নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সাদাসিদে কথা কাজের ফাঁকে কিছু করা,ব্যস্ততার মাঝে যাকিছু ভাবি তাই লিখি।

HannanMag

শিক্ষাজীবন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে। সমাজতত্ত্ব বিভাগে। অনেকপরে আবার একই বিশ্ববিদ্যালয় হতে এম,বি,এ,করি। ১৯৯৬ সালের শেষের দিকে কর্মজীবনের শুরু। উন্নয়ন সংস্হায় প্রথম কাজ করি। এই সময় দেশের বিভিন্ন স্হানে ঘুরাঘুরির সুযোগ হয়। দেশের মানুষ ও প্রকৃতির রঙ, আর বিচিত্র পেশার মানুষে সাথে দেখা হয়। অতঃপর পোশাক শিল্পে কাজ করি। ২০০০-২০০৪ সালের এপ্রিল পর্যন্ত বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকে কর্মরত ছিলাম। ২০০৪ সালে আবার ফেরৎ আসি আমার প্রাণের কর্মক্ষেত্র পোশাক শিল্পে। সেই থেকে আজ অবদি কাজ করছি এখানে। বিচিত্র অভিজ্ঞতা, নানান দেশে ভ্রমণ করি। কাজের ফাঁকে পড়ি। মন চাইলে লিখি। ভাষার দক্ষতা তেমন নেই। চেষ্টা করছি ভাষা আয়ত্ত্ব করতে। কিছু বিচিত্র বিষয়ে লেখার ইচ্ছে আছে। লেখার কাজে হাত দিয়েছি। দেশে দেশে পোশাকের বিবর্তন নিয়ে লিখছি। এই নিয়ে পড়াশোনা করতে ভালই লাগে। যাপিত জীবনের কথা, ক্লেদ, প্রেম অভিজ্ঞতা লেখব ভাবছি।

HannanMag › বিস্তারিত পোস্টঃ

ইথিওপিয়ার মানুষ-জাতি –ভাষা ৮

০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ বিকাল ৫:২৭

ওরোদের আদিম গণতান্ত্রিক শাসন কাঠামো- গডা (Gadaa- Indigenous Democratic system of Oromo, Ethiopia)
---------------
গডা কাঠামোর স্তর বিন্যাস

১। ইট্টিমাকো/ দা’ইমান ০-৮ (Ittimakoo / Daa’imman 0-8) দাব্বালি (Dabballee) শৈশবকালঃ
ইট্টিমাকো মানে হল ঈশ্বর একজন মানুষ দুনিয়াতে প্রেরণ করেছেন। শিশুদের জন্মের সময় তাদের পিতারা গডা ব্যবস্থায় দাপ্তরিক দায়িত্ব পালন করেছেন।শৈশবে শিশুরা থাকে অপরিপক্ক, অবুঝ, নিষ্পাপ; এই সময়কালে শিশুদেরকে পবিত্রতার প্রতিক হিসাবে মানা হয়। বোরানা ওরোমোদের (ওরোমোদের একটি শাখা) একে দাব্বালি বলে।এই সময়কাল কে বলা হয়ে থাকে মানুষ আর ঈশ্বরের মধ্যকার প্রতিনিধিত্বশীল সময়।এদের গুণাবলী আর ক্ষমতা হচ্ছে ঐশ্বরিক।শিশুদের নামকরন করার আগে পর্যন্ত কোন প্রকৃত নাম দেয়া হয় না। নামকরণের জন্য একটা প্রথা পালন করা হয়। এই নামকরনের প্রথাকে বলা হয় গোদুরু/ গামি (Guduruu/ Gaamme) এইপ্রথার মাধ্যমেই একটা শিশুরা একটা সামাজিকায়ন প্রক্রিয়ার সমাজে গডা কাঠামোতে প্রবেশ করে। এই সময় তাদের চুলকাঁটা হয়, মাথার চুলে বিশেষ ধরনের সিম্ভল রাখা হয়। মেয়ে শিশুরা সমাজে বিশেষ সুবিধাভোগি।সেখানে তারা আদর যত্ন, রক্ষনাবেক্ষণ সবই পাবে। তাদেরকে নির্যাতন করা যাবে। প্রথাগত আইন শিশুদের রক্ষা করা, তাদের প্রতি যত্নশীল হওয়ার প্রতি আদেশ দিয়েছে। তাদের প্রতি আবেগ অনুভূতি দেখাতে হবে যাতে তাদের মধ্য একটা সংবেদনশীল দরদি মন তৈরি হয়। এই বয়সে শিশুদের উপর কোন দায় দায়িত্ব নেই। পরিবারে বিশেষ করে মায়েরা তাদের প্রশংসা করবে, গান গাইবে। শিশুরাও তাদের কাছ থেকে গান শেখার তালিম নিবে। রাজনৈতিক কোন কর্মকান্ডে তাদের অংশ নিতে হবে না। গডার ব্যবস্তার পরবর্তি স্তরে প্রবেশের জন্য একটা প্রথাগত অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। মাথার চুলে ছেঁটে ন্যাড়া কর হয়। শরীরের খারাপ কিছু পরিষ্কার –পরিচ্ছন্ন করে পরবর্তি স্তরের জন্য প্রস্তুত করা হয়।

