নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সাদাসিদে কথা কাজের ফাঁকে কিছু করা,ব্যস্ততার মাঝে যাকিছু ভাবি তাই লিখি।

HannanMag

শিক্ষাজীবন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে। সমাজতত্ত্ব বিভাগে। অনেকপরে আবার একই বিশ্ববিদ্যালয় হতে এম,বি,এ,করি। ১৯৯৬ সালের শেষের দিকে কর্মজীবনের শুরু। উন্নয়ন সংস্হায় প্রথম কাজ করি। এই সময় দেশের বিভিন্ন স্হানে ঘুরাঘুরির সুযোগ হয়। দেশের মানুষ ও প্রকৃতির রঙ, আর বিচিত্র পেশার মানুষে সাথে দেখা হয়। অতঃপর পোশাক শিল্পে কাজ করি। ২০০০-২০০৪ সালের এপ্রিল পর্যন্ত বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকে কর্মরত ছিলাম। ২০০৪ সালে আবার ফেরৎ আসি আমার প্রাণের কর্মক্ষেত্র পোশাক শিল্পে। সেই থেকে আজ অবদি কাজ করছি এখানে। বিচিত্র অভিজ্ঞতা, নানান দেশে ভ্রমণ করি। কাজের ফাঁকে পড়ি। মন চাইলে লিখি। ভাষার দক্ষতা তেমন নেই। চেষ্টা করছি ভাষা আয়ত্ত্ব করতে। কিছু বিচিত্র বিষয়ে লেখার ইচ্ছে আছে। লেখার কাজে হাত দিয়েছি। দেশে দেশে পোশাকের বিবর্তন নিয়ে লিখছি। এই নিয়ে পড়াশোনা করতে ভালই লাগে। যাপিত জীবনের কথা, ক্লেদ, প্রেম অভিজ্ঞতা লেখব ভাবছি।

HannanMag › বিস্তারিত পোস্টঃ

ইরাকে নয়া সংকট - কুর্দিস্তানঃ চোরের উপর বাটপাড়ি

০৬ ই নভেম্বর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:০০


সাম্প্রতিক সময়ে ইরাক বিশ্বের সবচাইতে আলোচিত সংকট মোকাবেলা করে আসছে। ৯/১১ এর পর ইরাকের দরজায় কড়া নাড়ছিল বিপদ আসছে। সমূহ বিপদ। এই বিপদ ধ্ব্ংসলীলার বিপদ। যুদ্ধ মানেইত ধ্বংস। ইরাক রাষ্ট্র হিসাবে তার অতীত ইতিহাসে সমস্ত অভিজ্ঞতাকে বিগত দুই দশকে অতিক্রম করেছে। সাদ্দাম সরকার কে উৎখাত করেই এই সংকটের মীমাংসা হয়নি।সাদ্দাম হোসেন লৌহ মানব হিসাবে দেশ শাসন করে আসছিল। ২০০৩ সালে সাদ্দামের পতন হয়। আমেরিকান সেনাবাহিনীর হাতে ইরাকের পতন ঘটে। অর্থাৎ ইরাকে মার্কিন সেনাদের দ্বারা এক নয়া শাসনতান্ত্রিক কাঠামো গড়ে ওঠে। এখানে উল্লেখ যে ২০০৪ সালে মার্কিন সেনারা ইরাকি বেসামরিক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রক্রিকা করে আসছে। ২০১১ সালে মার্কিন সেনারা ইরাক থেকে চলে যায়। কিন্তু ইরাকি নিরাপত্তা বাহিনীর প্রশিক্ষণ ও পরে আইএসআইএল সাথে যুদ্ধে মার্কিন বিমানবাহিনী সক্রিয়ভাবে অংশ গ্রহন করে। তার কিছুদিন পর দেশের ভেতর আরেক নয়া সংকটে মাত্রা যোগ হয়। ২০১৪ সালে হঠাৎ করে নতুন সংকটের জন্ম দিল ইসলামী খেলাফত নামের আইএসআইএল।