![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
শিক্ষাজীবন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে। সমাজতত্ত্ব বিভাগে। অনেকপরে আবার একই বিশ্ববিদ্যালয় হতে এম,বি,এ,করি। ১৯৯৬ সালের শেষের দিকে কর্মজীবনের শুরু। উন্নয়ন সংস্হায় প্রথম কাজ করি। এই সময় দেশের বিভিন্ন স্হানে ঘুরাঘুরির সুযোগ হয়। দেশের মানুষ ও প্রকৃতির রঙ, আর বিচিত্র পেশার মানুষে সাথে দেখা হয়। অতঃপর পোশাক শিল্পে কাজ করি। ২০০০-২০০৪ সালের এপ্রিল পর্যন্ত বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকে কর্মরত ছিলাম। ২০০৪ সালে আবার ফেরৎ আসি আমার প্রাণের কর্মক্ষেত্র পোশাক শিল্পে। সেই থেকে আজ অবদি কাজ করছি এখানে। বিচিত্র অভিজ্ঞতা, নানান দেশে ভ্রমণ করি। কাজের ফাঁকে পড়ি। মন চাইলে লিখি। ভাষার দক্ষতা তেমন নেই। চেষ্টা করছি ভাষা আয়ত্ত্ব করতে। কিছু বিচিত্র বিষয়ে লেখার ইচ্ছে আছে। লেখার কাজে হাত দিয়েছি। দেশে দেশে পোশাকের বিবর্তন নিয়ে লিখছি। এই নিয়ে পড়াশোনা করতে ভালই লাগে। যাপিত জীবনের কথা, ক্লেদ, প্রেম অভিজ্ঞতা লেখব ভাবছি।
মানুষ কে বলা হয় সেরা জীব। কেননা দৈহিক গঠন, চিন্তা,বুদ্ধি-বিবেক আর আর অন্যসব জীবের থেকে আলাদা। এই আলাদা স্বত্ত্বা তাকে দিয়েছে অন্যন্য এক বৈশিষ্ট্য। মানুষ নিজের চেষ্টায় পরিবার থেকে শুরু সমাজে বসবাস করার সব উপকরণ তৈরি করেছে। নিত্য নতুন আবিস্কার দ্বারা জীবন কে আরো সহজসাধ্য করেছে। করে চলেছে।নিজের প্রয়োজন অনুসারে নির্মান করছে যতসব আইন, কানুন, সমাজ, রাষ্ট্র। মানুষ সমাজে এই আইন কানুন তৈরির পশ্চাদে একটা কারণ ছিল, তাহল মানুষ যাতে তার নির্মিত সমাজের ভেতর সুন্দরভাবে বেঁচে থাকে। শৃংখলা, বজায় থাকে। এই শৃংখলার বিধান অত্যন্ত জটিল; কেননা আদিকালে মানুষ কে নিয়ন্ত্রন করার কোন বিধান ছিল না। মানুষ প্রাকৃতিকভাবে নিয়ন্ত্রিত ছিল। সমাজে প্রাকৃতিক নিয়ন্ত্রনের কলাকৌশল ছিল সহজ সরল। মানুষের জীবন জীবিকার তাগিদে প্রকৃতির বিরুদ্ধে নিরন্তর সংগ্রাম করেছে। এই সংগ্রাম থেকেই মানুষ উদ্ভাবনি ক্ষমতা অর্জন করে। কাঁচা মাংশ খাওয়া মানুষ যখন আগুন জ্বালাতে শিখে,তার জীবনের বিশাল পরিবর্তন আসে। এই পরিবর্তন মানুষের অভ্যাস কে বদলে দেয়। খাদ্যাভাসের পরিবর্তন মানুষ শিখে যায় এখানে। এই খাদ্যাভাস প্রথম মানুষ আর বনের পশু থেকে আলাদা করে দেয়।ইতিহাসের আলোকে মানব বিজ্ঞানীরা মানুষের চিন্তা চেতনা ও মগজ বিকাশের সাথে যে বর্ণনা দেন তার সাথে মানুষের খাদ্যাভাস অনেকটা দায়ি।