নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সাদাসিদে কথা কাজের ফাঁকে কিছু করা,ব্যস্ততার মাঝে যাকিছু ভাবি তাই লিখি।

HannanMag

শিক্ষাজীবন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে। সমাজতত্ত্ব বিভাগে। অনেকপরে আবার একই বিশ্ববিদ্যালয় হতে এম,বি,এ,করি। ১৯৯৬ সালের শেষের দিকে কর্মজীবনের শুরু। উন্নয়ন সংস্হায় প্রথম কাজ করি। এই সময় দেশের বিভিন্ন স্হানে ঘুরাঘুরির সুযোগ হয়। দেশের মানুষ ও প্রকৃতির রঙ, আর বিচিত্র পেশার মানুষে সাথে দেখা হয়। অতঃপর পোশাক শিল্পে কাজ করি। ২০০০-২০০৪ সালের এপ্রিল পর্যন্ত বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকে কর্মরত ছিলাম। ২০০৪ সালে আবার ফেরৎ আসি আমার প্রাণের কর্মক্ষেত্র পোশাক শিল্পে। সেই থেকে আজ অবদি কাজ করছি এখানে। বিচিত্র অভিজ্ঞতা, নানান দেশে ভ্রমণ করি। কাজের ফাঁকে পড়ি। মন চাইলে লিখি। ভাষার দক্ষতা তেমন নেই। চেষ্টা করছি ভাষা আয়ত্ত্ব করতে। কিছু বিচিত্র বিষয়ে লেখার ইচ্ছে আছে। লেখার কাজে হাত দিয়েছি। দেশে দেশে পোশাকের বিবর্তন নিয়ে লিখছি। এই নিয়ে পড়াশোনা করতে ভালই লাগে। যাপিত জীবনের কথা, ক্লেদ, প্রেম অভিজ্ঞতা লেখব ভাবছি।

HannanMag › বিস্তারিত পোস্টঃ

ডাক্তার বন্ধুরা ক্ষমা করবেন

১১ ই আগস্ট, ২০১৭ বিকাল ৫:৫৭


আমরা অতি সাধারণ মানুষ। জীবন যাপনও অত্যন্ত সহজ সরল। আপনাদের মত জ্ঞানী নই। বিদ্যা-বুদ্ধিও সরল। সাদা কে সাদা কাল কে কাল দেখেই আমরা অভ্যস্ত। আমাদের শরীর নামক একটা বস্তু আছে। রক্ত মাংশের শরীর। মাছে ভাতে বাঙ্গালীর শরীর। রোদ বৃষ্টি ঝড় তুফানের মাঝে চলা শরীর। একেবারে খেটে খাওয়া শরীর। রাস্তার কাদা, ধুলি বালির ভেতর চলা শরীর। ঝাল মরিচ, লবন,তেল, ডালপুড়ি, পরাটা ভাজি ভূজি, খাওয়া শরীর। মাঝে মধ্যে গরুর মাংশ খাওয়া হয়। চট্টগ্রাম থাকার কারণে সামুদ্রিক মাছও খাই। অফিসের কাজের বাইরে রাস্তায় হাটতেও বের হই। শাক সবজি যা পাওয়া যায় তাই খাওয়া হয়। অনেক বছর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করার সময় হলের খাবার ততটা ভাল ছিল না। বাধ্য হয়ে যা পেয়েছি তাই খেয়েছি। ডাল কে গরম পানি হিসাবে খাওয়া হত। জীবন বাঁচানোর জন্য খাওয়া। কাজেই রক্ত মাংশের শরীরতো এর কল কবজা, হাত পা, মাথা, পেট, নারিভুরি, কলিজা, কিডনি, খাদ্যনালী, শ্বাসনালি, ফুসফুস, হৃদপিন্ড সব সময় ভাল থাকেনা। ঘরের গৃহিনী, সন্তান, অফিসের বস সবার মন রাখতে হয়। সব মিলিয়ে ঝামেলা কমতি নেই। গাঁ ব্যথা, মাতা ব্যথা, নাকি পানি, বুক ধরফর, মাথা ঘুরানো, বুক জ্বালাপোড়া, ইত্যাদি লেগেই থাকে। তার মাঝে টেনশন, শরীরের বাড়তি মেদ খাদ্য অভ্যাসের কারণে শরীরে সুগার