![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মুহাম্মদ হাবীবুল্লাহ হেলালী
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে সারা দেশের রাজনৈতি অঙ্গন এখন সরগরম হয়ে ওঠেছে। একটি অবাধ-নিরপেক্ষ ও অংশ গ্রহণ মূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে নিজেদের প্রত্যক্ষ ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত করতে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন সর্বস্তরের জনসাধারণ। আসন্ন নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামীলীগ ও ওই দলের নেতৃত্বাধীন জোট জাতীয় ঐক্যের নেতৃত্বাধীন বিএনপি ও ওই দলের নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটসহ দেশের ছোট রাজনৈতিক দলগুলোও এখন নির্বাচন মুখী হয়ে পড়েছে।
জাতীয় নির্বাচনের তফশিল ঘোষণার আগে মূলত নির্বাচন ঘিরেই সাম্প্রতিক সময়ে গণফোরাম, যুক্তফ্রন্ট ও বিএনপি মিলে বাংলাদেশের সংবিধান রচয়িতা বর্ষিয়ান রাজনীতিক ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে এক মঞ্চে যে ঐক্য হয়েছে এ নিয়েও দেশের সর্বত্র এখন বেশ মাতামাতি চলছে। রাজনৈতিক মহলের সকল জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে শেষ পর্যন্ত বিএনপি’র নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের শরীক দল জামায়াতে ইসলামীকে বাদ দিয়ে বৃহত্তর স্বার্থে বিএনপি জাতীয় ঐক্যের মঞ্চে ওঠেছে। সাম্প্রতিক সময়ে দেশের বৃহত্তর রাজনৈতিক দল বিএনপি জাতীয় ঐক্যের ডাকে সাড়া দেয়ায় রাজনৈতিক অঙ্গন বেশ নড়ে চড়ে ওঠে। এর কয়েকদিনের মধ্যে জাতীয় ঐক্য নিয়ে ক্ষমতাসীন দলের অনেকটা তোপের মুখেই খোদ ‘ঐক্য মঞ্চে’ অভ্যন্তরীণ টানাপড়েন দেখা দেয়। জাতীয় ঐক্যেও প্রভাব প্রতিফল নিয়ে মিডিয়ায় নানা ধরণের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ হতে থাকে। জনমনে নানা প্রশ্নের উদ্রেক হয়। গত কয়েক দিন পূর্বে ‘জাতীয় ঐক্যে’ লিয়াজো কমিটি গঠিক হওয়ায় আপাতত ওই মঞ্চে মেরুকরণের শঙ্কা খানিকটা হলেও কেটেছে।
জাতীয় নির্বাচনে গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন ‘জাতীয় ঐক্য’ কতটা প্রভাব ফেলতে পারে তা নিয়ে শহর বন্দর থেকে শুরু করে গ্রামের রাজনীতিতেও আলোচনা ওঠে আসে। ‘ডান-বাম’ সমন্বয়ের ওই ঐক্য শেষ পর্যন্ত সুফল বয়ে আনতে পারবে নাকি ভোটের মাঠে হিসাব-নিকাশ কষে মত অমতের রোষানলে পড়ে ভেস্তে যাবে জাতীয় ঐক্যের কার্যক্রম এমন প্রশ্নও দেখা দিয়েছে রাজনৈতিক মহলে।
কেননা রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, বিএনপি যেহেতু বড় একটি রাজনৈতিক দল, এটাঁই মূল চালিকা শক্তি হবে জাতীয় ঐক্যের। আর বাকি যে দলগুলো আছে তারা ইতোপূর্বে নির্বাচন করে এলও ভোটের মাঠে সে রকম কোনো সুফল বয়ে আনতে পারেনি। এখন এই জায়গাটা দেখার বিষয় যে জাতীয় নির্বাচনে ‘জাতীয় ঐক্যে’র প্রভাবটা কতটুকু পড়ে। যদিও ক্ষমতাসীন দল আওয়ামীলীগ এ ব্যাপারে তারা মতামত ব্যক্ত করেছেন যে জাতীয় ঐক্য ভোটের রাজনীতিতে কোনো প্রভাব ফেলবেনা। তাছাড়া তারা মনে করেন বিএনপিই বড় দল নির্বাচনে তারা আসলে প্রতিদ্বন্দ্বিতা পূর্ন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, বিশ্লেষকরা মনে করেন জাতীয় ঐক্যে’র মঞ্চ থেকে নির্বাচন ঘিরে যে কতগুলো দাবি দাওয়া উত্থাপন করা হয়েছে, সেখানে নতুনত্বের কিছু নেই। এগুলো ইতোপূর্বেও বিভিন্ন সময়ে বিরোধী দলের অন্তর্ভুক্ত রাজনৈতিক দল সমূহ দিয়েছে। এখন এাঁ সম্পুর্ণ ক্ষমতাসীন সরকারের এখতিয়ার যে, তারা কতটুকু দাবি মানবে, আর কতটুকু মানবেনা।
