![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি অতি সাধারণ একজন মানুষ। সব সময় জানতে চাই এবং জানাতে চাই,আমি ছোট এবং ক্ষুদ্র। পছন্দের মানুষ দের কখনো কষ্ট দিতে চাইনা। স্বপ্ন দেখি জীবনে বড় কিছু হতে, স্বপ্ন দেখতে মানা আছে কোথায়??
কুরবানি ঈদের প্রথম দিন, অর্থাৎ জিলহজ্জ মাসের ১০ তারিখ থেকে শুরু করে জিলহজ্জ মাসের ১২ তারিখ সূর্যাস্তের মধ্যে কেউ যদি নিসাব পরিমাণ সম্পদের অধিকারি হয় তাহলে তার উপর কুরবানি ওয়াজিব। নিসাবের পরিমাণ সম্পদের হিসাব হচ্ছে প্রয়োজনীয় অর্থ সম্পদের বাইরে অতিরিক্ত সম্পদের মূল্যমান ৫২ থেকে ৫৫ হাজার টাকার মধ্যে হওয়া। টাকার এই পরিমাণটা উল্লেখ করেছি দেশের বর্তমান সময়ে সাড়ে ৫২ ভরি রূপার মূল্যের সাথে মিলিয়ে।
এক কথায় বলা যায়, যদি জিলহজ্জের ১০ তারিখ সূর্যোদয় থেকে ১২ তারিখ সূর্যাস্তের মধ্যের এই সময়ে আমার কাছে খাওয়া-দাওয়া, পোষাক-পরিচ্ছদ, প্রয়োজনীয় বাড়ি-ঘর ইত্যাদির বাইরে উদ্বৃত্ত সম্পদের পরিমাণ (সাড়ে ৫২ ভরি রূপার মূল্য অনুযায়ী) ৫২-৫৫ হাজার টাকার মত হয় তাহলে আমার উপর কুরবানি ওয়াজিব হবে। উল্লেখ্য যে, যাকাতের মত কুরবানি ওয়াজিব হবার জন্য এই অতিরিক্ত সম্পদটা আমার হাতে ১ বছর গচ্ছিত থাকা শর্ত নয়। উক্ত ৩ দিনের যে কোন সময় অতিরিক্ত সম্পদের মালিক হলেই তার উপর কুরবানি ওয়াজিব হবে। এক কথায় ২০১৭ সালের ঈদুল আযহার তারিখ অনুযায়ী ২ আগস্ট, ২০১৭ থেকে ৪ আগস্ট, ২০১৭ তারিখের মধ্যে প্রয়োজনের অতিরিক্ত সম্পদের পরিমান ৫২-৫৫ হাজার টাকার মত হলে কুরবানি ওয়াজিব হবে। রূপার দাম নিয়ে কিছু মতভেদ রয়েছে। যেমন নতুন রূপা কিনতে গেলে প্রতি ভরি ৮০০ থেকে ১০০০ টাকায় পাওয়া যায়। পুরাতন রূপা পাওয়া যায় ৪০০-৪৫০ টাকা ভরি। আলেমগণ বলেন নিসাবের হিসাব তেমনই করা উচিত যাতে গরীবরা উপকৃত হয়। পুরাতন রূপার হিসাবে নিসাবের পরিমান দাঁড়ায় ২৫-৩০ হাজার টাকার মত। আমাদের তাকওয়া বা আল্লাহ ভীতির উপর নির্ভর করে আমরা কোনটিকে নিসাব হিসাবে গন্য করব।
যার উপর কুরবানি ওয়াজিব না তিনিও চাইলে কুরবানি দিতে পারবেন। কিন্তু যার উপর কুরবানি ওয়াজিব তিনি কুরবানি না আদায় করলে ওয়াজিব ভঙ্গ করার গুনাহ হবে। কোরবানী ওয়াজিব হবার পর কোরবানি না করে সেই টাকা দান করলে বা কারো সাহায্যে খরচ করলে কুরবানি আদায় হবে না। দান করার সওয়াব হবে এবং কুরবানি না করাতে গুনাহ হবে। রাসূল (সাঃ) ঐ ব্যক্তিকে ঈদগাহে আসতে নিষেধ করেছেন যার উপর কুরবানি ওয়াজিব কিন্তু সে কুরবানি করল না। তাই আমাদের সকলের উচিত সামর্থ্য থাকলে কুরবানি আদায় করা।
কুরবানি ও ঈদুল আযহার দিনে করণীয় কিছু কাজ।