বেড়েও গেছে। কি আর করা, এই নিয়েই আমাদের জীবন। বেঁচে থাকার স্বপ্ন কার নেই। আমিও অনেক দিন বাঁচতে চাই। এখানে কারো হাত নাই। উপরওয়ালার ইচ্ছা উপরই সবার ভরসা। আমিও তাই মনে করি। তবে যতদিন বেঁচে আছি ততদিন সুস্হ্যভাবে বাঁচতে চাই। এই জন্য ভাল মন্দ বিবেচনা করে খাই, বিশ্রাম নেই, কাজ করি, ব্যয়াম করি। তারপরেও শরীর নামক যে দেহটা আছে নানা কারনে সংকটে থাকে। খারাপ লাগে, ব্যথা বেদনা থাকে, অন্যান্য সমস্যাত আছেই। কাজেই ডাক্তারের কাছে যাই। আপনাদের সাথে কথা বলে, পরামর্শ নিলে, ঔষধ পত্র নিলে যদি শরীরটা আরো ভাল থাকে। এই চিন্তা থেকেই যাই।

বিজ্ঞানের কত উন্নতি হয়েছে, প্রযুক্তির কত বিকাশ হয়েছে, সেই সাথে নতুন প্রজন্মের চিকিৎসকদের জ্ঞান বেড়েছে। দক্ষতা বেড়েছে। চিন্তা ভাবনার উন্নতি হয়েছে। মানব কল্যানের জন্য অনেক কাজ করা হচ্ছে। যুদ্ধ ক্ষেত্রে অনেক চিকিৎসক তাদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করে মানব সেবা করছে। Doctors without Boders, নামক প্রতিষ্ঠানটি সারা বিশ্বে তাদের সেবার কাজ করছে। যেখনেই বিপদ আপদ, যুদ্ধ –বিবাধ চলে, প্রাকৃতিক দুর্যোগ আসে, মরামারি থাকে সেই সব জায়গায় তারা সেবা দেয়। এই জন্য তাদের আলাদা কদর আছে। এই সংগঠনের অধিকাংশই ডাক্তার। এই সংগঠনটি একবার শান্তিতে নোবেল পেয়েছে। যাক সে কথা। আমাদের দেশেও এই ধরনের সংগঠন আপনারা করতে পারেন। আমাদের দেশে সময় –অসময় নেই, দুর্যোগ নেমে আসে। অতি গরিব মানুষগুলোর পাশে আপনাদের সাহায্যের হাত বাড়াতে পারেন। এই বছর অনেক জায়গায় বন্যা হয়েছে। বন্যার কবলে মানুষ ফসল হারিয়েছে। গবাদি পশুকে বিক্রি করেছে। খাবারের জন্য সরকারি ত্রাণের জন্য অপেক্ষা করেছে। চিকিৎসার টাকা কিভাবে যোগাড় করবে। চিকিৎসার খরচ এখানে এমনিতেই বেশি। সেখানে যদি আপনাদের একটু দরদ দিয়ে সেবা পেত, তাহলে এদেশের মানুষ আপনাদের কে মনে প্রাণে শ্রদ্ধা করত। মানুষের প্রতি এই দরদতো আপনাদের এমনিতেই থাকার কথা। কেননা সরকারি মেডিকেল কলেজে যারা পড়াশোনা করেছেন, তাদের পেছনে সরকারের ভর্তুকি লাগে। এই টাকা আসে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে। মজার ব্যাপার হল, এইবারের বন্যার সময় বা তার পরে আপানাদের কে সেবার জন্য কোথাও দেখা যায় নাই। আমাদের চোখে পড়েনি।