২। দাব্বালি/ জুনিয়র গামি ৯-১৬ (Dabbalee/ Junior Gammee, 9-16)
শিশুরা এই পর্যায়ে প্রথম ধাপ অতিক্রম করার পর আনুষ্ঠানিকতা পালন করা হয়। এই আনুষ্ঠানিকতা একটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। কেননা এই স্তরে শিশুদের বাবারা গডা কাঠামোতে তাদের মর্যদাপূর্ণ সময়কালে পদার্পণ করে। বাবাদের এই দলে পদার্পণ করা মানে তারা শাসকদলে পরিণত হওয়া। তার মানে দাড়ায় যারা শাসন করবে তাদের পুত্র সন্তানের পিতা হতে হবে। সেই পুত্র সন্তানকে আবার জুনিয়র গামিতে পরিণত হতে হবে। অন্যদিকে দাব্বালী দলের বাবারা যেমন শাসক দলে প্রবেশ করে; সেই সাথে তাদের দাদারা গডা শাসকদল থেকে অবসরে যায়। যে আনুষ্ঠানিকতার মাধ্যমে দাব্বালিতে পদার্পণ করে তাকে মাকবাসা প্রথা(Maqbaasa ) বলে। এখানে তাদের ব্যক্তিগত এবং দলগত নামকরণ করা হয়। এই পর্বে তাদের সামাজিকায়নের যাত্রারম্ভ। এখানে তাদেরকে সমাজ, সংস্কৃতির প্রথা, রীতি-রেওয়াজকে শিখানো হয়। একই সাথে সামরিক প্রশিক্ষণের প্রাথমিক পর্বের সূচনা আরম্ভ।

