নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সাদাসিদে কথা কাজের ফাঁকে কিছু করা,ব্যস্ততার মাঝে যাকিছু ভাবি তাই লিখি।

HannanMag

শিক্ষাজীবন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে। সমাজতত্ত্ব বিভাগে। অনেকপরে আবার একই বিশ্ববিদ্যালয় হতে এম,বি,এ,করি। ১৯৯৬ সালের শেষের দিকে কর্মজীবনের শুরু। উন্নয়ন সংস্হায় প্রথম কাজ করি। এই সময় দেশের বিভিন্ন স্হানে ঘুরাঘুরির সুযোগ হয়। দেশের মানুষ ও প্রকৃতির রঙ, আর বিচিত্র পেশার মানুষে সাথে দেখা হয়। অতঃপর পোশাক শিল্পে কাজ করি। ২০০০-২০০৪ সালের এপ্রিল পর্যন্ত বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকে কর্মরত ছিলাম। ২০০৪ সালে আবার ফেরৎ আসি আমার প্রাণের কর্মক্ষেত্র পোশাক শিল্পে। সেই থেকে আজ অবদি কাজ করছি এখানে। বিচিত্র অভিজ্ঞতা, নানান দেশে ভ্রমণ করি। কাজের ফাঁকে পড়ি। মন চাইলে লিখি। ভাষার দক্ষতা তেমন নেই। চেষ্টা করছি ভাষা আয়ত্ত্ব করতে। কিছু বিচিত্র বিষয়ে লেখার ইচ্ছে আছে। লেখার কাজে হাত দিয়েছি। দেশে দেশে পোশাকের বিবর্তন নিয়ে লিখছি। এই নিয়ে পড়াশোনা করতে ভালই লাগে। যাপিত জীবনের কথা, ক্লেদ, প্রেম অভিজ্ঞতা লেখব ভাবছি।

HannanMag › বিস্তারিত পোস্টঃ

দিল্লির বাদশা ও বাঙ্গালী মন

০৬ ই আগস্ট, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:৫৪

একবার দিল্লির বাদশা ঢাকায় আসেন। তিনি ইচ্ছা করেন ভাটির দেশে নদী দেখবেন। বাদশার ইচ্ছা বলে কথা। সাজ সাজ রব চারদিকে। বজরা সাজানো হল খুব আলিসানভাবে। অনেক আয়োজন। গান বাজনা,খানাপিনা মানে, রাজ -ভোগের আয়োজন। উজির আছে,পাইক পেয়াদা, নর্তকির নাচ, কি নেই সেই বজরায়। সবই আছে বাদশাকে খুশি করতে এখানকার রাজ-শাসকের ব্যস্ততার শেষ নেই। রাজাও খুশি। বজরা ভাটির দিকে চলে। ধীরে ধীরে চলে বজরা। বাদশা বজরার আসন ছেড়ে উঠে দাঁড়ায়। এদিক সেদিক তাকায় আর নানান প্রশ্ন করে। উজির মোসাহেবরা বাদশা কে খুশি করতে তাদের সাধ্যমত চেষ্টা করে যাচ্ছে। সকালের দিকে রোদের তেজ একটু কম। ভারি মিষ্টি রোদ। নদীর পানির বুকে রোদের ঝিলিক পড়ে, তা দেখে রাজা ভারি মজা পাচ্ছে।সকাল বেলা পানির স্রোতের সাথে সাথে বজরা চলছে। ভাটির টানে বজরা চলতে সমস্যা নেই। মাঝিরা অনেক প্রাণবন্ত। দিল্লির বাদশার বজরা বলে কথা। তাদের জন্যও বিশেষ খানাপিনার আয়োজন হয়েছে। রঙিন পোশাক দেয়া হয়েছে। তারাও খুশি। আনন্দ আজ অন্যরকম। বাড়তি আমেজে কাজ করছে। রান্না বান্নার জন্য আনা হয়েছে শাহি বাবুর্চি। কেননা তারাই জানে বাদশার রুচির খবর। রান্না শেষে পরিবেশনাও তাদের করতে হবে। বাদশা খানা শুরুর আগে প্রধান বাবুর্চি খেয়ে প্রমাণ করতে হবে খাবার ঠিক আছে। খাবারে কোন ভেজাল নেই। বাদশার খাবার বলে কথা। তিনি যেখানেই যান এই প্রথা চালু আছে।এখানেও তাই এর ব্যতিক্রম হয়নি। বজরা চলছে তো চলছেই, বেলা বাড়তে লাগল। দুপুরের রোদের তেজও বাড়ছে। এখানে এই মৌসূমে গরমের মাত্রা বেশি। দিন কি রাত সব সময়েই গরম থাকে। বাদশা আর বাইরে দাঁড়াতে পারছে না।
বজরা ভেতর চলে আসছেন। এমন সময় হঠাৎ বাদশার নজরে এল পানির স্রোত উজানের দিকে বয়ে চলেছে। কি ব্যাপার একি কান্ড!! এমনতো আগে কখনও দেখিনি। এখানে সকালে নদীর পানি ভাটিতে চলে আর দুপুর গড়াতেই চলেছে উজানের দিকে। ব্যাপারটা বুঝার জন্য বাদশা উজির কে তলব করলেন। উজির হুজুরের ডাকে দ্রুতই সাড়া দিলেন। তিনি হাজির হতেই বাদশা বিস্ময় প্রকাশ করে বললেন; উজির আমি হতবাক হয়েছি নদীর জলের স্রোতের কান্ড দেখে। অতঃপর বাদশার সাথে উজিরের কিছু কথোপকথন চলে-
বাদশাঃ একি দেখি নদীর জলে? নদীর জল উজানে কেন বয়ে চলে?

