৫৪ হাজার একর কৃষিজমি পানিতে তলিয়ে যায় এবং প্রায় ৬৯০ বর্গ কিমি বনভূমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এই এলাকর জনগোষ্ঠী আজও মনে তাদের জমি থেকে উচ্ছেদ করা হয়ছে; কোন ক্ষতি পূরন ছাড়াই।

“কর্ণফুলীর আরেক নাম সোনাছড়ি। স্থানীয় লোকেরা বলে কর্ণফুলীর বুকে ফি বছর শুধু পলিমাটির সোনা নয়, বাঁশ, কাঠ, ছন, বেত, তরিতরকারি আরও রকমারি সোনা ভেসে ভেসে দূর-দূরান্তের দেশ হতে বিদেশে চলে যায়। বারবার হাত বদলের সঙ্গে সঙ্গে মালের যেমন কদর বাড়ে, তেমনি বাড়ে মুনাফার অঙ্ক। পার্বত্য চট্টগ্রামের সবটুকু ছোট-বড় পাহাড়ে পর্বতে ঘেরা। এসব পাহাড়ে মগ-চাকমা এবং অন্যান্য আদিবাসীরা ‘জুম’ চাষ করে। সমতল ভূমিতে রোপণ করে ধান, সর্ষে, কচু ইত্যাদি। এছাড়া সমগ্র-পার্বত্য অঞ্চল বাঁশ, গাছ, ছন, বেত আরও কত বনজ সম্পদে সমৃদ্ধ”। (কর্ণফুলীর ধারে; আহমেদ ছফাঃ১০ ই জুন, ১৯৬৫; সংবাদ)। মানুষ গুলো এখন একন আছে, বাঁধের কারনে অনেক চাকমা সহ অন্যান্য জনগোষ্ঠীর মানুষ নিজের দেশ ছেড়ে প্বার্শবর্তী দেশে যায়। অনেকেই বলে থাকেন এই সংখ্যা প্রায় ৪০০০০ -১০০০০০ হবে। এই সকল জাতিগোষ্ঠীর মানুষেরা নিজেদের অধিকার আদায়ে আন্দলন সংগ্রাম সহ দীর্ঘদিন যুদ্ধ পর্যন্ত করেছে। মূলত ১৯৯৭ সালের শান্তি চুক্তির পর এখানে সামাজিক –রাজনৈতিক বিরোধের অবসানে অনেটা উন্নতি হলেও এখানকার ভূমি বিরোধ ও পরিবেশের সমস্যা বিদ্যমান।

ঘ। কাপ্তাই লেকে মাছের চাষ;-
কাপ্তাই লেককে কেন্দ্র করে যে মৎস্য শিল্প গড়ে উঠেছে তা থেকে বছরে ৭০০ টনেরও বেশি স্বাদুপানির মাছ উৎপাদিত হচ্ছে। বাঁধের উজানে লেকের স্বচ্ছনীল জলরাশি বিসর্পিল রেখায় পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ময় নিসর্গের প্রতিটি প্রান্তর ছুঁয়ে বয়ে চলেছে। ফলে প্রত্যন্ত বরকল নদীপ্রপাত থেকে শুরু করে রাঙ্গামাটি হয়ে উত্তরে কাসালং-এর সংরক্ষিত বনভূমি পর্যন্ত এলাকায় যাতায়াত লঞ্চ, নৌকা ও অন্যান্য জলযানের মাধ্যমে খুবই সহজ হয়ে উঠেছে। কাপ্তাইয়ে বৈদ্যুতিক রজ্জুপথের মাধ্যমে বাঁধের ওপর দিয়ে বিভিন্ন আকারের নৌকা ও অন্যান্য ভাসমান মালামাল লেক থেকে কর্ণফুলি নদীতে বা নদী থেকে লেকে পারাপার করা হয়। প্রাকৃতিক সম্পদ ও সৌন্দর্যে পরিপূর্ণ কাপ্তাই লেক দেশের অভ্যন্তরীণ উন্মুক্ত জলাশয়ের মধ্যে সর্ববৃহৎ এবং দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় কৃত্রিমভাবে তৈরি লেকগুলোর মধ্যে অন্যতম; জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য ৬৮,৮০০ হেক্টর আয়তনের এ লেকটি মূলত তৈরি হলেও মৎস্য উৎপাদন, কৃষিজ উৎপাদন, জলপথে যাতায়াত, ফলজ ও বনজ দ্রব্য দুর্গম পথে পরিবহন, জেলে, ব্যবসায়ী ও স্থানীয় জনসাধারণের আর্থসামাজিক উন্নয়ন ও জীবন-জীবিকা থেকে শুরু করে মৎস্য সেক্টরে কাপ্তাই লেক গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে আসছে। মনুষ্য সৃষ্ট চাপ এবং প্রবাহমান পানি থেকে স্থির পানিতে পরিবর্তনের কারণে কাপ্তাই লেক থেকে কিছু দেশীয় প্রজাতির মাছ যেমন বিলুপ্ত হয়ে গেছে, অন্যদিকে আবার কিছু বিদেশি প্রজাতির মাছ যেমন- সিলভার কার্প, গ্রাসকার্প, কার্পিও, রাজপুঁটি ও থাই পাঙ্গাশ বিগত দুই দশকে মজুদ করা হয়েছে। বিদেশি প্রজাতির মাছের মধ্যে আফ্রিকান মাগুর ও তেলাপিয়া দুর্ঘটনাক্রমে লেকে সংযোজিত হয়েছে। তিনি এই লেকের মৎস্য উৎপাদন বৃদ্ধি ও মৎস্য জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ সম্পদের উন্নতির জন্য কিছু পরামর্শ দেন;
১। মৎস্য প্রজননক্ষেত্র সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনা
২। অভয়াশ্রম ব্যবস্থাপনার কার্যকারিতা
৩ । পাহাড়ি ঘোনায় নার্সারি স্থাপন ও ব্যবস্থাপনা
৪। বড় পোনা মজুদ ও ব্যবস্থাপনা
৫। ক্ষতিকর মৎস্য শিকার প্রতিরোধ ব্যবস্থাপনা
৬। লেকে মৎস্য চাষ ও
৭। গবেষণা জোরদারকরণ