এ কথাও রাজনৈতিক মহলের আলোচনা হচ্ছে, বিএনপি ব্যতিত জাতীয় ঐক্যের অন্তর্ভুক্ত অন্যান্য দল ভোটের রাজনীতিতে তেমন ভূমিকা রাখতে না পারলেও আগামী নির্বাচনে এর একটা প্রভাব পড়তে পারে। নির্বাচনের আগে ডান-বাম ও ইসলামী রাজনৈতিক দল সমূহের সমন্বয়ের ‘তৃতীয় শক্তি’র ওই মঞ্চটি ভোটের মাঠে প্রভাব ফেলবে। আর সঙ্গত কারণেই আগামী জাতীয় নির্বাচন হবে যথেষ্ট চ্যালেঞ্জিং।
কেননা আমরা যদি এদেশের অতীত রাজনীতি ও ক্ষমতায় যাওয়ার কৌশলের দিকে যাই, তাহলে দেখা যাবে ২০০১ সালে বিএনপি’র নেতৃত্বাধীন চার দলীয় জোট নির্বাচনে যথেষ্ট প্রভাব ফেলে ছিল। তত্তবধায়ক সরকারের অধীনে তখন বিএনপি কিছু ছোট খাটো রাজনৈতিক দল নিয়ে এবং কতেক ইসলামী রাজনৈতিক দলের সমন্বয়ে চারদলীয় জোটই ক্ষমতার আসনে সমাসীন হয়েছিল।
বলাবাহুল্য যে, বিগত ২০১৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মতো আর কোনো নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা নেই। ক্ষমতাসীন দল আ’লীগ, বিএনপিও তাই মনে করে। কেননা নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষায় অন্তত তারা একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শর্ত সাপেক্ষে অংশ গ্রহণ করতে চায়। অপর দিকে ক্ষমতাসীন দল আ’লীগ সকল দলের অংশ গ্রহণে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে চায়। এখানে যাদের ‘রেপুটেশন’ আছে সে ধরণের মানুষের সমন্বয় ঘটাতে না পারলে নির্বাচন অনুষ্ঠান সহজতর হবেনা। সেটা ক্ষমতাসীনরা জানে।
অতি সম্প্রতি জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি তাদের দলের চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি, নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি সম্বলিত যে ৭ দফা দাবির প্রস্তাবনা দিয়েছে সেগুলোর বাস্তবায়ন ও এর প্রভাব নিয়েও রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনা চলছে। বিএনপি’র ৭ দাবি গুলো মেনে নিয়ে আদৌও সরকার নির্বাচনের দিকে এগুবে নাকি প্রণীত সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন দেওয়া হবে তা দেখার বিষয় এবং ক্ষমতাসীন দলের এখতিয়ার। তবে জনগনের প্রত্যাশা রয়েছে, ক্ষমতাসীন দল আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সকল দলের অংশ গ্রহণে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের দিকেই আগানো উচিৎ। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরাও তাই মনে করেন।
রাজনৈতিক বেত্তারা মনে করেন, বিষয়টি নিয়ে সংশয় রইয়ে যাচ্ছে একদিকে বিএনপিসহ বিরোধী দলীয় জোট দাবি করছে, ‘নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন’ অন্য দিকে এখন বড় ফ্যাক্টর হয়ে দাড়িয়েছে সংবিধানে যেটা আছে এবং সরকারি দল যেভাবে বলছে, সেই নির্বাচন কালীন সরকার। তাহলে সেই সরকারের কার্যবিধি কতখানি হবে এবং সেখানে নির্বাচন কমিশনের কোনো ভূমিকা থাকবে কিনা। দেখার বিষয় জাতীয় ঐক্য তথা বিরোধী দলীয় জোটের দাবি সমূহ এবং ক্ষমতাসীন জোটের সাংবিধানিক পন্থার বিশ্লেষণ কত দূর যেতে পারে।
মোদ্দা কথা হলো-যে বিষয় গুলো দেশের সাধারণ জনমনেও রয়েছে তা হলো, বিএনপি সহ জাতীয় ঐক্যের ব্যনারে যে দলগুলো আছে সে সকল দলসহ দেশের সকল রাজনৈতিক দলের অংশ গ্রহণে আগামী জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে অবশ্যই তা প্রতিদ্বন্দ্বিতা পূর্ণ হবে। এত গুলো রাজনৈতিক দলের অংশ গ্রহণের নির্বাচন হলে নিতান্তই তা সহজতর হবেনা। সেটা ক্ষমতাসীনদের চিন্তা ভাবনায় যেমন রয়েছে বিরোধী দলীয় দলসমূহও তা মনে করেন। নির্বাচনে জনগণের সম্পৃক্ততা নিয়েও সাম্যক ধারণা রয়েছে সরকারের। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন যখনই হোক না কেন এই নির্বাচন যথেষ্ট চ্যালেঞ্জিং নির্বাচন হবে।
©somewhere in net ltd.