উজিরঃ হুজুর ভাটির দেশে জোয়ার ভাটা হয়। জোয়ারে জল উজানে ব্য়। ভাটায় চলে ভাটিতে। দিনে দুইবার ঘটে এই জোয়ার ভাটার খেলা। উজানে নদীতে এই সমস্যা নেই। সমদ্র যেখানে কাছে, সেখানেই চলে এই খেলা। পূর্ণিমায় চলে ভরা কাঁটাল আর অমবস্যায় চলে মরা কাঁটাল। চাঁদের সাথে এর জোয়ারের আছে সখ্যতা, মিতালী। চাঁদের যখন পূর্ণিমা চলে, চাঁদের আকর্ষনে সমুদ্রের পানি উছলায়, ফূঁসে উঠে। পানির ঢেউ ওঠে। সমুদ্রের গর্জন বেড়ে যায়। পানি ফুঁসতে ফুঁসতে তীরের দিকে আসতে থাকে। এই সময় বাড়তি পানি নদী বেয়ে উপরে উঠে। তখনি ভরা কাঁটালের জন্ম নেয়।আর অমবস্যায় চাঁদের আকর্ষণ কমে যায়। মানে জোয়ারের প্রবাহও অনেক কম থাকে। অন্যান্য সময় চলে স্বাভাবিক জোয়ার।

বাদশাঃ উজির তোমার যুক্তি অকাট্য, মেনে নিলাম।প্রকৃতির এমন খেলা আমার জানা ছিল না। তোমার প্রজ্ঞা দেখে আমি অনেক মুগ্ধ। বাদশাকে জ্ঞান দেবার জন্য তোমাকে অনেক ইনাম দেয়া হবে। দিল্লিতে ফিরে আমি তোমাকে জ্ঞান রত্ন উপাধি দিতে চাই। রাজ দরবারে, সকল অমাত্যের উপস্হিতিতে দেয়া হবে সেই সন্মান।