ঙ। চট্টগ্রাম বন্দর;-
চট্টগ্রাম বন্দর বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের চট্টগ্রাম শহরে অবস্থিত বাংলাদেশের প্রধান সামুদ্রিক বন্দর। এটি কর্ণফুলী নদীর মোহনায় অবস্থিত। ইংরেজ শাসনের প্রথম দিকে ইংরেজ ও দেশীয় ব্যবসায়ীরা বার্ষিক এক টাকা সেলামির বিনিময়ে নিজ ব্যয়ে কর্ণফুলি নদীতে কাঠের জেটি নির্মাণ করেন, পরে ১৮৬০ খৃষ্টাব্দে প্রথম দুটি অস্থায়ী জেটি নির্মিত হয়। ১৮৭৭ খৃষ্টাব্দে চট্টগ্রাম পোর্ট কমিশনার গঠিত হয়। ১৮৮৮ খৃষ্টাব্দে চট্টগ্রাম বন্দরে দুটি মুরিং জেটি নির্মিত হয়। ১৮৮৮ খৃষ্টাব্দের ২৫ এপ্রিল চট্টগ্রাম পোর্ট কমিশনার কার্যকর হয়। ১৮৯৯-১৯১০ সালের মধ্যে চট্টগ্রাম পোর্ট কমিশনার ও আসাম বেংগল রেলওয়ে যুক্তভাবে চারটি স্থায়ী জেটি নির্মাণ করে । ১৯১০সালে চট্টগ্রাম বন্দরের সাথে রেলওয়ে সংযোগ সাধিত হয়। ১৯২৬ সালে চট্টগ্রাম বন্দরকে মেজর পোর্ট ঘোষণা করা হয়। পাকিস্তান আমলে ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দের জুলাই মাসে চট্টগ্রাম পোর্ট কমিশনারকে চট্টগ্রাম পোর্ট ট্রাস্ট-এ পরিণত করা হয়, বাংলাদেশ আমলে ১৯৭৬ খ্রিস্টাব্দের সেপ্টেম্বর মাসে চট্টগ্রাম পোর্ট ট্রাস্ট-কে চট্টগ্রাম পোর্ট অথরিটিতে পরিণত করা হয়। এটি একটি স্বায়ত্তশাসিত সরকারি সংস্থা। ২০১৫ সালে ২০ লাখ ২৪ হাজার কন্টেইনার হ্যান্ডেলিংয়ে রেকর্ড করেছে দেশের সবচেয়ে বড় সদুদ্র বন্দর চট্টগ্রাম। অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে ২০১৫ সালে প্রায় ১৭% কন্টেইনার হ্যান্ডেলিং গ্রোথ করেছে বন্দরটি।কন্টেইনার হ্যান্ডেলিংয়ের ফরকাস্ট অনুযায়ী, ২০১৬ সালে বাংলাদেশে ২০ লাখ ৬ হাজার কন্টেইনার হ্যান্ডেলের সক্ষমতা অর্জনের কথা বলা হয়েছিল। তবে এর এক বছর আগেই চট্টগ্রাম বন্দর ২০ লাখ ২৪ হাজার কন্টেইনার হ্যান্ডেলিং করেছে।

চলবে ..
তথ্যসূত্র
১। বাংলাদেশে নদ- নদী ও নদী তীরবর্তী জনপদ- ডক্টর মো, আবু হানিফ শেখ- অবসর প্রকাশনি; ফেব্রুয়ারী ২০১৬
২। বাংলাপিডিয়া; আগষ্ট ২০১৪
৩।কাপ্তাই লেকে মৎস্য উৎপাদন বৃদ্ধি ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে সহনশীল ব্যবস্থাপনা কৌশলঃ ড. ইয়াহিয়া মাহমুদ -
৪। ২০০৬-০৭ থেকে ২০১৫ পর্যন্ত বন্দরের সফলতা নিয়ে একটি প্রেজেন্টেশন দেন চট্টগ্রাম বন্দর –বন্দর কর্তৃপক্ষের দেয়া তথ্য।



মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৪:৪৩

জুয়েল তাজিম বলেছেন: নদী দূষণ থেকে নদী শাসন এবং পরবর্তিতে বিস্তর গবেষণায় রুপ নিল। তথ্যবহুল লেখা এবং সামনের লেখার অপেক্ষায় রইলাম

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.