বিগত তিন বছর ধরে ইরাক ইসলামী খেলাফতের সাথে যুদ্ধ করে আসছে। নিজেদের সার্বভৌম সীমাণা উপর এক ভৌতিক সংকট যা কিনা সারা বিশ্বে সন্ত্রাসবাদের জন্ম দিচ্ছে। উগ্রতার সাথে ধর্মের কোন সম্পর্ক নেই। কিন্তু ইসলামী খেলাফত তাদের নিজস্ব তৈরি মতবাদ কে ইসলামের নামে ছড়িয়ে যে রাষ্ট্রের কাঠামো তৈরি করেছে। তাদের প্রতি প্রথম দিকে অন্ধবিশ্বাসীদের এক জোট তৈরি হয়। সারা বিশ্বের নানা জায়গা থেকে সমর্থন পায়,অর্থপায়। এমনকি অনেক আধুনিক শিক্ষিত মানুষ ধর্মের নামে নিজেকে আত্মাহুতি দিতে আইএসআইএল যোগদেয়। ইরাক, সিরিয়ার অনেক বিশাল ভূখন্ড তাদের দখলে চলে যায়। তবে ইরাক অত্যন্ত সফলতার সাথে এই যুদ্ধ মোকাবেল করে আসছে। তাদের অনেক জানমালের ক্ষতি হয়েছে। অনেক মানুষ মারা গেছে। এখনও মানুষ মরছে। ইরাকের অনেক গুরুত্বপূর্ণ শহর মসুল কে উদ্ধার করেছে ইরাক সরকার। বলতে গেলে আইএসআইএল দখলে থাকা ভূমি প্রায় পুনঃদখল করেছে। এই সময় ইরাকে দেখা দেয় এক নতুন সংকট। যুদ্ধের হাতচানি। এই সংকটের শুরু হল, কুর্দিস্তান কে নিয়ে।
কুর্দিস্তান সংকটের যাত্রা আরম্ভ হয় প্রথম বিশ্বযুদ্ধে অটোমান পরাজয়ের পর থেকেই। কুর্দিস্তান মূলত ইরাক, সিরিয়া, ইরান, তুরস্ক ও আজারবাইজনের অন্তর্ভুক্ত একটি এলাকা। তবে কুর্দিরা তাদের স্বশাসন, কিংবা স্বাধীনতার জন্য লড়ে আসছে বিগত একশ বছর ধরেই। তাদের স্বাধীনতার আন্দোলন সবসময়ই দমন করা হয়েছে। নানা কৌশলে। ইরাকি কুর্দিরা ছিল সেই হিসাবে কিছুটা ভাগ্যবান। তারা অনেকদিন ধরেই স্বায়ত্ব শাসন ভোগ করে আসছিল। সাদ্দামের পরাজয়ের পর তারা আঞ্চলিক স্বায়ত্বশাসনের ক্ষমতা আরো বেড়ে যায়। মাসুদ বারজানি, সাবেক কুর্দি আঞ্চলিক সরকারের রাষ্ট্রপতি একজন যুদ্ধবাজ নেতা। তিনি কুর্দি আঞ্চলিক সরকারের ক্ষমতাকে পাঁকাপোক্ত করার জন্য পেশমার্গা বাহিনী( আঞ্চলিক সরকারের সেনা বাহিনী) গড়ে তোলেন। এই বাহিনী ইরাক সরকারের সাথে মিলে আইএসআইএল এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে। তারা সেখানে অত্যন্ত উচুমানের ভূমিকা রেখেছে। কিন্তু সমস্যা বাঁধে যখন এই আঞ্চলিক সরকার একতরফাভাবে গণভোটের আয়োজন করে। নিজেদের স্বাধীনতার জন্য এই গণভোট। ইরাক এই ভোটাগ্রহন ইরাকি সার্বভৌম রাষ্ট্রের কাঠামো ভেঙ্গে ফেলার প্রতি এক ভয়ানক চক্রান্ত হিসাবে দেখছে। আবার একই আঞ্চলিক সমস্যা হিসাবে দেখা হচ্ছে এই স্বাধীনতার উদ্যোগ। তুরস্কের কুর্দিরা এতে নিজেদেরকে আলাদা করার সংগ্রামকে আবার উজ্জিবিত করতে পারে। অন্যদিকে ইরান এবং সিরিয়ার কুর্দিরা অনুরূপ পদক্ষেপ নিলে সেখানেও দেখা দিবে এক অস্তিরতা। ইরাক পরিস্কারভাবে তার বিরোধীতা করে।