উজিরঃ সেবককে আপনার খেদমত করার সু্যোগ দেবার জন্য অনেক অনেক শুকরিয়া। মালিক আমার বাকি জীবনটা আপনার খেদমতেই কাটাতে চাই। আমাকে সেই সুযোগ দিলেই আমি কৃতার্থ থাকব।
বাদশার এই দিনের ভ্রমন শেষে ক্লান্ত। বিশ্রাম দরকার। উজির কে পরামর্শ দিলেন বজরা থামাও। যেই কথা সেই কাজ। নদীর তীরে আমরা তাবু টানাব। আমি চাই এখানকার মানুষের সাথে একটু মিশতে চাই। কথা বলতে চাই। আমার রাজত্বে প্রজাদের সুখ দুঃখ দেখার দায়িত্ব আমার। তাদের ভাল মন্দ দেখার দায়িত্ব আমার। উজির আলা বাদশার আদেশ পালন করার সমস্ত কাজ সম্পন্ন করলেন। দেখে শোনে সন্ধার আগেই নদীর তীরে তাবু টানার কাজ শেষ করলেন। অত্যন্ত সুন্দর জায়গা। একদিকে নদী। অন্যদিকে খোলা মাঠ। গ্রামগুলো অনেক দূরে দূরে। রাতের অন্ধকার নেই বললেই চলে। কেননা চাঁদ তার রূপালি ঝলকে আকাশ আলোতে ভরিয়ে দেয়। বাদশা কে খুশি করার জন্য রাতের আয়োজন অনেক জোরে শোরে চলতে লাগল। উজির ভাল করেই জানেন বাদশার মন কি চায়। সেই মোতাবেক উজিরের খাদেমরা কাজ করতে লাগল। আগে থেকেই কিছু প্রস্তুতি ছিল। বাদশার ইচ্ছা কিছু পানাহার করা। হালকা মেজাজে থাকতে চায় । ভারি আয়োজনের দরকার নেই। কিন্তু উজির সাহেব জানেন তার কি করণীয়।
রাতের আয়োজনে গান বাজনা, আর নাচের সাথে মদিরা ভোজন। স্নোৎস্না কলকলিয়ে হাসে, হুর পরিদের মেলায় এমন চাঁদ বাদশা আগে দেখেনি। বাদশা যারপরনাই মুগ্ধ।নদীর পানির স্রোত বহে, মাঝি মাল্লা ধার টানে,বৈঠা বায়, গান গায়, সব কিছু ছাড়িয়ে বাদশার মন এই রাতে নাচের তাল লয়, মুদ্রা আর নর্তকির হাসি মাখা মুখের ভঙ্গি, চোখের ইশারার দিকে নজর বেশি। সব মিলিয়ে বাদশার মনে এল ভরা কাঁটাল; বয়সি বাদশার মনে যেন তারণ্যের ঝিলিক। বাদশা তার তারণ্যের সবটুকু ঢেলে দিলেন। কাউকে নিরাশ করেননি। আয়োজকরাও খুশি, বাদশাও তাই। যাক সেকথা ভোরে বাদশা ঘুম থেকে একটু দেরিতে উঠলেন। সকালে তেমন ব্যস্ততা নেই। আয়েশি ভঙ্গিতে নাশতা সেরে নেন। নাস্তার টেবিলে উজিরের সাথে কিছু কথা সেরে নেন। রাজ্যের নানা বিষয়, খাজনা আদায়, মানুষের জীবন জীবিকা সব। এখানকার প্রধান প্রধান ফসলের কথা, নদীর মাছ, কোন কিছু বাদ যায়নি। আলোচনা করতে করতে নদীর ঘেঁসে হাটা ধরলেন বাদশা। অনেক কিছু জানা হল। সকালের রোদ আজ একটু আলাদা। কেন জানি ভোরের রোদের তেজই অনেক। বাদশার শরীর ঘেমে যাচ্ছে। পাখাল সাথে ছিল। হাত পাখা দিয়ে বাদশা কে ঠান্ডা করা চেষ্টা করা হল। নদীর তীরে হাটতে হাটতে এক বাড়ীর কাছে পৌছে যায় বাদশা। গরম থেকে বাঁচার জন্য একটু বিশ্রামের দরকার। তাই করলেন। কচি ডাবের পানি দেয়া হল। পান করে বাদশা তৃপ্তি পেল। বাদশার মন ভাল ছিল। লোকজন যাদের সাথে দেখা হচ্ছে। নানান কূশলাদি সেরে নিচ্ছেন। মনে মনে নিজেকে সাধারণ মানুষের কাতারে ভাবছেন আজ বাদশা। কোন ভারিক্কি ভাব নেই। মাথায় তাজ নেই। একেবারে সাদা সিদা মানুষের মতন। সাথে পাইক পেয়াদা না থাকলে লোকে বাদশাই ভাবত না, এমন ভাবে চলছেন আজ বাদশা।
