![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
শিক্ষাজীবন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে। সমাজতত্ত্ব বিভাগে। অনেকপরে আবার একই বিশ্ববিদ্যালয় হতে এম,বি,এ,করি। ১৯৯৬ সালের শেষের দিকে কর্মজীবনের শুরু। উন্নয়ন সংস্হায় প্রথম কাজ করি। এই সময় দেশের বিভিন্ন স্হানে ঘুরাঘুরির সুযোগ হয়। দেশের মানুষ ও প্রকৃতির রঙ, আর বিচিত্র পেশার মানুষে সাথে দেখা হয়। অতঃপর পোশাক শিল্পে কাজ করি। ২০০০-২০০৪ সালের এপ্রিল পর্যন্ত বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকে কর্মরত ছিলাম। ২০০৪ সালে আবার ফেরৎ আসি আমার প্রাণের কর্মক্ষেত্র পোশাক শিল্পে। সেই থেকে আজ অবদি কাজ করছি এখানে। বিচিত্র অভিজ্ঞতা, নানান দেশে ভ্রমণ করি। কাজের ফাঁকে পড়ি। মন চাইলে লিখি। ভাষার দক্ষতা তেমন নেই। চেষ্টা করছি ভাষা আয়ত্ত্ব করতে। কিছু বিচিত্র বিষয়ে লেখার ইচ্ছে আছে। লেখার কাজে হাত দিয়েছি। দেশে দেশে পোশাকের বিবর্তন নিয়ে লিখছি। এই নিয়ে পড়াশোনা করতে ভালই লাগে। যাপিত জীবনের কথা, ক্লেদ, প্রেম অভিজ্ঞতা লেখব ভাবছি।
১৯৯১ সালের কথা, বিশ্বরাজনীতির মঞ্চে ঠাণ্ডা্যুদ্ধের অবসান হয়েছে। ইতমধ্যে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙ্গে গেছে। সারাবিশ্বের তাদের সমর্থনপুষ্ট সরকার বা রাষ্ট্রের কাঠামো বদলে যাচ্ছে। পূর্বজার্মানী পশ্চিমের সাথে মিলে একক জার্মানীতে পরিণত হয়েছে আগেই। এমন বাস্তবতায় আফ্রিকার একমাত্র দেশ যা কিনা পশ্চিমা রাষ্ট্রসমূহ কখনও শাসন করেনি। তবে ১৯৩৭-১৯৪১ স্পল্প কয়েক বছরের জন্য ইতালী ইথিওপিয়া দখল করে রেখেছিল। অধিকন্তু ইথিওপিয়ার ইতিহাস যদি চিন্তা করা হয় আমাদের সামনে ভেসে উঠে, হাজার বছর ধরে রাজা বাদশাদের দ্বারা শাসিত বিবর্ণ একচিত্র। আগের দুই দশকে গৃহযুদ্ধে প্রায় এক মিলিয়ন মানুষ তাদের জীবন হারায় । বিচ্চিন্নতাবাদি আন্দোলন দানা বাধে। প্রদেশসমূহ স্বশাসন কিংবা স্বাধীনতার জন্য লড়ে যায়। প্রতিদিন মানুষ মারা যায়। এই সময়ে অর্থনীতি ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যায়। দেখা দেয় মহা আকাল। ১৯৮৩-১৯৮৫ মহা আকালের সময়। এই আকাল কেড়ে নেয় অনেক মানুষের জীবন। এই আকালের কারণে বিশ্ববাসী ইথিওপিয়াকে সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসে সত্য। তবে ইথিওপিয়ার আসপাশের নানা অঞ্চলের পতন হচ্ছিল। এমনকি তার অভ্যন্তরেও সরকারের সাথে গেরিলাদের বিবাদছিল তুঙ্গে। আভ্যন্তরিন সংঘাতের কারণে ইথিওপিয়ার অস্তিত্ব সংকটের মুখোমুখী ছিল। মনে করা হচ্ছিল ইথিওপিয়া হারিয়ে যাবে। এই সংকটের সমাধান নেই।