মজার ব্যাপার হল বারজানি পরিবারের সাথে ইসরাইলের অনেক ভাল সম্পর্ক গড়ে ওঠে ১৯৬০ এর দশকে। প্রথম দিকে পেশমার্গা বাহিনীর প্রশিক্ষণ দিত ইসরাইলী কমান্ডার লেঃ কর্ণেল যুসাগি (Lt colonel Tzu Sagi)। বল হয়ে থাকে তখন থেকেই বারজানি নিজের ক্ষমতাকে পাকাপোক্ত করার জন্য নানা কলাকৌশল গ্রহন করে। হত্যা, অপহরণ, লুটতরাজ, নানা দুর্নীতির মাধ্যমে কুর্দিস্তানে এক স্বৈরতন্ত্রের জন্মদেন বারজানি। ২০১৪ সালে তুরস্কের মাধ্যমে ইরাকের তেল বিক্রি করে বিশাল বিত্ত অর্জন করে বারজানি। ২০১৫ সালে তার সরকারের মেয়াদ শেষ হয়। কিন্তু তিনি অবৈধভাবে ক্ষমতায় থেকে যান। কুর্দিস্তান আঞ্চলিক পার্লামেন্ট তার ক্ষমতা কে বৈধতা দেয়নি। তিনি পার্লামেন্ট পাশকাটিয়ে চলতে থাকেন। মাসুদের ছেলের হাতে হল কুর্দিস্তান আঞ্চলিক নিরাপত্তা কাউন্সিলে ক্ষমতা। তার হাতে সামরিক ও বেসামরিক গোয়েন্দা সংস্হার নজরদারি। বারজানি সারা বিশ্বর অসম্মতি থাকা সত্ত্বেও ইসরাইলী প্রধানমন্ত্রির প্রত্যক্ষ সমর্থনে গণভোটের আয়োজন করে। নিজেদেরকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসাবে ঘোষনা করাই ছিল এই গণভোটের উদ্দেশ্য। ১৯১৬ সালে সাইক-পিকট চুক্তির ফলে তেলে ভরপুর এই অঞ্চলে কে ভাগাভাগি করে বৃটিশ-ফ্রান্স যৌথভাবে। ভাগের পরিহাসে নির্মম বলি হল কুর্দি জাতিসত্ত্বার মানুষ। তার বিভক্ত হয়ে যায়। মধ্যপ্রাচ্যের নানা দেশে তাদের অঞ্চল বিভক্ত হয়। কুর্দিরাও নানা দেশের সীমানায় বিভক্ত হয়ে যায়। ইতিহাসে রক্তাক্ত সীমানা তৈরি হয়। যুদ্ধ হয়ে ওঠে নিজদের বাঁচা মরার লড়াইয়ের অংশ। বর্তমানে ইরাকের কুর্দিরা যদি স্বাধীনতা পায় তা’হলে এই অঞ্চল আবার উত্তপ্ত হয়ে উঠবে। যদি ইসরাইল ও মার্কিন মদদে ইরাকের ভেতর স্বাধীন কুর্দিস্তান রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা সম্ভব হয় তা’হলে এই অঞ্চলে সিরিয়া, ইরান, ইরাক ও তুরস্ককে যুদ্ধে ঠেলে দিবে তাতে কোন সন্দেহ নাই। তার মানে হল ২৩ মিলিয়ন কুর্দি যার এই সকল রাষ্ট্রের সীমানায় বাস করে তারা সবাই যুদ্ধের শিকার হবে। অধিকন্তু প্রত্যকটি রাষ্ট্রের নিরাপত্তা আবার ঝুঁকি কবলে পড়বে। পেন্টাগনে নয়ারক্ষণশীলরা ২০০৩ সালে ইরাক কে ধ্বংস করার জন্য ভুয়া তথ্যের ভিত্তিতে যেভাবে যুদ্ধ বাঁধায় ঠিক তেমনি আরেকটি যুদ্ধের জন্য ক্ষেত্র প্রস্তুত হচ্ছিল এই গণভোট।