মানুষের বাঁচার স্বপ্ন কে আরো উপরে নিয়ে গেছে চিকিৎসা সেবা। এই সেবা মানুষের জন্যই নিবেদিত। চিকিৎসা সেবার উন্নতির জন্য কত টিকা যে বের করেছে বিজ্ঞানিরা। তাছাড়া কত ঔষধ বেড় হয়েছে। কত যন্ত্রপাতি বের হয়েছে।বিজ্ঞানের চকমপ্রদ সব আবিস্কার মানব জাতিকে দীর্ঘায়ূ দিয়েছে। নিশ্চয় এতে উপরে যে মালিক বসে আছে তার হাত আছে। নইলে মানুষ একা এই সব করতে পারত না। আপনারা ডাক্তার তারা এই সব আবিস্কার কে ব্যবহার করে মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর দায়ীত্ব নিয়েছেন। আপনারা সেবা দান করেন, আমরা সেবা নেই। বিনিময়ে আমরা আপনাদের নির্ধারিত ফি দেই। ভাগ্য ভাল উকিলদের মত যা মন যায় তা ফি নেন না। মাঝে মাঝে ফি ছাড়াও সেবা দেন। আপনাদের কে অনেক অনেক ধন্যবাদ। আমাদের স্ত্রী –পুত্র – কন্যা, মা বাবা সহ নিজে কতবার আপনাদের কাছে চিকিৎসা সেবার জন্য গিয়েছি তার হিসাব দিতে পারব না। বলতে গেলে জন্মের পর আপনাদের হাতে জীবনটা বহুবার বেঁচে গেছে। আল্লাহর রহমতে আপানারা সেবা, পরামর্শ, ঔষধ পথ্য দিয়ে শরীরটা কে বাঁচিয়ে তোলেছেন। এই জন্য আবারো আপনাদের কে ধন্যবাদ। আপনাদের কাছে বার বার যাওয়ার কারনে যে অভিজ্ঞতা হয়েছে তাই এখানে তোলে ধরলাম। আমি এখানে যা লিখছি তার দায় আমার। কোন কারণে কারো প্রতি বিদ্বেষ বশতঃ হয়ে লিখছি না।
প্রথম কবে কেন ডাক্তারের কাছে গিয়েছিলাম তা মনে নেই। স্কুলে পড়া কালিন আমার হাম হয়েছিল। গ্রাম্য হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসায় ভাল হয়ে যাই। তেমন কোন বড় চিকিৎসা নিতে হয়নি। ছোট সময় আমার একবার পাতলা পায়খানা হয়েছিল। অনেক দিন ভোগে ভাল হয়েছি।আমার শরীর থেকে লবন পানি বের হয়ে গিয়েছিল। এই সমস্যা আমাদের দেশে অনেক প্রাচীন। আগে অনেক মানুষ মারা যেত। কলেরা হলে গ্রামের পর গ্রামের মানুষ মরে সাবার হয়ে যেত। সামান্য একটা স্যালাইন খাওয়ানোর কারণে কত মানুষ বেঁচে গেছে। বিশুদ্ধ পানি খাওয়ার পরামর্শ দেন আপনারা এতে অনেক মানুষ রোগ শোক থেকে বেঁচে যায়। শিশুরা আগে অনেক বেশি মরে যেতে নানা রোগ ব্যাধির কারণে। আমাদের দেশটা যেহেতু গ্রাম প্রধান সে কারনে আমাদের মায়েরা অধিকাংশ গ্রামেই বাস করত। এখনো সিংহভাগ মানুষ গ্রামে থাকে। তাছাড়া একজন মা কতজন সন্তান নিলে তার শরীরের ঝুঁকি নেই তা তারা জানত না। পড়া লেখা ছিল না। বাবাদের ইচ্ছা –অনিচ্ছাই ছিল তাদের জীবন। মায়ের কোলে জন্ম নেয়ার আগের অনেক সন্তান মারা যেত। জন্ম দিতে মা মারা যেত। এই কারণে আমাদের গড় আয়ু ছিল ২১ বছর। ক্রমে ক্রমে মানুষ সচেতন হয়। চিকিৎসা বিজ্ঞানের উন্নতি হয়। মানুষ চিকিৎসা বিজ্ঞানের কল্যানে আর আপনাদের মহৎ পেশার সেবা পেয়ে জীবনের মান বাড়ে। শিশু মৃত্যুহার অনেক কমে যায়। মায়েরা সন্তান কম নিতে চান। বার বার সন্তান না নেয়ার কারনে তাদের জীবনের ঝুঁকি কমে যায়। আমাদের দেশের মানুষের গড় আয়ু এখন অনেক ভাল। উন্নয়ন শীলদেশের এই মান অনেক ভাল। গ্রামের মানুষও এখন অনেক সচেতন। তারা সামান্য সমস্যা হলেই ডাক্তারের পরামর্শ চায়। অনেক সময়ই তারা