মানুষের মগজের আকার অনেকটা বড়। বলা হয়ে মানুষের মগজ মানুষের আকারের অন্যান্য প্রাণী তুলনায় প্রায় ৯ গুণ বড়। এই মগজের আকার নাকি চিন্তা চেতনা, বুদ্ধিভিত্তিক বিকাশ দ্রুত কাজে আসে।অন্যান্য প্রাণী নিজেরা দলবদ্ধ জীবন যাপন করার অনেক উদাহরণ আছে সত্য কিন্তু মানুষের দলবদ্ধতার সাথে তার তুলনা হয় না। কেননা মানুষ তার সন্তান কে বক্ষণ করেনা। তাকে মানুষ হিসাবে সমাজে বিকাশ লাভে সহায়তা করে। তারে শিক্ষা দেয়, সামাজিকায়ন করে। ভবিষ্যতের জন্য তৈরি করে। কিন্তু এমন নজির যখন আমরা দেখি সন্তান তার পিতা –মাতা কে হত্য করছে। কিংবা পিতা মাতা তার সন্তান কে হত্যা করছে। তা’হলে সমাজের উন্নতি, বিকাশ, বুদ্ধিভিত্তিক অগ্রসরতা আমাদের কি কাজে আসছে? এই প্রশ্ন করা যেতে পারে বৈকি। কেন এই মানসিক বৈকল্য? মানুষ যখন ৩-৪ বছরের শিশুর উপর পাশবিক নির্যতন করে, তখন সেকি নিজেকে আর মানুষ হিসাবে পরিচয় দেয়ার দাবিদার? নাকি সে নরপশু?। এই নরপশুরা সমাজে বাস করলে, বুক চেতিয়ে হাটাচলা করলে অন্য সাধারণ নিরিহ নারী, পুরুষ, শিশুদের মনে কি দাগ পড়ে তা কিভাবে বুঝানো যাবে, আমার কাছে কোন শব্দ বা ভাষা নেই।
আমাদের জীবনের সময় সীমিত। সীমিত সময়ের মাঝে আমাদের অনেক কাজ করতে হয়। সমাজ সংসার ধর্ম কর্ম সব এই সীমিত সময়ের মাঝেই করতে হবে। কাজেই সুন্দর কাজ আগে করা দরকার। বার বার ভুল করে কোন কাজ করে তা সংশোধন করে করা অনেক কঠিন। অন্যদিকে দাঙ্গা ফ্যাসাদ করে কি লাভ অর্জন করা যাবে জানিনা। জীবনে আগে বাঁচতে হবে। জীবিত থাকলে অনেক ভাল কাজ করার সুযোগ আসবে। জীবনে সুন্দরভাবে বেঁচে থাকা জরুরী। জীবন মানেইত সুন্দর। সুন্দর জীবনের চিন্তাও সুন্দর হোক।মরার আগে মরতে চাইনা। বাঁচা মানে চিন্তা ও মননে সতেজ থাকা। যারা জীবনমৃত আমি সে দলের বাইরে থাকতে চাই। মানুষ ততক্ষণই জীবিত যতক্ষণ সে সত্য মিথ্যার ব্যবধান করতে পারে। অসত্য কে জীবনের অনুষঙ্গ করা মানে এক ধরনের আত্মহত্যা।আমাদের সমাজে অসত্যকে জীবনের সারথী হিসাবে মেনে নেয়ার সংখ্যাই বেশি। অর্থাৎ আত্মহত্যার পথে চলমান, জীবনমৃত মানুষের সংখ্যাই বেশি। মিথ্যার জয় জয়াকার। কিসের কারনে মানুষ আজ অন্ধ, বধির, বোবা। একজন মানুষ একবারই এই বিশ্বচরাচরের বাসিন্দা হয়। এখানে দ্বিতীয়বার আর আসার সুযোগ নেই। যতদিন জীবন আছে, প্রাণ আছে, আত্মা আছে, বোধ শক্তি চেতনা আছে, সত্যের সাধন করা আবশ্যক। অসত্য জীবন নয়। মানুষ হিসাবে মানবীয় দায় অসীম। পিতার কাছে সন্তানের দায় যেমন অনিবার্য, আবশ্যক। সমাজ –রাষ্ট্রের কাছে নাগরিকের দায় তেমনি।