এই সময় ঘটে এক মহা বিপত্তি। চারদিক অন্ধকার হয়ে আসতে থাকে। মানুষজন চিৎকার চেঁচামেচি করতে থাকে। চারদিক মানুষের দৌড়াদৌড়ি, ছুটাছুটি দেখে বাদশা ভয় পেয়ে যান। আঁৎকে ওঠে বাদশার মন। এক তো অনেক দূরের এলাকা। আগেই জানতেন ভাটির মানুষ একটু আলাদা ধরনের। নিজেরা হত দরিদ্র হতে পারে। কিন্তু তাদের মন স্বাধীনচেতা। এখানে কি আবার বিদ্রোহ মোকাবেলা করতে হবে নাকি অন্য কিছু। বাদশা মনে নানা প্রশ্ন। কি ব্যাপার? কি ব্যাপার। এখানে এমন কেন হচ্ছে। চারদিক অন্ধকারে আচ্ছন্ন কেন? প্রশ্ন করতে করতেই উজির এসে হাজির হলেন। উজির দেখে বাদশা আবারো প্রশ্ন করলেন।
উজির সাহেব, শান্ত মাথায় বাদশার প্রশ্নের জবাব দিতে আরম্ভ করলেন। কিছু একটা মুখ থেকে উচ্চারিত হতেই চারদিকে অন্ধকার আরো ঘনিভূত হল। বাতাসের ঝাপটা নাকে মুখে লাগতে আরম্ভ করল। মনে হচ্ছে ভারি গাছ পালা উড়িয়ে নিয়ে যাবে। দূরে অন্ধকার আরো বেশি। নদীর বুকে বড় বড় ঢেউ। ছোট ছোট মাছ ধরার নৌকা গুলো উল্টে গেছে। জেলেরা যারা তীরে পৌছেছিল, তারা বেঁচে গেছে। কিন্তু অনেকের কোন হদিস নেই। যেখানে বাদশা বিশ্রামের জন্য অপেক্ষা করছিল। সেখানে জায়টা কিছুটা নিরাপদ মনে হচ্ছ। কিন্তু মানুষের চিৎকার চেঁচামেচি শোনেই ভয় লাগছিল।
বাতাসের ঝাপ্টা কমে আসছে। মানুষ অনেক শান্ত। দৌড়াদৌড়িও থেমে গেছে। এরই তুফানের রেশ টের পেলেন বাদশা। তাবুতে ফিরতে ফিরতে একটু দেরিই হল। পথে পথে বাদশা দেখে এলেন ঝড়ের তান্ডব।অনেক ঘর বাড়ীর ভেংগে গেছে। গাছপাল ডাল ভাংগা। কোন কোন গাছের মাথা নেই। কোনটা উপড়ানো। জেলেরা নদীর তীরে দাঁড়িয়ে কান্না করছে। সতীর্থদের হারানোর বেদনা তাদের বুক ভারি হয়ে আছে। আরো অনেক ক্ষতি বাদশার সরাসরি নজরে আসে। এই সব দেখে শোনে বাদশা ভারি মন নিয়ে তাবুতে ফিরল। এখানে এসে দেখে, তাবুর অনেক জায়গায় ছিঁড়ে গেছে।নতুন করে তাবু কে মেরামত করার চেষ্টা চলছে। বাদশার জন্য একটা কেদারার ব্যবস্হা হল। বাদশা পড়ন্ত বিকালে কেদারায় গা এলিয়ে দেখেন চমৎকার আকাশ। রোদ চক চক করছে। এই বিকালে বাদশা মনে হল এখানে এই দেশে এমন হল। আমার জীবনে অনেক কিছু দেখেছি। কিন্তু এমন তুফান আগে কখনও দেখিনি। বাদশার চিন্তার বাড়তে লাগল। দুপুরে অন্ধকার, ঝড় তুফান, গাছপালা ভেঙ্গে পড়া, ঘর বাড়ি তচনচ এই সব নিয়ে বাদশা মনে নানা চিন্তা জমতে লাগল। উজিরের আজ ব্যস্ততা বেড়ে আরও বেশি। আসপাশের অনেক মানুষ সাহায্যের জন্য আসল। সাধ্যমত সাহায্যের হাত বাড়াল। সৈনদল কে হুকুম দেয়া, বাদশার নিরপত্তার কড়াকড়ি করতে। কে জানে মানুষের মনে কি আছে। কোনজন কোন উদ্দেশ্যে এখানে আসে।