এই পরামর্শের জন্য অনেক দূর থেকে শহরে আসে। শহরে এসে অনেক কিছুই তারা বুঝে না। শহরের দেখে যত্র তত্র অনেক বড় বড় হাসপাতালের সাইন বোর্ড। সাইনবোর্ডে লেখা থাকে বড় বড় চিকিৎসকের নাম। এই সব দেখে উরা সেখানে চলে যায়। মনে করে অনেক বড় হাসপাতালে এসেছি। রোগ ভাল হবে। মনে শান্তি আসবে। পিতা মাথা খুশি হবেন তাদের চিকিৎসা করানোর জন্য। কিন্তু কে জানে এই চিকিৎসক আসল না নকল। অনেক সময়ই দেখা যায় অনেক নকল ডাক্তার বের হচ্ছে। পাস করা ডাক্তারের নামের সাথে মিল রেখে। অনেক লম্বা লম্বা ডিগ্রির তালিকা নামের সাথে জুড়ে দেয়া আছে। সাধারণ মানুষের কথা বাদই দিলাম,উচ্চ শিক্ষা প্রাপ্ত মানুষজন পর্যন্ত ধোঁকাবাজির কবলে পড়ছে। এই সব দেখার দায়িত্ব কার? সরকারের না আপনাদের সংগঠন যারা চিকিৎসা সেবা প্রদানের জন্য সনদ প্রদান করেন তাদের। আমরা আম জনতার কাছে কে আসল কে নকল তা বুঝার কোন মাপকাঠি নাই। আপনারাই জানেন আসল নকলের তারতম্য। আমরা সেবা চাই। অসুখ বিসুখ হলে সেবা নিতে গিয়ে আসল নকলের হিসাব কি করে করি।
যারা চিকিৎসা বিজ্ঞানে পড়াশোনা করেন আমাদের দেশে তারা সবাই খুব ভাল ছাত্র এতে কোন সন্দেহ নাই। যারা সাইন্স পড়ে, মেডিকেলে চান্স পায় না তারা যায় সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে। সেখানে যারা প্রাণ রসায়ণ, জীববিজ্ঞান পড়ছে, কিংবা অন্যান্য শাস্ত্রে পড়াশোনা করছে। তাদের অনেকেইদিন রাত কেটে গবেষণ করে। নানা রোগব্যাধির কারণ নির্ণয় করে, অনেকেই ঔষধ পত্র, টীকা বের করেছে বা আজ করে যাচ্ছে। তাদের আবিস্কৃত ঔষধ পত্র,টীকা দিয়ে আপনারা চিকিৎসা করে থাকেন। আপনারা আজ পর্যন্ত কোন নকল রসায়নবিদ, জীববিজ্ঞানী খুঁজে পেয়েছেন। উত্তর হবে না। তবে কেন নকল চিকিৎসক পাওয়া যায়?

আমাদের দেশে গড় আয়ু এখন প্রায় ৭০ বছর। অনেকেই মাশাল্লা ৯০ থেকে এক বছর পর্যন্ত বেঁচে আছে দিব্যি সুন্দর স্বাস্হ্য নিয়ে। চলাফেরা করছেন, রাজনীতি করছেন। মন্ত্রি, লেখকদের অনেকেই এই তালিকায় আছেন। এর চেয়ে আর কি চাই! আমরা। অনেক ভাল মানইত অর্জন করেছে আমাদের দেশ। এতে আপনাদের ভূমিকা ছোট করে দেখাবে সে নিয়ামক হারাম। যেমন আল্লাহর দেয়া প্রকৃতির দান গ্রহন করে আমরা বেচে আছি কিন্তু শোকরগুজার করছি না বলে যে ধরনের হারামি হবে, অনেকটা সেই রকম। জ্বর ব্যথা নিয়ে, পেট খারাপ নিয়েও আপনাদের কাছে যেতে হয়। অন্য রোগের কথা বাদই দিলাম।

আমাদের কে আপনাদের কাছে যেতেই হবে। আপনার আমাদের দুর্বল মনের কোনে যে ভয় আছে তাকে আপনারা ভাল করেই পড়তে পারেন। এই ভয় আপানাদের পুঁজি। একে সম্ভল করে আপনারা ব্যবসার ফাঁদ পাতেন। আমরা সেই ফাঁদে পা দেই। এইটা আমাদের দুর্বলতা। ধরুন আমার জ্বর হয়েছে, আপনার কাছে গেলাম। আপনি দেখে শোনে প্রাথমিক সনাক্তকরণের কাজ করলেন। আমাকে কিছু উপদেশ দিলেন, সাথে যোগ করলেন, রক্ত –কফ, মল-মূত্র পরিক্ষা করেন। দেখি কি ভাইরাস আপনার জ্বরের কারণ। পরিক্ষা করলে সব ধরা পড়বে। প্রেসক্রিপশনের কোণায় এই সব পরিক্ষা করার ঠিকানা লিখে দিলেন। ওখানেই এই সব পরীক্ষা করতে হবে, এর চেয়ে ভাল পরিক্ষাগার আর এই শহরে নেই। আমি সেখানে গেলাম পরিক্ষা করলাম। মোটা অংকের বিল দিলাম। এখানে আপনার পরোক্ষ আয় নিহিত আছে; রোগী হিসাবে এটা আমার জানার কথা না। পরিক্ষাগার থেকে মাসে মাসে একটা চাঁদা আপনার ব্যাংক একাউন্টে জমা হয়। কোন পরিশ্রম ছাড়াই আপনার আয় বেড়ে গেল। রোগী হিসাবে আমার কিছুই করার নাই। পরিক্ষা শেষে আপনার কাছে আবার গেলাম। আপনি দেখে শোনে বলে দিলেন, কিছুই হয়নি। আপনি ভাল আছেন। যেহেতু বয়স হয়েছে তাই নিশ্চিত থাকার জন্য এই পরিক্ষাগুলো দিয়েছিলাম। মাঝে এই দরকারি পরিক্ষাগুলো করিয়ে নেবেন। আমার কাছেও আসতে হবে না। নিজেই জেনে যাবেন আপনার সমস্যা। এর পরে যদি ভাবেন সমস্যা আছে। আপনি রিপোর্ট দেখে বুঝেন নাই। তাহলে আমার কাছে আবার আসবেন আমি বুঝিয়ে দেব। এইভাবে চলতে থাকে রোগীর সাথে ডাক্তারের প্রথম পর্ব।

আসুন রোগী কিভাবে দেখা হবে বলি। এই শহর মানে চট্টগ্রাম শহর। এখনে হৃদরোগের প্রখ্যাত বিশেষজ্ঞ আছেন। উনার চেম্বারে যাবেন। একজন মহিলা নার্স আছেন যিনি আপনার ওজন নিবে। ব্লাড প্রেসার চেক করবে। এই সবলিখে ডাক্তার সাহেব কে দিবেন। উনি আপনার দিকে চোখ বড় বড় করে তাকাবেন। ভারি গলায় বলবেন, কি সমস্যা আপনার কেন আসছেন। এই বলেই উনার নজর চলে যাবে সামনে টেলিভিশনের পর্দায় সেখানে জি সিনেমায় চলছে বাংলা ছায়াছবি অথবা কোন ধারাবাহিক নাটক। আপনার সাথে কথা বলতে লিখে দিবে কি করণীয়। আমার একবার সুভাগ্য হয়েছিল উনার কাছে আমার স্ত্রী নিয়ে যাবার। তারপর আর যাই নাই।

অন্য আরেকজন আছেন। সম্ভবত উনি একজন অবসর প্রাপ্ত। অনেকক্ষণ রোগী দেখেন। কয়েকদিন চেষ্টা করে উনার চেম্বারে সিরিয়াল পাওয়া গেল। তবে রাতে দেখাতে হবে।আমাকে সময় দেয়া হল রাত ৯টায় আসেন।ঠিক আছে। যথা সময়ে গেলাম। আমার যেতে দেরি হয়নি। তবে আমার ভাগ্য খারাপ যে উনি নাকি সেদিন দেরিতে চেম্বারে গেছেন। যাক উনি দেখছে আর একেক জনের ডাক পড়ছে। আমি অপেক্ষায় আছি আমাকে ডাকা হবে। সেই ডাক এল ঐ রাতে কিন্তু আমার ক্ষুধার্থ দুইটি শিশু যাদের বয়স অনেক কম। একজন ২ আরেক জন ৫ বছরের দুই জনেই তখন অনেক গভীর ঘুম। কোলে মাথা রেখে একজন তার মায়ের কাছে আরেকজন আমার ঘুমাচ্ছিল। তখন আর ইচ্ছে করছিল ওদের কে ডেকে সজাগ করি। তবু ওদের কে সজাগ করা হল। কেননা তিনদিন চেষ্টা করে সিরিয়াল নেয়া।