![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
শিক্ষাজীবন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে। সমাজতত্ত্ব বিভাগে। অনেকপরে আবার একই বিশ্ববিদ্যালয় হতে এম,বি,এ,করি। ১৯৯৬ সালের শেষের দিকে কর্মজীবনের শুরু। উন্নয়ন সংস্হায় প্রথম কাজ করি। এই সময় দেশের বিভিন্ন স্হানে ঘুরাঘুরির সুযোগ হয়। দেশের মানুষ ও প্রকৃতির রঙ, আর বিচিত্র পেশার মানুষে সাথে দেখা হয়। অতঃপর পোশাক শিল্পে কাজ করি। ২০০০-২০০৪ সালের এপ্রিল পর্যন্ত বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকে কর্মরত ছিলাম। ২০০৪ সালে আবার ফেরৎ আসি আমার প্রাণের কর্মক্ষেত্র পোশাক শিল্পে। সেই থেকে আজ অবদি কাজ করছি এখানে। বিচিত্র অভিজ্ঞতা, নানান দেশে ভ্রমণ করি। কাজের ফাঁকে পড়ি। মন চাইলে লিখি। ভাষার দক্ষতা তেমন নেই। চেষ্টা করছি ভাষা আয়ত্ত্ব করতে। কিছু বিচিত্র বিষয়ে লেখার ইচ্ছে আছে। লেখার কাজে হাত দিয়েছি। দেশে দেশে পোশাকের বিবর্তন নিয়ে লিখছি। এই নিয়ে পড়াশোনা করতে ভালই লাগে। যাপিত জীবনের কথা, ক্লেদ, প্রেম অভিজ্ঞতা লেখব ভাবছি।
২.১.১ ওরোমো ইতিহাস (History of Oromo)
ওরোমদের প্রাচীন ইতিহাস মিশরীয়দের প্রায় সমান্তরাল। কুশাইটিক বংশদ্ভূত ওরোমাই আফ্রিকায় বসতি স্হাপন কারীদের অন্যতম প্রধান জনগোষ্ঠী। তবে তাদের লিখিত উনিশ শতকের আগে আফান- ওরোমো জনগোষ্ঠীর মানুষেরা নিজস্ব শাসন কাঠামো তৈরি করেছিল। কুশাইটিক বুঝাতে শুধুমাত্র ইথিওপিয়া নামকরণটি ব্যবহার করা হয়। এই ইথিওপিয়া নামের ব্যবহার হচ্ছে অতিসাম্প্রতিক কালে। ১৯৩১ সালের সংবিধানে এই নামের স্বীকৃতি মিলে। The civilization of Africa: A history to 1800 গ্রন্হে ক্রিস্টোফার এহরাত () উল্লেখ করেন যে খ্রীস্টপূর্ব ৩০০০ থেকে ১০০০ সাল পর্যন্ত কুশাইট জনগোষ্ঠি আফ্রিকার উত্তর দিকে তাদের অভিযাত্রা অব্যাহত রাখে। বিশেষ করে ইথিওপিয়ার উচ্চ মালভূমির দিকে তাদের অগ্রযাত্রা ছিল ব্যাপক। তিনি আরো উল্লেখ করেন যে, হ্রংস উপত্যাকার বরাবর সমভূমি ও তৃণভূমি এবং ইথিওপিয়ার দক্ষিন কিনারায় দিকে দুইটি জনগোষ্ঠীর প্রাধান্য ছিল তাদের একটা হল পূর্বাঞ্চলীয় কুশাইটিক শাখা কনসোরোমো আরেকটি হল ওমোতানা।ওরমোরা হল দ্বিতীয় কনসুরোমো সমাজ।এই সমাজ কাঠামোর বিকাশ আরম্ভ হয়, খ্রীষ্টপূর্ব প্রথম মিলিনিয়ামের প্রথমদিকে।তাদের সংস্কৃতির বিকাশ আরম্ভ হয়েছিল পশুপালনকে কেন্দ্র করে। নিজস্ব রাজনৈতিক –শাসনকাঠামোর মাধ্যমেই তাদের অগ্রযাত্রা অব্যাহত ছিল। স্বতন্ত্র সমাজ গড়ে ওঠেছিল ওরোমোদের মাঝে।