কিন্তু বিদ্রোহী যোদ্ধারা ১৯৯১ সালে মে মাসে রাজধানী আদ্দিস আবাবা দখল করে নেয়। মজার ব্যাপার হল এই বিজয়ের মধ্যদিয়ে ইথিওপিয়া থেকে সোভিয়েত সমর্থিত সরকারের পতন ঘটে।বামবিপ্লবী স্বাধীনতাকামীরা নিজেরা ওয়াদা করেছিল, যুদ্ধেজয়ী হলে দেশকে তারা ৯০টির বেশি জাতিস্বত্ত্বার মানুষকে স্বশাসনের জন্য একটি সংবিধান উপহার দিবে। তারা রাজনৈতিক অর্থনীতির যে বৈষম্য চলমান তা দূর করবে। যে বৈষম্য তাদেরকে পরস্পর পরস্পরকে বিভক্ত করে রেখেছিল। লক্ষ্য করার বিষয় হল যে ১৯৯৩ সালে ইরিত্রিয়া স্বাধীনতার জন্য ভোট দিলে মানুষের মনে আরো সন্দেহ দানা বাধে। ইরিত্রিয়ার স্বাধীনতা ইথিওপিয়াকে সমুদ্র থেকে দূরে ঠেলে দেয়। অন্যদিকে একই ধারার ঝুঁকি উসকে দেয় যে আরো অন্য প্রদেশ সমুহ হয়ত স্বাধীন হতে চাইবে। কাজেও স্বশাসনের নীতি ভেঙ্গে যেতে পারে। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায় ইথিওপিয়া ঠিকে আছে।
বর্তমানে ইথিওপিয়া একটি ফেডারেল রাষ্ট্র। ২০০১ থেকে ২০১২-২০১৩ পর্যন্ত ইথিওপিয়ার অর্থনীতি গড়ে ৭% এর চেয়ে বেশি প্রবৃদ্ধি অর্জন করে। আফ্রিকার একমাত্র দেশ যার অর্থনীতি চাকা দক্ষিন –পূর্ব এশিয়ার টাইগারদের অর্থনীতির বিকাশের সাথে তুলনা করা চলে। তাদের এই বিকাশ খনিজসম্পদ ছাড়াই অর্জিত হচ্ছে। অর্থনীতির বিকাশের কারণে ইথিওপিয়া দরিদ্র বান্ধব উন্নয়ন নীতি গ্রহন করতে সহায়ক ভূমিকা রাখছে। দারিদ্রের দুষ্টু চক্রের কবল থেকে মিলিয়ন মিলিয়ন মানুষকে মুক্তি দিতে পারছে। সেই সাথে কমছে না খেয়ে থাকা মানুষের সংখ্যা। স্বাস্হ্য খাতের উন্নতি হচ্ছে, জনস্বাস্হ্য উন্নতিতে তা ভূমিকা রাখছে। অন্যদিকে দেশের জনসংখ্যা ১৯৮০ এর দশকে ছিল মাত্র ৬০ মিলিয়ন যা বর্তমানে ১১০ মিলিয়নে দাঁড়িয়েছ ইথিওপিয়া শিশু মৃত্যু সংক্রান্ত ২০০০-২০০১৫ সালে মাঝে মিলিনিয়াম ডেভেলপমেন্ট গোল ( এমডিজি)অর্জন করতে সক্ষম হয়। তাছাড়া এইচআইভি/ এইডস রোধে কার্যকরি ভূমিকা রাখে। ম্যালেরিয়ার আক্রান্ত রোগির সংখ্যা কমাতে সক্ষম হয়েছে। নিরক্ষরতা কমাতে ও আয়ের- উপার্জন বৃদ্ধি করতে অবিশ্বাস্য ভূমিকা পালন করে চলেছে। অন্যদিকে কয়েক বছর ক্রমাগত ফসলের বাম্পার ফলন তাদের খাদ্য নিরাপত্তা অর্জনে অনেকদূর এগিয়ে নেয়। ক্ষুদ্র খামারিরা তাদের উৎপাদনশীলতার ফাঁদ থেকে বেরিয়ে আসতে পারবে বলে মনে হয়। যাকিনা তাদের কে চরম দারিদ্রের দিকে ঠেলে দিচ্ছিল।