মানুষ যখন অমানুষী আচরণ করে তখন তাকে কি আর মানুষ বলা যাবে? সোজা সাপটা সে নরপশু। আজকাল এদের সংখ্যাই বাড়ছে।সমাজে এদের কদর বাড়ছে। কেন? মোশারফ হোসেন, আমার এক বন্ধু যিনি বর্তমানে কলেজ শিক্ষক, সে তার ফেইস বুক স্ট্যাটাসে লিখেছে, “আমাদের দেশের জনসংখ্যা বাড়ছে কিন্তু মানুষ কমছে”।কেন জানি তার এই লেখাটা আমার কাছে অত্যন্ত সময়োযোগী এবং আবেদনময় একটি লাইন। অনেক তাৎপর্যপূর্ণ মনে হয় তার এই লেখাটি কে। এই শব্দগুলো অনেক চিন্তার উদ্রেক করে। জনসংখ্যা বাড়লে মানুষ কমছে কেমন বেমানান মনে হতে পারে।
যে মানুষের ভেতরে একটা মনুষত্ত্ব থাকে তা মরে যাচ্ছে। কাজেই জনসংখ্যা বাড়লেও মানুষ কমে যাবে। জন্মের সময় যেহেতু মানুষ শুধুমাত্র মানবের আকৃতি পায়। অবুঝ থাকে। শিশু নিষ্পাপ থাকে। তার মন মেজাজ একেবারেই নিষ্পাপ, নিষ্কুলুস। তার চিন্তার বিকাশ ঘটে অতিধীরে।তার পরিবেশ, পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র সহ চারিপাশে যা কিছু আছে তার প্রভাব পড়ে এই শিশুর চিন্তন ক্রিয়ার মাঝে। পরিবার –সমাজের যে সকল উপাদান সে প্রত্যক্ষ করে তারই বহিঃপ্রকাশ ঘটে তার আচরণে। চিন্তা শক্তির প্রতিটি উপদান পরিবেশ থেকে পাওয়া। আমাদের এই সময়ের পরিবেশ, সমাজ বা রাষ্ট্রের যে আচরণ বা প্রকাশ ঘটছে তারই প্রভাবে শিশুরা আচরণ করছে। মানুষের মাঝে ব্যক্তি কেন্দ্রিকতা, পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন থাকা, অনুপরিবারের বিকাশ, পরিবারে শিশুদের একা থাকা, কাজের বুয়া, আয়া দ্বারা লালন পালন, অত্যধিক মাত্রার চাহিদার পেছনে পিতা –মাতার দৌড়ানো সন্তানের প্রতি উদাসিনতা বেড়ে যাওয়া, আজকাল আবার যোগ হয়েছে টিভি, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ব্যাপক ব্যবহার। সব মিলিয়ে আমাদের সন্তানদের উপর যে চাপ পড়ছে এতে করে সন্তানদের মাঝে সামাজিকতার প্রতি এক ধরণের উন্নাসিকতা তৈরি হচ্ছে। তার নিজের কাছে নিজেকেই মনে হচ্ছে সেরা। সে মনে করছে আমার চিন্তাই সঠিক। আমিই সেরা। তার কাছে সামাজিক মূল্যবোধ, শ্রদ্ধা, সন্মান করা, অপরের প্রতি দরদ ইত্যাদি মনে হ্য় উদাও হয়ে যাচ্ছে।
সমাজ কাঠামোর ভেতরকার সংকট থেকেই আসলে জন্মনেয় অপরাধ। কেননা মানুষের অপরাধ প্রবণতা আসে অন্য আরেকজনের অপরাধ করা দেখে। মানুষ যখন দেখে একজন অপরাধ করছে তার বিচার হচ্ছে না। শাস্তি হচ্ছে না। বুক ফুলিয়ে সে হেটে বেড়াচ্ছে। অপরাধির দাপদ আরো বেশি। সমাজের সাধারণ মানুষ নির্যতনের ভয়ে নিজেকে লুকিয়ে রাখে। কেননা সে শান্তি চায়। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা যাদের দায়িত্ব তারাই অহরহ আইন ভেঙ্গে চলেছে। আইন নিজের হাতে নিচ্ছে। কারো কোন কিছু বলার নাই। রাষ্ট্র ক্ষমতা যখন যাদের হাতে গেছে বা আছে তারাই সবাই আইন কে তোয়ক্কা না করে যা ইচ্ছা তাই করছে। তখন আইনের শাসনের কথা বলে লাভ কি? সর্বক্ষেত্রে, নৈতিক আদর্শিক মানদন্ড হারাচ্ছে আমাদের দেশে। উন্নতি হচ্ছে। রাস্তার বড় হচ্ছে। বড় বড় দালান হচ্ছে। সুন্দর সুন্দর গাড়ি আসছে। কিন্তু সমাজের ভেতরকার যে সৌন্দর্য তা হারিয়ে যাচ্ছে। মানবিকতা বোধের চেতনা, দায়বদ্ধতা, জবাবদিহিতা, আইন, কানুন, শ্রদ্ধা ভালবাসা, সন্মান, পরার্থপরতা ইত্যাদি যেন দিন দিন কিতাবি শব্দে রূপ নিচ্ছে।
মানুষের মনের একটা খোলা জানালা আছে। এখানে ভাল যেমন উকি দেয় মন্দও তেমনি উকি দেয়। দূরে ভালটা দেখতে পায় আবার মন্দও দেখতে পায়। মন্দটা ভালটার উপর প্রভাব ফেলে। এই প্রভাবের কাজটা করে আস পাশের পরিবেশ, শিক্ষা, মূল্যবোধ, সামাজিক কাঠামো,সব কিছু যা আমাদের জীবন কে তাড়িত করে। মানুষের ভেতরকার কুপ্রবৃত্তি জয় করা সহজ সাধ্য ব্যাপার নয়। অধিকন্ত সমাজে যদি ন্যায়বিচার না থাকে শুধু মূল্যবোধ দিয়ে সমাজের মন্দ প্রতিরোধ করা যাবে না।
আমাদের সমাজ অনেক অস্তির, এই অস্তির সমাজে মানুষের মধ্যে ন্যায়ের প্রতিষ্টা করা আরো কঠিন। দেশে গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির বিকাশ জরুরি। রাজনৈতিক দলগুলো গণতন্ত্রের চর্চা করেনা। দলের সদস্যদের মাঝেও সেই একি জিনিসের অভাব। তারা নেতার তোষামুদি দ্বারা সহজ প্রাপ্তির কথা বিবেচনা করে।সব স্বার্থের খেলা,জীবন ধর্ম, কর্ম,পথ,মত; ব্যক্তি, দল,ব্যবসা, রাজনীতি। রাষ্ট এইসব স্বার্থের সংবদ্ধ কাঠামো।আইন তাদের নিরাপত্তা দেয়। আইন অন্ধ। আইনের চোখে সবাই সমান। আদি কাল থেকে মানুষ তার মুক্তির গান গেয়ে এসেছে। কবি সাহিত্যিক,রাজনীতিক, সমাজ সংস্কারক, নবী –রাসুল, জ্ঞানীজন সকলের একটাই উদ্দেশ্য ছিল সমাজ যাতে সুন্দর হয়। সমাজে ভালবাসা, দয়া-মায়া, পরের জন্য কিছু করা। আমার প্রতিবেশি ভাল থাকলে আমি ভাল থাকব। এই সব নীতি আদর্শ গড়ে তোলার জন্য চেষ্টা করেছেন। এখনও করে যাচ্ছেন কেউ কেউ। তবু আমাদের সমাজে অনাচার-অত্যাচার, সামাজিক মূল্যবোধের এত অবক্ষয় কেন? তবে কি আমরা সমাজ হিসাবে কোন মূল্যবোধ তৈরি করতে পারি।
“মানুষের চেয়ে বড় কিছু নাই, নহে কিছু মহিয়ান।
নাই দেশ-কাল-পাত্রের ভেদ, অভেদ ধর্মজাতি,
সব দেশে সব কালে ঘরে-ঘরে তিনি মানুষের জ্ঞাতি”
(গাহি সাম্যের গান- কাজি নজরুল ইসলাম)