পশুপালন করেই তাদের জীবিকা নির্বাহ করত। তাদের পশুদের সংখ্যা দ্রুত বেড়ে গেলে তাদের বাড়তি জমির দরকার হত। পশুচারণ করলেও তাদের সমাজ ছিল ঐক্যবদ্ধ। একত্রে বসকরাই তাদের রেওয়াজ ছিল। পশুচারণের জন্য নতুন তৃণভূমির সন্ধান করতে হলে ধীরে ধীরে ওরোমোরা ছড়িয়ে পড়ে। তাদের নেতার দেখা দেয়। ফলে তারা নতুন সংঘবদ্ধ হতে চিন্তা করে। এই ধারণা থেকেই তাদের মাঝে জন্ম নেয় এক অভুতপূর্ব শাসনতান্ত্রিক ধারনা। এই ধারনা তাদের নিজস্ব প্রকৃতির, স্বতন্ত্র, অকৃত্রিম। তারা নিজেদেরকে শাসন করার জন্য রাজা নির্বাচন করে। এই রাজা নির্বাচনের পদ্ধতি হল তাদের উদ্ভাবিত গডা শাসন কাঠামো। তবে এর পূর্ণাংগ কাঠামো একদিনে গড়ে উঠেনি। ধীরে ধীরে বিকশিত হয়েছে। প্রথম দিকে তাদের দুইটি ফেডারেশন তৈরি হয়। আফ্রি (Afre) আর সাডাকা (Sadaqa )। আফ্রি মানে হল চার আর সাডাকা মানে হল তিন। অর্থাৎ তাদের চারটি উপ –গোষ্ঠী মিলে একটি কাঠামো আর তিনটি মিলে একটি ফেডারেশন। এই ফেডারেশন গুলো ছিল দক্ষিনাঞ্চল ভিত্তিক। পরবর্তিতে তারা উত্তর দিকে অভিবাসন করে। এই অভিবাসনকে ওরোমোদের মহা অভিবাসন নামে পরিচিত।
ইতিহাসে ষোড়শ শতককে ওরোমোদের রেনেসাঁর যুগ বলা হয়। কেননা এই সময় তাদেরকে একদিকে খ্রীস্টান সম্রাট আর মুসলিম সালতানাতের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করতে হয়েছে। এই দুই শক্তি ছাড়াও পূর্ব আফ্রিকার অন্যান্য বহু ঈশ্বরাবাদি গোষ্ঠী তাদের কে আক্রমন করেছে। যুদ্ধ আর যুদ্ধ তাদের কে অভিবাসনে (Migration) উৎসাহিত করেছে। অন্যদিকে খরার কারনে তাদের পশুপালের জন্য সবুজ তৃণভূমি অবশ্যম্ভাবী হয়ে যায়। বর্তমান ইথিওপিয়ার মধ্য-দক্ষিনাঞ্চলে ওরোমোরা সুসংগঠিত হয়ে, বহিঃআক্রমন প্রতিহত করে এবং তাদের হারানো ভূমি উদ্ধার করেই ক্লান্ত হয়নি ববং তারা আরও নতুন নতুন অঞ্চল দখল করতে থাকে। খ্রীষ্টান সম্রাট আর মুসলিম সালতানাতের যুদ্ধের কারনে এই এলাকা আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে একটা জায়গা করে নেয়। পর্তুগিজরা খ্রীষ্টান সম্রাট কে সাহায্য করার জন্য এগিয়ে আসে। অন্যদিকে অটোমান সম্রাটের সাহায্য পায় মুসলিম বাহিনী। এই সময় ওরোমোরা মুসলমান কিংবা খ্রীষ্টান কোনটাই ছিল না। তারা তাদের নিজস্ব দেবতার আরাধনা করত। আর এই দুই শক্তির বিরুদ্ধে তাদেরকে যুদ্ধ করতে হয়েছে। যুদ্ধে তাদের কলাকৌশল, পারদর্শিতা দেখিয়ে যুদ্ধে জয়লাভ করে। নতুন উর্বর ভূমিতে তাদের বসতি গড়ে তোলে। এই অঞ্চলেই ওরোমীয়া নামে পরিচিত।