একই বয়সের নারী- পুরুষের বয়স কে বলা হয় সুক্কি (Sookkee)। শিশুদের বয়ঃসন্ধিকালের সূচনা হল বলে ধরা হয়। এই বয়সে তারা গণনা শেখা, সাদৃশ্য তৈরি করা, বংশ পরিচয় সম্পর্কে শিক্ষার্জন করা। মা কিংবা বাবার উভয়ের বংশ পরিচয়কে শিক্ষা দেয়া হয়। সমাজের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়ার রীতিই এই পর্বের নানা কার্যক্রম। ওরোমোদের লোককথা, পুরাণিক কাহিনী, নানা গল্প,সাংস্কৃতিক গান শেখানো হ্য়। এই স্তরের শিক্ষার উদ্দেশ্য হল, শিশুদের মানসিক স্তরের বিকাশ সাধন। সামাজিক মূল্যবোধ, মানুষকে সন্মান করা, শ্রদ্ধাকরা, মানবজাতির মর্যাদা, গোত্রের প্রতি দায়বদ্ধতা, ন্যায়নিষ্ঠা, দেশপ্রেম কিংবা পিতৃভূমির প্রতি ভালবাসা, পরিবারের পরিচিতিকে শেখানোর উপর গুরুত্ব দেয়া হয়। এই স্তরের শিক্ষা কার্যক্রমের একটা মজার পদ্ধতি আছে। এই পদ্ধতি নাম হল গিরাসা ও ফারসা (Geerasa and Faarsa )। অর্থাৎ স্তুতি, বন্দনাগীতি বা দেশাত্মকমূলক সংগীত। সমাজের বয়স্করা এই দায়িত্বপালন করে। সামাজিক শিক্ষন পদ্ধতি অংশ হিসাবে বন্ধনামূলক গানের তালে তালে, কয়েক প্রজন্মের ইতিহাসকে উন্মোচন করা হয়। বংশলতিকা তোলে আনা হয়। নতুন প্রজন্মের কাছে তাদের ইতিহাস, গৌরব, অহংকার কে জানানো হয়, শেখানো হয়। মজার ব্যাপার হল শিশুরা এই গানের তালে তালে নিজেরা চর্চা করে তাদের ইতিহাস ঐতিহ্য, পরবর্তিকালে তারা বড় হয়ে নতুনদের কাছে একই পদ্ধতিতে চালিয়ে যায় শিক্ষাকার্যক্রম। লিখিত ফর্ম নাহয়েও ওরোমোদের ইতিহাস জীবন্ত ছিল। এই প্রথাগত সামাজিক শিক্ষা কার্যক্রম এক বিশাল জ্ঞানভান্ডার হিসাবে কাজ করেছে। অন্যদিকে এই বয়সের শিশুদের কে ওরোমোরা তাদের ইতিহাস কে যেমন শিক্ষা দিয়েছে, তেমনি তাদের খরার কবলে ফসলহানির ঘটনা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, মহামারি, রোগব্যাধির কথাও জানানো হত। অধিকন্তু তাদের কে যুদ্ধের কথা জানিয়ে দেশপ্রেমে উজ্জ্বিবিত করা হত। সমসাময়িক ইতিহাসে এই ধরনের শিক্ষা কার্যক্রম ছিল বিরল। এইজন্য ওরোমোদের এই পদ্ধতিকে বলা হয়, আদিম জ্ঞান ভাণ্ডার। বংশানুক্রমের এই জ্ঞান ছড়িয়ে দেয়া হয়ছে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে।
এই স্তরের পুরুষ শিশুদের উপর ছিল একধরনের দায়িত্ব আর নারী শিশুদের উপর ছিল আলাদা দায়িত্ব। ছেলেরা যেহেতু রাজ্য শাসনে অংশ নিবে। তাদের শিক্ষার জন্য ছিল পরিবার, গোত্র, দেশের মূল্যবোধ। আর সম্পদ ভাগাভাগির করার কৌশল, উদ্দেশ্যকে শেখানো হত। ধাঁধা শিখানো সাহয্যে শিখানো হত গঠনমূলক,সৃজনশীল চিন্তার বিকাশ, মানসিক চেতনা উন্নতি করাই ছিল মূল কাজ। এই ক্ষেত্রে রাজনীতির সংশ্রব ছিল না।

3। ফলী / সিনিয়র গামী, ১৭-২৪ বছর ( Foolee/ Senior Gaammee, 17-24 )
ফলী শব্দটি এসেছ ফুলাচু থেকে, মানে হল কিশোর কিশোরীর আনন্দ উচ্ছ্বাস। এই বয়স কাঠামো অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। এই বয়সে কিশোর দল পারিবারিক দায়িত্ব নেয়ার জন্য তৈরি হয়। সেই সাথে সামরিক প্রশিক্ষণ এসে যুক্ত হয় শিক্ষার মাধ্যম হিসাবে। নানা আনন্দ উত্তেজনা, শামরিক প্রশিক্ষণের মত কঠোর অনুশীলনে মানিয়ে নিতে হয়। পারিবারিক ক্ষেত্রে জমি চাষাবাদ, সম্পদ ব্যবস্থাপনা, রক্ষনাবেক্ষণ, সম্পদের ব্যবহারকে জানার সুযোগ তৈরি হয়। সমাজের প্রচলিত আইন, কানুন, পারিবারিক সংস্কৃতিকে রপ্ত করা সবচেয়ে উত্তম সময় এই বয়স। চপলমতি কিশোরদের কে কাজে উৎসাহ দান করা হয়। ভবিষ্যতের জন্য সম্পদকে জমানোকে উৎসাহ প্রদান করা হয়। এই জন্য তাদের প্রশংসামূলক বন্দনাগীতিতে কাজের গুণগতমান, আত্মনির্ভরশীলটা অত্যন্ত উচুতে জায়গা দেয়া হয়। সামাজিক জীবনে দারিদ্রতা যাতে গ্রাস না করে তার জন্য এই শিক্ষা। তাদের কাছে সমাজের রীতি নীতি, আইন কানুন, প্রচলিত প্রথা, অভ্যাসকে মানার প্রত্যাশা করা হয়। তারা সামরিক প্রশিক্ষনের পর দেশের প্রয়োজনে সামরিক সেবা দিয়ে থাকে। সামরিক সেবা প্রদানের বিষয়টি দেখাশোনা করার জন্য একজন যুদ্ধমন্ত্রি নিয়োগ দেয়া হত; গডা কাঠামোতে যুদ্ধমন্ত্রির ভূমিকা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। তাকে আবা ডুলা (Duulaa)। ফলিদের কে যুদ্ধ লড়ার জন্য গুণগতভাবে উন্নত প্রশিক্ষণ নিতে হত।