এই রাতে বাদশার ভাবনা একটাই ঝড়ের বিষয়। যথারীতি বাদশার ডাক পড়ল।
বাদশাঃ কি উজির ব্যাপার কি আজ একি দেখলাম। এমন ঝড়ের তান্ডব কেন? অন্য কোন অঞ্চলে এমন দেখিনি। ঘন জঙ্গল দেখেছি। পাহাড় দেখেছি। হিমালয় দেখেছি। ঝর্ণার খাড়া পানির প্রবাহ দেখেছি। কিন্তু এমন ঝড় আগে দেখিনি। আমাকে উত্তর দিন। ব্যাপার কি?
উজিরঃ আমার মালিক বাদশা মহোদয়, আমাকে অনুমতি দিন। আমার এই বিষয়ে যে জ্ঞান আছে তা আপনাকে অবহিত করছি। আমার পির্তৃ-পুরুষরা ইরান থেকে এই অঞ্চলে বসতি করেছিল। প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে তারা এখানে থেকে আবার বসতি দিল্লিতে নিয়ে যায়। আমার জন্ম দিল্লির কাছেই। আমার বাবা মায়ের কাছে এখানকার অনেক গল্প শোনেছি। এখানে মানুষ ঝড়ের তান্ডব, বন্যা,সমুদ্রের জোয়ারের মত প্রাকৃতিক দুর্যোগের সাথে সংগ্রাম করে জীবন কাটায়। কখনও ঘর বাড়ী হারায়, ফসল হারায়; জন মানুষও মারা যায়। এই নিয়ে এদের জীবন।
বাদশাঃ আজ যে ঝড় হল। সকাল বেলা চকচক রোদের মেলায় দুপুরে ঝড়ের এমন ভয়াবহতা, আবার বিকালে পরিস্কার আকাশ। শান্ত বিকেল। যেন কিছুই হয়নি। এর ব্যাখ্যা কি তোমার কাছে? আমাকে বুঝিয়ে বল। আমি আজ অনেক অস্তির,চিন্তিত। আমাকে শান্ত কর উজির, আমাকে শান্ত কর।
উজিরঃ হুজুর এই অঞ্চলের নাম বঙ্গদেশ। এখানে বার ভূঁইয়ারা শাসন করছিল। অনেক কাঠগড় পুড়িয়ে এখানে আমাদের শাসন কায়েম করতে হয়েছে। এখানে আগে আমি এসেছি, যুদ্ধের সময়। আমাদের সেনাদের মনোবল চাঙ্গা করতে তাদের পরামর্শ দিয়েছি। নৌকায় ভাটির দেশে ঘুরে ফিরে দেখেছি। এখানে আগেও আমি অনেক বার এই রকম ঝড় দেখেছি। লোকমুখে এই ধরনের ঝড়ের অনেক লোমহর্ষক বর্ণনা শোনেছি। আমার অভিজ্ঞা আর মানুষের কাছ শোনা কাহিনীই আপনারে জানাব বলে মনস্হির করেছি।
বাদশাঃ তাহলে উজির আর দেরি কেন? আমাকে বল এর রহস্য কি?
উজিরঃ হুজুর এর রহস্য অতি সাধারণ। বঙ্গভূমিতে কালবৈশাখীর ঝড় আসে। বৈশাখ মাসে এই ঝড়ের প্রকোপ বেশি। সারা দেশে একসাথে এই ঝড় হয় না। মৌসূমী বায়ুর প্রবাহে এখানে কালবৈশাখী ঝড় হয়। মৌসুমের প্রারম্ভে এই ঝড়ের প্রকোপ বেশি থাকে। এই আবহাওয়ার থাকে অত্যন্ত বিরূপ। উষ্ণতা বেশি থাকে। তাপপ্রবাহ বেড়ে গেলে বায়ুমন্ডলের নিচের অংশ উষ্ণ হয়ে হালকা হয়ে যায়। হালকা বায়ু উপরের দিকে ছুটে চলে। এই বায়ুমন্ডলের নীচের দিকে বাতাসের শুন্যতা দেখা দেয়। এই শুন্যতা পূরনের জন্য আসপাসে ভারি বায়ু এই শুন্যস্হান পুরনে তেড়ে আসে। কাল মানে সময় বা ঋতু। আবার তা কালো রং কেও বুঝানো হয়। কালবৈশাখীকে কখনও কখনও ‘কালোবৈশাখী’ নামেও আখ্যায়িত করা হয়ে থাকে যার অর্থ কালো বর্ণের বৈশাখী