কুরবানির পশু নিজে জবাই করা। জবাই করা সম্ভব না হলে সামনে উপস্থিত থাকা। নবী (সাঃ) হজরত ফাতেমাকে (রাঃ) বলেছিলেন কুরবানির সময় উপস্থিত থাকতে।
পশু কুরবানির সময় যারাই ছুড়িতে হাত রাখবেন প্রত্যেককেই বিসমিল্লাহ বলতে হবে। ছুড়িটি হতে হবে ধারালো।
কুরবানি দাতা নিজে জবাই না করে অন্য কাউকে দিয়ে জবাই করালে ব্যক্তিগত ভাবে আমি মনে করি তাকে পারিশ্রমিক দেয়া উচিত। কারণ তিনি ছুড়ি ধার করা, ঝুকি নিয়ে পশু জবাইয়ের কাজটা করেন। এতে যেই পরিশ্রমটা হয় এর মূল্যায়ন আমাদের করা উচিত। মাদরাসার ছাত্ররা পশু জবাই করে দিবে যেন আমরা তাদেরকে চামড়া দেই এই মানসিকতা থেকে বের হয়ে আসা উচিত। পশুর চামড়া পুরোটাও তাকে দিলেও সেটা কিন্তু তার সম্পত্তি হয়ে যাচ্ছে না। সেটা যাচ্ছে মাদরাসার ফান্ডে। তাই আমাদের উচিত পশু জবাই বাবদ তাদেরকে সম্মানী দেয়া। তবে কোন ক্রমেই এই সম্মানী চামড়া বা পশুর গোশতের দ্বারা দেয়া যাবে না। একই ভাবে কসাইদেরকেও কুরবানির চামড়া বা গোশতের দ্বারা পারিশ্রমিক দেয়া যাবে না। মেহমান হিসেবে তাদেরকে খাওয়াতে বা উপহার হিসেবে দিলে সেটা ঠিক আছে। কিন্তু পারিশ্রমিক হিসেবে পশুর দড়িটাও তাদেরকে দেয়া যাবে না।
কুরবানির পশুর গোশত দিয়ে ঐ দিনের খাওয়া শুরু করা উত্তম।
জিলহজ্জ মাসের চাঁদ দেখা গেলে শরীরের কোন চুল, পশম বা নখ না কাটা উত্তম। বরং কুরবানির দিন কুরবানি করার পরে এগুলো কাটা সুন্নাহ। সে হিসেবে এ বছর ২ আগস্ট কুরবানির ঈদের দিন এগুলো কাটা উত্তম বা সুন্নাহ এর অংশ হবে।
কারো যদি কুরবানি করার সামর্থ না থাকে তাহলে সে জিলহজ্জ মাসের চাঁদ দেখা গেলে শরীরের চুল, লোম বা নখ কাটা থেকে বিরত থাকবে। এবং কুরবানির দিন এগুলো কেটে পরিচ্ছন্ন হবে। এটাই তার জন্য কুরবানি হিসেবে গণ্য হবে। (আবু দাউদ, নাসায়ী)
৯ জিলহজ্জ (১ আগস্ট, ২০১৭) ফজরের নামাজের পর থেকে ১৩ জিলহজ্জ (৫ আগস্ট, ২০১৭) আসরের নামাজ পর্যন্ত সকল প্রাপ্ত বয়ষ্ক নারী-পুরুষের উপর তাকবীরে তাশরীক পাঠ করা ওয়াজিব। এই ২৩ ওয়াক্ত ফরজ নামাজের পর অন্তত একবার তাকবিরে তাশরিক পড়তে হবে। পুরুষেরা উচ্চ স্বরে আর নারীরা নিচু স্বরে পড়া উত্তম। জামাত ছুটে গেলে বা এই ২৩ ওয়াক্তের মধ্যে কোন ওয়াক্ত কাযা হলে সেই কাযা নামাজ পড়ার পর তাকবির পাঠ করতে হবে। কোন নামাজের পরে তাকবিরে তাশরিক পড়তে ভুলে গেলে মনে হবার সাথে সাথে তা পড়ে নিতে হবে। তাকবিরে তাশরিক হচ্ছেঃ الله أكبر .. الله أكبر .. لا إله إلا الله ، الله أكبر .. الله أكبر .. ولله الحمد উচ্চারণঃ “আল্লাহু আকবর, আল্লাহু আকবর, লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবর, আল্লাহু আকবর, ওয়ালিল্লাহিল হামদ”। অর্থ: আল্লাহ মহান, আল্লাহ মহান; আল্লাহ মহান, আল্লাহ ব্যতিত কোনো উপাস্য নেই; সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য, আল্লাহ মহান।