মানুষের ভেদাভেদ আজও আছে।কাল সাদার ব্যবধান আছে। ধনি –গরিবের ব্যবধান আছে। এই ব্যবধানের সাথে আছে সামাজিক দূরত্ব। সব মিলিয়ে আছে সমাজে নানান অস্তিরতা। এর পেছেনে আছে দ্রুত কোন কিছু পাবার আকাংখা। এই আকাংখার বাস্তবায়নে আছে দূষিত রাজনীতি। এই রাজনীতি কে ভর করে আমাদের সমাজে এক ধরনের বানিজ্যিক চক্র গড়ে উঠে। এতে রাজনীতিক, ব্যবসায়িক আমলা সকলে এক কাতারে মিশে যায়। একে অপরের সহায়ক ভূমিকা হিসাবে কাজ করে। কেউ বিপদে পড়লে আরেক জন চলে আসে ত্রাতার ভূমিকায়। নিরাপরাধ মানুষ জেল জুলুমের শিকার হলে রাঘব বোয়ালরা থেকে যায় পর্দার আড়ালে।
মানুষের মন অপরাধ প্রবনতায় ভরপুর। অপরাধ করার সুযোগ পেলেই মানুষ করবে। এখানে পরিবার, সমাজ, শিক্ষা,আইন এবং রাষ্ট্র একটা সামাজিক মন গঠনে ভূমিকা রাখতে পারে। এই সামাজিক মন সকল মানুষ জন্য অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হিসাবে কাজ করবে। সামাজিক মনের কাঠামো হবে সুশীল, সুচিন্তা, সুশাসন, সাম্য, সুনাগরিক হিসাবে মানবিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠার লড়াই। সকলে মিলে একসাথে কাজ করা। কিন্তু আমাদের দেশ স্বাধীন হবার পর থেকে আজ পর্যন্ত সামাজিক মূল্যবোধ গঠন করতে পারি নাই। যে সামাজিক মূল্যবোধ সামাজিক নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখবে। মানুষককে তার ন্যায্য অধিকার,স্বাধীনধীনতা নিশ্চিত করবে। মানুষের মনের ভেতর যে আলাদা একটা স্বত্তা আছে সেখানে ভারসাম্য দরকার। এই ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য মননশীল কাজে নিজেকে নিয়োজিত রাখা দরকার। আজকাল সমাজে অস্তিরতা বিস্তার করার পশ্চাদে গণমমাধ্যমের ভূমিকা আছে বলে মনে করেন।আবার এর ভিন্নমতও আছে। গণমাধ্যম সামাজিক সচেতনা তৈরি করতে পারে। এই নিয়ে কারো ভিন্নমত নেই। কিন্তু আজকাল আমাদের সমাজে অবাধ মিডিয়ার কারণে নানা অসামাজিক উপাদান সকলের কাছে উন্মুক্ত হয়ে যাচ্ছে। এতে করে তাদের মনে যে প্রতিফলন হচ্ছে তাহল নিজেকে সেই চরিত্রের সাথে মিলিয়ে ফেলা। অপরাধের কলাকৌশল দেখে নিজেই অপরাধ সেভাবে অপরাধ করা। এই কাজে ভিডিও গেম আমাদের শিশুদের মনে প্রভাব ফেলছে। এখন আবর ইউটিউব আমাদের দেশে অবাধ। এর মাধ্যবে অশ্লীলতার বিস্তার হচ্ছে। যেহেতু এই সব উপকরণ অবাধে পাওয়া যায়। তাই তার প্রভাব দিন দিন প্রকট হচ্ছে।