ইথিওপিয়ার অর্থনৈতিক পুনরূত্থান সম্পূর্ণভাবে রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত উচ্চাবিলাসি পরিকল্পনার অংশ। বর্তমান শাসক –কোয়ালিশন ইপিআরডিএফ কর্তৃক প্রণীত পরিকল্পনা হিসাবে দেশের অর্থনীতি পরিচালিত হচ্ছে। এই পরিকল্পনা ওয়াশিংটন প্রণীত উন্মুক্ত বাজার অর্থনীতি ও নির্বাচিত প্রতিনিধি কর্তৃক গঠিত গনতান্ত্রিক ঐক্যমতের সাথে সন্দেহাতীতভাবে পার্থক্য বিদ্যমান। একে বলা চলে একদেশদর্শী বা সঙ্কীর্ণ রাষ্ট্র গঠন প্রক্রিয়া । দুই দশকের গৃহযুদ্ধের পর, ইপিআরডিএফ ইথিওপিয়ায় স্হিতিশীল রাজনৈতিক ব্যবস্হা তৈরি করে। কার্যকর প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো নির্মাণ করে তারা রাজনৈতিক অর্থনীতির উপর কর্তত্ত্ববাদি নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে। আভ্যন্তরীণ ও বহিঃশক্তির হুমকিমুক্ত স্ব-শাসন কায়েম করাই তাদের ইচ্ছা। রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান, ইপিআরডিএফ এর সাথে নিবিড়ভাবে জড়িত ব্যবসায়ীদের হাতেই অর্থনীতির নিয়ন্ত্রণভার। বিগত নির্বাচনে ইপিআরডিএফ ৫৪৭টি আসন লাভ করে।ক্ষুদ্র সামাজিক ভিত্তির উপর নির্ভরশীল। উন্নয়নের দৃষ্টিকোণ থেকে অনেক সতেজ ও কার্যকর।রাজনৈতিক সংগঠন হিসাবে অত্যন্ত স্হিতিশীল,অসাধারণ সেইসাথে দমনমূলক। দমন –নির্যাতন মূলক রাজনৈতিক কাঠামো পশ্চাদের কারণ হিসাবে দেখা হচ্ছে চীনা কমিউনিষ্ট পার্টির সাথে এই সংগঠনের সম্পর্ককে। চীনা কমিউনিষ্ট পার্টি বিগত ২০০৫-২০১০ সালের মাঝে ৫ মিলিয়ন দলীয় কর্মী সংগ্রহের জন্য সুপারিশ করে। আফ্রিকার অন্যকোন দেশে চীন উন্নয়ন মডেল কে এত গুরুত্বসহকারে দেখা হয়না। দৃশ্যত মনে হচ্ছে, ইথিওপিয়া আভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে সংহতি প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছে। মালেস জেনাবি প্রধানমন্ত্রি থাকাকালে, আঞ্চলিক ক্ষেত্রে তাদের ভূমিকার সম্প্রসারণ করার উদ্যোগ গ্রহন করে।
মালেস জেনাবি ১৯৯১ সাল থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত ইথিওপিয়া শাসন করেন। নিজ দেশে দারিদ্রতা কে কমাতে সক্ষম হওয়ার মধ্যদিয়ে ইথিওপিয়া তাদের ঐতিহাসিক ভূমিকা পাললে আফ্রিকার নেতৃত্ব দিতে অগ্রগামী। মালেস মনে করতেন, জোট গঠন করার সাথে সাথে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি, বৈধতা