মজার ব্যাপার হল ২০০৩ সালে আগে আমেরিকান কোম্পানী ক্যা্লিফোর্ণিয়া পিআর ফার্ম, রুশো মার্শ ও রজার যেভাবে সাদ্দাম বিরোধী প্রপাগান্ডা তৈরি করেছিল, যুদ্ধের পক্ষে মতামত গড়ে তোলেছিল; ঠিক তেমনি বারজানি কৌশলে পিআর ফার্ম কে দিয়ে প্রচার চালাচ্ছিল যে কুর্দিরা স্বাধীন হলে কিরকুক তেলক্ষেত্র কুর্দিস্তানের দখলে আসবে।
গণভোটের একমাস পর কুর্দিস্তানের ভূদৃশ্য বদলে যায়। বাগদাদ সরকার এক আচমকা সেনা অভিযান চালায়। বাগদাদ সেনারা কিরকুক তেল ক্ষেত্র দখলে নেয়। ২০১৪ সাল থেকে এই তেলক্ষেত্রের উপর আধিপত্য ছিল বারজানির সেনাদের। বাগদাদের অভিযানকে কুর্দিস্তানের বারজানি বিরোধী দলগুলো স্বাগত জানায়। ফলে বারজানি হাতছাড়া হয়ে যায় তাদের আর্থিকভাবে লাভজনক দুইটি তেলক্ষেত্র। কিরকুক ও বাই হাসান তেল ক্ষেত্রের উত্তোলন ক্ষমতা ছিল দৈনিক ১.২ মিলিয়ন ব্যারেল। ফলে বারজানি ও তার মাফিয়াদের হাত থেকে এই দুই তেল ক্ষেত্র ইরাকের কেন্দ্রীয় সরকারের দখলে যায়। ২০১৪ সালে, বারজানির দল কিরকুক তেলক্ষেত্রের দখল নেয়, তখন এই অঞ্চলের সংখ্যালঘু সম্প্রদায় ইয়াজেদি ও অ্যাসিরিয়ান খ্রীস্টানদের কে এখান থেকে উচ্ছেদ করে। মার্কিনিদের স্বার্থের বিবচনায় বারজানির ক্ষমতা সংহত করতে সাহায্য করা হয়। সাবেক এক্সোমবিল সিইও, রেক্সটিলারসন বাগদাদ সরকারের দ্বিমত থাকা সত্ত্বেও কুর্দিস্তানে বিনিয়োগ করে। সেভরণও সেখানে বিনিয়োগ করে। এতে পরিস্কার ধারনা করা হচ্ছিল আমেরিকা চাচ্ছে কুর্দিস্তান একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হবে। তেল সম্পদে ভরপুর একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হবে কুর্দিস্তান।
২০১৪ সালে আইএসআইএল ইরাক ও সিরিয়ার বিশাল এলাকা দখনে নিতে আরম্ভ করে। এই দখলাভিযানের প্রথম দিকে বারজানির সহযোগিতা ছিল। এতে করে কিরকুক তেলক্ষেত্র তার দখলে আনা সহজ হবে। বারজানির পরিবার তুরস্কের সাথে তেল বিক্রির একটা সমঝোতা তৈরি হয়েছিল। পাইপ লাইলের মাধ্যমে এই তেল চলে যেতে তুরস্কে। সেখানে এই তেল বিক্রি হত ইসরাইলের কাছে। আর তেল বিক্রির টাকায় বারজানির পরিবার, তার অনুগত সেনা-সমর নায়ক, মাফিয়ারা বিলিয়ন ডলার