নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

শেকড় ও সরূপ উদঘাটনে অবিরত চলবে কলম

মুহাম্মদ হাবীবুল্লাহ হেলালী

লেখক-সাংবাদিক

মুহাম্মদ হাবীবুল্লাহ হেলালী › বিস্তারিত পোস্টঃ

দোয়ারাবাজার সীমান্তে কাশফুলের শুভ্রতায় মনছুঁয়ে যায় যেখানে...

০৭ ই অক্টোবর, ২০১৮ সকাল ১০:৪৯

মুহাম্মদ হাবীবুল্লাহ হেলালী:
দোয়ারাবাজার উপজেলা সীমান্তের বিস্তৃর্ণ এলাকার উঁচু জায়গাসহ সোনালীচেলা নদীর র্তীরবর্তী মাঠ জুড়েই এখন কাঁশফুলের সমাহার। পাহাড়ী ওই নদীর তীরে কাশফুলের শুভ্রতায় বিমোহিত সব বয়সের পর্যটক প্রেমিরা। এখানকার নয়নাভিরাম দৃশ্যে যেন মন ছুঁইয়ে যায়। পড়ন্ত বিকেলে ছেলে-মেয়েরা মনের আনন্দ উচ্ছ্বাসে মেতে ওঠে এখানে। সাম্প্রতিক সময়ে কাঁশফুলকে ঘিরে সেল্ফিবাজদের আড্ডায় মুখরিত নদীর তীর। এছাড়া সীমান্তবর্তী এলাকার বিভিন্ন স্পটে প্রতিনিয়ত কাশফুলের বাগানে তরুণ-তরুণীসহ বিভিন্ন বয়সের লোকজন কাঁশবনে প্রাণ ভরে আনন্দ উচ্ছ্বাস করতে দেখা যায়। এ যেন বাঙালীদের মনে দোলা দিতে বর্ষাকাল অতিক্রম করে শুভ্রতার প্রতিক হয়ে প্রতিবছর ফিরে আসে এই সময়ে। সোনালীচেলা, মরাচেলা ও চিলাই নদীর চরে জেগে উঠা কাঁশফুলের দৃশ্যে মন ভওে যায়। বৈচিত্রময় মাঠ জুড়ে ফোটে সাদা সাদা কাশফুল। এখানকার কাশফুল মনের হৃদয়ে শিহরণ জাগে। সেই ২০১২ সাল থেকে দেখছি বর্ষা চলে গেলে নদী শুকিয়ে ধুধু বালুর চরে ভরে যায় যৌবন দীপ্ত ওই পাহাড়ী নদী। আর এই সময়টাতে একই জায়গায় প্রতিবছর গজে উঠে কাঁশবন।
আমাদের সোনার বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় ফুলের মধ্যে কাশফুল অন্যতম। কাশফুল আমাদের অনেক কিছুই শিখিয়েছে কোমলতা ও সরলতা। র্তীরবর্তি নদীগুলোর ধু-ধু বালুচরের কাশফুল বাগানে নির্মল প্রকুতিতে মানুষজন বার বার ফিরে যায়। তবে পুথিবীর কোন দেশে ঘাসজাতীয় উদ্ভিদের ফুলের মত কাশফুলে কদর আছে কিনা জানা নেই। তবে বাংলাদেশের মানুষের মনে জয় করে নিয়েছে ঘাসজাতীয় কাশফুল। প্রকৃতির শত শত প্রেমীদের কাছে শরতের কাশফুল ব্যাপক হারে জনপ্রিয়।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, উপজেলার নরসিংপুর ইউনিয়নের সোনালী চেলার বাঁকে প্রতিবছর এই মওসুমে নদীর চরে গজে উঠে কাঁশফুল। উপজেলার সীমান্তের এই জায়গাটি পর্যটনের রয়েছে অপার সম্ভাবনা । এ যেন প্রকৃতির এক অপরূপ লীলা ভূমি। বর্ষায় সোনালী চেলা নদী প্রচন্ড স্্েরাতের উত্তাল থাকে। শুষ্ক মওসুমে নদীর উভয় তীরে বিশাল চরের সৃষ্টি হয়ে মরু ভূমিতে পরিণত হয়। এসময়ে নদীর চরে অনেক জায়গা জুড়ে গজে উঠে নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক কাঁশ ফুলের বাগান। দূর থেকে দেখলে মনে হয় উচুঁ পাহাড়ের পাদদেশে নদীর চরে গজে উঠা কাঁশফুল যেন হাতছানি দিয়ে ডাকছে। উত্তরের উত্তাল হাওয়ায় ও কাঁশফুলের হেলা দূলায় মন ছুঁইয়ে যায় এখানে। আর বর্ষায় উজান থেকে নেমে আসা প্রচন্ড ¯্রােতে পানির শব্দ, ভারত সীমান্তে সু উচ্চ পাহাড়ে পাখির কলরবে মুখড়িত করে তোলে পরিবেশ । চেলা নদীতে ভোর থেকে মধ্য রাত অবধি নদীর বুক দিয়ে পাথর বোঝাই সারিবদ্ধ ‘বারকি’ নৌকার লগি বৈঠার আওয়াজ শোনা যায় চারিদিকে। শুষ্ক মওসুমে সোনালী চেলায় প্রকৃতির সব রুপ ঝরে পড়ে কাঁশবনের নৃত্যে। পরন্ত বিকেলে দেখা যাবে নদী ঘেঁষে সীমানার ওপারে দাঁড়িয়ে আছে উত্তরের কালো পাহাড়। এছাড়া বিশাল নদী আর কাঁশফুলের এ দৃশ্য যেন মননের সব কষ্ঠ ভুলিয়ে দেয়। হেমন্ত, শরৎ, আর শীতকালে নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে থাকলে মোহনীয় এমন দৃশ্য সবাইকে মুগ্ধ করবে। নদীর উত্তর তীরে রয়েছে চাইর গাঁও, সোনাপুর, লুভিয়া সোনাপুরসহ বেশ কয়েকটি গ্রাম। এই সকল গ্রামের নিকট দিয়ে ভারতে কাঁটা তারের বেড়া। এর কাছাকাছি ভারতের সীমানায় গারো সম্প্রদায়ের বসবাস। সীমান্তের ওই গ্রাম গুলোতে গেলে অথবা রাত্রি যাপন করলে মনে হবে যেন বাংলাদেশের বড় কোনো শহর। গ্রামের নিকটবর্তী ভারতের সীমানায় ওই দেশের নিয়মিত ভারী যান চলাচল করে।
অপর দিকে উপজেলা সীমান্তের শিমুল তলা নামক স্থানে উজান থেকে নেমে আসা মরাচেলা নদীর চরেও গজে উঠেছে নয়নাভিরাম কাঁশফুলের বাগান। ‘আমাকে দেখিতে যাইও কিন্ত উজানতলীর গাঁয়।’ কবির ওই আবেগাপ্লোত প্রবাদ সত্যিই মনে করিয়ে দেয় দোয়ারাবাজার উপজেলা সীমান্তের বাংলাবাজার ইউনিয়নের শিমুলতলার অপরুপ দৃশ্য। সুউচ্চ পাহাড়ের পাদদেশে বাংলাদশের সীমানায় নির্ভৃত পল্লীর সীমান্তে এতো সুন্দর জায়গা দেখলে যেন মন ছুঁইয়ে যায়। শষ্য শ্যামল, সবুজ ভরা আমাদের দেশের কোথাও এমন নান্দনিক পর্যটন বিমুখ এলাকা আছে কিনা তা আমার জানা নেই। তবে অবাক হওয়ার মতো জায়গা দোয়ারাবাজার উপজেলা সীমান্তের শিমুলতলা। একেবারে জিরো পয়েন্টের কাছাকাছি চেলা নদীর চরে এখন গজে উঠেছে সাদা প্রজাতির কাঁশফুল। যা সবাইকে বিমোহিত করে। এছাড়া সড়কে সারি সারি তালগাছ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য মন কেড়ে নেয়। উপজেলা সীমান্তের বাংলাবাজার ইউনিয়নের ভারতের মাত্র দুই শ’ গজ বাংলাদেশের সীমানায় রামশায়ের গাঁও গ্রামের মরাচেলা নদীর তীরবর্তী সড়কের এক পাশে সারি সারি তালগাছ, দুই দিকে ফসলি জমি, উত্তরপূর্ব সীমনায় ভারতের কাঁটাতারের বেড়া এবং ওপারে খাসিয়া পাহাড়। নিকটবর্তী উত্তর কলাউড়া গ্রামের শিমুলতলা নামক স্থানটি অবস্থিত।
একই ভাবে উপজেলার পর্যটন এলাকা হিসেবে খ্যাত মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত বাঁশতলা-হকনগর শহিদ মিনার সংলগ্ন ভারতের খাসিয়া পাহাড়ের পাদদেশ ঘেঁষে চিলাই নদীর পাড়ে গজে উঠা কাঁশফুল আগুন্তকদের বিমোহিত করে। প্রতিদিন আসা পর্যটকরা বাড়তি আনন্দ উপভোগ করেন কাঁশফুলের নরম ছোঁয়ায়। চাইলে আপনিও ঘুরে আসতে পারেন দোয়ারাবাজার উপজেলা সীমান্তের কাঁশফুলের স্পট গুলি।
[৪ অক্টোবর ২০১৮ দৈনিক সিলেট মিরর পত্রিকায় প্রকাশিত ফিচার]


মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.