শারিরিকভাবে পঙ্গু নাহলে তাকে অবশ্যই যুদ্ধ প্রশিক্ষণ আর শিকারের জন্য প্রশিক্ষণ ছিল বাধ্যতামূলক। ওরোমোদের সামরিক প্রশিক্ষণের অংশ হিসাবে ঘোড় দৌড় প্রতিযোগিতা, ঘোড়ায় চড়ে যুদ্ধ করা ছিল অনেক গুরুত্বপূর্ণ। ঘোড় চওয়াড়ি বাহিনীর বা অশ্বারোহী প্রশিক্ষণ এই বয়সেই দেয়া হত। অশ্বারোহী বাহিনীর অনেক মর্যদা দেয়া হত। অশ্বারোহী বাহিনীর সৈনিকেরা, যুদ্ধের ঘোড়া ব্যবহার করত, বর্শা নিক্ষেপ করত,প্রতিরক্ষা শিল্ড ব্যবহার করে নিজের এবং দলের রক্ষক হিসাবে কাজ করত। শারিরীক কসরত করে শরীর গঠনের কাজ করত; আর নিজেরা গেরিলা কায়দায় যুদ্ধ করে দক্ষতার উন্নতি করে নিত। এইভাবে প্রথম তিন বছর প্রশিক্ষন শেষ করলে তাদের কে দুরবর্তি এলাকায় হাতে কলমে শিক্ষা দেয়ার জন্য নিয়ে যাওয়া হত। সেখানে তারা শিকার করে দক্ষতার পরিচয় দিতে হত। তাদের শিক্ষার সফলতা এই যে এখানে ব্যার্থতার কোন সুযোগ নেই। অন্যদিকে এদের মধ্য থেকে এলিট যোদ্ধা নির্বাচন করা হত। যারা নানাদিকে একই সাথে দক্ষতা অর্জন করত। যেমন অশ্বারোহি, বর্শা নিক্ষেপ, গেরিলা কিংবা সামনা সামনি যুদ্ধ কৌশলে পারদর্শি হত। এলিট যোদ্ধাদের কে বলা হত, বাটটু (Buttuu)। তাদের প্রশিক্ষণ শেষে গডা নেতাদের সামনে যুদ্ধের মহড়া দিতে হত। পরিশেষে তাদেরকে পরবর্তি ধাপের জন্য নির্বাচন করা হত।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ রাত ৮:০৩

রাজীব নুর বলেছেন: বাংলাদেশের চেয়েও ওদের খারাপ অবস্থা।

২| ০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ দুপুর ১:৩২

HannanMag বলেছেন: আমাদের চেয়ে ওদের অবস্থা খারাপ তা সত্য। ২০১৫ নির্বাচনের বর্তমান ক্ষমতাশীন শতভাগ আসন অর্জন করে। ৮০-৮৫ টি জাতি আছে সেখানে। ১৯৯১ সালের পর থেকে সেখানে আমাদের দেশের মতই গণতন্ত্রের পথে যাত্রা করে। ১৯৯৫ সালে প্রথম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ২০০৫, ২০১০ এবং সর্বশেষ ২০১৫ সালের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। ক্ষমতা একই দলের হাতে আছে।
আর্থিক অগ্রগতি হচ্ছে । মানুষের মাঝে পরিবর্তন আসছে। শহর এলাকা আর গ্রামাঞ্চলের চিত্র সম্পূর্ণ বিপরীত। গোত্র ভিত্তিক পশুপালন করে এখনও মানুষের জীবিকা পালন করে। সেখানে উন্নয়নের মৌলিক পরিবর্তন হতে সময় লাগবে।
তবে আপাত দৃষ্টিতে মনে হয়, সরকার চেষ্টা করে যাচ্ছে। অনেক নতুন শিল্প কারখানা গড়ে তোলার চেষ্টা করা হচ্ছে। সেই লক্ষ্যে সেখানে অনেক গুলো শিল্প পার্ক গড়ে তোলা হচ্ছে। সড়ক, রেল আর বিমান যোগাযোগের যুগান্তকারি পরিবর্তন হয়েছে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.