কুরবানির গোশতের ৩ ভাগের এক ভাগ নিজের জন্য রাখা। বাকি দুই ভাগের ১ ভাগ গরিবদের আর আরেক ভাগ প্রতিবেশি ও আত্মীয়দের মাঝে বণ্টন করা উত্তম। অমুসলিমদেরকেও কুরবানির গোশত খেতে দেয়া যাবে। আমাদের গ্রামে প্রতিটা পশুর ৩ ভাগের এক ভাগ একত্রে জমা করা হয়। এরপর গ্রামে যারা কুরবানি দেয় নি তাদের পরিবারের সদস্যদের সংখ্যার উপর ভিত্তি করে বিভিন্ন পরিমাণে গোশত বিতরণ করা হয়। ঈদের ঐ ২-৩ দিন আমাদের গ্রামের প্রতিটা ঘরেই গোশত রান্না হয়। গ্রামের অসংখ্য কুৎসিত জিনিসের মাঝে এই জিনিসটা সবচেয়ে ভাল একটা কাজের উদাহরণ।
কুরবানির পশুর রক্ত ও অন্যান্য আবর্জনা নির্দিষ্ট স্থানে ফেলা বা মাটি চাপা দেয়া। কোন ক্রমেই যেন পরিবেশ দুর্গন্ধময় না হয়।
যে সব কারণে কুরবানি শুদ্ধ হবে না / ঈদুল আযহার বর্জনীয় কাজ
১। গোশত খাওয়ার নিয়তে কুরবানি করলে
২। হারাম উপার্জনের টাকায় কুরবানির পশু ক্রয় করা হলে
৩। ‘আল্লাহ খুশি হবেন, আবার গোশতও খাওয়া হবে’ এমন চিন্তা করে কুরবানি করলে
৪।কুরবানির পশুর ভাগিদারদের মধ্যে কোন একজন ভাগিদারের নিয়তে ঘাপলা থাকলে বাকিদের কুরবানিও শুদ্ধ হবে না
৫। ভাগিদারদের মধ্যে কোন একজনেরও যদি পশু কেনার টাকা হারাম উপার্জনের হয়ে থাকে তাহলেও কারো কুরবানি শুদ্ধ হবে না।
৬। জিলহজ্জের ১০ তারিখ ফজরের আগে ও ১২ তারিখ মাগরিবের পরে কুরবানি করলে কুরবানি আদায় হবে না
৭। ‘বড় গরু কুরবানি না দিলে কি ইজ্জত থাকে?’ এমন লোক দেখানো মনোভাবের কারণেও কুরবানি শুদ্ধ হবে না
৮। ‘গরুটা কিন্যা জিতছি” বা “গরুটা কিন্যা ঠগা হইছে” এই রকম মন্তব্য করা বা মনে আনাও অনুচিত। কারণ কুরবানি আল্লাহরই উদ্দেশ্যে। যা লাভ-ক্ষতির ঊর্ধ্বে
৯। “গরুর দাম এত টাকা। মোট গোশত হইছে এত কেজি। তার মানে প্রতি কেজির দাম পড়ছে এত টাকা” এই ধরণের হিসাব-নিকাশ করতেও ওলামাগণ নিষেধ করে থাকেন। কুরবানির গোশতের দাম বের করা, বাজারের গোশতের দামের সাথে তুলনা করে লাভ-লোকসানের চিন্তা করাটা সম্ভবত দুর্বল ঈমানের পরিচায়ক
১০। “এইবারের গরুর গোশতটা জানি ক্যামন? খুব একটা খাইতে পারি নাই” বা “গোশত যা খাওয়া খাইছি!!!” অথবা “ভাই গোশত খাইলেন ক্যামন?” এই ধরণের কথাগুলোও সম্ভবত কুরবানির দর্শনের পরিপন্থি
বাড়িতে জ্বীন বা শয়তান প্রবেশ করবে না এই উদ্দেশ্যে কুরবানির পশুর রক্ত বাড়ির চারিদিকে ছিটানো একটি মনগড়া কাজ। বা গাছে কুরবানির পশুর মাথার হাড় বা শিং ঝুলিয়ে রাখা। এগুলোর কোনটিই ইসলামের সহিহ দলীল দ্বারা প্রমাণিত নয়।
আল্লাহপাক আমাদের সকলের কুরবানি কবুল করুক ,আমিন ছুম্মা আমিন।
©somewhere in net ltd.