আদায় করতে পারলে ইথিওপিয়ার অর্থনীতি চাঙ্গা হবে, ইপিআরডিএফ ক্ষমতা আরো সংহত, সুদৃঢ় হবে। আভ্যন্তরীণভাবে নিরাপদ ইথিওপিয়া আফ্রিকায় অশ্বচালকের ভূমিকায় উত্থিত হতে পারে; যা কিনা আশাহত আফ্রিকার প্রবাদ থেকে মুক্তি দিতে সক্ষম। ব্যক্তিগতভাবে মালেস জেনাবি টনি ব্লেয়ার, বিলক্লিনটন, জোশেফস্টিগলিস সাথে সম্পর্ক গড়ে তোলেন। তিনি দক্ষিন কোরিয়ার অর্থনৈতিক উন্নয়নের বিস্ময়কর সাফল্য দেখার জন্য সেখানে ভ্রমন করেন। হো জিনতাও এর সাথে বৃহত্তর অবকাঠামো গড়ে তোলা নিয়ে আলোচন করেন। উন্নয়নশীল দেশের প্রতিনিধি হিসাবে মুখ্য আলোচকের ভূমিকা পালন করেন সমমর্যাদা ও উদ্দিপনা নিয়ে। আফ্রিকার প্রতিনিধি হিসাবে জি-২০ সম্মেলন, জলবায়ু সম্মলন সহ নানা আন্তর্জাতিক পরিসরে নিজের দেশকে তোলে ধরেন। মালেস অত্যন্ত বলিষ্টকন্ঠে বিশ্ব রাজনৈতিক অর্থনীতির সমালোচনা করেন। সেই সাথে আফ্রিকার প্রান্তিক অর্থনীতির বাস্তবতা তোলে ধরেন।
অন্যদিকে ইথিওপিয়া কে বলা হয় আফ্রিকার পূর্বাঞ্চলে আমেরিকার “ডেপুটি শেরিফ”। সন্ত্রাসবাদ দমনে এই অঞ্চলে ইথিওপিয়া আমেরিকার সহযোগি ভূমিকা পালন করছে। হর্ণ অফ আফ্রিকায় ইথিওপিয়ার জেনারেল, কূটনীতিক, মূখমাত্র সহ সরকার সবাই আমেরিকার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার, জোট। তাদের মিত্রতা এই অঞ্চলে বিশেষত লোহিত সাগর, গালফ অফ এডেন সহ এই অঞ্চলে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে বিশেষ ভূমিকা রাখছে।এই অঞ্চলে আমেরিকার পুরানো মিত্র যেমন সৌদি আরব, মিশর, কেনিয়া’র সাথে আমেরিকার সম্পর্কের টানাপুরনে ইথিওপিয়া কে তাদের কাছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ বলেই মনেকরে। মালেসের উত্তরসূরী হেইলেমারিয়াম দেসালেন, পার্টি পলিটব্যুরোর সদস্যরা মনে করে, গ্রেট ইথিওপিয়ার স্বপ্ন বাস্তবায়নে বিনম্র কর্তৃত্ববাদ(Benign Hegemony) প্রতিষ্ঠা করা আবশ্যক। আজ ইথিওপিয়ার জন্য যা মঙ্গলজনক এই অঞ্চলের সব দেশের জন্যই তা মঙ্গলজনক বা কল্যানকর। সেইজন্য তারা ইথিওপিয়ার ক্রমবর্ধমান উন্নয়নের ঝান্ডা কে সবার কাছে তোলে ধরার জন্য চেষ্টা করছে। ফলে তারা আঞ্চলিক নিরাপত্তা ব্যবস্হার উন্নতি করাকে প্রাধান্য দেয়। জাতিসংঘের অনুরোধে দক্ষিন ও উত্তর সুদানের বিরোধপূর্ণ সীমান্তে ইথিওপিয়া কয়েক হাজার সৈন্য মোতায়েন করে। দক্ষিন সুদানের গৃহযুদ্ধ বন্ধে মধ্যস্হতাকারীর ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। আল