আবার অনেক ইতিহাসবিদ মনে করেন, খ্রিষ্টান সম্রাট আর মুসলিম বাহিনীর যুদ্ধে অনেক মানুষ হতাহত হয়। অনেকেই দেশ ছেড়ে চলে যায়। এই কারণ হর্ণ অব আফ্রিকার এই বিশাল এলাকা জন মানবহীন হয়ে পড়ে। এই সময় ওরোমদের হাতে ঘোড়ার দখল আসে। একই সাথে তাদের গডা কাঠামোর কারনে তারা ছিল সংগঠিত। ফলে তারা অনেক এলাকা দখল করতে পারে। ১৫২০ সালের দিকে তাদের অভিযাত্রা আরম্ভ হয় আর সতেরশতক পর্যন্ত বহাল ছিল। ওরোদের সাথে প্রতিবেশি জাতিগোষ্ঠীর রক্তাক্ত সহিংসতা, প্রতিযোগিতা কিংবা শান্তিপূর্ণ ঐক্য প্রতিষ্ঠা, একে অপরের সাথে মিশে যাওয়া উভয় কারণে ওরোমদের সমাজ –রাজনীতিতে প্রভাব রেখেছে। প্রতিবেশি প্রতিযোগি জাতি সমূহ হল; সিডামা, আমহারা, আদল, সোমালি। উত্তর,পূর্ব ও পশ্চিমে ওরোমদের অগ্রযাত্রা অব্যাহত ছিল। ১৫৩৫ সালের দিকে ওরোমোরা সোমালিয়ার বিশাল এলাকা দখল করে। ১৫০০-১৮০০ সালে মধ্যবর্তি সময়ে আমহারা জনগোষ্ঠী নতুন এলাকায় পুনঃবাসিত হয়। আর এই কারণে সমসাময়িক ইতিহাসে জাতিভিত্তিক রাজনীতিতে প্রভাব রাখে। ওগোডান অঞ্চল থেকে সোমালীদের অগ্রযাত্রায় আবার অন্যমাত্রা আরম্ভ করে।
উত্তর দিকে ওরোমোদের অগ্রযাত্রা আবিসিনিয়ার কেন্দ্রভূমি পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। পূর্বদিকে তারা দেয়লা ঘেরা নগরীর হারার (০০ ) এর আসপাশ পর্যন্ত নিয়ন্ত্রন করত। ওরোমোদের সামরিক সামর্থ্য যে অনেক উচুমাত্রার ছিল তা নয়। বরং তারা কিছু সুবিধার সৎ ব্যবহার করেছিল। তাদের অগ্রযাত্রা ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় তারা আবিসিনিয়ার বেশিরভাগ এলাকা তাদের দখলে চলে গিয়েছিল।
ওরোমোদের ইতিহাসের অন্যতম একটা মোড় হল ষোড়শ শতক। এই শতকে ওরোমোরা মুসলিম ও খ্রিস্টান শাসকদের হাত থেকে তাদের অনেক ভূমি উদ্ধার করে। এই সময় তারা গডার অধীন সংঘবদ্ধ ছিল। তবে এই কথা যাবে না যে তাদের এই শাসনতান্ত্রিক কাঠামো একদিনে উদ্ভাবিত হয়েছে। ষোড়শ শতক থেকে উনিশ শতক পর্যন্ত আফ্রিকার উত্তর পূর্বদিকে, হর্ণ অব আফ্রিকার অনেক জাতি তাদের নিজেদের নিরাপত্তা, সম্পদ, ভূমি রক্ষার জন্য সংগ্রাম করেছে। তাদের মধ্যে ওরোমোরাই ছিল শক্তিশালী, সুসংগঠিত। তাদের জীবনাচারে গডার ভূমিকা ছিল ওৎপ্রোত। গডা এমন একটি প্রতিষ্ঠান যা ওরোমোদের আত্মরক্ষা ও প্রতিরক্ষা সহ তাদের কে আক্রমানাত্মক ভূমিকা পালন