মেঘ। ঘন, কালো বর্ণের মেঘ ও ঝঞ্ঝা এবং এর ধ্বংসাত্মক প্রকৃতির জন্যই এ নামকরণ। ধ্বংসকারীকে ‘কাল’ বলেও ডাকা হয়। গ্রীষ্ম ঋতুর সঙ্গে হাত ধরাধরি করে এ ঝড়ের আগমন ঘটে। স্থানীয়ভাবে কোনো এলাকার ভূ-পৃষ্ঠ অত্যধিক তাপমাত্রা অথবা অন্যান্য কারণে উত্তপ্ত হয়ে উঠলে বায়ুমন্ডল যথেষ্ট অস্থিতিশীল হয়ে পড়ে এবং এ ঝড়ের জন্ম হয়। উত্তপ্ত, হাল্কা ও অস্থির বায়ু উর্দ্ধমুখী উঠতে থাকে এবং সমতাপীয় সম্প্রসারণ প্রক্রিয়ায় বায়ুস্তর সম্পৃক্ত বিন্দুতে না পৌঁছা পর্যন্ত শীতল হতে থাকে এবং মেঘ সৃষ্টি হয়। বায়ুমন্ডলের অস্থিরতা অব্যাহত থাকলে মেঘ উল্লম্বভাবে মেঘ গঠন করে এবং পরবর্তী সময়ে বজ্রঝঞ্ঝার সৃষ্টি হয় যা সবার কাছে কালবৈশাখী নামে পরিচিত। সাধারণ বর্ষণের সঙ্গে এ ঝড়ের মূল পার্থক্য হচ্ছে, এ ঝড়ের সঙ্গে সবসময়ই বিদ্যুৎ চমকায় ও বজ্রপাত হয়। বাতাসের গতি থাকে প্রচন্ড। সবকিছু চুরামার করে দেয়।
বাদশাঃ মুগ্ধ হলাম তোমার পান্ডিত্য দেখে। অনেক জ্ঞান আছে তোমার এই বিষয়ে। আমি তোমার প্রজ্ঞার কাছে হার মেনেছি। তোমার উত্তরে যুক্তি আছে। মেনে নিলাম ঝড়ের কারণ।
এবার বাদশার মন দিল্লি ফেরার জন্য অস্তির হচ্ছে। এখানে আবহাওয়ায় গরমের তীব্রতা বাদশাকে দিল্লির প্রাসাদে চলে যেতে মন চাইছে। ওখানে রাণীদের কথা চিন্তা হচ্ছে। হেরেমের দাসিদের সাথে অনেকদিন দেখা নেই। বাদশা উজির কে ধন্যবাদ দিয়ে রাতের বৈঠক সমাপ্ত করবে। এমন সময় বাদশার মন আবার উদাসিন, চিন্তিত মনে হল। উজির আগ বাড়িয়ে প্রশ্ন করল। হুজুর আপনাকে বেশ চিন্তিত মনে হচ্ছে। যদি আমাদের তরফ থেকে এমন কিছু ঘটে থাকে, যাতে আপনার মন খারাপ হতে পারে। তাহলে মাপ করবেন। আশা করি হুজুর আমাদের ক্ষমা করেছেন। তাহলে হুজুরের খেদমতে রাতে ঘুমানোর আয়োজন করি। বাদশা প্রতিত্তোরে বলল, মন আমার চিন্তিত ঠিকই তবে তা খেদমতে অভাবে নয়। আমার মনে আরেকটি প্রশ্ন উকি দিচ্ছে। জানিনা তোমাকে কিভাবে সেই প্রশ্ন রাখব। উজির মুচকি হাসি দিয়ে বলে, হুজুর প্রশ্ন করুন। আমার জানা থাকলে আপনাকে নিরাশ করব না। নিজের মনের কোণে লুকিয়ে থাকা প্রশ্ন উজির কে করল।
বাদশাঃ বেশ কয়েকদিন হল এই ভাটির দেশে এলাম। নানা বয়সের মানুষ দেখেছি। দেখেছি তাদের অভাব অনটনের মাঝে অবারিত হাসি। প্রকৃতির খেয়ালের উপর তাদের জীবন –জীবিকা, বেঁচে থাকার লড়াই দেখেছি। কিন্তু আমাকে যে জিনিসটা অত্যন্ত বেমানান মনে হচ্ছে। তাই তোমাকে প্রশ্ন করছি। প্রথমে আমি তোমাকে এই প্রশ্নই করতে চেয়েছিলাম। যাক!! আজ করি। জানিনা আমাকে তুমি উত্তর দিবে। তবু করছি। তুমি প্রজ্ঞাবান আমি জানি।
উজিরঃ প্রশ্ন করুন হুজুর, আমি কথা দিচ্ছে, আমার জ্ঞানের সবটুকু দিয়ে আপনা সন্তুষ্ট করার চেষ্টা করব।