গ্রামের ছেলে হিসাবে গ্রামের সাথে যোগাযোগ আছে। ছোট বেলা গ্রামেই কেটেছে। পায়ে হেটে অনেক দূরের স্কুলে গিয়েছি।স্কুলে যাওয়া আসা পথে অনেক বন্ধু ছিল যারা স্কুলে যেত না। তাদের সাথে অনেক সময় খেলতে আরম্ভ করেছি। কিংবা উরা খেলাধুলা করত রাস্তার পাশে তা দেখতে আরম্ভ করেছি। তখন অনেক সময় গ্রামের অশিক্ষিত মুরুব্বি কাছে কিনারে থাকলে ডাক দিত, ধমক দিত, স্কুলে পেলে এখানে কি করছ? তাড়াতাড়ি স্কুলে যাও। যেতে না চাইলে আব্বা কিংবা বড় ভাইকে বলে দেওয়ার হুমকি দিত। ভয় পেয়ে চলে যেতাম। কিন্তু আজকাল এই সামাজিক শাসন আর নেই। সমাজে বড় যারা বেঁচে আছেন কিংবা আমরা যারা এখন মধ্য বয়সি, চল্লিশ –পঞ্চাশের কাছাকাছি অথবা আরো বেশী। তারা এই দায়িত্ব পালন করছি না। কেননা আমাদের ভয় কাজ করে। ছোট বাচ্চাদের শাসন কিংবা ধমক দিতে গেলে পরে নিজেকেই পোহাতে হবে ঝঞ্জাট, ঝামেলা; বাবা এমনিতেই ভাল আছি। এই কাজের জন্য আইন, প্রশাসন, পুলিশ আছে, তারাই করুক। ফলে আমাদের সমাজে এক ধরনের নিয়ন্ত্রনহীনতা কাজ করছে। সামাজিক মন যা কিনা সমাজের মন্দ কে দূর করতে পারত তা আর কাজ করছে না। সমাজের মন্দ দিকটার প্রভাব বেড়ে যাচ্ছে। সামাজিক মন যারা গঠন করবে তাদের নিজের মনের অস্তিরতায় আচ্ছন্ন। সেখানে লুকিয়ে আছে এক কুটিল মন। রাজনৈতিক দল, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, পরিবার, নেতা বিশেষ ভূমিকা রাখে। প্রতিটা মানুষ তার নিজস্ব স্বত্তার ভেতর যে ধারনা নিয়ে বিকশিত হয়, পরিবার তাকে যে প্রশিক্ষন দেয়, প্রকৃতি পরিবেশ থেকে সে যা প্রত্যক্ষণ করে; যে শিক্ষা সে অর্জন, যে সামাজিক বলয়ে বসবাস করে, যে সকল তথ্য উপাত্ত সে মিডিয়া থেকে পায় সব কিছু মিলে তার ভেতর এক ধরনের পরিবর্তন আসে। এই পরিবর্তনের ধারা সমাজ মনোবিজ্ঞানিরা ভাল করে ব্যাখ্যা করতে পারবেন।
যেহেতু আমাদের দেশ একটা দ্রুত পরিবর্তনশীল। এই পরিবর্তনের অন্তর্বর্তী - কাল (Transitional Period) পার করছি, তাই এখানে অনেক নতুন নতুন সংকট থাকবে তা স্বাভাবিক। এই পরিবর্তনের ক্রান্তিকালের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে পারে দৃঢ় একজন নেতা। যিনি মানুষের কথা ভাবেন,মানুষের মন পড়তে পারেন। কিন্তু আমাদের দেশে কি সেই নেতা আছে? যিনি মানুষের মন কে পড়তে পারেন।
আইনি কাঠামোর উন্নতি,ন্যায় বিচার আর সামাজিক প্রতিরোধ করার দ্বারাই শুধু আমাদের অসামাজিক কার্যকলাপ দূর করা যাবে। সামাজিক মন সুন্দর হোক। অপরাধ দূর হোক। আসুন আমরা সবাই সামাজিক আন্দোলন শরিক হই। সামাজিক রোগের চিকিৎসা কবিরাজ দিয়ে হবেনা। অসামাজিক কার্যকলাপ রুখতে হলে সামাজিক প্রতিরোধ একমাত্র সমাধান। লোকে বলে একতাই বল। কবিরাজ ঝাড় ফুঁক, পানিপড়া, ধুঁপ –ধোয়া, ঝাড়ুপেটা করে সমাজ থেকে ভূঁতের আচর, অযাচার, অনাচার, নির্যাতন, উৎপাত, অস্তিরতা তাড়াতে পারবে না। এইজন্য দরকার পারিবারিক সচেতনা, শিক্ষা সংস্কার, সুষ্ঠু রাজনীতি, আইনের শাসন। যিনি এই শাসন প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখবেন তিনি জনগণের বৈধ ম্যান্ডেট নিয়ে ক্ষমতায় আসতে হবে। নেতা নির্বাচন করার সময় জনগণ কেও ভাবতে কাকে নির্বাচন করবে।