সাহাবের বিরুদ্ধে সোমালিয়াকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। অধিকন্তু ইথিওপিয়ার দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার মাঝে আছে, জ্বালানী ও পানিসম্পদকে কাজে লাগিয়ে বৃহৎ অবকাঠামো তৈরি করা। নীলনদের ইথিওপিয়া অংশে ড্যাম নির্মান সহ অন্যান্য নদীতে বাঁধ তৈরি করে পানি সংরক্ষন, বিদ্যুৎ উৎপাদন করে জ্বালানী ও কৃষি খাতে বিপ্লব সাধন করাই এই পরিকল্পনার প্রধান উদ্দেশ্য।
এই কাজের সফলতার উপর নির্ভর করে অদূর ভবিষ্যতে ক্ষমতার ভারসাম্য খার্তুম, কায়রু থেকে আদ্দিস আবাবা’য় স্হানান্তর হবে বলে আশা করা হচ্ছে। অন্যদিকে এই প্রকল্প আর্থিকভাবে ইথিওপিয়া’র জন্য অত্যন্ত লাভজনক হিসাবে দেখা হচ্ছে। নীল নদের উপত্যকায় ক্ষমতাকেন্দ্রিক সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য ইথিওপিয়ায় নির্মিত ইথিওপিয়ান রেঁনেসা ড্যাম প্রকল্প এক বিশাল ভূমিকা পালন করছে। এই প্রকল্প আফ্রিকার সবচেয়ে বৃহৎ বিদ্যুৎ অবকাঠামো।জিইআরডি একক ভাবে এই অঞ্চলের পানিসম্পদকেন্দ্রিক রাজনৈতিক ভারসাম্যকে বদলে দিচ্ছে। এই ক্ষেত্রে আফ্রিকায় মিশরের একাধিপত্য ছিল। জিইআরডি পানি ধারন ক্ষমতা, বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষমতা সবমিলিয়ে একে এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যায়। এই প্রকল্প ইথিওপিয়াকে আঞ্চলিক স্বার্থকে নিজেদের অনুকূলে ব্যবহার করা জন্য সুবিধাজনক অবস্হানে উন্নিত করে। কেননা কায়রু স্বীকার করে নিয়েছে, ইথিওপিয়া নীলনদের উজানে থাকায় দরকষাকষির জায়গায় সুবিদাজনক অবস্হানে আছে তাতে সন্দেহ নেই। তাদের এই প্রভাব নীল অববাহিকার রাজনীতিতে ইথিওপিয়াকে এগিয়ে নিবে। ফলে সুদান ও মিশরের সাথে জল সরবরাহের জন্য একটি কৌশলগত চুক্তি করতে সক্ষম হয়েছে। ইথিওপিয়া পানি বিদ্যুৎ উৎপাদন কে প্রাধান্য দিচ্ছে। আর এই পানি বিদ্যুৎ প্রকল্প তাদের কে বেনিফিট শেয়ারিং এর কৌশলগত সাফল্য এনে দেয়।
অন্যদিকে বিশ্বব্যাংকের অর্থনীতিবিদ, অনেক রাষ্ট্রদূত, এনজিও কর্মীদের মত ভিন্ন। তাদের মতে ইথিওপিয়া আঞ্চলিক ক্ষেত্রে কর্তৃত্ব করার মত সময় এখনও আসেনি। তাদের আর্থিক কাঠামোর ভিত্তি দুর্বল, গ্রামাঞ্চলে দারিদ্রতা প্রকট, মিলিয়ন মিলিয়ন মানুষ সরকারের প্রতি অসন্তোষ্ট। দক্ষিন সুদান ও সোমালিয়ায় বিরোধ মীমাংসা করার জন্য ইথিওপিয়া কাজ করে যাচ্ছিল। কিন্তু সেখানে তারা সফল হতে