আয় করে নেয়। ২০১৫ সালে ইসরাইল যত তেল কিনেছে তার ৭৭% এসেছে ইরাকি কিরকুক তেল ক্ষেত্র থেকে। কিরকুক থেকে তেল পাইপ লাইনে চলে যেত তুরস্কের চেইহান বন্দরে সেখান থেকে ইসরাইলের আস্কেলান বন্দরে আসত। বারজানি তার গণভোটের ৯৩% জিতে গিয়ে স্বাধীনতা ঘোষনার যে বোমা ফাটাল। অন্য দিকে তুরস্ক, ইরাক ও ইরান এই গণভোট অবৈধ ঘোষনা করে। বাগদাদ অত্যন্ত দ্রুততার সাথে নানা পদক্ষেপ নেয়। তারা অবরোধ আরোপের হুমকি দেয়। কিরকুক বিমান বন্দরে আন্তার্জাতিক বিমানের আনাগোনা বন্ধ করে দেয়। তুরস্ক ভীত হয়ে তার দেশের তেলের পাইপ লাইন বন্ধ করে। তুরস্কের ভয় হল সেখানে বসবাসকারি কুর্দিদের স্বাধীনতার আন্দোলন আবার দানা বাধবে। বাগদাদ, কুর্দিস্তানের বিরোধী পিইউকে ( পেট্রিয়টিক ইউনিয়ন অফ কুর্দিস্তান) এর সাথে গোপন সমঝোতা করে। এই দলটি গণভোটের বিরোধীতা করে আসছিল। সম্প্রতি মারা যাওয়া নেতা জালাল তালাবানি’র দল পিইউকে। জালাল তালাবানির ছেলের মতে, বাগদাদ অভিযান চালানোর আগে তারা একটা শান্তিপূর্ণ সমঝোতা তৈরি করে যে, কিরকুক থেকে পিইউকে নিয়ন্ত্রিত পেশমার্গা বাহিনীকে সরিয়ে নেবে।
ইরাকি কুর্দিস্তানের প্রধান আয়ের উৎস তেলের রপ্তানীতে ভাটা দেখা দেয়। মজার ব্যাপার হল এই ক্ষেত্র রাশিয়া একদিকে ইরাকের জাতীয় সার্বভৌমত্ব কে সমর্থন করে যাচ্ছে, আবার অন্যদিকে ইরাকে কুর্দি আঞ্চলিক সরকারের সাথে তেল উত্তোলন, রপ্তানী পাইপ লাইন স্হাপনে সহযোগীতার আশ্বাস দিয়ে আসছে। এমনকি এই তেল পাইপ সংস্কার করার জন্য ৩.৫০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে। রাশিয়ার বৃহত্তম তেল কোম্পানী রসনেফট (Rosneft) এই চুক্তি করে।বিশ্বের অন্যান্য অনেক দেশ যখন কুর্দিদের স্বাধীনতা ঘোষণা স্বাগত জানাতে অস্বিকার করে তখন রাশিয়া এই ক্ষেত্র নীরব ভূমিকা নিচ্ছে।রাশিয়াএই বছরের প্রারম্ভে কুর্দি সরকারের বাজেট ঘাটতি মোকাবেলা করা জন্য ১.২০ বিলিয়ন ডলার ধার দেয়। বর্তমানে আঞ্চলিক সরকারের সাথে ভাগাভাগি করে অতিরিক্ত ৩.৫০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োক করতে যাচ্ছে। উদ্দেশ্য হল, কুর্দিদের আঞ্চলিক সরকার কে সহযোগীতার বাড়ালে বাগদাদ সরকারের কাছ থেকে বাড়তি সুবিদা নেয়া যাবে। এতদিন বাগদাদ একতরফাভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উপর নির্ভরশীল ছিল। তেলের ভূ-রাজনৈতিক ক্ষেত্রে রাশিয়ার এই বিনিয়োগ ভবিষ্যতে তাদের কে আরো কৌশলগত সুবিদা দেবে তাই স্বাভাবিক।
মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিতে প্রতিদিন নয়া মেরুকরন হচ্ছে। কুর্দিস সিরিয়ান ডেমোক্রেটিক ফোর্স ( এসডিএফ) মার্কিন সহযোগীতা নিয়ে প্রশিক্ষন নেয়, অর্থ আর অস্ত্র নেয় আমেরিকা হতে। সিরিয়ার দিরে ইজ্জর প্রদেশে যুক্ত করে আইএসআইএল কে সরিয়ে দেয়া। এই প্রভিন্সটি তেল সম্পদে ভরপুর। যুদ্ধ জয়ের পর সেখানকার একটি তেলক্ষেত্রের দেখভালের দায়িত্ব রাশিয়ার গ্রাউন্ড সেনাদের কাছে হস্তান্তর করে। আল তাইইবিয়া গ্যাস ফিল্ডও রাশিয়ার কাছে হস্তান্তর করা হ্য়। আল তাই –ই- বিয়া গ্যাস ফিল্ড আইএসআইএল কাছে থেকে কয়েকদিন মাত্র দখল নেয়া হয়। এই গ্যাস ক্ষেত্র আগে মার্কিন কোম্পানী কনোকো ( Conoco) পরিচালনা করত। সিরিয়ার অন্যতম বৃহৎ এই গ্যাস ক্ষেত্রের মালিকানা বর্তমানে রাশিয়ার হাতে। এই গ্যাস ক্ষেত্রের উৎপাদন ক্ষমতা দৈনিক ১৩ মিলিয়ন ঘনমিটার। আলমাসদার পত্রিকার ভাষ্যমতে রাশিয়া পরবর্তিতে সিরিয়া সরকারের কাছে এই গ্যাসক্ষেত্রের মালিকানা হস্তান্তর করবে। সিরিয়ার কুর্দিস্তানের স্ব –ঘোষিত আঞ্চলিক সরকার রোজাভা’র প্রতিনিধির সাথে রাশিয়ার সহকারি পররাষ্ট্রমন্ত্রি মিখাইল বোগদানভ সাথে গোপন বৈঠকের সাথে আলোচনার ফলাফল এই মালিকানা হস্তান্তর। ইসরাইল- আমেরিকার মদদে স্বাধীন কুর্দিস্তানের স্বপ্ন আপাতত পিছু হটেছে। ইরাকি প্রধান মন্ত্রি তুরস্কের প্রেসিডেন্টের সাথে সাক্ষাৎ করেন ২৫শে অক্টোবর। তাদের দীর্ঘ বৈরি সম্পর্কের তুষার গলন এই সাক্ষাৎ।
রাশিয়া ভূ-রাজনীতির দাবার অনেক বড় খেলোয়াড়। তার মধ্যপ্রাচ্যে অত্যন্ত চতুর রাজনৈতিক ঘুটি চালাচ্ছে। রাশিয়া জানে, যদি রসনেফট কুর্দিস্তানের তেলের দখল নেয়। কুর্দিস্তান বাইরে তেল নীতি পারবে না। কিন্তু তুরস্কের মাধ্যমে তা সম্ভব। দুই বছর আগে তুরস্ক রাশিয়াকে ক্ষতিপূরণ দিতে চেয়েছিল। তখন তুরস্কের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল যে তারা আইএসআইএলে কে অর্থ সহায়তা করে আসাদ সরকার কে উৎখাত করতে সহযোগিতা করে আসছিল। একই সময়ে সিরিয়ার তেল বিক্রিতে তুরস্ক সহযোগীতা করছিল। অন্যদিকে সিরিয়ার ভেতর মুসলিম ব্রাদারহুড, আইএসআইএল সহ অন্যানা সালাফি গোষ্ঠীকে আর্থিক মদদ দিয়ে আসছিল কাতার। বর্তমানে রসনেফটের সাথে আঙ্কারার চুক্তি করতে হচ্ছে। দামাস্কাসে সাথেও পরোক্ষ সমঝোতা হচ্ছে যেখানে রাশিয়ার সরাসরি সহযোগীতার বাশার আল আসাদ বহাল তবিয়েতে আছে। ওয়াশিংটনের সাথে সাম্প্রতিক বিরোধের জের ধরে এই পরিবর্তন।