যাক সেই রাতে ডাক্তার সাহেবের সাথে কাজ শেষ করে বাসায় ফিরি। অনেক রাত। বাচ্ছারা না খেয়ে ঘুমাচ্ছিল। আমরাও আর কিছু না খেয়েই ঘুমিয়েছি। উনি কোন ভারতি পরিক্ষা নিরিক্ষা দেননি। কিছু ঔষধ পত্র লিখে দেন। যা কিনা অনেক কাজে দিয়েছিল। অনেক দিন আর চিকিৎসকের কাছে যেতে হয়নি। একদিনের কষ্টের কথা আমরা ভুলে যাই। এর পর ডাক্তারের গেলেই আমার স্ত্রী ভয় করত। কত রাত হবে আগেই গিজ্ঞেস করে নিত। কিন্তু যারা চট্টগ্রামে চিকিৎসকের কাছে যান, তারা জানেন কত রাত পর্যন্ত চিকিৎসকের কাছ থাকতে হবে।

গতসপ্তাহে একজন চিকিৎসকের কাছে গেলাম। আমার স্ত্রী অসুস্হ্য। সকাল বেলা গেলাম সিরিয়াল দিতে। সকাল মানে সকাল ৭টায়। দেরিতে গেলে অনেক পিছনে থাকবে নম্বর। অনেক রাত হবে। আমার স্ত্রী বেশী চিকিৎসকের চেম্বারে বসে থাকতে রাজিনা। তার ঘুমের সমস্য আছে। দেরিতে ঘুমাতে গেলে আর রাতে ঘুমাতে পারবে। সকালে দেরি করে ঘুমানোর সুযোগ নেই। বাচ্ছাদের স্কুলের জন্য তাড়াতাড়ি ঘুমতে উঠতে হবে। যাক সকাল ৭টায় গিয়ে সিরিয়াল দিয়েই আমার নম্বর ৮। জিজ্ঞেস করলাম এত সকালে আসার পর কেন ৮ হবে। আগের দিনের কোন সিরিয়াল দেয়া আছে কিনা। বলল না, সকালেই আসলেও এখান থেকেই আমরা আরম্ভ করি। বললাম কেন? উত্তর দিল, এইটাই এই ডাক্তারের নিয়ম। ঠিক কখন আসব। বলল, সন্ধা সাত-থেকে সাড়ে সাতটায় আসেন। চলে আসলাম। সন্ধায় বাসায় গেলাম। বাসা থেকে বের হয়ে ডাক্তারের চেম্বারে পৌছাতে পৌছাতে সন্ধা ৮.৩০টা বেজে যায়। বাসায় মেয়েকে বলে আসি, আমাদের দেরি হলে তোমরা ভাত খেয়ে নিও। আমরা গিয়ে দেখি মাত্র ২নম্বর রোগী ভিতরে গেছে। দরজায় লেখা আছে একজনের সাথে একজনের বেশি ভেতেরে প্রবেশ করবেন না। যে ছেলেটা ডাক্তার সাহেবের সিরিয়াল দেখে দেখে রোগীকে ভেতরে পাঠাচ্ছে তাকে জিজ্ঞেস করলাম আজ এত সকালে সিরিয়াল দিতে এসেও কেন ৮ নম্বর সিরিয়াল পেলাম। সে উত্তর দিল এক থেকে সাত নম্বর সিরিয়াল আমার কাছে। বললাম আপনাকে কিভাবে পাব। সে বলল আমার মোবাইল নম্বর দেয়া আছে। ভাবলাম বোকামি করেছি, আপনার নম্বরে ফোন করেইত নম্বর নিতে পারলাম। সকল বেলা চেম্বারে না আসলেও হত। যাক আর যাতে ভুল না হয় সে খেয়াল রাখতে হবে। যেহেতু আমাদের ৮ নম্বর সিরিয়াল হয়ত বেশি দেরি হবে না। ভাবছি এমনিতেইত দেরি করে এসেছি, যাক এবার আমাদের সিরিয়াল আসলেই হল। অপেক্ষা করছি আর অপেক্ষা করছি। বাসা থেকে ছেলে মেয়েরা ফোন বার বার জিজ্ঞেস করছে কত দেরি হবে। সেদিন বাসায় গিয়েছি রাত ১২.৩০টায়। যতবার একজন রোগী ভেতরে পাঠানো হচ্ছে সাথে অন্তত তিনজন যাচ্ছে প্রেসক্রিপসন দেখাতে।প্রতি জনের সাথে আরেকজন। অর্থাৎ ৬জন একসাথে প্রবেশ করে। আর রোগীর সাথে দুইজন। সামান্য একটা রুমে ৯ জন মানুষ। অনুমান করুন রোগীদেখার পরিবেশটা কেমন। এই রকম পরিবেশের আমাদের ডাক্তার ভাইদের মাথা কাজ করে। চিন্তা করলে কিছুটা অবাক লাগার কথা। কাজেই ডাক্তার সাহেব আগে টেস্ট রিপোর্ট দেখবেন অতঃপর নতুন রোগী।