আমাদের দেশে অর্থনৈতিক উন্নতি হচ্ছে সত্য। এই অর্থনৈতিক বিকাশের সাথে মানব উন্নয়নের ইনডেক্স –এর অনেক উন্নতি হয়েছে তাও সত্য। কিন্তু ব্যক্তি মানুষের মানবিক দিকের অনেক ঘাটতি আছে । ক্ষমতার অপব্যবহার থেকে শুরুকরে, নারী ও শিশুর প্রতি আচরণ অনেক নিষ্ঠুর তা প্রমাণিত। অপরাধ করে যেহেতু সাজা বা শান্তি মাত্রা অনেক কম সেহেতু একই ব্যক্তি বার বার অপরাধ করছে। অন্যদিকে নতুন আরো অনেকই একই ধরণের অপরাধ করছে। ক্ষমতাকে ব্যক্তি স্বার্থের হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করা আমাদের দেশে স্বাভাবিক বিষয় বলে স্বীকৃতি লাভ করেছে। উন্নত বিশ্বে অপরাধ হয় কিন্তু তার বিচার করা সম্ভব হয়। আমাদের দেশে তা সহজে বিচার করা সম্ভব নয়। বা বিচারিক প্রক্রিয়া অনেক জটিল। দীর্ঘদিন বিচার প্রার্থী অপেক্ষায় থাকে। এক সময় নিজেরা ভূলে যায়। অপরাধীরা খালাস পেয়ে যায়। সাম্প্রতিক অনেক অপরাধের ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। এই অপরাধিদের সাথে রাজনৈতিক ক্ষমতার অপব্যবহার আছে। দাগী অপরাধিরা রাজনৈতিক চত্রছায়ায় অপরাধ কে বৈধ করার একটা মওকা খুঁজে।
স্বাধীনতার পর থেকে আমাদের দেশে এই ধারা চলে আসছে। প্রতিটা রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধেই এই অভিযোগ সমভাবে প্রযোজ্য। আমরা যেহেতু বর্তমানে বেশী প্রাধান্য দেই, আর অতীত কে সহজে ভুলে যাই; তাই যে দল ক্ষমতাশীন থাকে তার উপর সবার নজর থাকে।কাজেই বর্তমান সরকারের দায় বেশি। অতীতের অপরাধীরাও সরকার বদল হলে তাদের দল বদলে যায়। আমাদের দেশেও এই চক্র ক্রিয়াশীল। এই চক্র ভেদের উপায় কি? শুধু শিক্ষা, নাকি অন্যকিছু। পরাধীন দেশে আমাদের সকলের একটা সামাজিক মন ছিল, তার চেতনার মূলে ছিল স্বাধীনতা চাই। নেতারা সেই মনের পরিচয় কে পড়তে পারতেন; কাজেই সাহস করেছেন সামাজিক মন কে জাতীয় ঐক্যের বন্ধন হিসাবে নিতে। স্বাধীনতার ডাক দিয়েছেন। মানুষ সেই ডাকে সাড়াও দিয়েছেন। দেশের জন্য মানুষ নিজের রক্ত দিয়েছেন। আমরা আজ স্বাধীন। কিন্তু কেন জানি মনে হয় এই স্বাধীনতা কমমূল্যে পাওয়া। আরো রক্ত আরো যুদ্ধের দরকার ছিল। নইলে স্বাধীন দেশে যে অনাচার, অযাচার, দুর্নীতি হচ্ছে; বেআইনি কাজ হচ্ছে, ক্ষমতার অপব্যবহার হচ্ছে। কেই