পারেনি। ঐতিহাসিকভাবেই এই অঞ্চলের রাষ্ট্র সমূহ ইথিওপিয়ার প্রতি সন্তোষ্ট নয়। ফলে আদ্দিস আবাবা বিরোধ মীমাংসায় নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করতে পারছে না। ইরিত্রিয়ার সাথে যুদ্ধ নয়, শান্তিও নয় এই নীতি কতদিন তাদের মিলিটারি প্রতিষ্টান কে শান্ত রাখবে তা চিন্তার বিষয়। তাদের বানিজ্য বৃদ্ধির জন্য ইরিত্রিয়ার বন্দর দরকার। ইরিত্রিয়ার ভবিষ্যত নিয়ে আদৌ ইথিওপিয়ার কোন পরিকল্পনা আছে কিনা তা বুঝা মুশকিল। রাষ্ট্র হিসাবে যদি ইরিত্রিয়া ব্যর্থ হয় তাহলে সেখানে উদ্বাস্তু সমস্যা কিভাবে মোকাবেলা করবে তার কোন বাস্তব পরিকল্পনা আছে কিনা বা তা কি ধরনের সমস্যা তৈরি করতে পারে, তা জানা কঠিন।
সিকি শতাব্দি আগের অন্ধকার যুগ পার করে সামনে এগুতে চাচ্ছে ইথিওপিয়া। আভ্যন্তরিন ও আন্তর্জাতিকভাবে তাদের গৃহবিবাদ, যুদ্ধবিগ্রহ ইত্যাদি ছিল প্রশ্নাতীত। আগে ইথিওপিয়ানরা এতটা আশাবাদি, আত্মবিশ্বাসী কখনও ছিলনা; কিন্তু এখন তাদের সামনে এক উজ্জল ভবিষ্যত, আশাবাদ, আত্মবিশ্বাস জন্মেছে। নীলনদের অববাহিকায় তাদের কে আর যুদ্ধের দিকে ঠেলে দেবে মনে হয়না বরং পানিসম্পদের যথাযথ ব্যবহার তাদের কে এক কৌশলগত সুবিধা দিতে পারে। দারিদ্রতা বিমোচন,কর্মসংস্হান, পরিবেশ বিপর্যয়রোধ, বৈশ্বিক জলবায়ু সংকটে তাদের উজ্জল ভূমিকা রাখতে সাহায্য করবে বলে মনে হয়। ইথিওপীয়া ভাল করেই জানে তাদের প্রতিবেশিদের মনোভাব কে ইতিবাচক ধারায় ফেরৎ আনতে অনেক কাটখড় পোড়াতে হবে। তাদের সফলতার উপর নির্ভর করছে অত্র অঞ্চলের স্হিতিশীলতা, শান্তি,উন্নতি, প্রগতি। ইথিওপীয়ার সংগ্রাম সফলতা আমাদের কেও পথ দেখাবে। অন্যদিকে আমাদের রপ্তানী বানিজ্যের জন্য একটা চ্যালেঞ্জ হিসাবে দেখা দেবে বলে মনে হচ্ছে। উত্তর আমেরিকায় বিশেষত আমেরিকার বাজারে শুল্কবিহিন পণ্যের প্রবেশাধিকার তাদের জন্য আশির্বাদ হিসাবে দেখা দিয়েছে। ইপিওপিয়ার আছে বিরাট জনশক্তি। ৫৪ মিলিয়ন মানুষ কাজ করার সামর্থ রাখে। যাদের গড় বয়স মাত্র ১৮ বা তার চেয়ে একটু বেশি। তবে সমস্যা হল তাদের এই বিশাল জনসম্পদের বাস গ্রামীন এলাকায়। এখানে সেখানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে বাস করে। তাদের শিক্ষা নেই, কাজ নেই, স্হায়ী বসতি নেই। এই সকল মানুষ কে কাজের উপযুক্ত প্রশিক্ষণ দেয়া, প্রনোদনা দেয়ার কাজটি এক বিশাল কর্মযজ্ঞ। এই কাজ ইথিওপিয় সরকার করে যাচ্ছে।এখানেই তাদের আশাবাদ।
©somewhere in net ltd.