চট্টগ্রাম শহরে অধিকাংশ চিকিৎসকের রুমে একসাথে ৮-১০জন বসা থাকে। আপনি নিজের সমস্যার কথা ভুলে যাবেন অন্যের সমস্যার কথা শোনতে শোনতে। আপনার পালা এলে, পেছনে আরো কয়েকজন এক সাথে প্রবেশ করবে। এই সব মানুষের ভীড়ে নিজের সমস্যার কথা বলা আসলেই কঠিন। আর যদি রোগী মহিলা হয়, ৮-১০ পুরুষ বসা, দাঁড়ানো চেম্বারের ভেতর, ভেবে দেখুন সেই মহিলা রোগীর মানসিক অবস্হার কথা। আমাদের মত দেশে যেখানে নারীরা এমনিতেই অন্তর্মুখী, লাজুক আর হায়া শরমের ব্যাপারত আছেই। অধিকাংশ চিকিৎসকের কাছেই এই অবস্হা। একজন গাইনি ডাক্তারের নিজের চেম্বারে সিরিয়াল দেয়ার নিয়ম হল; সকাল বেলা, যতভোরে পারেন তার চেম্বারের যাবেন। চেম্বারের সামনে গিয়ে দেখবেন কোন সহযোগী নেই। ইট দিয়ে চাপা দেয়া আছে একটি সাদা কাগজ। এখানে রোগীর নাম লিখে দিয়ে আবার ইট চাপা দিয়ে আসবেন। বিকাল চারটায় আবার যাবেন তখন একজন সহযোগি পাবেন। যিনি ইট দিয়ে চাপ দেয়া কাগজ থেকে নামগুলো একটি খাতায় লিখছেন। আপনার নাম আবার এই নতুন তালিকার সাথে মিলিয়ে নেবেন। সকাল বেলা কেউ যদি গিয়ে দেখে নামের লম্বা তালিকা, তাহলে সে আবার নতুন একটা কাগজ নেয়। নিজের রোগীর নাম আগে লিখে, পুরানো রোগীর নাম কয়েকটা লিখে আগে থেকে রাখা কাগজ হাতে নিয়ে দূরে ফেলে দেয়। এইভাবে চলতে থাকে কয়েক দফা পরিবর্তনের কাজ। আপনি ভাগ্যবান হলে আপনার নাম থাকতেও পারে আবার নাও থাকতে পারে। বিকাল বেলা গিয়ে আবার নিশ্চত হলেই বলা যাবে আপনার ভাগ্যে কি আছে। এর পর দ্বিতীয় অভিজ্ঞতা, রোগী দেখার সময় ডাক্তারে র চেম্বারে উনার সিটের পাশেই একটি খাটিয়ার মত আছে। সেখানে রোগীকে শোয়ানো হবে। উনি গাইনি ডাক্তার ( মহিলা), উনার চেম্বারের অন্যসব রোগীদের সামনেই চলছে পিজিকেল পরিক্ষা-নিরিক্ষা। অন্য মহিলারা হাঁ করে তাকিয়ে আছে এই রোগীর সুরতহাল দেখার জন্য। আর নিজের বেলায় দেখছে অন্যরা। কি সভ্য দেশে আমরা বাস করছি তা একটু অনুমান করুন। কবে আমরা সভ্য বলে দাবী করব। দেশের বাইরে দুয়েকবার চিকিৎসকের কাছে যাবার অভিজ্ঞতা আছে। তারা কোন সময়ই একসাথে একজনের চেয়ে বেশি রোগী চেম্বারে প্রবেশ করাবে। আমার মনে আমাদের দেশে রোগীদের ব্যক্তিগত গোপনীয়তা বলতে কিছুই নেই। যা কিনা একজন চিকিৎসক হিসাবে রক্ষা করা নৈতিক দায়িত্ব বলে মনে করি।