এইদিকে কাতার কে নিয়ে ওয়াশিংটনের দোলাচল মর্মাহত করেছে। ইসরাইল ও আমেরিকা চাচ্ছিল আরব ন্যাটো গঠন করতে। সৌদি আরবের নেতৃত্বে থাকবে এই জোট। এই জোটের অন্য অংশীদার হবে তেল উন্নত সুন্নি –আরব+ ইসরাইল। হাস্যকর এই জোটের ধারনা আসে ইসরাইল থেকে। মার্কিনিরা সেখানে মদদ দেয়। এই জোটের প্রথম বলি হল কাতারের বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক অবরোধ। সৌদি আরবের অভিযোগ কাতার মুসলিম ব্রাদারহুডকে সাহায্য করে। তাদের চির প্রতিদ্বন্দ্বি ইরানের সাথে মিলে ইউরোপীয় ইউনিয়নে গ্যাস লাইন সংযোগের পরিকল্পনা করে আসছে। বর্তমানে কাতার তুরস্ক, ইরান, চীন ও রাশিয়ার সাথে সম্পর্ক উন্নত করছে। সৌদি আরবের বিরোধীতা সত্ত্বেও কাতার অব্যাহত রেখেছে তাদের এই নতুন সম্পর্কের আন্তর্জাতিক পরিকল্পনা। তুরস্কের সেনারা কাতারে যৌথ মহড়া চালায়। আমেরিকার সেনাদের ঘাটি কাতারে এখনও বহাল আছে।
পরিশেষে বলা যায় ইরাকি ও সিরিয়ার কুর্দি অঞ্চলের তাদের তেল বানিজ্যে রাশিয়ার বিনিয়োগ তাদের কৌশলগতভাবে ভূ-রাজনীতির ফায়দা লুটার অস্ত্র হিসাবে কাজে আসছে। ওয়াশিংটন বধ করার জন্য রাশিয়ার চাল কাজে লেগেছে। অ্যাঁংলো- আমেরিকা ইসরাইলের পরিকল্পনার বৃহত্তর কুর্দিস্তান ও ন্যাটো নিয়ন্ত্রিত বৃহত্তর মধ্যপ্রাচ্যের ভেতর রাশিয়া তাদের শেকড় গজাতে পেরেছে। সম্প্রতি সৌদি বাদশার মস্কো সফর বলে দিচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের রাজার আসনে আসলে কে? রেক্সটিলারশন আর কুশনারের পরামর্শ আসলে কি ডুনাল্ট ট্রাম্প কে সাহয্য করছে। নাকি সামনে তাদের আরো চমক আছে?

তথ্যসূত্রঃ
১) নিউ ইস্টার্ন আইটলুক


মন্তব্য ১ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ০৬ ই নভেম্বর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:২১

আবু তালেব শেখ বলেছেন: কুর্দিস্তান সৃষ্টি ইসরাঈলের সার্থ রক্ষা করবে।
আমেরিকা এতে সমর্থন করবে এটাই স্বাভাবিক। আসলে মধ্যপাচ্যের নেতারা সাম্রাজ্য বাদীদের হাতের পুতুল। যে দিকে নাচায় সেদিকেই নাচে। যতদিন নিজস্ব শক্তি বুদ্ধিমত্তায় এইসব নামধারি শাষকগন রাষ্ট্র পরিচালনা না করবে ততদিন এই সংকট চলতেই থাকবে।
আমেরিকা ইসরাঈল কখনো চাইনা মধ্যপাচ্যে স্হিতিশীল অবস্হা বিরাজ করুক।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.