![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
https://www.facebook.com/HaqueIsOne
'বাংলা' নাকি 'বাঙলা'--─ কোন্ বানানটি শুদ্ধ? প্রায়ই জিজ্ঞাসিত হই। বলি, দুটোই শুদ্ধ। ভুল বলি। কারণ দেশের প্রায় সমস্ত বইপত্রে 'বাংলাভাষা', সংবিধানে 'বাংলাদেশ', পকেটের টাকায় 'বাংলাদেশ ব্যাংক'। ভুল বললে গোল বাঁধাবেন লেখকেরা, ভ্রূ কুঁচকাবেন পাঠকেরা। কিন্তু না-মানা সাহস যাঁদের বেশি, তাঁরা এসব পরোয়া করেন নি। যেমন হুমায়ুন আজাদ। তিনি বাঙলায় থাকতেন, বাঙলা লিখতেন। ধর্ম ও প্রথা না-মানলেও, প্রথাগত ব্যাকরণ তিনি মেনে চলতেন কঠিনভাবে। আসলে 'বাঙলা' বানানই যে শুদ্ধ, এর পক্ষে ইতিহাসের সাক্ষ্য আছে, ভাষাতত্ত্বের যুক্তি আছে। 'বঙ্গ' ও 'বাঙ্গালা'য় ঙ ছিল সব সময়, অধুনাচলিত 'বাংলা'কে বিশেষণ করলেই ফিরে আসে সেই ঙ --─ যে 'বাংলা'য় বলে, 'বাংলা'য় চলে, তাকে আমরা বাংালি বলি না, বলি বাঙালি। "তোমায় কোথায় দেখেছি, যেন কোন্ স্বপনের পারা" --─ এখানে ছন্দের দরকারে যেমন 'পার' হয়েছে 'পারা', তেমনি "বাংলার মাটি বাংলার জল"-এর ছন্দ রক্ষার্থে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথের হাতে পড়েই চিরায়ত 'বাঙলা' ক্ষণিকের জন্যে 'বাংলা' হয়েছিল। হেতু না-জেনে একে যে সবাই নির্বিচারে অনুসরণ করতে শুরু করবে, কবি তা ভাবেন নি। তাঁর কৈফিয়ত দেখুন:
"আমাদের এই যে দেশকে মুসলমানেরা বাঙ্গালা বলিতেন তাহার নামটি বর্তমানে আমরা কিরূপ বানান করিয়া লিখিব শ্রীযুক্ত বীরেশ্বর সেন মহাশয় [১৩২২] চৈত্রের প্রবাসীতে তার আলোচনা করিয়াছেন।
আমি মনে করি এর জবাবদিহি আমার। কেননা, আমিই প্রথমে বাংলা এই বানান ব্যবহার করিয়াছিলাম।
আমার কোনো কোনো পদ্যরচনার যুক্ত অক্ষরকে যখন দুই মাত্রা হিসাবে গণনা করিতে আরম্ভ করিয়াছিলাম তখনই প্রথম বানান সম্বন্ধে আমাকে সতর্ক হইতে হইয়াছিল। "ঙ্গ' অক্ষরটি যুক্ত অক্ষর─-- উহার পুরা আওয়াজটি আদায় করিতে হইলে এক মাত্রা ছড়াইয়া যায়। সেটা আমার ছন্দের পক্ষে যদি আবশ্যক হয় তো ভালোই, যদি না হয় তবে তাকে প্রশ্রয় দেওয়া চলে না।
এক-একটি অক্ষর প্রধানত এক-একটি আওয়াজের পরিচয়, শব্দতত্ত্বের নহে। সেটা বিশেষ করিয়া অনুভব করা যায় ছন্দরচনায়। শব্দতত্ত্ব অনুসারে লিখিব এক, আর ব্যবহার অনুসারে উচ্চারণ করিব আর, এটা ছন্দ পড়িবার পক্ষে বড়ো অসুবিধা। যেখানে যুক্ত অক্ষরেই ছন্দের আকাঙ্ক্ষা সেখানে যুক্ত অক্ষর লিখিলে পড়িবার সময় পাঠকের কোনো সংশয় থাকে না। যদি লেখা যায়─--
বাঙ্গলা দেশে জন্মেছ বলে
বাঙ্গালী নহ তুমি;
সন্তান হইতে সাধনা করিলে
লভিবে জন্মভূমি─--
তবে অমি পাঠকের নিকট "ঙ্গ' যুক্ত-অক্ষরের পুরা আওয়াজ দাবি করিব। অর্থাৎ এখানে মাত্রাগণনায় বাঙ্গলা শব্দ হইতে চার মাত্রার হিসাব চাই। কিন্তু যখন লিখিব "বাংলার মাটি বাংলার জল", তখন উক্ত বানানের দ্বারা কবির এই প্রার্থনা প্রকাশ পায় যে 'বাংলা' শব্দের উপর পাঠক যেন তিন মাত্রার অতিরিক্ত নিশ্বাস খরচ না করেন। 'বাঙ্গলার মাটি' যথারীতি পড়িলে এইখানে ছন্দ মাটি হয়।"
-------───── রবীন্দ্রনাথ > বাংলা শব্দতত্ত্ব > বাংলা বানান।
২| ২৯ শে ডিসেম্বর, ২০১২ সকাল ১১:০১
একজন কল্পচারী বলেছেন: আপনি হয়ত একটু চিন্তা করলে মনে করতে পারবেন যে ভাষা মানুষের মুখে মুখে বিবর্তনের মাধ্যমে সৃষ্টি । একটা শব্দ যেটা কিনা অনুকরণে হোক বা অনুসরণেই হোক যখন তা সর্বজন স্বীকৃত হয় , তখন তা একটি ভাষার শব্দ ভান্ডারে আপনা আপনি ঢুকে পড়ে । তখন তাকে ভুল বলা যায় না ।
©somewhere in net ltd.
১|
২৯ শে ডিসেম্বর, ২০১২ সকাল ১০:৪০
সুস্মিতা শ্যামা বলেছেন: খুবই প্রয়োজনীয় পোস্ট। ঠিক বানানটা আগেও জানতাম। কিন্তু এই তথ্যগুলো আগে জানা ছিল না। ধন্যবাদ।