চট্টগ্রামে আরেক মহিলা গাইনি ডাক্তার যিনি কিনা সরকারি মেডিকেল কলেজে পড়ান। উনার অনেক নামডাক। হাত যশ আছে। চেম্বারে উপচেপড়া ভীড়। প্রতিদিন অনেক রোগী দেখেন। গর্ভবতি মারা অনেক সচেতন। নিয়মিত চেক আপ করান। ফলো আপ চেক করান। এই ভাবে বাচ্চা প্রশবের আগ পর্যন্ত চলে এই চেক আপের পালা। শেষ পর্যন্ত যখন দিন তারিখ ঠিক করে হাসপাতালে ভর্তি হল প্রসূতি হল। যিনি সারা বছর ধরে তার চিকিৎসা করেলেন তিনি এসে বলবেন, বাচ্চার গ্রোথ বেশি। সিজার করতে হবে। প্রস্তুতি চলছে। ডাক্তার সাহেবানের কোন দেখা নেই। তিনি চেম্বারে ব্যস্ত। রোগী দেখা শেষ হলে আসবেন। এদিকে রোগীর সিজারের প্রস্তুতি চলছে। বাইরে অপেক্ষবান প্রসূতির আত্মীয় স্বজনরা অধির আগ্রহ আর উৎকন্ঠায় কাটাচ্ছে। অতঃপর সিজারের জন্য ডাক্তার আসলেন। রাত তিনটা বেজে গেছে। তখন উনি সিজার আরম্ভ করলেন। একজন নয়। তিন চারজনের সিজার করে বাসায় ফিরলেন। পরদিন উনি যাবেন হাসপাতলে নিজের দায়িত্ব পালন করতে। সকাল আটটায় সেখানে যাবার কথা।প্রায় প্রতিদিন এভাবে যদি উনার প্রেক্টিস চলে তাহলে ছাত্রদের কি পড়াবেন, হাসপাতালে কিভাবে রোগী দেখবেন। আর রাত ২-৩টায় প্রসূতি মায়ের সিজার করাবেন। অনেক ধন্যবাদ এই সাহসী নারীকে যিনি নিজের জীবনের কোন মায়া না করে মানুষের সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। আশা করি আমার পাঠকরা বুঝতে পারেছেন, উনার উদারতা আর নিরলস পরিশ্রম কিসের জন্য?

চিকিৎসা বিজ্ঞানে পড়াশোনা যারা করেন তাদের মেধা নিয়ে আমার কোন প্রশ্ননেই। কিন্তু চিকিৎসা বিজ্ঞান পড়ে যারা এই পেশায় নিয়োজিত আছেন তাদের অনেকের রোগীর সাথে যা আচরণ করেন তা অনেক ক্ষেত্রেই শোভনীয় নয়। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করি। এই প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ প্রক্রিয়ার সাথে জড়িত আছি। বেশ কয়েকবার চিকিৎসক নিয়োগের মৌখিক পরীক্ষা নেবার সুযোগ হয়েছে। এই সকল পরীক্ষায় যারা চাকরি পেতে আসেন তাদের অনেককেই আমি পর্যবেক্ষন করেছি যে তারা প্রতিষ্ঠান যিনি প্রধান তাকে ভাই সম্বোধন করতে। যার মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানে অন্তত ১৫০০০- ১৬০০০ হাজার লোক কাজ করে তাকেও ভাই সম্বোধন করেন উনারা। অথচ সদ্য পাশ করা একজন ডাক্তার। যার বয়সও কম। অন্যদিকে আমরা রোগী হিসাবে ডাক্তারের কাছে গেলে তার বয়স কত সে বিবেচনা না করেই তাকে স্যার ডাকতে দ্বিধা করিনা। আমাদের দেশের মূল্যবোধ হল অপরিচিত ব্যক্তি, শিক্ষক, অফিসের বসদের কে স্যার ডাকা। আমার মনে হয় আমাদের দেশের চিকিৎসা শিক্ষা দেয়ার সময় সামাজিক মূল্যবোধের বিষয় বিশেষত সমাজ মনোবিজ্ঞান, আচরণ বিজ্ঞান কে কোন গুরুত্ব দেয়া হয় না বা আদৌ পড়ানো হয় না।


মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.