বাদশাঃ আমি উত্তরের মানুষ। আমাদের বংশধররা আফগান সীমান্তে বসতি করেছিল। আমাদের দমনি মোঙ্গল রক্ত। আমাদের সবার গায়ের রং, চুল, উচ্চতা, দেহের কাঠামো, মুখায়ব, চোখের গঠন, সব প্রায় একই রকম। কিন্তু এখানে মানুষ এত বিচিত্র কেন। এখানে উচ্চতা, গায়ের রং, চোখ, চুল, শারিরিক গঠন এত বিচিত্র কেন? কাল, গৌঢ়, শ্যামলা, আবার অনেকই ফর্সা; উচ্চতায়ও নানা রকম, লম্বাটে, বেঁটে,মাঝারি আকারের। অনেকের মুখ গোলাকার, আবার লম্বাটে, চ্যাপ্টা নানা রকম। কারো নাক লম্বা, কারো উন্নত, নাসিকা। চোখের গঠণ প্রণালীও বিচিত্র। তেমনি মাথার চুল। কারো চুল সোজা সাপ্টা আবার কারো চুল কোঁকড়ানো। এই রকম রং বেরঙের মানুষ আগে কখনও দেখিনি। উজির তোমার কি জানা আছে এই রকম ফের মানুষের কাহিনি?
উজিরঃ হতবম্ভ হয়ে যায়। এই প্রশ্নের কি উত্তর দিবে। বাদশা তাকে এক ধাঁধায় ফেলে দিল। আজ বুঝি আমার সমস্ত জীবনের অর্জন,বিশ্বাস সব খুয়াবে।মনে মনে সাহস করে উত্তর দেয়। হুজুর আমাকে ক্ষমা করবেন। এই প্রশ্নের উত্তর আমার জানা নেই। আমি আপানাকে কাল সকালে এর উত্তর দিব। এই বলে বিদায় নিল।
কিন্তু ভাবতে লাগল ঘুম থেকে উঠে বাদশা ভুলে যাবে। আমি বেঁচে যাব। যাক! বাঁচা গেল। বিধি বাম, ভোর হয়েছে। বাদশা উজিরকে ডেকে পাঠাল। উজির ভাবছে। হয়ত, দিল্লির দিকে রওনা দিতে হবে তাই ডাকছে। দেখি কি বলে। বাদশা সাথে দেখা হতেই আগের প্রশ্ন মেলে দিল বাদশা। উজির বল আমাকে এর কারণ কি? নিরূপায় কতবার বাদশা কে বলবে সে জানে না। এই বার উত্তর তাকে দিতেই হবে।
উজিরঃ কিছুক্ষণ নীরবে মাথা নীচু করে রইল। অতঃপর বুকের সব সাহস একসাথে উত্তর দিল। হুজুর আমি যতটুকু জেনেছি, এখানকার মানুষের মনের মিল নাই। তাই এই রকমফের।
বাদশা আপাততঃ এর উত্তর মেনে নিলেও। উজিরের কোন প্রসংশা করেনি।মনে মনে ভাবছে এবার দিল্লি যাই। দেখা যাক! হয়ত এর অন্য কোন কারণ আছে। হয়ত উজিরই সঠিক!! দ্বিধা নিয়েই দিল্লি যাত্রা। বাদশা এর কারণ বের করতে পেরেছিলেন?
পুনঃশ্চ;- সঠিক উত্তরের জন্য অপেক্ষা করুন।




মন্তব্য ৩ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ০৬ ই আগস্ট, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:৫৫

স্পর্শহীন আলো বলেছেন: :O

২| ০৬ ই আগস্ট, ২০১৭ রাত ৯:০০

নয়ন বিন বাহার বলেছেন: এদেশে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন জাতি এসে ঘাঁটি গেড়েছে। শাসন করেছে। বসতি করেছে। এখানে তারা সংসার পেতেছে। ফলে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে এক সংকর জাতি। তাই পৃথিবীর সকল জাতির মত দৈহিক গড়নের মানুষ এই মুলুকে পাওয়া যায়।

৩| ০৬ ই আগস্ট, ২০১৭ রাত ১০:২৩

সনেট কবি বলেছেন: সুন্দর পোষ্ট।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.