করার কলাকৌশল শিখিয়েছে। ষোড়শ শতকের মাঝামাঝি থেকে সপ্তমদশ শতকের মাঝামাঝি এই একশত বছর ওরোমোরা নিজ ভূমিতে ছিল স্বাধীন, সার্বভৌম। তাদের উপর বাইরের কর্তৃত্ব ছিলনা। ইতিহাস প্রমাণ করে, ওরোমোরা আবিসিনিয়া থেকে আমহারা –তিগরে অঞ্চল সহ- মোম্বাসা বন্দর পর্যন্ত, সোমালিয়া থেকে সুদান পর্যন্ত বিশাল এলাকা তাদের অধীন ছিল। তবে সুনির্দিষ্ট সীমানা রেখা ছিল না। ইউরোপীয়দের আফ্রিকা দখলের কাড়াকাড়ির আগপর্যন্ত ওরোমোদের হাতে এই ভূমি ছিল।
১৫০০ শতক পর্যন্ত তাদের ইতিহাসের গতি ছিল স্বতন্ত্র, আলাদা বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত। ১৫০০-১৮০০ শতকে ওরোমোদের ইতিহাস বিবর্তিত হয়েছে নানাভাবে। তাদের নিজস্ব শাসন কাঠামো গডা ব্যবস্থা উন্নত বিকশিত হয়েছে। এই গডা ব্যবস্থাকে বলা চলে আফ্রিকান আদি,অকৃত্রিম, গণন্ত্রের নমুনা হিসাবে। ইউনেস্কো এই গডা শাসনতান্ত্রিক কাঠামোকে বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ হিসাবে স্বীকৃতি দিয়েছে। ষোড়শ শতকের প্রথমদিকে ওরোমোদের কিছু শাখার নেতৃত্বে গণ আন্দোলন গড়ে তোলা হয়। এই আন্দোলের সূচনা আরম্ভ হয় সাধারণ সচেতন পশুপালনকারিদের মাঝ থেকে। গডার কাঠামো তাদের কে পথ দেখায়। আন্দোলন অনেকাংশে সফল হয়। তারা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র স্বাধীন- স্বশাসিত রাজ্য গঠনে সক্ষম হয়। গিবে অঞ্চলে (Gebe Region) ওরোমোদের প্রতিষ্ঠিত রাজ্যগোলো নাম হল, গিরা (Gera), গোমা (Gomma) গাম্মা (Gumma ) জিম্মা(Jimma), লিকা নেকেমতে( Leeqa- Nekemte এবং লিম্মা-এনারিয়া ( Limma-Ennarea)।
কিন্তু মজার ব্যাপার হল আবিসিনিয়ার কেন্দ্রে কিছু এলাকা ছিল যেমন গোজ্জাম ও বিগেমদার। এই সব এলাকা ছিল আবিসিনিয়ার কয়েদখানা, রাজকর্মচারি, রাজপ্রতিনিধিদের বাস। সেখানে তারা ছিল সর্বোতভাবে আমহারা জাতির প্রতি অত্যন্ত অনুগত, সংঘবদ্ধ। ওরোমোদের প্রভাবে কেন্দ্রীয় আবিসিনিয়ার শাসনকাঠামোর আপাত শক্তিশালী অবস্থান ভেঙ্গে যায়। উনবিংশ শতাব্দির মাঝা মাঝি সময়ে আবার আমহারা সম্রাটদের ক্ষমতা, শক্তিমত্তা বাড়তে থাকে। এখান থেকে জন্ম নেয় আধুনিক ইথিওপীয় রাষ্ট্রের কাঠামো। আমহারা সম্রাট থিওডোরাজ ১৮৫৫ থেকে হেইলে সেলাসি (১৯৩০-১৯৭৪) পর্যন্ত সময়ে( প্রায় একশত বছর ধরে) ধীরে ধীরে ওরোমোদের জাতিতাত্ত্বিক সত্ত্বাকে দমন করা হয়।
©somewhere in net ltd.
১|
২৭ শে জানুয়ারি, ২০১৮ বিকাল ৪:১৬
রাজীব নুর বলেছেন: জানলাম।