নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

শেকড় ও সরূপ উদঘাটনে অবিরত চলবে কলম

মুহাম্মদ হাবীবুল্লাহ হেলালী

লেখক-সাংবাদিক

মুহাম্মদ হাবীবুল্লাহ হেলালী › বিস্তারিত পোস্টঃ

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, স্বাধীন সাংবাদিকতার অন্তরায়

০৭ ই অক্টোবর, ২০১৮ সকাল ১১:১৮

বিভিন্ন পক্ষের আপত্তি, উদ্বেগ ও মতামত উপেক্ষা করে শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন পাশ করা হয়েছে। এ নিয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষক, সুমীল সমাজ ও সাংবাদিক বেত্তাদের মধ্যে চলছে এখন চুলছেড়া বিশ্লেষণ। এ আইনওে প্রতিফলন নিয়ে দেশব্যাপি তীব্র ক্ষোভ দেখা দিয়েছে গণমাধ্যম কর্মীদের মধ্যে। কেননা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ৩২ ধারাটি কার্যকর হলে সাংবাদিকতার জন্য তথ্য সংগ্রহ করা ও প্রকাশ করা দুটিই দুরূহ হয়ে উঠবে। পরোক্ষভাবে এটি আসলে দুর্নীতিকেই সুরক্ষা দেবে। এছাড়া উক্ত ধারাটি বাস্তবায়নের ফলে স্বাধীন সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে মারাতœক অন্তরায় হয়ে দাঁড়াবে। কেননা এখানে সাংবাদিকতাকে গুপ্তচরবৃত্তি হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। যদিও সরকারের সংশ্লিষ্টরা বলছেন এ আইনের ফলে ৩২ ধারা নিয়ে বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকদের জন্য উদ্বেগের কোন কারণ নেই। কিন্ত কার্যত এ আইননের ফলে সাংবাদিকতা পেশাটিই হুমকির মুখে পড়তে পারে।
‘ডিচিটাল নিরাপত্তা আইন’ বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে-এই আইনে বলা হয়েছে, আইনটি কার্যকর হলে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারা বাতিল হবে। তবে এই আইনটিতেই বিতর্কিত ৫৭ ধারার বিষয়গুলো চারটি ধারায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রাখা হয়েছে। এ ছাড়া পুলিশকে পরোয়ানা ও কারও অনুমোদন ছাড়াই তল্লাশি ও গ্রেপ্তারের ক্ষমতা দেওয়া
হয়েছে। এই আইনে ঢোকানো হয়েছে ঔপনিবেশিক আমলের সমালোচিত আইন ও অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট। আইনের ১৪টি ধারার অপরাধ হবে অজামিনযোগ্য। বিশ্বের যেকোনো জায়গায় বসে বাংলাদেশের কোনো নাগরিক এই আইন লঙ্ঘন হয়, এমন অপরাধ করলে তাঁর বিরুদ্ধে এই আইনে বিচার করা যাবে।
এই আইনের অধীনে সংগঠিত অপরাধ বিচার হবে ট্রাইব্যুনালে। অভিযোগ গঠনের ১৮০ কার্যদিবসের মধ্যে মামলা নি®পত্তি করতে হবে। এ সময়ে সম্ভব না হলে সর্বোচ্চ ৯০ কার্যদিবস সময় বাড়ানো যাবে। আইনে বলা হয়েছে, তথ্য অধিকার সংক্রান্ত বিষয়ের ক্ষেত্রে তথ্য অধিকার আইন, ২০০৯এর বিধানাবলি কার্যকর থাকবে।
আইনে ডিজিটাল মাধ্যমে আক্রমাণাতœক, মিথ্যা বা ভীতি প্রদর্শক তথ্য-উপাত্ত প্রকাশ; মানহানিকর তথ্য প্রকাশ; ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত; আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটানো, অনুমতি ছাড়া ব্যক্তি তথ্য সংগ্রহ ও ব্যবহার ইত্যাদি বিষয়ে অপরাধেজেল জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে।
এ আইনের ফলে অনুসন্ধানী মূলক সাংবাদিকতা ও যে কোনো ধরনের গবেষণামূলক কর্মকান্ড পরিচালনায় প্রতিবন্ধকতা তৈরি হবে। এটি আইনে পরিণত হলে তা সংবিধানের মূল চেতনা, বিশেষ করে মুক্ত চিন্তা, বাক স্বাধীনতা, মত প্রকাশের স্বাধীনতা, গণমাধ্যমের স্বাধীনতার পথ রুদ্ধ করবে। তাছাড়া ডিজিটাল নিরাপত্তার নামে নাগরিকদের নিরাপত্তাহীনতা তৈরি করবে।
ডিজিটাল বাংলাদেশের তথ্য প্রযুক্তি কল্যাণ, দুর্নীতি প্রতিরোধ ও সুশাসন নিশ্চিতের যে সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে এ আইনটি তাতে বাধা সৃষ্টি করবে। গণমাধ্যম ও সুশীল সমাজের ভূমিকা সীমাবদ্ধ হয়ে পড়বে। গণমাধ্যমসহ সকল নাগরিকের সমস্ত ধরনের ভয়ভীতির ঊর্ধ্বে থেকে সরকারকে সহযোগিতা প্রদান এবং বাধাহীনভাবে মতামত প্রকাশ করতে পারে তার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত এখন সময়ের দাবি।
[ ৩অক্টোবর ২০১৮ দৈনিক জালালাবাদ পত্রিকায় উপ সম্পাদকীয় কলামে প্রকাশিত]

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.