যেন দেখেও দেখছে না। সবাই কেন ঘুমিয়ে আছে, নেতারা ঘুমিয়ে আছে। আর বিচারের বাণী কাঁদছে নীরবে। এই কান্না সাধারণ নিরিহ, নির্যাতিত মানুষের বুকের হাহাকারের সাথে একাকার হয়ে এখানে এই দেশে, এই বেশে বার বার ফিরে আসছে। আমাদের সমাজ কাঠামোর অন্তর্নিহিত শক্তি অনেক। এখানে ঐক্য প্রতিষ্ঠা করা গেলে অনেক ভাল কাজ করা যায়। অনেক বিপুল অর্জন করা সম্ভব। এই অর্জনের নজির আছে। আমাদের মহান মুক্তি যুদ্ধতো এই ঐক্যবদ্ধতার নজির। এখন কেন এখানে এত হানাহানি বা কলহের আবহাওয়া। বিগত ৪৬ বছর ধরে কি তা’হলে আমরা একটা রাষ্ট্রীয় মূল্যবোধ তৈরি করতে পারিনি। এখানে এর দায় কার? একক কোন ব্যক্তি, সংগঠন, প্রতিষ্ঠান বা নেতার দায় নয়। এই দায় আমাদের সকলের। যে যেখানে আছে, তার জায়গায় নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করলেইত এই সমাজ বদলে যাবে। আমরা আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মের কাছে একটা উদাহরণ রেখে যেতে পারব। রাজনৈতিক ভিন্নমত থাকবে, আছে। কিন্তু জাতীয় স্বার্থ রক্ষায় আমাদের সকলের একমত হওয়া, থাকা আবশ্যক। এখন রাস্তায় ভাংচুর, সরকারি সম্পত্তি বিনাশ করে কার স্বার্থ রক্ষা করা হবে। দেশে আইনের শাসন জারি থাকলে সকল মানুষ নিরাপদ থাকবে। ভিন্নমতের কারনে নির্মূল করার কৌশল পুরানো, আদিম, সেকেলে। মানব সভ্যতার সংকট আদিতে যে রূপে ছিল বর্তমানে সেই রূপেই আছে। মানুষের বন্যআচরণের প্রকাশ এখনও বিরাজমান। আমরা আধুনিক দাবি করছি। যন্ত্র সভ্যতার উন্নতি হয়েছে। অনেক উন্নত প্রযুক্তি মানুষের করায়ত্ত্ব। এই উন্নতি প্রযুক্তি যদি মানব সভ্যতার বিনাশ করে তা’হলে তা কিভাবে আধুনিক হল। সভ্যতার মূল্যায়ন এখানে কিভাবে করা সম্ভব। সারা বিশ্বে সম্পদের দখল আর ক্ষমতার লড়াই করতে গিয়ে এক জাতি, রাষ্ট্র আরেক জাতি রাষ্ট্রের উপর হামলে পড়ছে। এই হামলে পড়ার কারণে নিরিহ মানুষ মারা যাচ্ছে। প্রকৃতির বিনাশ হচ্ছে। ভবিষ্যত প্রজন্মের কাছে আমাদের বাসযোগ্য পৃথিবী কে করা হচ্ছে আরো অনিরাপদ। চলছে ধর্মের নামে উন্মাদনা। এই উন্মাদনা পরিবার সমাজ রাষ্ট্র থেকে শান্তি বিনষ্ট করছে। অথচ সবকিছুর পেছনের শ্লোগান হচ্ছে আমরা শান্তি চাই। মানুষ যদি মারা যায়, সমাজে কি তা’ হলে কবরের নিস্তব্ধতা, নিরবতা কে সমাজের শান্তির মানদণ্ড করা হবে?
©somewhere in net ltd.
১|
১১ ই অক্টোবর, ২০১৭ বিকাল ৩:২২
ময়না বঙ্গাল বলেছেন: লাকাদ খালাকনাল ইনসানা ফি আহসানী তাকবিম । ছুম্মা রদাদ না-সুরা ত্বীনের সুন্দর একটা তাফসীন লাগলো আপনার লেখাটা । বরকত হোক আপনার ।